গোলটেবিল বৈঠক- ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হোক’

২২ ডিসেম্বর ২০১২, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও প্রথম আলোর উদ্যোগে ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হোক’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত আলোচকদের বক্তব্য সংক্ষিপ্ত আকারে এই ক্রোড়পত্রে ছাপা হলো।
যাঁরা অংশ নিলেন
মো. ফজলে রাব্বি: চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি
গৌর গোপাল সাহা: বিচারপতি
রানা দাশ গুপ্ত: সেক্রেটারি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ
অজয় রায়: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মালেকা বেগম: অধ্যাপক, সোশ্যালজি অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি, ঢাকা
শাহীন আনাম: নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
শাহনাজ হুদা: চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বাসুদেব ধর: সভাপতি, মহানগর পূজা উদ্যাপন কমিটি
নিরঞ্জন অধিকারী: অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্য হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট
মেঘনা গুহঠাকুরতা: নির্বাহী পরিচালক, রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ
রবীন্দ্র ঘোষ: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
রাখী দাশ পুরকায়স্থ: সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ
অজয় দাশগুপ্ত: সহযোগী সম্পাদক, সমকাল
নিনা গোস্বামী: ঊর্ধ্বতন উপপরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
কানন বালা: তৃণমূল প্রতিনিধি, গাজীপুর
সঞ্চালক
আব্দুল কাইয়ুম, সহযোগী সম্পাদক, প্রথম আলো

আলোচনা
আব্দুল কাইয়ুম: একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন প্রণয়নের দাবি দীর্ঘদিনের। বিশেষভাবে হিন্দু নারীদের অধিকার রক্ষায় এটা দরকার। নাগরিক সমাজ জনমত গড়ে তুলেছে। গত জুলাই ২০১২ জাতীয় সংসদে ‘হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বিল’ পাস হয়। কিন্তু বিবাহ নিবন্ধন ঐচ্ছিক হওয়ায় নাগরিক উদ্যোগের সংগঠনগুলো তা মেনে নিতে পারেনি। এ বিষয় প্রথমে আলোচনা শুরু করবেন শাহীন আনাম।
শাহীন আনাম: আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন হোক। মহিলা পরিষদ অনেক দিন ধরে এ দাবি করে আসছে। একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইনের প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে অনুভব করি। ৫০টিরও বেশি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নাগরিক সংগঠন নিয়ে একটি নাগরিক উদ্যোগ গ্রহণ করি। নাগরিক উদ্যোগ থেকে দেশের ২০টি জেলায় কাজ করি। মানুষের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা হয়। মানুষ আমাদের এই উদ্যোগকে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। তারা এত দিন এ রকম একটি উদ্যোগের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমরা মুসলিম-হিন্দু আলাদা করে বিশেষ কোনো শ্রেণীর নারী অধিকারের কথা বলি না, সবার কথা বলি। হিন্দু নারীরা আমাদের কাছে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ‘আপনারা কোন নারীর অধিকারের কথা বলছেন? আমাদের তো কোনো অধিকার নেই। আমাদের যে বিয়ে হয়েছে, তার প্রমাণ কী? আমাদের স্বামীরা আমাদের অস্বীকার করেন।’ বিশ্বাস করুন, অনেক হিন্দু নারী হাত ধরে বলেছেন, তাঁদের জন্য যেন কিছু একটা করা হয়। তাঁরা আর পারছেন না। অনেকে অনেক রকমের শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার। প্রচলিত ব্যবস্থায় পারিবারিক আইনসহ কোনো আইনের সুবিধা হিন্দু নারীরা পান না। আমরা কেন একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন চাইছি? আদৌ এর প্রয়োজন আছে কি না, এ জন্য একটি গবেষণা করেছি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে হিন্দু নারীদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের গবেষণা, সবকিছু থেকে নিশ্চিত হয়েছি যে একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন অবশ্যই করা দরকার এবং তা এখনই। একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু আইনের জন্য ৯০ হাজার নারীর সই নিয়ে, ৫০টির বেশি সংগঠন আলোচনা-পর্যালোচনা করে আইনমন্ত্রীর কাছে আইনের খসড়া জমা দিয়েছি।
মেঘনা গুহঠাকুরতা: সমাজে নারীরা বিভিন্নভাবে সহিংসতার শিকার হন। গবেষণায় মূলত দেখতে চেয়েছি, নিবন্ধনের অভাবে হিন্দু নারীরা কী কী সমস্যায় পড়ছেন। কীভাবে তাঁরা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এটি করার জন্য চারটি পদ্ধতি অনুসরণ করেছি। এর মধ্যে একটি হলো জাতীয় জরিপ। এখানে ৭৭০ জন নারী এবং ১৯৩ জন পুরুষের সঙ্গে কথা বলি। নারীদের বয়স ১৮ থেকে ২৬ বছর। পুরুষের বয়স ৫০-এর ঊর্ধ্বে। তাঁদের মধ্যে বিবাহিত ৮৫ শতাংশের বেশি। ৯ শতাংশ বিধবা। ৩ শতাংশ অবিবাহিত। সন্তান ছিল ৯১ শতাংশের বেশি। ৩৬ শতাংশ মা-বাবা, ভাইবোন নিয়ে থাকেন। ৯ দশমিক ৮ শতাংশ যৌথ পরিবার। অধিকংশ নারী শুধু সই করতে পারেন। অধিকংশ পুরুষ পঞ্চম শ্রেণী পাস। ১৫ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে অধিকংশ হিন্দু নারীর বিবাহ হচ্ছে। স্বামীর বয়স ২৫ থেকে ৩০-এর মধ্যে। উত্তরদাতাদের ৬৩ দশমিক ৯ শতাংশ যৌতুকের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৯১ দশমিক ৩ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন অবশ্যই বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত এবং জরিপে অংশ নেওয়া অধিকংশ পুরুষই নিবন্ধনের পক্ষে জোরালো মত দিয়েছেন। গবেষণার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছি, নিবন্ধন ছাড়া হিন্দু নারীদের অধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়।
কানন বালা: হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। কিন্তু ঐচ্ছিকভাবে আইনটি পাস হওয়ায় খুব দুঃখ পেয়েছি। কারণ, ঐচ্ছিক হওয়ায় কেউ এটাকে মানবে না। আমরা কতটা শারীরিক, কতটা মানসিক নির্যাতনের শিকার হই, সমাজের কাছে কতটা অসম্মানিত হই, তা কেউ বুঝবে না।
আমার স্বামী ছিল লোভী। বড় রকমের যৌতুক না পেয়ে আমাকে ছেড়ে অন্য জায়গায় বিয়ে করে। একপর্যায়ে আদালতে দাঁড়িয়ে বলে, আমাকে বিয়ে করেনি! চেনে না! ইত্যাদি বলে আমাকে ও সন্তানদের অস্বীকার করে। একমাত্র নিবন্ধন না থাকার কারণে সে এতটা প্রতারণা করতে পেরেছে। এখন আমি ভাসমান। কোথাও কোনো জায়গা নেই। উত্তরাধিকার আইন না থাকার কারণে বাপের বাড়িতে জায়গা নেই, স্বামীর প্রতারণার শিকার। মনে হয়, আমরা দেশের অবাঞ্ছিত জনগণ, যাদের ন্যূনতম অধিকারের কথা রাষ্ট্র ভাবে না।
