মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার-পুনর্বিচারের চার আবেদন খারিজ
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমসহ চার জামায়াত নেতার বিরুদ্ধে চলমান মামলায় পুনরায় বিচার শুরু করার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
বিচারপতি এ টি এম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল গতকাল বৃহস্পতিবার এক আদেশে গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী ও দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচার পুনরায় শুরু করার আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন। অন্যদিকে মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের আবেদন খারিজ করে আদেশ দেন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ২ নম্বর ট্রাইব্যুনাল।
এদিকে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় রায় ঘোষণার আগে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল আবারও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে এ যুক্তিতর্ক শোনা হবে। এ ছাড়া গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।
আমার দেশ ন্যূনতম নীতি মানেনি : গতকাল সকাল ১১টায় ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল বসার পর গোলাম আযম, নিজামী ও সাঈদীর মামলা পুনরায় বিচার শুরুর আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে ব্যক্তিগত কথাবার্তা রেকর্ড ও ই-মেইল হ্যাক করা হয়েছে অবৈধভাবে। এরই কারণে বিতর্ক এড়াতে বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেছেন গত ১১ ডিসেম্বর। এ অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, হ্যাকিং ও রেকর্ডিং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অসৎ উদ্দেশ্যে বেআইনিভাবে এই হ্যাকিং করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে দি ইকোনমিস্ট ওই অবৈধ রেকর্ডিং-এর ওপর ভিত্তি করে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো, এই বেআইনি ডকুমেন্টস বঙ্গানুবাদ করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করে। এটা প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার দেশ ন্যূনতম নীতি মানেনি। এই আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে যে আবেদন করা হয়েছে তা অস্বচ্ছ।
হ্যাকিংয়ে কারা জড়িত তার সুরাহা দরকার : আদেশে আরো বলা হয়, অবৈধভাবে রেকর্ডিং ও হ্যাকের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত এবং কোন্ দেশে কখন এটা হয়েছে সে প্রশ্নের সুরাহা আগে হওয়া দরকার।
আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রশ্ন, অবৈধভাবে হ্যাকড ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে করা আবেদনে ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কোনো আদেশ দিতে পারেন কি না। এতে বলা হয়, হ্যাক করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অপরাধ। এমনকি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে, স্কাইপে সংলাপ থেকে যেকোনো একটি অংশ ফেলে দিয়ে তা নতুন করে সৃজন করা যায়, যার অর্থ পুরোপুরি উল্টে যেতে পারে। এ ছাড়া আসামিপক্ষ কোনো নজির দেখাতে পারেনি যে, হ্যাক করা ডকুমেন্ট গ্রহণযোগ্য।
আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। এ ছাড়া উভয় পক্ষ প্রকাশ্য আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাঁদের জেরা করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং হ্যাকিংয়ের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ওপর করা আবেদন আমলে নেওয়া যায় না। অবৈধভাবে হ্যাক করা ও রেকর্ড করা ডকুমেন্টস বিচারের জন্য আমলে না নিলে কোনো পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
আদেশে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩-এ পুনরায় বিচার শুরু করা বা কোনো আদেশ প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। এর পরও আসামিপক্ষ বলেছে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো কারণ সৃষ্টি হয়নি। আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। অভিযোগ গঠনসহ সব আদেশ দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সুতরাং পুনরায় বিচার শুরুর আবেদনের আইনগত ভিত্তি নেই।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হ্যাকিং একটি অপরাধ। অবৈধভাবে হ্যাক করা তথ্যের ওপর ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ চলতে পারে না। আদেশে এটাই প্রমাণিত হয়েছে।
রিভিউ আবেদন করা হবে : আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাইব্যুনালের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, আদেশটি সঠিক হয়নি। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরাই ভালো জানেন, কেন তাঁরা এই দুজন ব্যক্তির বোঝা নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন? এই আদেশের ফলে কোনো পক্ষেরই প্রতি সুবিচার করা হলো না। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। এ কারণে আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করা হবে।'
