ঋণ কেলেঙ্কারি-ব্যাংকের ৬০৯ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে মালয়েশিয়া পাড়ি! by হায়দার আলী ও শেখ শাফায়াত হোসেন
সোনালী ব্যাংক থেকে আত্মসাৎ করা প্রায় ৬০০ কোটি নিয়ে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স নিট কম্পোজিট লিমিটেডের চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমা ও তাঁর ছেলে তসলিম হাসান মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অন্যদিকে চেয়ারম্যানের আরেক ছেলে তাওহীদ হাসান দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে পালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। টি অ্যান্ড ব্রাদার্স ২০১১ সালে সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখার তৎকালীন উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান (বরখাস্ত) ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের (বরখাস্ত) সহযোগিতায় ভুয়া আমদানি-রপ্তানি দেখিয়ে ফান্ডেড এবং নন-ফান্ডেড মিলিয়ে ৬০৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় বলে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে জানা গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, টি অ্যান্ড ব্রাদার্স সোনালী ব্যাংক থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ফান্ডেড টাকা নিয়েছে ৩২০ কোটি এবং নন-ফান্ডেড হিসেবে নিয়েছে প্রায় ২৯০ কোটি টাকা। হলমার্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুদকের গঠিত কমিটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধান চলাকালেই টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান ও তাঁর দুই ছেলে সুকৌশলে সোনালী ব্যাংক থেকে নেওয়া টাকার বেশির ভাগ আগেই মালয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেন। জিনাত ফাতেমা বর্তমানে সেখানে বাড়ি কিনে বড় ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। পাশাপাশি সেখানে প্লাস্টিক ও গার্মেন্ট কারখানা প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসাও শুরু করেছেন। তবে তাওহীদ হাসান বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। তাওহীদ হাসান টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, তসলিম হাসান পরিচালক। জিনাত ফাতেমার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনা পত্রিকায় প্রকাশের পর থেকে মালয়েশিয়ায় আছেন জিনাত ফাতেমা ও তসলিম হাসান। বাড়ি কিনে বসবাসসহ মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন ব্যবসাও করছেন তাঁরা। ঘনিষ্ঠজনরা আরো জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে থাকা তাওহীদ হাসান তুরাগ ও গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকার কারখানাসহ তাঁদের বেশ কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক সম্প্রতি রমনা থানায় ২৬টি মামলা করে। এর মধ্যে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স একাই নিয়েছে ৩২০ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমা ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদক ১৪টি মামলা করে।
দুদক সূত্র জানায়, মিথ্যা আমদানি ও রপ্তানি দেখিয়ে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স কৌশলে ৩২০ কোটি টাকা (ফান্ডেড) আত্মসাৎ করে। অনুসন্ধানী টিম পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, জিনাত ফাতেমা টি অ্যান্ড ব্রাদার্স কম্পোজিটের পাশাপাশি এক্সপারটেক লিমিটেড নামের একটি কম্পানিরও চেয়ারম্যান। তিনি ও তাঁর দুই ছেলে ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ওই সব প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০টি বিটিবি এলসির মাধ্যমে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল রপ্তানি দেখান। এভাবে সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরে ৭০টি আইবিপি ভাউচারের মাধ্যমে বিধিবহির্ভূতভাবে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা (ফান্ডেড) হাতিয়ে নেওয়া হয়। একইভাবে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে আরো ফান্ডেড প্রায় ১৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের করপোরেট অফিস ও ফ্যাক্টরি অফিসে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমা, এমডি ও পরিচালকের খোঁজ মেলেনি। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানে যাঁরা এখন কাজ করছেন তাঁদের বেশির ভাগই কয়েক মাস আগে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীও তাঁদের চেয়ারম্যান ও এমডির দেখা পাননি বলে জানান।
