বছরজুড়ে ফ্যাশন ভাবনা
ঋতুর পালা বদলে বইছে কনকনে হাওয়া। শীতের আমেজ বিরাজ করছে। আর এ সময়টাতে চারদিকে উৎসবের আমেজ পাওয়া যায়। পারিবারিক, সামাজিক কিংবা ধর্মীয় যে কোন উৎসবই এ মৌসুমে এসে যেন অন্য রকম আবহ সৃষ্টি করে। বাঙালীর ইতিহাস-ঐতিহ্য হাজার বছরের। বারো মাসে তেরো পার্বণে অভ্যস্ত বাঙালী জাতি খুবই উৎসবপ্রিয়।
যে কারণে নিজস্ব উৎসব ছাড়াও অন্যের উৎসবেও রঙ ছড়াতে দ্বিধাবোধ করে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ জাতি ইংরেজী নববর্ষ পালন করে থাকে বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবে। প্রিয়জনকে ফুল, মিষ্টি আর কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছরকে। আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের। গান, আলাপচারিতা, উপহার আদান-প্রদান আর ঘুরে বেড়ানো ট্র্যাডিশন এখন এদেশেও চালু হয়েছে। গ্রামবাংলার কিছু অঞ্চলে বাঙালীর নিজস্ব ক্যালেন্ডার ফলো করা হলেও সমাজ-রাষ্ট্রের সব কাজ গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারকে অনুসরণন করে করা হয়ে থাকে। কারণ ইংরেজী নববর্ষ আমাদের জীবনে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত।বিদায়ী বছরের বিষন্নতাকে ছাপিয়ে মনকে উৎফুল্ল করে তোলে নতুন বছরের আগমণী বার্তা। ক্যালেন্ডারের শেষ পাতাটি ছিঁড়ে একসঙ্গে উচ্চারিত হয় হ্যাপি নিউ ইয়ার। নতুন দিনের সূচনা, নতুন করে পথচলা। নতুন প্রাণচাঞ্চল্য, নতুন শপথ সব কিছুই যেন একাকার হয় বছরের প্রথম দিনটিতে এসে। অতীতকে মুড়িয়ে দিয়ে নতুন এক সময়কে বরণ করে নেয়ার শিহরণই যেন অন্যরকম। প্রতি মুহূর্তেই চলে নতুন বছরকে বরণ করে নেয়ার প্রস্ততি। বন্ধু, প্রিয়জনকে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে শুরু নতুন বছরের দিন। পুরনো গ্লানি মুছে নতুনভাবে বাঁচার প্রত্যয়ে শুরু হয় নববর্ষ। যে কারণে উন্মাদনাও একটু বেশি থাকে নববর্ষকে ঘিরে। বিভিন্ন উৎসব-পার্বণের মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয়া হয় নতুন বছরকে। ইংরেজী নববর্ষ পালনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎসব হচ্ছে থার্টিফার্স্ট নাইট। বছরের শেষ এ দিনটিতে বিশ্বজুড়ে পালন করা হয় নববর্ষের উৎসব। ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বারোটা বাজার সঙ্গে সঙ্গে সুর ও সঙ্গীতের মূর্ছনায় মুখরিত হয়ে ওঠে চারপাশ। আতশবাজির আলোকছটায় ছেয়ে যায় আকাশ। শুরু হয় প্রিয়জনদের শুভেচ্ছ বার্তা পাঠানো। একে অপরকে উপহার আদান- প্রদানের মাধ্যমে বরণ করে নেয় নতুন বছর। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি অঞ্চলেই পালন করা হয়ে থাকে ইংরেজী নববর্ষ। নতুন বছরের এ প্রভাব যেন ফ্যাশন ট্রেন্ডেও এসে পড়ে। বছরজুড়েই ফ্যাশন ট্রেন্ডে বৈচিত্র্যময় ফ্যাশন নিয়ে, আধুনিক কনসেপ্টকে উপজীব্য করে নানা ফর্মে-পোশাকে-ডিজাইনের শৈল্পিক প্রতিভা ফুটিয়ে তোলার কাজটিও এ বছর করা হবে সুনিপুণভাবে। গত বছরের তুলনায় আরও একধাপ এগিয়ে থাকবে এ বছরের ফ্যাশন, এটাই স্বাভাবিক। তবে খুব বেশি তারতম্য না হলেও কিছু পার্থক্য অবশ্যই চোখে পড়বে।
