কবিতা- ভ্রমণ-০৪ by মতিন বৈরাগী
মনটা খুব অস্থির হয়েছে, ছুটছে ছটফট করছেÑ
মনেরই ভুলে সূর্য ওঠেনি হয়নি প্রভাত লাল
স্বপ্নরা সব হয়নিতো আজ হয়ে গেছে শুধু কাল
মনেরই ভুলে যায়নি কেউ উদ্যানে তুলতে ফুল
কাঁদছে মন বিজন ব্যথায় বাড়ছে কেবল ভুল
ভুলের জন্যে দিবস হয়েছে রজনীর মতো কালো
নেই স্থিরতা, শুশ্রƒষা নেই শঙ্কাবিদ্ধ আলো
মনেরই ভুলে তোমার উঠানে পড়ছে শ্বাপদ পা
ভুলের শুমারে স্বপ্ন ডুবেছে উজাড় হয়েছে গা
ভুলগুলো আজ প্রতিটি দ্বারে এঁটেছে শক্ত খিল
ভাঙছে সকল প্রিয় ঠিকানা উদ্বাস্তু আজ এই নিখিল
মনটা খুব অস্থির হয়েছে, ছুটছে ছটফট করছেÑ
নীলডাউন
রেজা ফারুক
বালকের নীলডাউনের মতো এক ভাঙাচোরা
দুপুরের হতশ্রী রোদে
রাস্তার পাশে থেমে আছে নীল ট্রাউজার পরা
দূরপাল্লার এক টুকরো মেঘ
মেঘের বনেটে বসে গাইছে তুমুল
রবীন্দ্র-নজরুল ভোরের কুজ্ঝটিকা
একাঙ্কিকা থমকে গেছে
ছাপড়া ইস্কুল ঘরের দোচালা জ্যোৎস্নায়!
অদূরের সারি সারি করোগেটের রঙজ্বলা
কলোনির ছন্নছাড়া ছায়াগুলো
স্কুলগোয়িং কিশোরীদের মতো
গোল হয়ে খেলছে বসে ফড়িঙ খেলা ঝিম্্ ...
স্কুল বাড়ির রেলিঙ, ব্যাল্্কনি
অনেকটা পথ হেঁটে এসে বসেছে খড়ের মাঠে
এক চিলতে নোনারু ধুলোয়!
কড়িকাঠে ঠোঁট ঘসে এক নিঃসঙ্গ বিরহী চড়ুই
আর এক পশলা হাফ্্প্যান্ট পরা বালক বিকেল
জলে ছুঁড়ে মারে তার শৈশবজ্বলা নিদাঘ মার্বেল
আর জঙ্্ধরা এক লাল ফেরিঅলা এসে
রোজ দুপুর বেলায় ডাকে থৈ থৈ বিষণœতা বিজড়িত
নিঃসীম অনুচ্ছ স্বরেÑডাকে গুন্্ গুন্্
নেবে নীলডাউন... নীলডাউন...
সোনালি স্মরণ
কামাল মাহমুদ
হই হই করে নেমে পড়লো ছেলেদের দল
কলকল করে গড়িয়ে গেল কিশোরীর ঝাঁক
নিমেষেই গোটা পিকনিক স্পট ভালোলাগা কোলাহলে
লাল নীল গোলাপি হলুদে সেজে উঠলো
যেন বসন্ত মেলার সকাল...
প্রাতরাশে সকাল ফুরালো
গুরুপাকে রান্না হলো আমিষ দুপুর
চুমুকে চুমুকে লাল বিকেল পান করলো তরুণ সকল
আলাপে প্রলাপে গানে কলহে কথায়
লেখা হলো মহাকাব্যইÑ
আনন্দ নদী বয়ে গেল ধ্রুপদ কল্লোলে
দিন শেষে ধীর পায়ে নেমে আসে শেষ শীতের সন্ধ্যা
বনভোজনের দল গায়ে পায়ে রাঙা ধুলো মেখে
লঘু অরণ্য থেকে জনারণ্যে ফিরে যায়
বনবাড়ি শুনশান পড়ে থাকে ভাঙা হাট
উঠোনের কোনে, কলপাড়ে, পুকুরের ঘাটে
পড়ে থাকে সোনালি স্মরণ...
