বিলাওয়ালের পথ সহজ হবে না by হারুন-অর-রশীদ
রাজনীতিতে হাতেখড়ি আগেই হয়েছে। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন এরই মধ্যে। তবে মা বেনজির ভুট্টোর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে দেওয়া ভাষণটি ছিল বিলাওয়াল ভুট্টোর প্রথম বড় ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার ঘটনা।
বিলাওয়ালের গত ২৭ ডিসেম্বরের ওই ভাষণটি ছিল খুবই আবেগপূর্ণ। অনেকে বলছেন, এর মাধ্যমে কার্যত তাঁর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের আসল সূচনা হলো।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির প্রবেশ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য পরিবারতন্ত্রের ধারাবাহিকতারই অংশ। তবে তাঁকে রাজনীতির মাঠে বড় ধরনের সফলতা পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। ‘ভুট্টো’ নামের জোরে তিনি পার না-ও পেতে পারেন। তবে অনেক বিশ্লেষক স্বীকার করেছেন, ২৭ ডিসেম্বরের ওই ভাষণে বিলাওয়াল নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন; বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁকে এমনকি প্রতিবেশী ভারতের বিখ্যাত রাজনৈতিক বংশ গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীর চেয়ে উদ্যমী মনে হয়েছে।
বিলাওয়াল পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভুট্টো পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি। তাঁর মা বেনজির ভুট্টো ও পিতামহ জুলফিকার আলী ভুট্টো উভয়ই ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ভুট্টো পরিবার ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটির রাজনীতির প্রধানতম শক্তি। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর ভাষণে বিলাওয়াল নিজেকে সেই পরিবারের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিলাওয়াল স্পষ্ট করেই জানান দিয়েছেন, ভুট্টো পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি।
সিন্ধু প্রদেশে ভুট্টোদের পারিবারিক কবরস্থানের কাছে আয়োজিত হয়েছিল বেনজিরের মৃত্যুবার্ষিকীর সমাবেশ। সেখানে সমবেত লাখ দুয়েক সমর্থকের উদ্দেশে বিলাওয়াল বলেন, ‘ভুট্টো হচ্ছে একটি আবেগের নাম; একটি ভালোবাসার নাম।’ গণতন্ত্রের বিরোধী শক্তির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরাই শেষ পর্যন্ত হারবে। যত ভুট্টোকে তোমরা মারবে, ঘরে ঘরে তত বেশি ভুট্টো জন্ম নেবে।’
জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় আসেন। ১৯৭৭ সালে তিনি সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৯৭৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হক তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলান। তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক নির্বাচনী সমাবেশে ইসলামি জঙ্গিদের গুলি ও আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন তিনি।
বর্তমানে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে জুলফিকার ভুট্টোর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে এই প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচিত সরকার তার নির্ধারিত পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে। আগামী মে মাসের দিকে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে পিপিপির নেতৃত্বাধীন সরকারের চলতি শাসনামলে বিশেষ করে সাধারণ পাকিস্তানিরা নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে। তীব্র বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, ভয়াবহ দুর্নীতির পাশাপাশি পাকিস্তান এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদের দৌরাত্ম্য প্রত্যক্ষ করেছে এই সরকারের আমলেই।