গত বুধবার বারিধারা ডিওএইচএসে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের একটি কার্যালয়ে দেখা যায়, কম্পানির কোনো সাইনবোর্ড নেই। ৭ নম্বর সড়কের ৪২৮ নম্বর বাড়ি- এই ঠিকানা ব্যবহার করেই সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে জালিয়াতি করে অর্থ নেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই অফিসে গিয়ে কথা হয় জাফর নামের এক যুবকের সঙ্গে। তিনি নিজেকে অফিস পিয়ন পরিচয় দেন। চেয়াম্যান বা এমডি আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওনারা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন কারখানায়। এইখানে আসেন না। তুরাগের অফিসে গিয়ে খোঁজ নেন।' সরেজমিনে আবদুল্লাহপুরের তুরাগ থানা রোডে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রধান কার্যালয়। এখানেও নেই প্রতিষ্ঠানের কোনো সাইনবোর্ড। ফটকের দেয়ালের এক পাশে কাগজে ছোট করে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স কম্পোজিট লেখা রয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী আহসান হাবিব জানান, এমডি তাওহীদ অফিসে নেই। তথ্য দেওয়ার মতো আর কেউ নেই বলেও তিনি জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'চেয়ারম্যান ও পরিচালক মালয়েশিয়ায় ব্যবসার কাজে ব্যস্ত আছেন। পালিয়ে গেছেন কি না জানি না।' কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে মালিকপক্ষ টালবাহানা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান মাত্র তিন মাস ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, তিনি শুধু প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডির নাম জানেন। তাঁরা কোথায় থাকেন তা জানেন না। যোগাযোগ করার মতো কোনো ঠিকানা বা মোবাইল ফোন নম্বরও তিনি জানেন না। পরে অন্য কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়াম্যান তাঁর ছেলেদের নিয়ে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন। গতকাল গুলশানের ওই বাসায় গিয়ে জানা যায়, মাস তিনেক আগে তাঁরা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের একটি বাসায় আছেন।
গতকাল বিকেলেই উত্তরার ওই ভাড়া বাসায় গিয়ে জিনাতের চতুর্থ সন্তান তৌকির হাসানের (২৫) দেখা পাওয়া যায়। তিনি জানান, চার মাস আগে তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন। এর মধ্যে তাঁর মা, বড় ভাই, মেঝ ভাই কাউকেই তিনি দেখেননি। কারো সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও হয়নি। কারো মোবাইল ফোন নম্বরও তাঁর কাছে নেই।
'আমাদের কাছে খবর আছে আপনার মা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন'- কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার মা অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য তিনি বাইরে যেতে পারেন।'
জিনাত পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, মা এবং দুই ভাইয়ের অবর্তমানে তৌকির হাসানই এখন ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। অন্যদিকে তাওহীদ হাসান দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের ঋণ জালিয়াতি প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ভুয়া আমদানি-রপ্তানি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৬০৯ কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ফান্ডেড ৩২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শুধু এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক ১৪টি মামলা করেছে। ননফান্ডেড টাকা জালিয়াতির ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে। জালিয়াতি করে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমার মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছেও এমন অভিযোগ আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' তিনি আরো বলেন, 'মামলায় এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হলে আমাদের কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে মাঠে নামবেন।'
অনুসন্ধানের সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমাকে নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি হাজির হননি। দুদকের ডাকে সাড়া না দেওয়া প্রসঙ্গে মীর জয়নাল আবেদীন শিবলী বলেন, তিনি অসুস্থতার কথা বলে কমিশনে হাজির হননি। তবে লিখিত জবাব দিয়েছেন।
দুদক সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন অনুসন্ধান শেষে জালিয়াতি করে সোনালী ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সসহ পাঁচটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক সম্প্রতি রমনা থানায় ২৬টি মামলা করে। এর মধ্যে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স একাই নিয়েছে ৩২০ কোটি টাকা। এই প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমা ও তাঁর দুই ছেলের বিরুদ্ধে দুদক ১৪টি মামলা করে।
দুদক সূত্র জানায়, মিথ্যা আমদানি ও রপ্তানি দেখিয়ে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স কৌশলে ৩২০ কোটি টাকা (ফান্ডেড) আত্মসাৎ করে। অনুসন্ধানী টিম পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, জিনাত ফাতেমা টি অ্যান্ড ব্রাদার্স কম্পোজিটের পাশাপাশি এক্সপারটেক লিমিটেড নামের একটি কম্পানিরও চেয়ারম্যান। তিনি ও তাঁর দুই ছেলে ২০১১ সালের ২৭ অক্টোবর থেকে ২০১২ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত ওই সব প্রতিষ্ঠানের নামে ৭০টি বিটিবি এলসির মাধ্যমে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা মূল্যের মালামাল রপ্তানি দেখান। এভাবে সোনালী ব্যাংক রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে উপমহাব্যবস্থাপক এ কে এম আজিজুর রহমান ও সহকারী মহাব্যবস্থাপক সাইফুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরে ৭০টি আইবিপি ভাউচারের মাধ্যমে বিধিবহির্ভূতভাবে ১২৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা (ফান্ডেড) হাতিয়ে নেওয়া হয়। একইভাবে ভুয়া রপ্তানি দেখিয়ে আরো ফান্ডেড প্রায় ১৮০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
