তেলেঙ্গানা রাজ্য কত দূর?
পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের ব্যাপারে আগামী এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানোর ঘোষণা দিয়েছে ভারত সরকার। অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের জন্য আন্দোলন চলছে ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে। এই আন্দোলনে বহু প্রাণহানি হয়েছে। বারবার আশা জেগেছে তেলেঙ্গানা রাজ্যের পক্ষের মানুষের।
আবার সেই আশা ভেঙে গেছে। তাই প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি একটা এসপার-ওসপার হবে? না আবারও অনিশ্চয়তার শিকেয় ঝুলে যাবে তেলেঙ্গানা ইস্যু। ইতিমধ্যেই আন্দোলনকারীরা সরকারের ঘোষণাকে সময়ক্ষেপণের আরেকটি নজির বলেআখ্যায়িত করেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে সম্প্রতি অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের ‘স্বীকৃত’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর আসে এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্তের ওই ঘোষণা। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আন্দোলন-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি হয়।
অন্ধ্র প্রদেশের ২৩টি জেলার মধ্যে ১০টি জেলা নিয়ে এই পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবি উঠেছে। ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর হায়দরাবাদ এ অঞ্চলের মধ্যেই পড়েছে। এই ১০ জেলার জনসংখ্যা চার কোটি। তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতারা বলেন, তাঁদের অঞ্চলটি কেন্দ্রের উপেক্ষার শিকার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেলেঙ্গানা রাজ্য প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই নৈরাশ্যের সুর বেজেছিল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) প্রধানের কণ্ঠে। বৈঠকে যে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে বিতর্কে ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতেই তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সর্বশেষ এই সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের আটটি ‘স্বীকৃত’ রাজনৈতিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি।
বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই টিআরএস-প্রধান কলভাকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই বৈঠক নিয়ে তাঁরা খুব বেশি আশাবাদী নন। তার পরও বৈঠকে যাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, সর্বদলীয় বৈঠক হওয়াটা জরুরি। বিষয়টি শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। বৈঠকের শেষে হলোও তা-ই। আবারও অভিযোগ উঠল, তেলেঙ্গানার সমাধানে সময় কিনছে কেন্দ্র।
সর্বদলীয় বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বেরিয়ে না আসায় কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন টিআরএস-প্রধান চন্দ্রশেখর রাও। তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, সরকার পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনে মোটেও আন্তরিক নয়। এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়।
এর আগে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি আটটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল নিয়ে বৈঠক করেছিল কেন্দ্র। এ বছরের ৪ ডিসেম্বর সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিন্ধে। তেলেঙ্গানাপন্থীদের মনে তাতে খানিকটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, কেন্দ্র সমাধানসূত্র খোঁজার একটা চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠক আবার অনিশ্চয়তাই সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেও তার আগে আলোচনা প্রক্রিয়া চলবে বলেও জানিয়েছেন। তাই সন্দেহ দেখা দিয়েছে, তাঁর দেওয়া এক মাসের সময়সীমা হয়তো নিছকই কথার কথা মাত্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে বলেছেন, দিল্লির ওই বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘সব পক্ষের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। আমি সরকারকে বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে জানাব এবং এক মাসের মধ্যেই আমরা এ ব্যাপারে ফলাফল নিয়ে আসতে পারব।’
তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিরোধিতাকারীদের এই আন্দোলন মোটেই পছন্দ নয়। কারণ, নতুন তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হতে পারে হায়দরাবাদ। ভারতের অনেক বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধ কোম্পানির অবস্থান সেখানে। নতুন রাজ্যের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়। সিদ্ধান্তটি ভারতের পার্লামেন্টে পাস হতে হবে।