এই অবস্থায় অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করা বিলাওয়ালকে নতুন আশার প্রতীক হিসেবে দেখছে পিপিপি। বিলাওয়ালের মা বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল, বাবা বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধেও রয়েছে। তবে তরুণ বিলাওয়াল সংগত কারণেই এখনো এসবের বাইরে। বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি ও উদ্যমী ভাব এবং ‘ভুট্টো’ নামকে ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে পিপিপি।
বিলাওয়ালের বয়স এখন মাত্রই ২৪। সে হিসেবে ঠিক সময়ে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। কেননা, পাকিস্তানের আইন অনুসারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে। তবে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারলেও বিলাওয়ালই পিপিপির নির্বাচনী প্রচারণার পুরোধা থাকবেন। কেননা, রাষ্ট্রপ্রধানের পদে থাকার কারণে আইন অনুসারে জারদারি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
পাকিস্তানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিন্নাহ ইনস্টিটিউটের রেজা রুমি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, পিপিপি বিলাওয়ালকে কেন্দ্রীয় মঞ্চে রাখবে। এর আংশিক কারণ, সামনের কাতারে তাদের একজন কারিশম্যাটিক নেতা দরকার। আরেকটি কারণ হচ্ছে পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর বয়সকাঠামো। দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগই বয়সে তরুণ।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক হাসান আনসারির মতে, ভুট্টোর নাম ভাঙানোর সব চেষ্টা করবেন বিলাওয়াল। তবে আসল কাজটা করা কঠিন হবে তাঁর জন্য। এখন আর শুধু চাতুর্যপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েই জনগণের মন জয় করা সম্ভব নয়। তাঁকে বাস্তব অনেক কিছু করে দেখাতে হবে। আনসারি বলেন, বিলাওয়াল তাঁর বক্তব্যে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের কথা বারবার বলেছেন। তাঁর পিতামহ জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭০ সালে এই স্লোগান দিয়েছিলেন। তবে কোনো রূপকল্প বা এ ধরনের পরিকল্পনা দিতে পারেননি বিলাওয়াল।
বিশ্লেষক তালাত মাসুদের মতে, সিন্ধু প্রদেশে ভুট্টো নামের জোরে পিপিপি পার পেয়ে যেতে পারে। তবে দেশের অন্য কোথাও তা কাজে দেবে না।
এদিকে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিলাওয়াল ও ভারতের রাহুল গান্ধীর মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খুঁজতে শুরু করেছেন। দুজনের উত্থানের ধরনে মিল আছে। বিলাওয়ালের মতো রাহুল ভারতের বিখ্যাত গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি। তাঁর বাবা রাজীব গান্ধী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। মা সোনিয়া গান্ধী বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেত্রী। পিতামহ জওহরলাল নেহরু ছিলেন স্বাধীনতাসংগ্রামী এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
তবে বিলাওয়াল ও রাহুলের মধ্যে অনেক বিষয় রয়েছে, যা তাঁদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরে। বিলাওয়াল তুলনামূলকভাবে কম বয়সে রাজনীতির মাঠে এলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়স হলেও নির্বাচনের রাজনীতিতে তিনিই পিপিপির পক্ষে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কথাবার্তায় তিনি রাহুলের তুলনায় কম ধীরস্থির। বিলাওয়ালের ২৭ ডিসেম্বরের ভাষণ ছিল আগুনঝরা। তিনি দেশের প্রভাবশালী বিচার বিভাগকেও ছেড়ে কথা বলেননি। নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে যারা ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