তার থেকে বহুদূরে বহুদিন পরে
ঘাসফুল নদীর উজানে
বহুতল নাগরিক গাঁর মেঘ-ছোঁয়া ছাদের আঁধারে
একদিন জ্বলে ওঠে সেই বিস্মরণের দিন
সন্ধ্যামালতীর ঘ্রাণ, বিষণœ মাধবী আর
আনমনা গোলাপের পাশে
দীর্ঘশ্বাসে দুলে ওঠে স্মৃতির সবুজ
অতীত কিশোরী এক পরম যতেœ তাকে ছুঁয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
বিচ্ছিন্ন বদ্বীপ
গোলাম কিবরিয়া পিনু
আমি কখনো কখনো নিজেকে আলাদা করে ফেলি বংশ
থেকে-আত্মীয়তা থেকে! এমন কি পরিবারের সদস্য
থেকে-পিতামাতা থেকে, স্ত্রী থেকে, পুত্র থেকে, কন্যা থেকে।
নিজেকে দেখি সম্পূর্ণ একা নির্জনতার ভেতর, সমুদ্রের
মাঝখানে-সমুদ্রের অতলে, গভীর বনভূমির ভেতর, পাহাড়ের
শৃঙ্গে! আমার অস্তিত্ব আমি টের পাই-কী নিঃসঙ্গ! দুঃখ-বেদনার
ভেতর, সুখের ভেতর, যুদ্ধের ভেতর ও দ্বন্দ্বের ভেতর
কতভাবে দেখি-আর আশ্চর্য হয়ে উঠি নিজেরও কত রূপ, কত
তার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বদ্বীপ ও ভূভাগ! নিজেকে সন্ধান করে শান্ত আর
স্থির হয়ে যাই।
ছিটকিনি খোলো শিউল মনজুর
ছিটকিনি খোলো। প্রগাঢ় সম্পর্কের নিবিড় হাওয়া আসুক।
ভালোবাসার ঘনত্বে নিঃশ্বাস নেবো তোমার পৃথিবী। ছিটকিনি
খোলো। আকাশের উদারতায় রচনা করি বুকের জমিন।
তোমার উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে পথের কোমল জোনাকি।
একটু নম্র হও। হৃদয় দিয়ে এক খিলি পান খেতে দাও।
তোমার নিমগাছের ডালে পাখিরা এসে শিস দেবে। বাড়ির
ছাদ ভেসে যাবে তুমুল জোছনায়। ছিটকিনি খোলো। ইশকুল
ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ ছোটবোন অর্চনা। তাকে পৌঁছে
দাও বিদ্যালয়ের সবুজ আঙিনায়।
স্বপ্নরা সব হয়নিতো আজ হয়ে গেছে শুধু কাল
মনেরই ভুলে যায়নি কেউ উদ্যানে তুলতে ফুল
কাঁদছে মন বিজন ব্যথায় বাড়ছে কেবল ভুল
ভুলের জন্যে দিবস হয়েছে রজনীর মতো কালো
নেই স্থিরতা, শুশ্রƒষা নেই শঙ্কাবিদ্ধ আলো
মনেরই ভুলে তোমার উঠানে পড়ছে শ্বাপদ পা
ভুলের শুমারে স্বপ্ন ডুবেছে উজাড় হয়েছে গা
ভুলগুলো আজ প্রতিটি দ্বারে এঁটেছে শক্ত খিল
ভাঙছে সকল প্রিয় ঠিকানা উদ্বাস্তু আজ এই নিখিল
মনটা খুব অস্থির হয়েছে, ছুটছে ছটফট করছেÑ
নীলডাউন
রেজা ফারুক
বালকের নীলডাউনের মতো এক ভাঙাচোরা
দুপুরের হতশ্রী রোদে
রাস্তার পাশে থেমে আছে নীল ট্রাউজার পরা
দূরপাল্লার এক টুকরো মেঘ
মেঘের বনেটে বসে গাইছে তুমুল
রবীন্দ্র-নজরুল ভোরের কুজ্ঝটিকা
একাঙ্কিকা থমকে গেছে
ছাপড়া ইস্কুল ঘরের দোচালা জ্যোৎস্নায়!
অদূরের সারি সারি করোগেটের রঙজ্বলা
কলোনির ছন্নছাড়া ছায়াগুলো
স্কুলগোয়িং কিশোরীদের মতো
গোল হয়ে খেলছে বসে ফড়িঙ খেলা ঝিম্্ ...
স্কুল বাড়ির রেলিঙ, ব্যাল্্কনি
অনেকটা পথ হেঁটে এসে বসেছে খড়ের মাঠে
এক চিলতে নোনারু ধুলোয়!
