ইরাক- প্রধানমন্ত্রী মালিকির নতুন সংকট
পশ্চিম ইরাকের সুন্নিপ্রধান আনবার প্রদেশের উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মানুষ প্রধানমন্ত্রী নুরি আল-মালিকির বিরুদ্ধে খেপে উঠেছে। আর তারা তাদের রাগ প্রকাশের জন্য বেছে নিয়েছে এক ভিন্ন ধরনের স্থানকে। সিরিয়া ও জর্ডানমুখী আন্তর্জাতিক মহাসড়কের একটি অংশে গড়ে উঠেছে এক তাঁবুনগর।
প্রতিটি তাঁবুর ওপর টাঙানো হয়েছে একেকটি উপজাতীয় গোষ্ঠীর বিভিন্ন নগরের প্রতিনিধিদলের ব্যানার।
সেনাবাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি আনবার প্রদেশের একজন জ্যেষ্ঠ সুন্নি রাজনৈতিক নেতার কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। এই তাঁবুনগর সেই আন্দোলনেরই অংশ। আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদির কাছেই এর অবস্থান।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল-হাশেমিকে সন্ত্রাসবাদের দায়ে অভিযুক্ত করার এক বছরের কিছু বেশি সময় পর এ ঘটনা ঘটল। হাশেমিকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই তিন দফা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। তিনিও একজন বিশিষ্ট সুন্নি নেতা।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য হচ্ছে, এগুলো ইরাকের সুন্নি সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশোধ অভিযান ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের অভিযোগ, মালিকি ইরাক নয়, বরং শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের প্রতিই বেশি অনুগত। রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন করতে বিরোধীদের প্রতি বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছেন তিনি।
ফালুজাহ যুব পরিষদের তাঁবুর ব্যানারে লেখা ছিল, ‘দেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিতে আমরা এই সাম্প্রদায়িক সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি।’
আরেক তাঁবুর ব্যানারে লেখা, ‘আল-বুদিয়াবগোষ্ঠী দাবি জানাচ্ছে, সরকারের ইরানি কারাগার থেকে সুন্নি নারী-পুরুষদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।’
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত স্বামী বা ছেলের বদলে অনেক নারীকে আটক করে রাখার বিষয়টি হচ্ছে সবচেয়ে আবেগের। আনবারের অন্যতম প্রভাবশালী শেখ আলী হাতেম সুলাইমান বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, ‘এটা এখন একটা মানসম্মানের প্রশ্ন। রাজনীতি, সংবিধান, এমনকি জাতিসংঘও এর সমাধান দিতে পারবে না। আমরা চাই, আমাদের নারীদের এখন এই চত্বরে এনে মুক্তি দেওয়া হোক।’
এই বিরোধের আগাপাছতলাজুড়ে রয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভেদ। অনেক শিয়াই মালিকিকে সমর্থন করেন। ওই শিয়ারা মনে করেন, ইরাকে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হওয়া বোমা হামলার লক্ষবস্তু মূলত তাঁরাই।
প্রভাবশালী একটি শিয়া জোটের সমর্থনে ক্ষমতায় আছেন মালিকি। এতে কিছু বৈচিত্র্য থাকলেও সুন্নিবিরোধীদের কোনো স্থান নেই বললেই চলে।
তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। শিয়াদের মধ্য থেকেও মালিকির বিরোধিতা করার ঘটনা ঘটেছে। শিয়াধর্মীয় নেতা মোক্তাদা আল-সদর একবার জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে মালিকিকে উৎখাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সদর পার্লামেন্টে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রধান। আনবার প্রদেশে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠায় আবার তৎপর হয়েছেন তিনি। চলমান আন্দোলনে নিজের সতর্ক সমর্থন প্রসারিত করেছেন সদর। দক্ষিণ ইরাক থেকে আন্দোলনকারীদের তাঁবুনগরে নিজের সমর্থকদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন তিনি। এর ফলে এ আন্দোলন যে কেবলই একটি সুন্নি উদ্যোগ, সে ধারণা নাড়া খেয়েছে। তাঁবুনগরে ঘাঁটি গাড়া সুন্নিরা সমানে শিয়াদের নিন্দা করে গেলেও শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেন, সমস্যাটা আসলে শিয়া-সুন্নি নয়, সমস্যা হচ্ছে ইরান ও মালিকি। তবে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস রয়েই গেছে।