অন্যদিকে রাহুল গান্ধী ২০০৪ সালের আগে রাজনীতিতে নামেননি। ওই সময়ে তাঁর বয়স ছিল ৩৫-এর কাছাকাছি। ভারতের উত্তর প্রদেশে বাবার সাবেক আসনে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন রাহুল। তবে রাজনীতিতে নামারও তিন বছর পর দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। গণমাধ্যম থেকে নিজেকে দৃশ্যত আড়াল করে রেখে একজন উদাসীন রাজনীতিকের পরিচয় দিয়ে চলেছেন রাহুল। তবে এসবের পরও তাঁকে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কান্ডারি এবং আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী মনে করা হয়।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির প্রবেশ দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য পরিবারতন্ত্রের ধারাবাহিকতারই অংশ। তবে তাঁকে রাজনীতির মাঠে বড় ধরনের সফলতা পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। ‘ভুট্টো’ নামের জোরে তিনি পার না-ও পেতে পারেন। তবে অনেক বিশ্লেষক স্বীকার করেছেন, ২৭ ডিসেম্বরের ওই ভাষণে বিলাওয়াল নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন; বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁকে এমনকি প্রতিবেশী ভারতের বিখ্যাত রাজনৈতিক বংশ গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি রাহুল গান্ধীর চেয়ে উদ্যমী মনে হয়েছে।
বিলাওয়াল পাকিস্তানের রাজনীতিতে ভুট্টো পরিবারের তৃতীয় প্রজন্মের প্রতিনিধি। তাঁর মা বেনজির ভুট্টো ও পিতামহ জুলফিকার আলী ভুট্টো উভয়ই ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ভুট্টো পরিবার ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশটির রাজনীতির প্রধানতম শক্তি। মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীর ভাষণে বিলাওয়াল নিজেকে সেই পরিবারের যোগ্য উত্তরাধিকারী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। বিলাওয়াল স্পষ্ট করেই জানান দিয়েছেন, ভুট্টো পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে ভবিষ্যতে দেশকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত হচ্ছেন তিনি।
সিন্ধু প্রদেশে ভুট্টোদের পারিবারিক কবরস্থানের কাছে আয়োজিত হয়েছিল বেনজিরের মৃত্যুবার্ষিকীর সমাবেশ। সেখানে সমবেত লাখ দুয়েক সমর্থকের উদ্দেশে বিলাওয়াল বলেন, ‘ভুট্টো হচ্ছে একটি আবেগের নাম; একটি ভালোবাসার নাম।’ গণতন্ত্রের বিরোধী শক্তির উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘তোমরাই শেষ পর্যন্ত হারবে। যত ভুট্টোকে তোমরা মারবে, ঘরে ঘরে তত বেশি ভুট্টো জন্ম নেবে।’
জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের শাসনক্ষমতায় আসেন। ১৯৭৭ সালে তিনি সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। ১৯৭৯ সালে সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়াউল হক তাঁকে ফাঁসিতে ঝোলান। তাঁর মেয়ে বেনজির ভুট্টো একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হন। ২০০৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর এক নির্বাচনী সমাবেশে ইসলামি জঙ্গিদের গুলি ও আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন তিনি।
বর্তমানে পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন জোট সরকারের নেতৃত্বে রয়েছে জুলফিকার ভুট্টোর প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে এই প্রথমবারের মতো কোনো নির্বাচিত সরকার তার নির্ধারিত পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে যাচ্ছে। আগামী মে মাসের দিকে দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে পিপিপির নেতৃত্বাধীন সরকারের চলতি শাসনামলে বিশেষ করে সাধারণ পাকিস্তানিরা নানা সমস্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে। তীব্র বিদ্যুৎ ও গ্যাস-সংকট, মুদ্রাস্ফীতি, ভয়াবহ দুর্নীতির পাশাপাশি পাকিস্তান এযাবৎকালের সবচেয়ে ভয়ংকর সন্ত্রাসবাদের দৌরাত্ম্য প্রত্যক্ষ করেছে এই সরকারের আমলেই।
এই অবস্থায় অক্সফোর্ডে লেখাপড়া করা বিলাওয়ালকে নতুন আশার প্রতীক হিসেবে দেখছে পিপিপি। বিলাওয়ালের মা বেনজির ভুট্টোর বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ছিল, বাবা বর্তমান প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির বিরুদ্ধেও রয়েছে। তবে তরুণ বিলাওয়াল সংগত কারণেই এখনো এসবের বাইরে। বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর নিষ্কলুষ ভাবমূর্তি ও উদ্যমী ভাব এবং ‘ভুট্টো’ নামকে ভোটের রাজনীতিতে কাজে লাগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে পিপিপি।