রবীন্দ্র ঘোষ: কিছু বিষয় নিয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। চাই আইনটি হোক। আইনের বিরোধিতা করছি না। তবে কয়েকটি বিষয়ে আলোচনা করতে চাই। হিন্দু বিবাহ ধর্ম পালনের একটি অংশ। হিন্দু আইনে বিবাহ হলো আত্মার সঙ্গে আত্মার, মাংসের সঙ্গে মাংসের এবং অস্থিতে অস্থিতে মিলন। (কলকাতা হাইকোর্ট)। হিন্দু বিবাহ বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ ও আচার-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়। সমগ্র জীবন একসঙ্গে ধর্মাচরণ করার অঙ্গীকারই হলো হিন্দু বিবাহ। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিশ্বাস জন্মে, তারা এক দেহ, এক মন, এক আত্মা। স্বামীর পরিবার যথাযোগ্য মর্যাদাসহকারে নববধূকে বরণ করে। স্বামীর অবর্তমানেও তার স্ত্রীর ব্যয়ভার স্বামীর পরিবার বহন করে। কিন্তু নিবন্ধন চালু হলে হিন্দু বিবাহের ভিত্তি নষ্ট হবে। ফলে স্ত্রী স্বামীর বাড়ির অস্থায়ী সদস্য হয়ে পড়বে। আচার-অনুষ্ঠান বাদ দিয়ে নিবন্ধনের দিকে ঝুঁকবে। ফলে আত্মিক বিয়ে না হয়ে কাগুজে বিয়ে হবে। সব সময় ঝামেলা লেগেই থাকবে। নিবন্ধন হলেই তা বাতিলের প্রশ্ন উঠবে। আর দুষ্ট উচ্ছৃঙ্খল স্বামী স্ত্রী ও সন্তানদের ছেড়ে চলে যাবে। মূল কথা হচ্ছে, আইন পরিবর্তন হোক। কিন্তু বাধ্যতামূলক করাটা যুক্তিযুক্ত মনে করি না। হিন্দুদের হাজারও সমস্য রয়েছে। সেগুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হোক। এর সঙ্গে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনের বিষয়টি আসতে পারে। ২০১২ সালে দেশের ৬৪টি জেলায় ঘুরেছি। এই জেলাগুলোতে ৬৫০ জন হিন্দুকে হত্যা করা হয়েছে। ধর্ষণ ও গণধর্ষণ করা হয়েছে ২১২ জনকে। জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত (ফোর্সফুল কনভারশন) করা হয়েছে ২৬৩ জনকে। জোরপূর্বক ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা (ফোর্সফুল অকুপেশন অব ল্যান্ড) হয়েছে দুই হাজার ৬৯৩ জনকে। সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক মন্দির ভাঙা হয়েছে। জোর করে অপহরণ করা হয়েছে ৯৩০টি। ২০০২ সালেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধনে কোনো আপত্তি নেই। হিন্দুদের নির্যাতনের এসব বিষয়েরও সমাধান করতে হবে।
অজয় দাশগুপ্ত: হিন্দু বিবাহ আইন ঐচ্ছিক হওয়ায় সমস্যার সমাধান হয়নি। কারণ, বিবাহের এক পক্ষ নিবন্ধনে রাজি, অপর পক্ষ রাজি না। এই অবস্থায় কী হবে, তার কোনো নির্দেশনা নেই। জন্মনিবন্ধন, ভোটার আইডি মেনে নিয়েছি। তাহলে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন বাধ্যতামূলক হওয়ায় বাধা কোথায়? অনেক মানুষ ধর্মচর্চা করে না। কিন্তু তারা আচার-অনুষ্ঠান করে। একসময় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হিন্দু এ দেশে ছিল। এখন ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ কথা স্বীকার করি, হিন্দুদের হাজারও সমস্যা রয়েছে। কিন্তু অন্য সমস্যার সমাধান না হলে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা যাবে না—এ যুক্তিও সঠিক মনে করি না। নিবন্ধন না হওয়া প্রতিদিন জীবন যাপনের একটি গুরুতর সমস্যা। তাই হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না করার পক্ষে কোনো যুক্তি থাকতে পারে না। যত দ্রুত সম্ভব, হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন করা হোক। এর সঙ্গে অর্পিত সম্পত্তিসহ সব সমস্যার সমাধান করা হোক।