শাড়ি
দেশীয় শাড়ির পাশাপাশি বিদেশী শাড়িও এ বছর কেনাকাটার তালিকায় স্থান পায়।
দেশীয় শাড়ির মধ্যে সর্বাধিক চাহিদা হলো টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ও জামদানি শাড়ি। পাশাপাশি মিরপুরের বেনারসি, কাতানের রয়েছে বিপুল সমাদর। জর্জেট, অর্গেসুতা, কামিতভরমসহ অভিজাত নামের সব বাহারি শাড়ি বিভিন্ন ড্রেস হাউসে। তবে এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি। টাঙ্গাইলের শাড়িতে সাম্প্রতিক ডিজাইনের বৈচিত্র্য এবং সহনীয় দাম নারীদের এই শাড়ির প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার অন্যতম মূল কারণ। সুতি, সিল্ক, হাফসিল্কসহ নানা নামের টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি ঈদের সময় থাকে নারীর কালেকশন লিস্টের শীর্ষে। এর পরই থাকে জামদানি এবং মিরপুরের বেনারসি-কাতান। জামদানি কিছুটা বেশি দামের হলেও মিরপুরের বেনারসি-কাতানের দামটাও রয়েছে নাগালের মধ্যে। যার ফলে টাঙ্গাইলের তাঁতপল্লী, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ তাঁতপল্লীসহ সিদ্ধিরগঞ্জ, সোনারগাঁওয়ের জামদানি ফ্যাক্টরি এবং মিরপুরের বেনারসি পল্লীতে থাকবে তাঁতশিল্পীদের অবিশ্রান্ত ব্যস্ততা।
সালোয়ার কামিজ
মেয়েদের নিত্যব্যবহার্য পোশাক সালোয়ার-কামিজ আনে বৈচিত্র্যতা। পাজামা, ওড়না ও কামিজের ভিন্নধর্মী নকশা সালোয়ার-কামিজকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে যা সহজেই দৃষ্টি কাড়ে ক্রেতাদের । ভয়েল, পপলিন, প্রিন্ট, আদ্দি কটন, কটন জর্জেট, টিসি সিনথেটিক কালার ইত্যাদি কাপড়ের সমন্বয়ে এবার প্রস্তুত হয়েছে সালোয়ার-কামিজ। (আবহাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে সালোয়ার-কামিজের কাপড় সিলেকশন করা হবে। সালোয়ার-কামিজের পাশাপাশি ওড়নার বৈচিত্র্য এবার লক্ষণীয়, এর কাটিং-ডিজাইন এবং লেআউটে রয়েছে ভিন্নতা। সুতার কাজ, ক্রিস্টাল, মেটাল আইটেম এবং কড়ি দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে সালোয়ার-কামিজ এবং ওড়নায়)। তাছাড়া শিপন জর্জেটের স্ট্রাইপ প্যাটার্নের হেভি কাজের সালোয়ার-কামিজ প্রচুর উঠবে বাজারে। স্টোন এবং স্ট্রিং পাইপের ডিজাইনের সালোয়ার-কামিজ এবার বাজার বাজিমাত করবে। সুতি কাপড়ের চাহিদাও এবার বেশ রয়েছে। পাইপিন এবং টারসোলর সমন্বয়ে কটন এবং এন্ডি কটনের ডিজাইন করা হয়েছে। এ সম্বন্ধে ডিজাইনার হৃদি হাসান বলেন, এ বছর সব বয়সী মেয়ের জন্য সালোয়ার -কামিজ প্রস্তত হলেও নতুন নতুন ডিজাইনের সালোয়ার -কামিজ মূলত তরুণীদের কথা মাথায় রেখেই করা হবে। সেভাবেই কাপড় এবং ডিজাইন প্রস্তত করা হবে। তাছাড়া প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে হলে ডিজাইন ভেরিয়েশনের