সাঈদীর বিরুদ্ধে পুনরায় যুক্তিতর্ক হবে : সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় গত বছর ৬ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সে দিনই এ মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১ সাঈদীর মামলায় পুনরায় যুক্তিতর্ক শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে গতকাল আদেশে বলা হয়, এ মামলা এখন রায়ের জন্য রয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে পুনর্গঠিত হয়েছে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক আবার শোনা জরুরি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি এবং আসামিপক্ষ ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ পাল্টা যুক্তি দেখানোর জন্য একঘণ্টা সময় পাবে।
গোলাম আযমের মামলায় যুক্তিতর্ক ৭ জানুয়ারি : গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় সাফাই সাক্ষী হিসেবে গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীসহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন ট্রাইব্যুনাল। এ সিদ্ধান্তের পর আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু তিনি কয়েক দিন ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাঁর সাক্ষ্য অসমাপ্ত রেখেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। তবে ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, আসামিপক্ষ যদি সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করে এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারে, তবে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু আসামিপক্ষে আর সাফাই সাক্ষী না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল গতকাল এক আদেশে আগামী ৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।
সাকা চৌধুরীর আবেদন প্রত্যাহার : বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথিত স্কাইপ কথোপকথনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-১-এর আর কোনো বিচারক সম্পৃক্ত ছিলেন কি না তার ব্যাখ্যা চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর করা আবেদনের ওপর গতকাল আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা এবং বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে সমন জারির আবেদনের ওপরও আদেশ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাকা চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে ওই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। তাঁরা বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে করা আবেদনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এ ছাড়া প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে প্রত্যাহার ও ট্রাইব্যুনালে অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির এখতিয়ার নিয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি করতে সময়ের আবেদন করেন তাঁরা। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এ আবেদনের বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, এ আবেদনের ওপর শুনানি আগেই শেষ হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকা প্রয়োজন। উভয় পক্ষে দুই দফা শুনানি শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এবং বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে সমন জারির আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন। এ ছাড়া বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে করা আবেদনের ওপর ১০ জানুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
সাকা চৌধুরীর আইনজীবীদের হট্টগোল : গতকাল শুনানিকালে সাকা চৌধুরীকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। তবে এ শুনানিকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুরে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে ঢোকার চেষ্টা করেন। ট্রাইব্যুনালের আগের নির্দেশ মেনে ১০ জনের বেশি আইনজীবীকে ঢোকার অনুমতি দিতে না চাইলে আইনজীবীরা হৈচৈ করতে থাকেন। তাঁরা ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেও হৈচৈ করেন। প্রায় ১০ মিনিট ধরে এ অবস্থা চলে।
এদিকে সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় রায় ঘোষণার আগে ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল আবারও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আগামী ১৩ জানুয়ারি থেকে এ যুক্তিতর্ক শোনা হবে। এ ছাড়া গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য ৭ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।
