পরিবেশ দূষণের কারিগর ॥ কয়লার ব্যবহার বাড়ছে
গোটা বিশ্বের জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন খবর হলো, পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারিগর কয়লার ব্যবহার আবারও বাড়ছে। জ্বালানির উৎস হিসেবে কয়লা কেন ফিরে আসছে? এর হাত থেকে বাঁচার উপায় কি?
ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আইইএ শিল্পোন্নত দেশগুলোর জ্বালানির বিষয়টি নিয়ে গবেষণা করে থাকে। সম্প্রতি তারা জানিয়েছে, জ্বালানির উৎস হিসেবে কয়লা আবারও ফিরে আসছে। এক গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে, বর্তমান বিশ্বে ‘ব্রাউন কোল’ বা বাদামি কয়লা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে জার্মানি। আইইএ জানিয়েছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ‘ক্রুড তেল।’ তারপরেই রয়েছে কয়লা। বর্তমানে গোটা বিশ্বের জ্বালানি চাহিদার শতকরা ২৮ ভাগ মেটানো হয় এই কয়লা পুড়িয়ে। এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা গ্যাসের উচ্চমূল্যের কারণে আবারও কয়লার দিকে ঝুঁকছে, যেমনটি জানালেন আইইএ-র নির্বাহী পরিচালক মারিয়া ফান ডের হ্যোফেন বলেন, ‘‘গ্যাস এবং কয়লা কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি লড়াই চলছে। উচ্চমূল্যের কারণে গ্যাস এই লড়াইয়ে হারছে এবং স্বল্পমূল্যের কারণে কয়লা জিতছে। পাশাপাশি ইউরোপ আগের তুলনায় স্বল্প পরিমাণে কার্বন ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। সেটাও আরেকটি কারণ।”যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে বিশাল পরিমাণে কয়লা উত্তোলন করা হয়। তবে সেদেশে গ্যাসের দামও তুলনামূলকভাবে অনেক কম। এই কারণে মার্কিন কয়লার বাজারের নজর পড়েছে এখন ইউরোপের ওপর। এই ব্যাপারে মারিয়া ফান ডের হ্যোফেন বলেন, ‘‘আমরা দেখছি যে কয়লা এখন এমন বাজার খুঁজছে যেখানে তারা বেশি দাম পাবে এবং সেটি হচ্ছে ইউরোপ। আর এটাই ইউরোপের সমস্য। এখানে বাজার মূল্যের কারণে গ্যাস মার খাচ্ছে কয়লার কাছে। আর অ্যামেরিকাতে ঘটছে এর ঠিক উল্টোটা।”
আশঙ্কার কথা হলো, বিগত ১৯৭০ সালের পর থেকে গোটা বিশ্বে কয়লার ব্যবহার বেড়েছে এবং আগামী ২০১৭ সাল পর্যন্ত সেটা বাড়তেই থাকবে। প্রতি বছর পাঁচ লাখ টন করে বেশি কয়লা পোড়ানো হবে সে সময় পর্যন্ত, এমন একটি ধারণা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা আইইএ-র। পরিবেশবাদীরা ইতিমধ্যেই উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছেন কয়লার এই ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে। কয়লার এই আগ্রাসনের পেছনে তারা ইউরোপের অল্প পরিমাণে কার্বন ক্ষতিপূরণকেও দায়ী করছেন। কারণ যে পরিমাণ কার্বন দেশগুলো নির্গমন করে, তার চেয়ে অনেক কম ক্ষতিপূরণ তাদের এখন দিতে হয়, জানালেন গ্রিনপিসের কর্মকর্তা কার্স্টেন শ্মিড্ট। তার কথায়, ‘‘কয়েক বছর আগে টনপ্রতি কার্বন নির্গমনের জন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হতো ৩০ ইউরো করে। আর এখন সেটা দাঁড়িয়েছে মাত্র ছয় কি সাত ইউরোতে। এজন্যই শিল্প কারখানাগুলো এত বেশি কয়লা পুড়িয়ে চলেছে।”
অর্থাৎ কেবল বাজার মূল্যের কারণে নয়, বিশ্ব নেতৃবৃন্দের তৈরি নীতিতে ত্রুটির ফলেও কয়লা এখন ফিরে আসছে। অথচ এর খেসারত কিন্তু দিতে হবে গোটা বিশ্ববাসীকে। এছাড়া, দ্রুত শিল্পায়ন হচ্ছে যেসব দেশে তারাও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী। চীন এবং ভারত এই দুটি দেশ কোনো নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমতো কয়লা ব্যবহার করছে। তাদের সিদ্ধান্তের ওপরও নির্ভর করছে পরিবেশ রক্ষার অনেক বিষয়। আইইএ-র প্রধান কর্মকর্তা মারিয়া ফানডের হ্যোফেন এই ব্যাপারে বলেন, ‘‘এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, বেইজিং এবং দিল্লী জ্বালানি ব্যবহার এবং তার উৎসের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবে তার প্রভাব পড়বে আমাদের সবার ওপর।”
তবে চীনের পরিস্থিতি দিন দিন ইতিবাচক হচ্ছে। কারণ সেদেশে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি উৎপাদনের পরিমাণ বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে। এই ব্যাপারে গ্রিন পিসের কার্স্টেন শ্মিড্ট জানালেন, ‘‘চীনের উন্নতিটি বেশ আশাব্যঞ্জক। কারণ, গত কিছুদিনে সেখানে বায়ুচালিত জ্বালানি ব্যবহারের হার বেড়েছে। তারা প্রথমে জার্মানির কাছ থেকে প্রযুক্তিটি শিখে নিয়েছে এবং পরে নিজ দেশে এসে তার ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদন শুরু করেছে। চীনে এখন প্রতি দুই ঘণ্টায় একটি করে বায়ুচালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে।
চীনের এই উন্নতি পরিবেশ আন্দোলন কর্মীদের মনে আশার সঞ্চার করেছে। তবে ইউরোপ, অ্যামেরিকারও যে বিষয়ে একটি মস্ত দায়িত্ব রয়েছে সেটাও যে ভুলবার নয়!
জুবায়ের আব্দুল বারি
No comments