এদিকে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিষয়টি বিপুলসংখ্যক মানুষের বিশাল ও বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে ‘প্যান্ডোরা বাক্স’ খুলে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। দেশটির জাতিগত বৈচিত্র্য সব সময়ই জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। ১৮টি সরকারি ভাষার দেশ ভারতে ভাষাগত বিভক্তি রয়েই গেছে।
দাউদ ইসলাম, বিবিসি থেকে
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে সম্প্রতি অন্ধ্র প্রদেশ রাজ্যের ‘স্বীকৃত’ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর আসে এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্তের ওই ঘোষণা। সাম্প্রতিক সময়ে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আন্দোলন-বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে বৈঠকটি হয়।
অন্ধ্র প্রদেশের ২৩টি জেলার মধ্যে ১০টি জেলা নিয়ে এই পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনের দাবি উঠেছে। ভারতের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর হায়দরাবাদ এ অঞ্চলের মধ্যেই পড়েছে। এই ১০ জেলার জনসংখ্যা চার কোটি। তেলেঙ্গানা আন্দোলনের নেতারা বলেন, তাঁদের অঞ্চলটি কেন্দ্রের উপেক্ষার শিকার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তেলেঙ্গানা রাজ্য প্রশ্নে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগেই নৈরাশ্যের সুর বেজেছিল তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির (টিআরএস) প্রধানের কণ্ঠে। বৈঠকে যে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে বিতর্কে ইতি টানার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতেই তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে এক মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সর্বশেষ এই সর্বদলীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অন্ধ্র প্রদেশের আটটি ‘স্বীকৃত’ রাজনৈতিক দলের দুজন করে প্রতিনিধি।
বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই টিআরএস-প্রধান কলভাকুন্তলা চন্দ্রশেখর রাও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন, এই বৈঠক নিয়ে তাঁরা খুব বেশি আশাবাদী নন। তার পরও বৈঠকে যাচ্ছেন তাঁরা। কারণ, সর্বদলীয় বৈঠক হওয়াটা জরুরি। বিষয়টি শুধু পিছিয়েই যাচ্ছে। বৈঠকের শেষে হলোও তা-ই। আবারও অভিযোগ উঠল, তেলেঙ্গানার সমাধানে সময় কিনছে কেন্দ্র।
সর্বদলীয় বৈঠকে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বেরিয়ে না আসায় কেন্দ্রের সমালোচনা করেছেন টিআরএস-প্রধান চন্দ্রশেখর রাও। তিনি সোজাসাপ্টা বলে দিয়েছেন, সরকার পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠনে মোটেও আন্তরিক নয়। এক মাসের মধ্যে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আশ্বাস লোক দেখানো ছাড়া কিছুই নয়।
এর আগে ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি আটটি স্বীকৃত রাজনৈতিক দল নিয়ে বৈঠক করেছিল কেন্দ্র। এ বছরের ৪ ডিসেম্বর সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিন্ধে। তেলেঙ্গানাপন্থীদের মনে তাতে খানিকটা হলেও আশার সঞ্চার হয়েছিল। মনে করা হয়েছিল, কেন্দ্র সমাধানসূত্র খোঁজার একটা চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠক আবার অনিশ্চয়তাই সৃষ্টি করেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এক মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানালেও তার আগে আলোচনা প্রক্রিয়া চলবে বলেও জানিয়েছেন। তাই সন্দেহ দেখা দিয়েছে, তাঁর দেওয়া এক মাসের সময়সীমা হয়তো নিছকই কথার কথা মাত্র।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে বলেছেন, দিল্লির ওই বৈঠকে তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত শুনেছেন। তিনি বলেন, ‘সব পক্ষের বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। আমি সরকারকে বৈঠকের ফলাফল সম্পর্কে জানাব এবং এক মাসের মধ্যেই আমরা এ ব্যাপারে ফলাফল নিয়ে আসতে পারব।’
তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিরোধিতাকারীদের এই আন্দোলন মোটেই পছন্দ নয়। কারণ, নতুন তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী হতে পারে হায়দরাবাদ। ভারতের অনেক বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধ কোম্পানির অবস্থান সেখানে। নতুন রাজ্যের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত নয়। সিদ্ধান্তটি ভারতের পার্লামেন্টে পাস হতে হবে।
এদিকে পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের বিষয়টি বিপুলসংখ্যক মানুষের বিশাল ও বৈচিত্র্যময় দেশ ভারতে ‘প্যান্ডোরা বাক্স’ খুলে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। দেশটির জাতিগত বৈচিত্র্য সব সময়ই জাতীয় ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় সরকারের জন্য চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। ১৮টি সরকারি ভাষার দেশ ভারতে ভাষাগত বিভক্তি রয়েই গেছে।
দাউদ ইসলাম, বিবিসি থেকে
No comments