আনবারের প্রতিবাদ আন্দোলন সরকারের কর্তৃত্বের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই ব্যাপারে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মালিকির প্রতিক্রিয়া মিশ্র। তিনি স্বীকার করেছেন, কারাগারে বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়ে থাকতে পারে। নারী বন্দীদের বিষয়ে তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে বিরোধীদের ‘বিরক্তিকর গলাবাজিরও’ তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি। মালিকির মতে, তা দেশকে গৃহযুদ্ধ, এমনকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, কয়েকটি রাষ্ট্র ইরাকে আরেক সিরিয়া-পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টায় মদদ দিচ্ছে। কিন্তু তারা ও তাদের সমর্থকদের হিসাব ভুল। ইরাক সিরিয়া নয়।
এ সংগ্রামের যে একটি আঞ্চলিক দিক আছে, তা আন্দোলনকারীদের মাথায় আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন, এর সঙ্গে তারা একমত নয়। আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে আছে, বন্দীদের মুক্তি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন বাতিল এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি আইন বাতিল করা। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে তাঁর বাথ পার্টির প্রভাব মুছে ফেলার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, শেষের আইনটি তারই সম্প্রসারণ। তবে এগুলো হচ্ছে এই মুহূর্তের দাবি। এগুলো মিটে গেলে তারা চাইবে, সুন্নিদের ‘কোণঠাসা করে রাখার’ অবসান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানে সরকারি উদ্যোগ।
ইসরাত জাহান
সেনাবাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি আনবার প্রদেশের একজন জ্যেষ্ঠ সুন্নি রাজনৈতিক নেতার কার্যালয়ে অভিযান চালানোর পর ব্যাপক প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। এই তাঁবুনগর সেই আন্দোলনেরই অংশ। আনবার প্রদেশের রাজধানী রামাদির কাছেই এর অবস্থান।
সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট তারিক আল-হাশেমিকে সন্ত্রাসবাদের দায়ে অভিযুক্ত করার এক বছরের কিছু বেশি সময় পর এ ঘটনা ঘটল। হাশেমিকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই তিন দফা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। তিনিও একজন বিশিষ্ট সুন্নি নেতা।
আন্দোলনকারীদের বক্তব্য হচ্ছে, এগুলো ইরাকের সুন্নি সম্প্রদায়ের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশোধ অভিযান ছাড়া আর কিছুই নয়। তাদের অভিযোগ, মালিকি ইরাক নয়, বরং শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ ইরানের প্রতিই বেশি অনুগত। রাজনৈতিক বিরোধিতা দমন করতে বিরোধীদের প্রতি বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছেন তিনি।
ফালুজাহ যুব পরিষদের তাঁবুর ব্যানারে লেখা ছিল, ‘দেশকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের দিকে ঠেলে না দিতে আমরা এই সাম্প্রদায়িক সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিচ্ছি।’
আরেক তাঁবুর ব্যানারে লেখা, ‘আল-বুদিয়াবগোষ্ঠী দাবি জানাচ্ছে, সরকারের ইরানি কারাগার থেকে সুন্নি নারী-পুরুষদের যেন ছেড়ে দেওয়া হয়।’