বিলাওয়ালের বয়স এখন মাত্রই ২৪। সে হিসেবে ঠিক সময়ে আগামী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে তাতে অংশ নিতে পারবেন না তিনি। কেননা, পাকিস্তানের আইন অনুসারে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বয়স কমপক্ষে ২৫ বছর হতে হবে। তবে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারলেও বিলাওয়ালই পিপিপির নির্বাচনী প্রচারণার পুরোধা থাকবেন। কেননা, রাষ্ট্রপ্রধানের পদে থাকার কারণে আইন অনুসারে জারদারি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না।
পাকিস্তানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জিন্নাহ ইনস্টিটিউটের রেজা রুমি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি মনে করি, পিপিপি বিলাওয়ালকে কেন্দ্রীয় মঞ্চে রাখবে। এর আংশিক কারণ, সামনের কাতারে তাদের একজন কারিশম্যাটিক নেতা দরকার। আরেকটি কারণ হচ্ছে পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর বয়সকাঠামো। দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগই বয়সে তরুণ।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক হাসান আনসারির মতে, ভুট্টোর নাম ভাঙানোর সব চেষ্টা করবেন বিলাওয়াল। তবে আসল কাজটা করা কঠিন হবে তাঁর জন্য। এখন আর শুধু চাতুর্যপূর্ণ বক্তৃতা দিয়েই জনগণের মন জয় করা সম্ভব নয়। তাঁকে বাস্তব অনেক কিছু করে দেখাতে হবে। আনসারি বলেন, বিলাওয়াল তাঁর বক্তব্যে খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের কথা বারবার বলেছেন। তাঁর পিতামহ জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭০ সালে এই স্লোগান দিয়েছিলেন। তবে কোনো রূপকল্প বা এ ধরনের পরিকল্পনা দিতে পারেননি বিলাওয়াল।
বিশ্লেষক তালাত মাসুদের মতে, সিন্ধু প্রদেশে ভুট্টো নামের জোরে পিপিপি পার পেয়ে যেতে পারে। তবে দেশের অন্য কোথাও তা কাজে দেবে না।
এদিকে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ বিলাওয়াল ও ভারতের রাহুল গান্ধীর মধ্যে সাদৃশ্য-বৈসাদৃশ্য খুঁজতে শুরু করেছেন। দুজনের উত্থানের ধরনে মিল আছে। বিলাওয়ালের মতো রাহুল ভারতের বিখ্যাত গান্ধী পরিবারের উত্তরসূরি। তাঁর বাবা রাজীব গান্ধী ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, যিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন। মা সোনিয়া গান্ধী বর্তমানে ভারতের ক্ষমতাসীন কংগ্রেসের সবচেয়ে প্রভাবশালী নেত্রী। পিতামহ জওহরলাল নেহরু ছিলেন স্বাধীনতাসংগ্রামী এবং ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী।
তবে বিলাওয়াল ও রাহুলের মধ্যে অনেক বিষয় রয়েছে, যা তাঁদের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরে। বিলাওয়াল তুলনামূলকভাবে কম বয়সে রাজনীতির মাঠে এলেন। মাত্র ২৪ বছর বয়স হলেও নির্বাচনের রাজনীতিতে তিনিই পিপিপির পক্ষে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রাখবেন বলে মনে করা হচ্ছে। কথাবার্তায় তিনি রাহুলের তুলনায় কম ধীরস্থির। বিলাওয়ালের ২৭ ডিসেম্বরের ভাষণ ছিল আগুনঝরা। তিনি দেশের প্রভাবশালী বিচার বিভাগকেও ছেড়ে কথা বলেননি। নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে যারা ক্ষমতা কেড়ে নিতে চায়, তাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি।
অন্যদিকে রাহুল গান্ধী ২০০৪ সালের আগে রাজনীতিতে নামেননি। ওই সময়ে তাঁর বয়স ছিল ৩৫-এর কাছাকাছি। ভারতের উত্তর প্রদেশে বাবার সাবেক আসনে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে জয়ী হয়েছেন রাহুল। তবে রাজনীতিতে নামারও তিন বছর পর দলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদকের পদ পান। গণমাধ্যম থেকে নিজেকে দৃশ্যত আড়াল করে রেখে একজন উদাসীন রাজনীতিকের পরিচয় দিয়ে চলেছেন রাহুল। তবে এসবের পরও তাঁকে কংগ্রেসের ভবিষ্যৎ কান্ডারি এবং আগামী দিনের প্রধানমন্ত্রী মনে করা হয়।
No comments