পদ্মা সেতুতে যারা দুর্নীতি করেছে তাদের আসামি করা হয়নি- আদালতে অভিযুক্ত সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ
পদ্মা সেতু প্রকল্পে পরামর্শক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আদালতে অস্বীকার করেছেন মামলার প্রধান আসামি সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেছেন, পদ্মা সেতু প্রকল্প দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের এই মামলায় আসামি করা হয়নি।
সব কাগজপত্র আমার কাছে আছে। আদালত চাইলে এখনই তা আদালতকে দেখাতে পারি। মামলা ট্রায়ালে গেলে এ কেস তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেব।বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এমএ সালামের আদালতে জামিন শুনানিতে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন তাঁর আইনজীবী সৈয়দ শাহ আলম, দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল, কবির হোসাইন, মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর, রফিকুল ইসলাম বেনু প্রমুখ আইনজীবী। শুনানির শুরু থেকেই তর্জনী উঁচিয়ে আদালতে তিনি এ কথাগুলো বলেন। শুনানি শেষে ম্যাজিস্ট্রেট জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আসামি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও সেতু বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (নদী শাসন) কাজী ফেরদৌসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
গত ২৭ ডিসেম্বর অপর একটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের সাত দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বৃহস্পতিবার রিমান্ড শেষে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। আদালতে তাঁর জামিন শুনানির পর মোশাররফ নিজেই আদালতের কাছে কিছু বলার অনুমতি চান। আদালত অনুমতি দিলে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণে আমি কোন দুর্নীতি করিনি। যারা করেছে তাদের এ মামলায় আসামি করা হয়নি। বিশ্বব্যাংক ও মন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে সব কাজ করা হয়েছে। মামলা বিচারে গেলে আমি কোন আইনজীবী রাখব না। নিজেই মামলা পরিচালনা করব। বিচারের সময় আমার বিরুদ্ধে আনীত এ কেস আমি তুড়ি মেরেই উড়িয়ে দেব। আমার কাছে সব প্রমাণ আছে। আদালত চাইলে এখনই তা আদালতকে দেখাতে পারব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি ৩৩ বছর সরকারী চাকরি করেছি। আমার বিরুদ্ধে কেউ কোনদিন কোন অভিযোগ আনতে পারেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি পদ্মা সেতুর মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। যাঁরা কমিটিতে ছিলেন তাঁরা হলেন- ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, ড. শফিউল্লাহ, ড. আইনুন নিশাত, ড. দাউদ আহমদ। তাঁরাই এসএনসি লাভালিন নামক কোম্পানিকে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবেই কার্যাদেশ দেয়ার সুপারিশ করেছিলেন।’
শুনানি শেষে আদালত তার আদেশে বলে, আসামিদ্বয় অপর আসামিদের সহায়তায় পরস্পর লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে ঘুষ লেনদেনে ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণকাজে পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে এসএনসি-লাভালিন ইন্টারন্যাশনাল ইনকর্পোরেশনকে কার্যাদেশ পাইয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করার অভিযোগ। মামলা তদন্তাধীন, এ পর্যায়ে আসামির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর।
উল্লেখ্য, গত ২৬ ডিসেম্বর দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে হাইকোর্ট থেকে বের হয়ে আসামিরা গণপূর্ত ভবনের সামনে এলে উইং কমান্ডার মোঃ তাহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে দুদকের একটি দল তাঁদের আটক করে। গত ১৭ ডিসেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পে কানাডিয়ান কোম্পানি এসএনসি-লাভালিনকে পরামর্শক হিসেবে কাজ পাইয়ে দিতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়াসহ সাতজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। সাত আসামির মধ্যে চারজন স্থানীয় ও বাকি তিনজন বিদেশী। স্থানীয় অপর দুই আসামি হচ্ছেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড প্ল্যানিং কনসালট্যান্ট লিমিটেডের (ইপিসি) উপ-পরিচালক মোঃ মোস্তফা। এ ছাড়া তিন বিদেশী আসামির সবাই হচ্ছেন কানাডার নাগরিক। এঁরা হলেন, এসএনসি লাভালিনের সাবেক পরিচালক (আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের) মোহাম্মদ ইসমাইল, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ শাহ ও কেভিন ওয়ালেস।
No comments