সন্ত্রাসবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত স্বামী বা ছেলের বদলে অনেক নারীকে আটক করে রাখার বিষয়টি হচ্ছে সবচেয়ে আবেগের। আনবারের অন্যতম প্রভাবশালী শেখ আলী হাতেম সুলাইমান বিবিসির সাংবাদিককে বলেন, ‘এটা এখন একটা মানসম্মানের প্রশ্ন। রাজনীতি, সংবিধান, এমনকি জাতিসংঘও এর সমাধান দিতে পারবে না। আমরা চাই, আমাদের নারীদের এখন এই চত্বরে এনে মুক্তি দেওয়া হোক।’
এই বিরোধের আগাপাছতলাজুড়ে রয়েছে সাম্প্রদায়িক বিভেদ। অনেক শিয়াই মালিকিকে সমর্থন করেন। ওই শিয়ারা মনে করেন, ইরাকে নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হওয়া বোমা হামলার লক্ষবস্তু মূলত তাঁরাই।
প্রভাবশালী একটি শিয়া জোটের সমর্থনে ক্ষমতায় আছেন মালিকি। এতে কিছু বৈচিত্র্য থাকলেও সুন্নিবিরোধীদের কোনো স্থান নেই বললেই চলে।
তবে কিছু ব্যতিক্রমও আছে। শিয়াদের মধ্য থেকেও মালিকির বিরোধিতা করার ঘটনা ঘটেছে। শিয়াধর্মীয় নেতা মোক্তাদা আল-সদর একবার জোট থেকে বেরিয়ে গিয়ে মালিকিকে উৎখাতের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। সদর পার্লামেন্টে একটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর প্রধান। আনবার প্রদেশে ক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠায় আবার তৎপর হয়েছেন তিনি। চলমান আন্দোলনে নিজের সতর্ক সমর্থন প্রসারিত করেছেন সদর। দক্ষিণ ইরাক থেকে আন্দোলনকারীদের তাঁবুনগরে নিজের সমর্থকদের একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছেন তিনি। এর ফলে এ আন্দোলন যে কেবলই একটি সুন্নি উদ্যোগ, সে ধারণা নাড়া খেয়েছে। তাঁবুনগরে ঘাঁটি গাড়া সুন্নিরা সমানে শিয়াদের নিন্দা করে গেলেও শেষ পর্যন্ত ঘোষণা করেন, সমস্যাটা আসলে শিয়া-সুন্নি নয়, সমস্যা হচ্ছে ইরান ও মালিকি। তবে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ-অবিশ্বাস রয়েই গেছে।
আনবারের প্রতিবাদ আন্দোলন সরকারের কর্তৃত্বের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই ব্যাপারে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী মালিকির প্রতিক্রিয়া মিশ্র। তিনি স্বীকার করেছেন, কারাগারে বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানো হয়ে থাকতে পারে। নারী বন্দীদের বিষয়ে তদন্ত করে দেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। তবে বিরোধীদের ‘বিরক্তিকর গলাবাজিরও’ তীব্র নিন্দা করেছেন তিনি। মালিকির মতে, তা দেশকে গৃহযুদ্ধ, এমনকি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার দিকে ঠেলে দিতে পারে। সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলকে তিনি বলেন, কয়েকটি রাষ্ট্র ইরাকে আরেক সিরিয়া-পরিস্থিতি সৃষ্টি করার চেষ্টায় মদদ দিচ্ছে। কিন্তু তারা ও তাদের সমর্থকদের হিসাব ভুল। ইরাক সিরিয়া নয়।
এ সংগ্রামের যে একটি আঞ্চলিক দিক আছে, তা আন্দোলনকারীদের মাথায় আছে। তবে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন, এর সঙ্গে তারা একমত নয়। আন্দোলনকারীদের দাবির মধ্যে আছে, বন্দীদের মুক্তি, সন্ত্রাসবাদবিরোধী আইন বাতিল এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি আইন বাতিল করা। সাদ্দাম হোসেনের পতনের পর সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে তাঁর বাথ পার্টির প্রভাব মুছে ফেলার জন্য যে প্রক্রিয়া শুরু করা হয়, শেষের আইনটি তারই সম্প্রসারণ। তবে এগুলো হচ্ছে এই মুহূর্তের দাবি। এগুলো মিটে গেলে তারা চাইবে, সুন্নিদের ‘কোণঠাসা করে রাখার’ অবসান, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা এবং বেকারদের জন্য কর্মসংস্থানে সরকারি উদ্যোগ।
ইসরাত জাহান
No comments