মহাখালী ও মতিঝিলে জামায়াত শিবিরের ফের ঝটিকা মিছিল- দফায় দফায় সংঘর্ষ, যান ভাংচুর
রাজধানীর মহাখালী ও মতিঝিলে আবারও ঝটিকা মিছিল করেছে জামায়াত-শিবির। মিছিলকালে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। মিছিলকারীরা অন্তত ১০টি যানবাহন ভাংচুর করেছে। সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে রবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে হয়েছে। মহাখালী থেকে এক শিবির কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মহাখালী সরকারী তিতুমীর কলেজের গলি, বনানী গলি, টিভি গেট গলি, টিএন্ডটি কলোনি স্কুল ও মাদ্রাসা গলিসহ আশপাশের গলিতে ছোট ছোট দলে অবস্থান নেয় জামায়াত-শিবিরের শতাধিক নেতাকর্মী। সকাল ১০টার দিকে অর্তকিতে তারা একসঙ্গে প্রতিটি গলি থেকে বের হয়। কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে ঝটিকা মিছিল শুরু করে। তারা রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর শুরু করে যানবাহন ভাংচুর। মিছিলকারীরা মহাখালী ফ্লাইওভারের দিকে এগুতে শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মানুষজন নিরাপদ আশ্রয়ের দিকে ছুটতে থাকে। বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট।খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হয়। পুলিশ মিছিলকারীদের ধাওয়া করে। এ সময় মিছিলকারীরা বিভিন্ন গলিতে ঢুকে ইটপাটকেল দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও রবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। কয়েক দফায় মিছিলকারীরা থেমে থেমে পুলিশের ওপর চোরাগুপ্তা হামলা চালায়। এ সময় পুলিশ একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। বাকিরা অনায়াসে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। প্রায় আধা ঘণ্টা পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এতে মহাখালী ফ্লাইওভারসহ আশপাশের প্রতিটি রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছিল চরম যানজটের। বেলা ১১টার দিকে এলাকার যানবাহন চলাচল পুরোদমে স্বাভাবিক হয়।
বনানী মডেল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে কথা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষকালে মমিনুর রহমান (১৮) নামে একজনকে আটক করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। মমিনুরের পিতার নাম আব্দুল মান্নান। বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জ থানাধীন মিজবাগ গ্রামে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মমিনুর শিরিব কর্মী বলে জানা গেছে। মমিনুরের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে পুলিশ কর্মকর্তা অবশ্য মমিনুরকে থানা হাজতে দেখাতে পারেনি। বলেছেন, মমিনুরকে নিয়ে পুলিশ হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছে।
অবশ্য বনানী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ভূইয়া মাহবুব হাসান জনকণ্ঠের কাছে দাবি করেছেন, জামায়াত-শিবিরের মিছিলকারীরা মাত্র কয়েক মিনিট রাস্তা অবস্থান করতে পেরেছে। পুলিশের বাধার মুখে মিছিলকারীরা রাস্তায় দাঁড়াতেই পারেনি।
এদিকে প্রায় একই সময়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় ঝটিকা মিছিল বের করে জামায়াত-শিবির। শিবির কর্মীরা মতিঝিলের বিভিন্ন গলিতে আগে অবস্থান নেয়। এরপর আচমকা তারা মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা রাস্তায় নেমে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এ সময় পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মিছিলকারীরা ঝটিকা মিছিল নিয়ে ইত্তেফাক মোড়ে যায়। যাওয়ার সময় মিছিলকারীরা বেশ কয়েকটি যানবাহনে ভাংচুর করে। তারা যানবাহনের দরজা জানালার কাঁচ ভেঙ্গে ফেলে। এ সময় পুলিশ বাঁধা দিলে মিছিলকারীরা বিভিন্ন গলিতে ঢুকে পড়ে। মুহূর্তেই পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ এ সময় বেশ কয়েকটি কাঁদানে গ্যাসশেল ও রবার বুলেট ছুড়ে। এমন অবস্থায় বেশ কয়েক দফায় পুলিশের সঙ্গে মিছিলকারীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পৃথক ২টি ঘটনায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। মিছিলকারীরা অন্তত ১০টি যানবাহনে ভাংচুর করেছে।
মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হায়াত-উজ্জামান মোল্যা জনকণ্ঠকে জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশকে কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও রবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। তবে সেভাবে কেউ হতাহত হয়নি। পুলিশ কাউকে গ্রেফতার বা আটক করতে পারেনি। এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
No comments