অক্টোবর থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে
চলতি বছরের শেষ দিকে বহুল প্রত্যাশিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরুর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। রাজধানীর যানজট নিরসনে এই প্রকল্প মহাজোট সরকারের শুরুতেই নেয়া হয়েছিল। কিন্তু নানা জটিলতার কারণে তা আজও শুরু করা সম্ভব হয়নি। চলতি বছরের অক্টোবর মাস থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছে ৮ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা। সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে (পিপিপি) মাধ্যমে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
বৃহস্পতিবার বনানী সেতু বিভাগের কনফারেন্স রুমে ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যোগাযোগমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ওবায়দুল কাদের জানান, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়েছে। ফান্ডিংয়ের কোন সমস্যা নেই। ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি অর্থ দিতে আগ্রহী।
যোগাযোগামন্ত্রী বলেন, আমরা সেতু বিভাগ, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও টেকনিক্যাল কমিটির মতামত নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। এরপর পরই কাজ শুরু হবে। তিন বছর মেয়াদী এ প্রকল্পটি সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বাস্তবায়িত হবে। ২৭ ভাগ অর্থায়ন করবে সরকার, বাকি ৭৩ ভাগ অর্থায়ন করবে ইটালিয়ান-থাই কোম্পানি।
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠতেই পারে তাহলে কাজ শুরুর বিলম্ব কেন। নাকি আশায় আশায় এই প্রকল্পটিও পদ্মা সেতুর পরিণতি লাভ করবে। এ প্রসঙ্গে যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, অনেকেই মনে করতে পারেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ ঝুলে গেছে। এ কথা ঠিক নয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরুর কাজ প্রক্রিয়াধীন। ৪২.১ কিলোমিটার এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের আগে কিছু জটিলতা হয়েছে। সেটা হলো, ঘনবসতিপূর্ণ নগরীতে অনেক মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপনার কথা চিন্তা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের অনেক সময় লেগেছে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দের কোন সমস্যা না থাকার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি এখনই অর্থ দিতে প্রস্তুত। ওরা আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আমরা প্রস্তুত হলেই কাজ শুরু হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রী জানান, ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সংশোধিত প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। কোম্পানিটি ২৫ বছর টোল আদায় করবে বলেও জানান।
মন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও- মগবাজার-কমলাপুর-সায়দাবাদ হয়ে কুতুবখালী গিয়ে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলাচনা করেই রুটের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান মন্ত্রী। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী সাহারা খাতুন, সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কবির আহম্মেদ।
উল্লেখ্য, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ের জন্য ৬০ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নে মহাখালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জমি অধিগ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হলে স্থানীয় লোকজন এতে সম্মতি দেয়নি। কয়েকটি এলাকায় প্রকল্পের রুট অন্যদিকে নির্ধারণ করতে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এ নিয়ে কয়েকটি মামলাও হয়েছে। সঙ্কট সমাধানে যোগাযোগ মস্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঢাকার বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্য, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে কয়েকটি বৈঠকের আয়োজন করেছিলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বাস্তবতা হলো প্রকল্প বাস্তবায়নে আর্থিক সংস্থানের কোন ব্যবস্থা না হওয়ার কারণে রুট নির্ধারণের বিষয়টিও এতদিন ঝুলে ছিল।
সর্বশেষ যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের চলতি বছর প্রকল্পে কাজ শুরুর আশ্বাস দিলেও নানা কারণে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। তাছাড়া বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ দিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়টি কতটুকু প্রাধান্য পাবে এ নিয়েও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
No comments