কড়িকাঠে ঠোঁট ঘসে এক নিঃসঙ্গ বিরহী চড়ুই
আর এক পশলা হাফ্্প্যান্ট পরা বালক বিকেল
জলে ছুঁড়ে মারে তার শৈশবজ্বলা নিদাঘ মার্বেল
আর জঙ্্ধরা এক লাল ফেরিঅলা এসে
রোজ দুপুর বেলায় ডাকে থৈ থৈ বিষণœতা বিজড়িত
নিঃসীম অনুচ্ছ স্বরেÑডাকে গুন্্ গুন্্
নেবে নীলডাউন... নীলডাউন...
সোনালি স্মরণ
কামাল মাহমুদ
হই হই করে নেমে পড়লো ছেলেদের দল
কলকল করে গড়িয়ে গেল কিশোরীর ঝাঁক
নিমেষেই গোটা পিকনিক স্পট ভালোলাগা কোলাহলে
লাল নীল গোলাপি হলুদে সেজে উঠলো
যেন বসন্ত মেলার সকাল...
প্রাতরাশে সকাল ফুরালো
গুরুপাকে রান্না হলো আমিষ দুপুর
চুমুকে চুমুকে লাল বিকেল পান করলো তরুণ সকল
আলাপে প্রলাপে গানে কলহে কথায়
লেখা হলো মহাকাব্যইÑ
আনন্দ নদী বয়ে গেল ধ্রুপদ কল্লোলে
দিন শেষে ধীর পায়ে নেমে আসে শেষ শীতের সন্ধ্যা
বনভোজনের দল গায়ে পায়ে রাঙা ধুলো মেখে
লঘু অরণ্য থেকে জনারণ্যে ফিরে যায়
বনবাড়ি শুনশান পড়ে থাকে ভাঙা হাট
উঠোনের কোনে, কলপাড়ে, পুকুরের ঘাটে
পড়ে থাকে সোনালি স্মরণ...
তার থেকে বহুদূরে বহুদিন পরে
ঘাসফুল নদীর উজানে
বহুতল নাগরিক গাঁর মেঘ-ছোঁয়া ছাদের আঁধারে
একদিন জ্বলে ওঠে সেই বিস্মরণের দিন
সন্ধ্যামালতীর ঘ্রাণ, বিষণœ মাধবী আর
আনমনা গোলাপের পাশে
দীর্ঘশ্বাসে দুলে ওঠে স্মৃতির সবুজ
অতীত কিশোরী এক পরম যতেœ তাকে ছুঁয়ে থাকে কিছুক্ষণ।
বিচ্ছিন্ন বদ্বীপ
গোলাম কিবরিয়া পিনু
আমি কখনো কখনো নিজেকে আলাদা করে ফেলি বংশ
থেকে-আত্মীয়তা থেকে! এমন কি পরিবারের সদস্য
থেকে-পিতামাতা থেকে, স্ত্রী থেকে, পুত্র থেকে, কন্যা থেকে।
নিজেকে দেখি সম্পূর্ণ একা নির্জনতার ভেতর, সমুদ্রের
মাঝখানে-সমুদ্রের অতলে, গভীর বনভূমির ভেতর, পাহাড়ের
শৃঙ্গে! আমার অস্তিত্ব আমি টের পাই-কী নিঃসঙ্গ! দুঃখ-বেদনার
ভেতর, সুখের ভেতর, যুদ্ধের ভেতর ও দ্বন্দ্বের ভেতর
কতভাবে দেখি-আর আশ্চর্য হয়ে উঠি নিজেরও কত রূপ, কত
তার ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন বদ্বীপ ও ভূভাগ! নিজেকে সন্ধান করে শান্ত আর
স্থির হয়ে যাই।
ছিটকিনি খোলো শিউল মনজুর
ছিটকিনি খোলো। প্রগাঢ় সম্পর্কের নিবিড় হাওয়া আসুক।
ভালোবাসার ঘনত্বে নিঃশ্বাস নেবো তোমার পৃথিবী। ছিটকিনি
খোলো। আকাশের উদারতায় রচনা করি বুকের জমিন।
তোমার উঠোনে এসে দাঁড়িয়েছে পথের কোমল জোনাকি।
একটু নম্র হও। হৃদয় দিয়ে এক খিলি পান খেতে দাও।
তোমার নিমগাছের ডালে পাখিরা এসে শিস দেবে। বাড়ির
ছাদ ভেসে যাবে তুমুল জোছনায়। ছিটকিনি খোলো। ইশকুল
ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছ ছোটবোন অর্চনা। তাকে পৌঁছে
দাও বিদ্যালয়ের সবুজ আঙিনায়।
No comments