রানা দাশ গুপ্ত: ১৯৪৭ সালের পর থেকে আজ পর্যন্ত হিন্দুরা নির্যাতনের শিকার। সে সময় দেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এখন ৯ দশমিক ৩ শতাংশ। কেন বছরের পর বছর জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে? ২০১২ সালের সহিংসতার ঘটনা সবই সত্য। দিনের পর দিন সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আজ পর্যন্ত কারও শাস্তি হয়েছে, এমন উদাহরণ নেই। রবীন্দ্র ঘোষ বিবাহ নিবন্ধনের বিরুদ্ধে নন। তিনি হয়তো বলতে চেয়েছেন, এত সমস্যা থাকতে এই আলোচনা আগে কেন? কিন্তু এখনকার বাস্তবতায় নিজের ভেতরের সমস্যাগুলো, ঘরের সমস্যাগুলো অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চোখ বন্ধ থাকলেও প্রলয় বন্ধ থাকছে না। বর্তমান হিন্দু আইন পড়েছি। আইনে হিন্দু বিবাহের রীতিনীতি, আচার-অনুষ্ঠান—সবকিছু আগের মতো আছে। নিবন্ধন হলো বিবাহের দালিলিক প্রমাণ। ৪০ বছরের আইন পেশার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, একজন প্রতারক স্বামী যখন আদালতে দাঁড়িয়ে স্ত্রী ও সন্তানদের অস্বীকার করে, তখন খেই হারিয়ে ফেলি। দালিলিক প্রমাণের অভাবে কিছুই করতে পারি না। ১৯৬১ সালে মুসলিম অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) হওয়ায় মুসলিম পরিবার ও নারী সুরক্ষিত হয়েছে। হিন্দু নারীদের অধিকার রক্ষা করতে হলে নিবন্ধনকে বাধ্যতামূলক করতেই হবে। তা না হলে হিন্দু পরিবারগুলোর অধিকার সুরক্ষিত হবে না।
নিনা গোস্বামী: নাগরিক সমাজ এত দিন একটা লক্ষ্য নিয়ে কাজ করেছে। বর্তমান হিন্দু আইনে সেই লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। আইনটি ঐচ্ছিক হয়েছে। তাই কানন বালাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হলো না। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক না হলে কাউকে শাস্তি দেওয়া যাবে না। এতে আইনটি হবে গুরুত্বহীন। আইনের প্রজ্ঞাপনের জন্য ফজলে রাব্বি সাহেব তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ায় আমরা খুশি হয়েছি। আশা করব, তিনি দ্রুত বিধিমালা করারও ব্যবস্থা করবেন। নাগরিক উদ্যোগ থেকে হিন্দু বিবাহের পূর্ণাঙ্গ আইনের খসড়া দেওয়া হয়েছিল। আইনের মধ্যে বহুবিবাহের জন্য শাস্তি ও বিবাহবিচ্ছেদের ব্যবস্থার কথা বলেছিলাম। কিন্তু হিন্দু সমাজের জন্য একটি অপূর্ণ আইন তৈরি হয়েছে। মাননীয় সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ফজলে রাব্বি সাহেব, আমরা লক্ষ করেছি, আপনি অনেক বিষয়ে আন্তরিক। আপনি বলেছেন, আমরা যদি কখনো দাবি তুলি, তাহলে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন। আজকে রবীন্দ্র বাবুসহ সবাই আপনার কাছে দাবি করছি, হিন্দু বিবাহ বাধ্যতামূলক করার জন্য যা যা করা দরকার, তার উদ্যোগ গ্রহণ করুন।