গত বুধ ও বৃহস্পতিবার টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের করপোরেট অফিস ও ফ্যাক্টরি অফিসে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমা, এমডি ও পরিচালকের খোঁজ মেলেনি। ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকেও পাওয়া যায়নি। জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানে যাঁরা এখন কাজ করছেন তাঁদের বেশির ভাগই কয়েক মাস আগে নিয়োগ পেয়েছেন। এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীও তাঁদের চেয়ারম্যান ও এমডির দেখা পাননি বলে জানান।
গত বুধবার বারিধারা ডিওএইচএসে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের একটি কার্যালয়ে দেখা যায়, কম্পানির কোনো সাইনবোর্ড নেই। ৭ নম্বর সড়কের ৪২৮ নম্বর বাড়ি- এই ঠিকানা ব্যবহার করেই সোনালী ব্যাংকের রূপসী বাংলা হোটেল শাখা থেকে জালিয়াতি করে অর্থ নেওয়া হয়েছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই অফিসে গিয়ে কথা হয় জাফর নামের এক যুবকের সঙ্গে। তিনি নিজেকে অফিস পিয়ন পরিচয় দেন। চেয়াম্যান বা এমডি আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ওনারা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন কারখানায়। এইখানে আসেন না। তুরাগের অফিসে গিয়ে খোঁজ নেন।' সরেজমিনে আবদুল্লাহপুরের তুরাগ থানা রোডে টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের প্রধান কার্যালয়। এখানেও নেই প্রতিষ্ঠানের কোনো সাইনবোর্ড। ফটকের দেয়ালের এক পাশে কাগজে ছোট করে টি অ্যান্ড ব্রাদার্স কম্পোজিট লেখা রয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তাকর্মী আহসান হাবিব জানান, এমডি তাওহীদ অফিসে নেই। তথ্য দেওয়ার মতো আর কেউ নেই বলেও তিনি জানান। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই অফিসের একজন কর্মকর্তা বলেন, 'চেয়ারম্যান ও পরিচালক মালয়েশিয়ায় ব্যবসার কাজে ব্যস্ত আছেন। পালিয়ে গেছেন কি না জানি না।' কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দিতে মালিকপক্ষ টালবাহানা করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা আশরাফ-উজ-জামান মাত্র তিন মাস ধরে ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, তিনি শুধু প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বা এমডির নাম জানেন। তাঁরা কোথায় থাকেন তা জানেন না। যোগাযোগ করার মতো কোনো ঠিকানা বা মোবাইল ফোন নম্বরও তিনি জানেন না। পরে অন্য কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়াম্যান তাঁর ছেলেদের নিয়ে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কের ২০ নম্বর বাড়িতে বসবাস করতেন। গতকাল গুলশানের ওই বাসায় গিয়ে জানা যায়, মাস তিনেক আগে তাঁরা বাসা ছেড়ে দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর সড়কের একটি বাসায় আছেন।
গতকাল বিকেলেই উত্তরার ওই ভাড়া বাসায় গিয়ে জিনাতের চতুর্থ সন্তান তৌকির হাসানের (২৫) দেখা পাওয়া যায়। তিনি জানান, চার মাস আগে তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় এসেছেন। এর মধ্যে তাঁর মা, বড় ভাই, মেঝ ভাই কাউকেই তিনি দেখেননি। কারো সঙ্গে তাঁর যোগাযোগও হয়নি। কারো মোবাইল ফোন নম্বরও তাঁর কাছে নেই।
'আমাদের কাছে খবর আছে আপনার মা মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন'- কালের কণ্ঠ প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'আমার মা অসুস্থ ছিলেন। চিকিৎসার জন্য তিনি বাইরে যেতে পারেন।'
জিনাত পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন জানান, মা এবং দুই ভাইয়ের অবর্তমানে তৌকির হাসানই এখন ব্যবসা দেখাশোনা করছেন। অন্যদিকে তাওহীদ হাসান দেশের সম্পত্তি বিক্রি করে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এদিকে দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের ঋণ জালিয়াতি প্রসঙ্গে কালের কণ্ঠকে বলেন, ভুয়া আমদানি-রপ্তানি দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি মোট ৬০৯ কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে ফান্ডেড ৩২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে শুধু এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক ১৪টি মামলা করেছে। ননফান্ডেড টাকা জালিয়াতির ঘটনায় এখনো তদন্ত চলছে। জালিয়াতি করে উত্তোলন করা টাকা নিয়ে চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমার মালয়েশিয়ায় চলে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমাদের কাছেও এমন অভিযোগ আছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।' তিনি আরো বলেন, 'মামলায় এখনো তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি। দেওয়া হলে আমাদের কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে মাঠে নামবেন।'
অনুসন্ধানের সময় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য টি অ্যান্ড ব্রাদার্সের চেয়ারম্যান জিনাত ফাতেমাকে নোটিশ দেওয়া হলেও তিনি হাজির হননি। দুদকের ডাকে সাড়া না দেওয়া প্রসঙ্গে মীর জয়নাল আবেদীন শিবলী বলেন, তিনি অসুস্থতার কথা বলে কমিশনে হাজির হননি। তবে লিখিত জবাব দিয়েছেন।
No comments