কোন বিকল্প নেই। এ বছরও নতুন কিছু ডিজাইনের ড্রেস আসবে যা খুবই আকর্ষণীয়। কটন ও তাঁত কাপড়ে তৈরি সালোয়ার-কামিজের মূল্য পড়বে ৮৫০ থেকে ১৮৫০ টাকা, জর্জেট এবং শিফনের মাঝারি সাইজের সালোয়ার-কামিজ পড়বে ১১০০ থেকে ২৮০০ টাকা এবং হেভি কাজ পড়বে ১৬০০ থেকে ৪২০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়াও আদ্দি ভয়েল, এপ্লিক মোটা সুতার কাজ পড়বে ১০০০ থেকে ১৬০০ টাকা। দেশীয় ফ্যাশন হাউজ থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি শপিংমলেই বিক্রি বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ও সমন্বয়ে মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সালোয়ার-কামিজের।
পাঞ্জাবি
পাঞ্জাবি ছাড়া উৎসব কোন পুরুষ কল্পনাই করতে পারেন না। অন্য কোন পোশাক কিনুন বা না কিননু পাঞ্জাবি যেন কিনতেই হবে। এ কারণেই ফ্যাশন হাউসগুলো প্রতিবছরই পাঞ্জাবির ডিজাইন এবং রঙের ক্ষেত্রে নতুনত্ব আনতে চেষ্টা করে। ফ্যাশন হাউসগুলোর ভেতরে রীতিমতো প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। কোন্ হাউস কত ভাল ডিজাইনের পাঞ্জাবি তৈরি করব্ েএবং ডিজাইনভেদে পাঞ্জাবির মূল্য একেক রকম। বড়দের পাশাপাশি বাচ্চাদের পাঞ্জাবিও পাওয়া যায়। পাঞ্জাবি-পায়জামা সেট ৫৫০ থেকে ৩,২০০ টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আর বড়দের পাঞ্জাবি পড়বে ৮০০ থেকে ৩,৫০০ টাকা।
শিশুদের পোশাক
সবচেয়ে বেশি ভেরিয়েশন থাকবে শিশুদের পোশাকে। গত বছর স্পাইডারম্যান, বেনটেন এন্ড ডরিমন পোশাকের ব্যাপক চাহিদা ছিল। এ বছরও কিছুটা থাকবে। তবে এবার নিনজা স্টাইলেও ব্ল্যাক ড্রেসও প্রাধান্য পাবে।
ওয়েস্টার্ন ড্রেস
দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ওয়েস্টার্ন ড্রেস। তরুন তরুনি উভয়েরই পছন্দের শীর্ষে। প্রায় সব গুলো শমিংমলেই দেখা মিলবে ওয়েস্টার্ন ড্রেস।
জুতো
জুতোর ভেরিয়েশন প্রতিবছরই লক্ষণীয়। এলিফ্যান্ট রোডের লিবার্টিসহ মিলবে নামী-দামী জুতোর পসরা। মাচমোর, মার্কস স্পেন্সার, বেলেনিনা, লিভাইস, ক্রিশ্চিয়ানা, পেয়ারা কাডিন, স্নিকার, ফারসুসহ নামী-দামী ব্র্যান্ডের জুতো।
পুরুষদের ক্যাজুয়েল সু পাবেন ২৫০০-৪৫০০ টাকার মধ্যে। পার্টি সু ৩০০০-৭৫০০ মধ্যে। স্যান্ডেল সু ১২০০-৩০০০ মধ্যে। সাইকেল সু ১৪০০-৩৫০০ মধ্যে। ১২৪/বি এলিফ্যান্ট রোড থেকে সংগ্রহ করতে পারেন মেয়েদের সেমি-হিল পাথর, পুঁতি ও কাঠ বসানো ১০০০-২০০০ মধ্যে। পেন্সিল হিল নানান নকশার ২০০০-৪০০০ টাকার মধ্যে। সিম্পল জুতো স্যান্ডেল সু ৮৫০-১২০০ মধ্যে। শিশুদের ভোগইটিস জুতো, স্যান্ডেল ও ক্যাডস ৪০০-১৩০০ মধ্যে। কিশোরীদের জুতো ৬০০-১৬০০ মধ্যে।
পুরো বছরে রদবদল থাকলেও সম্ভাব্য এ তালিকাটির খুব সংযোজন-বিয়োজন হবে না। তবে নতুন নতুন ট্রেন্ড এ দেশে যুক্ত হতে এখন বেশি সময় নেয় না; যা সত্যিকার অর্থেই ইতিবাচক দিক। সমৃদ্ধ হোক এ বছরের ফ্যাশন ট্রেন্ড, এ কামনা রইল।
তৌফিক অপু
No comments