অজয় রায়: আজকের আলোচনার বিষয় হিন্দু বিবাহ বাধ্যতামূলক করা হোক। এখানে অন্য কোনো আলোচনা আসা উচিত নয়। হিন্দু বিবাহ আইন ঐচ্ছিক করা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত এর প্রজ্ঞাপন হয়নি। এটা খুব দুঃখজনক। আইনটি ঐচ্ছিক হয়েছে। এখন সরকারের কাছে দাবি, কারও ওপর নির্ভর না করে একে বাধ্যতামূলক করা হোক। নিবন্ধনের বিষয়টি সবাই বুঝেছি। নিবন্ধন হলে হিন্দুদের কোনো আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ হবে না। নিবন্ধনের ফলে সাত পাকে ঘোরাও বন্ধ হবে না। তবু কিছু মানুষ নিছক বিরোধিতা করে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফজলে রাব্বির মাধ্যমে সরকারের কাছে অনুরোধ করব, এক সপ্তাহের মধ্যে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়ার হোক।
মো. ফজলে রাব্বি: আপনাদের আইনের বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আলোচনা করছি। আমরা একভাবে ভাবি, আমলারা অন্যভাবে ভাবেন। বাস্তব সত্য হলো, সচিবালয়কে এখনো মন্ত্রণালয় করতে পারিনি। রানাদা একটি কমিশনের কথা বলেছেন। আজকের আলোচনায় অনেক সম্মানিত ব্যক্তি আছেন। আপনারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে কমিশন গঠন করতে পারেন। প্রয়োজনে আপনাদের সহযোগিতা করব। এই কমিশন অর্পিত সম্পত্তিসহ বিভিন্ন অমীমাংসিত বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারে। কানন বালার কথা শুনে আঘাত পেয়েছি। অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। কোনো পিতা তাঁর সন্তানকে অস্বীকার করলে সেই মায়ের কী অবস্থা হয়, তা বুঝতে পারি। আজকে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এই বাস্তবতায় আপনারা একটা কমিশন করুন। এখান থেকে এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করুন। আপনারা আইনটি বাধ্যতামূলক চাইছেন। যদি বলি, আপনারাই চান না। না চাওয়ার সংখ্যা হয়তো খুব কম, কিন্তু আছে তো। আমরা যখন আইনটি করি, তখনো বিরোধিতা ছিল। জীবনের একটি অভিজ্ঞতা উল্লেখ করি। বন্ধুর মেয়ের বিয়ের ১১ বছর পর সম্পর্কের টানাপোড়েনে মীমাংসায় বসলাম। প্রতারক ছেলে বিয়ে করেনি বলে অস্বীকার করল। আশ্চর্য হলাম। বলে কী! আমি নিজে ওই বিয়েতে উপস্থিত ছিলাম। চোখের সামনে সাত পাকে ঘোরাসহ সব আচার-অনুষ্ঠান হয়েছে। তখন থেকে অনুভব করেছি, হিন্দু বিবাহের দালিলিক প্রমাণ থাকা উচিত। সংসদীয় কমিটির সভাপতি হিসেবে কথা দিচ্ছি, বিধি করার সময় আপনাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব। আমি সব সময় আপনাদের পাশে আছি।
নিরঞ্জন অধিকারী: বৈদিক দ্রব্যযোগ্যকে মানসযোগ্যে পরিণত করলেন আরণ্যকের ঋষিরা। তাঁরা বললেন, নিষ্কাম কর্মই যোগ্য। অনেকে বেদের কথা বলেন। সমাজ কীভাবে চলবে, চারটি বেদে পৃথকভাবে তার উল্লেখ নেই। বেদ, ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, উপনিষদ—এগুলো শ্রুতি। বিবাহপ্রথাসহ যাবতীয় আইনকে বলে স্মৃতি। স্মৃতির আরেক নাম ধর্মশাস্ত্র। ধর্ম মানে কেবল ধর্মীয় কৃত্য নয়। ধর্ম মানে বৈশিষ্ট্য, সংস্কৃতি, বিশ্বাস, আইন ইত্যাদি। স্মৃতিশাস্ত্র মানবধর্মশাস্ত্র। দায়ভাগ প্রবন্ধগ্রন্থ। দায়ভাগ মিতাক্ষরা মূল বই না। মনুসংহিতা থেকে দায়ভাগ। যাজ্ঞাবল্ক্যস্মৃতি থেকে মিতাক্ষরা। মুনু সংহিতা, পরাশর সংহিতা, হারিৎ সংহিতা, বৃহস্পতি সংহিতা, শুক্র সংহিতা—এর একটার সঙ্গে অন্যটির মতপার্থক্য রয়েছে। তাহলে আপনারা যে শাস্ত্রের কথা বলেন, সেটা কোন শাস্ত্র? আবার, শ্রীহট্ট স্মৃতিগ্রন্থ বলে আলাদা স্মৃতিশাস্ত্র আছে। সিলেট অঞ্চলের মানুষ সেই স্মৃতিশাস্ত্র মেনে চলে। তাহলে সংহিতাগুলো, স্মৃতিশাস্ত্র—কোনো কিছুরই চিরন্তনতা নেই। আগে ব্রাহ্মণদের প্রাধান্য ছিল। সেখান থেকে সরে এসেছি। কাজেই শ্রুতি আর স্মৃতিকে এক করে দেখার দরকার নেই। বিয়ের সময় স্বামী ‘সারা জীবন ভাত-কাপড় দিতে বাধ্য থাকিব’ বলে অঙ্গীকার করেন। এই অঙ্গীকারের বাধ্যবাধকতা থাকতে অসুবিধা কোথায়? বিবাহ শ্রাদ্ধশান্তিসহ বিভিন্ন সংকট থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনটি কমিশন (নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনে নিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ) গঠনের সুপারিশ করছি—হিন্দুদের শাস্ত্রীয় যাবতীয় বিধিবিধান দেখার জন্য হিন্দুধর্মীয় নেতা, চিন্তাবিদ, বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিশন; হিন্দু আইনবিদদের নিয়ে একটি আইন কমিশন; সরকারের একটি আইন কমিশন—এই তিনটি কমিশন থেকে হিন্দু সমাজের বিভিন্ন সংকটের সমাধানগুলো বের করতে হবে।
রাখী দাশ পুরকায়স্থ: পূর্ণাঙ্গ-অপূর্ণাঙ্গ যা-ই হোক, আইনটি হয়েছে। এটি হাতে নিয়ে কথা বলার এবং অগ্রসর হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আশির দশকে প্রয়াত বিচারপতি দেবেশ ভট্টাচার্যের মাধ্যমে হিন্দু আইন সংস্কারের আন্দোলন শুরু করেছিলাম। তখন মালেকা আপা সাধারণ সম্পাদক, সুফিয়া কামাল সভাপতি। একসঙ্গে আন্দোলন করেছি। সেদিনের আন্দোলন বৃথা যায়নি। সেই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আমরা ঐচ্ছিক নিবন্ধনের বিধান পেয়েছি। কিন্তু আইনের বাধ্যবাধকতা না থাকলে কেউ এর সুফল নিতে পারবে না। আজকে আমাদের দাবি হলো, আইনের বাধ্যবাধকতা থাকতে হবে। আইন না মানলে কী হবে, তার নির্দেশনা থাকতে হবে। একান্ত ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়া গেছে। একটি রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ থাকতে হবে, যাতে সবাই প্রতিকার পায়। যেকোনো দুর্ঘটনার প্রথম শিকার হচ্ছে নারী। সেই নারী যখন বলছে, ‘আমি প্রতিকার চাই’, সেখানে আর কোনো কথা থাকতে পারে না। এখন হিন্দু নারীদের ঘরে প্রলয়ের ঝড় বইছে। বাইরে থেকে সেটা কেউ দেখতে পাচ্ছে না। সংবিধানে নারী-পুরুষের সমান অধিকারের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানের আলোকেও বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা উচিত। তাহলে নারীর বিবাহবিচ্ছেদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
শাহনাজ হুদা: মুসলিম-হিন্দু উভয় আইনে নিবন্ধন না হলে বিবাহ অবৈধ হবে না। কিন্তু মুসলিম বিবাহ নিবন্ধন না হওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হিন্দুরা পারিবারিক আদালতে যেতে পারে। সেখানে তাদের ভরণপোষণ, সম্পর্ক পুনরুদ্ধার, অভিভাবকত্ব ইত্যাদি বিষয়ের প্রতিকার চাইতে পারে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রে বিবাহের প্রমাণ জরুরি। হিন্দু আইনের ওপর গবেষণা করেছি। সেখানে দেখেছি, কিছু বিষয় নিয়ে দ্বিমত আছে। হিন্দু বিবাহের নিবন্ধন নিয়ে দ্বিমত নেই। গবেষণায় কিছু বাস্তব সমস্যা দেখেছি। যেমন: বিবাহের কোনো প্রমাণ না থাকায় স্ত্রী-স্বামী এক জায়গায় বদলি হতে পারছেন না। একইভাবে বিবাহের প্রমাণ না থাকায় স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী পেনশন পাচ্ছেন না। বিদেশভ্রমণের জন্য ভিসার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু নারীরা স্বামীর দ্বারা নির্মম নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। যেমন: একজন স্বামীর ঘটনা জানি, স্ত্রী পানি চেয়েছেন। স্বামী এক গ্লাস অ্যাসিড দিয়েছেন। এই নারী শত চেষ্টায়ও তাঁকে ছাড়তে পারছেন না। এই প্রতারক স্বামীরা নারীদের স্বামী থেকে যাচ্ছেন। তাই হিন্দু বিবাহ বাধ্যতামূক করা একান্ত জরুরি।
বাসুদেব ধর: সবাই ধর্মের কথা বলি। একসময় ব্রাহ্মণ ছাড়া পূজা হতো না। ভারতের হাইকোর্ট রায় দিয়েছেন, ব্রাহ্মণ ছাড়া অন্যরাও পূজা করতে পারবেন। এমনকি নারীরাও পূজা করতে পারবেন। তাহলে সেই চিরকালীন বিশ্বাস কোথায় গিয়ে ঠেকে? উত্তরাধিকার আইনে নারীরা সম্পত্তি পান না। এখানে ভয় থাকে, কনভারশন (ধর্মান্তরিত) হলে সম্পত্তি বেহাত হয়ে যায়। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ভীতি কাজ করে। তাই নতুন কোনো কিছুর মধ্যে যেতে তাঁরা ভয় পান। নিবন্ধন বাধ্যতামূলক বিষয়টি হিন্দুদের জন্য অত্যন্ত ভালো একটি পদক্ষেপ। মনে হয়, তাদের মধ্য থেকেই জোরাল দাবি উঠবে, কেন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে না। সব সম্প্রদায়ের মানুষের সমান অধিকার চাইছি, অথচ নিজের পরিবারে একজন পুরুষ ও নারী সমান নয়। তাহলে কীভাবে মানুষের সমানাধিকার আন্দোলনে শরিক হব? সেই আন্দোলনে সফল হব? দিনে দিনে সবাই বুঝতে পেরেছি যে হিন্দু বিবাহের নিবন্ধন কতটা প্রয়োজন। পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের গালমন্দ করবে। কারণ, এ রকম একটি বিষয় নিয়েও আমাদের আলোচনা সভা করতে হচ্ছে। আন্দোলন-সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অতএব, আর এক মুহূর্ত কালক্ষেপণ না করে, যত দ্রুত সম্ভব নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হোক।
মালেকা বেগম: ছেলেটির কোনো সমস্যা নেই। যত সমস্যা মেয়েটির। মেয়েটির ক্ষেত্রে যত বিধিনিষেধ। বিভিন্নভাবে তাকে চাপের মধ্যে রাখা হয়। মেয়েটিও ধীরে ধীরে ভাবতে থাকে, সে অন্যদের থেকে আলাদা। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মেয়েদের প্রগতিশীল চিন্তাভাবনায় উজ্জীবিত করতে হবে। তা না হলে মেয়েরা নির্যাতিত হতে থাকবে।
কোনো বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নিতে গেলেই বলা হয়, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত।’ সব সম্প্রদায়ের মানুষ একই কথা বলে। ব্যক্তিগত বলে কিছু নেই। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত সমস্যা মানে, সেটি একটি বড় ধরনের জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। বর্তমান হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইনের বিষয় বলতে চাই, কোনো আইন ‘ঐচ্ছিক’ হতে পারে না। ঐচ্ছিক মানে ইচ্ছা। ইচ্ছা হলে মানব, ইচ্ছা না হলে মানব না। আইন কখনো এমন হতে পারে না। সরকার কি বলতে পারবে, ‘ইচ্ছা হলে জনগণ ট্রাফিক আইন, অপরাধ আইন মানবে, ইচ্ছা না হলে মানবে না?’ তাই কোনো আইন ঐচ্ছিক হতে পারে না। ঐচ্ছিক শব্দটি উঠিয়ে দিলেই আইনটি পূর্ণাঙ্গ হয়ে যায়। এবং একটি পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইনই এখন জরুরি প্রয়োজন।
খোরপোশ নিয়ে কথা হয়েছে। খোরপোশকে সমর্থন করি না। কিসের খোরপোশ? একজন বিত্তবান মানুষও খোরপোশের জন্য হাত পাতেন। তখন নিশ্চয়ই তাঁর আত্মসম্মানে বাধে। আসল কথা হলো, নারীকে মুক্তি দিতে হবে। বেগম রোকেয়ার সেই কথা মনে নেই? তিনি বলেছিলেন, ‘নারীকে শিক্ষিত করিয়া কর্মক্ষেত্রে ছাড়িয়া দাও, তাহাদের নিজেদের অন্নসংস্থান নিজেরা করুক।’
মুসলিম নারীরা আন্দোলন-সংগ্রাম ছাড়া কিছু পায়নি। হিন্দু নারীদের একটা সংগঠন করে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আন্দোলন করতে হবে। হিন্দুদের উত্তরাধিকার আইন, অর্পিত সম্পত্তি, পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইন—সব সমস্যার সমাধান হোক। অনেকে নারীদের আজকের এই সমস্যা থেকে অন্য সমস্যা বড় করে দেখেন। কিন্তু এটি অন্য যেকোনো সমস্যা থেকে অনেক বড় সমস্যা। তাই মনে করি, ঐচ্ছিক শব্দটিকে কেটে দিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ হিন্দু বিবাহ আইনের ব্যবস্থা করা হোক।
গৌর গোপাল সাহা: আজকের আলোচনায় সবাই মূল্যবান বক্তব্য দিয়েছেন। আলোচ্য বিষয়ের বাইরেও অনেক কথা এসেছে। তবে হিন্দু বিবাহ বাধ্যতামূলক করার ব্যাপারে কারও দ্বিমত নেই। আমি নিজেও এর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করছি। এখন সরকার এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে আশা করি। সাধারণত সংখ্যালঘুরা বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়। এ জন্য ব্যক্তিগত কোনো আইনের ব্যাপারে তারা সংবেদনশীল থাকে। ১৯৬১ সালে মুসলমানদের জন্য একটি যুগান্তকারী আইন হয়েছিল। মুসলমানরা এই আইনের সুফল ভোগ করছে। ভারতবর্ষ অনেক এগিয়ে গেছে। সেখানে সব বিষয়ে মুক্ত আলোচনা হয়। সেখানেও ধর্মভীরু ও ধর্মহীন লোকের সংখ্যা কম নয়। ২০০২ সালে গুজরাটের দাঙ্গায় এক হাজার ১০০ মুসলিম এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের ৩৫০ জন মারা যায়। কিন্তু আজও তার বিচার হচ্ছে। শাস্তি হচ্ছে। এ ঘটনার জন্য এখনো নরেন্দ্র মোদি নিন্দিত, ঘৃণিত। হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন জীবনের একটি অংশ। পূর্ণ জীবন কিন্তু নয়, পূর্ণ জীবনের কথা ভাবতে হবে। তা না হলে কোনো অধিকার কার্যকর হবে না। ১৯৪৭ সলে বাংলাদেশে ৩০ শতাংশ হিন্দু ছিল। এখন ৯ শতাংশ। আগামী ৬৫ বছর পর বাংলাদেশ হিন্দুশূন্য হতে পারে। এর বিরুদ্ধে কোনো প্রতিবাদ নেই। ১৫-১৬ বছর আগে হিন্দুদের নির্যাতনের কোনো খবর প্রচার হতো না। হিন্দু চিন্তাবিদ, হিন্দুধর্মীয় নেতা, সাধারণ মানুষ—সবার সঙ্গে হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন নিয়ে আলোচনা করেছি। তাঁরা সবাই চান, হিন্দু নিবন্ধন আইন হোক। আমি ব্যক্তিগতভাবে এই আইনের সম্পূর্ণ পক্ষে। তবে আরও মনে করি, শুধু হিন্দুদের জন্য নয়, সব নাগরিকের জন্য জন্ম, মৃত্যু ও বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা উচিত।
আব্দুল কাইয়ুম: হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে একটি সফল আলোচনা হলো। সবাই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেছেন। অনেক মতামত এসেছে। এগুলো সরকার বিবেচনায় নেবে বলে আশা করি।
সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

No comments

Powered by Blogger.