আমার দেশ ন্যূনতম নীতি মানেনি : গতকাল সকাল ১১টায় ১ নম্বর ট্রাইব্যুনাল বসার পর গোলাম আযম, নিজামী ও সাঈদীর মামলা পুনরায় বিচার শুরুর আবেদনের ওপর আদেশ দেওয়া হয়। এতে বলা হয়, ট্রাইব্যুনাল-১-এর সাবেক চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের মধ্যে ব্যক্তিগত কথাবার্তা রেকর্ড ও ই-মেইল হ্যাক করা হয়েছে অবৈধভাবে। এরই কারণে বিতর্ক এড়াতে বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেছেন গত ১১ ডিসেম্বর। এ অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১ পুনর্গঠন করা হয়েছে। আদেশে বলা হয়, হ্যাকিং ও রেকর্ডিং একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অসৎ উদ্দেশ্যে বেআইনিভাবে এই হ্যাকিং করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে দি ইকোনমিস্ট ওই অবৈধ রেকর্ডিং-এর ওপর ভিত্তি করে কোনো প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। কিন্তু আশ্চর্যজনক হলো, এই বেআইনি ডকুমেন্টস বঙ্গানুবাদ করে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা প্রকাশ করা শুরু করে। এটা প্রকাশের ক্ষেত্রে আমার দেশ ন্যূনতম নীতি মানেনি। এই আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ওপর নির্ভর করে যে আবেদন করা হয়েছে তা অস্বচ্ছ।
হ্যাকিংয়ে কারা জড়িত তার সুরাহা দরকার : আদেশে আরো বলা হয়, অবৈধভাবে রেকর্ডিং ও হ্যাকের সঙ্গে কে বা কারা জড়িত এবং কোন্ দেশে কখন এটা হয়েছে সে প্রশ্নের সুরাহা আগে হওয়া দরকার।
আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রশ্ন, অবৈধভাবে হ্যাকড ডকুমেন্টের ওপর ভিত্তি করে করা আবেদনে ট্রাইব্যুনাল বিচারিক কোনো আদেশ দিতে পারেন কি না। এতে বলা হয়, হ্যাক করা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি অপরাধ। এমনকি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের অভিমত হচ্ছে, স্কাইপে সংলাপ থেকে যেকোনো একটি অংশ ফেলে দিয়ে তা নতুন করে সৃজন করা যায়, যার অর্থ পুরোপুরি উল্টে যেতে পারে। এ ছাড়া আসামিপক্ষ কোনো নজির দেখাতে পারেনি যে, হ্যাক করা ডকুমেন্ট গ্রহণযোগ্য।
আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে প্রাপ্ত সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে। এ ছাড়া উভয় পক্ষ প্রকাশ্য আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও তাঁদের জেরা করার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছে। সুতরাং হ্যাকিংয়ের ওপর প্রাপ্ত তথ্যের ওপর করা আবেদন আমলে নেওয়া যায় না। অবৈধভাবে হ্যাক করা ও রেকর্ড করা ডকুমেন্টস বিচারের জন্য আমলে না নিলে কোনো পক্ষেরই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সুযোগ নেই।
আদেশে আরো বলা হয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন-১৯৭৩-এ পুনরায় বিচার শুরু করা বা কোনো আদেশ প্রত্যাহার করার সুযোগ নেই। এর পরও আসামিপক্ষ বলেছে, ন্যায়বিচারের স্বার্থে ট্রাইব্যুনালের নিজস্ব ক্ষমতা রয়েছে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের। কিন্তু এক্ষেত্রে নিজস্ব ক্ষমতা প্রয়োগের কোনো কারণ সৃষ্টি হয়নি। আদেশে বলা হয়, ট্রাইব্যুনালের সাবেক চেয়ারম্যান এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। অভিযোগ গঠনসহ সব আদেশ দেওয়া হয়েছে ট্রাইব্যুনালের তিন সদস্যের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। সুতরাং পুনরায় বিচার শুরুর আবেদনের আইনগত ভিত্তি নেই।
আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, হ্যাকিং একটি অপরাধ। অবৈধভাবে হ্যাক করা তথ্যের ওপর ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ চলতে পারে না। আদেশে এটাই প্রমাণিত হয়েছে।
রিভিউ আবেদন করা হবে : আসামিপক্ষের প্রধান আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক সাংবাদিকদের বলেন, 'ট্রাইব্যুনালের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলছি, আদেশটি সঠিক হয়নি। ট্রাইব্যুনালের বিচারকরাই ভালো জানেন, কেন তাঁরা এই দুজন ব্যক্তির বোঝা নিজেদের কাঁধে তুলে নিলেন? এই আদেশের ফলে কোনো পক্ষেরই প্রতি সুবিচার করা হলো না। এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ নেই। এ কারণে আদেশ পুনরায় বিবেচনার জন্য রিভিউ আবেদন করা হবে।'
সাঈদীর বিরুদ্ধে পুনরায় যুক্তিতর্ক হবে : সাঈদীর বিরুদ্ধে মামলায় গত বছর ৬ ডিসেম্বর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়। সে দিনই এ মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখা হয়। কিন্তু রায় ঘোষণার আগেই ১১ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। এ পরিস্থিতিতে গতকাল ট্রাইব্যুনাল-১ সাঈদীর মামলায় পুনরায় যুক্তিতর্ক শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বিষয়ে গতকাল আদেশে বলা হয়, এ মামলা এখন রায়ের জন্য রয়েছে। কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এরই মধ্যে পুনর্গঠিত হয়েছে। তাই ন্যায়বিচারের স্বার্থে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক আবার শোনা জরুরি। এ অবস্থায় রাষ্ট্রপক্ষ ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি এবং আসামিপক্ষ ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ পাল্টা যুক্তি দেখানোর জন্য একঘণ্টা সময় পাবে।
গোলাম আযমের মামলায় যুক্তিতর্ক ৭ জানুয়ারি : গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার পর আসামিপক্ষে সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়। এ মামলায় সাফাই সাক্ষী হিসেবে গোলাম আযমের ছেলে আব্দুল্লাহিল আমান আযমীসহ ১২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন ট্রাইব্যুনাল। এ সিদ্ধান্তের পর আব্দুল্লাহিল আমান আযমী সাক্ষ্য দেওয়া শুরু করেন। কিন্তু তিনি কয়েক দিন ট্রাইব্যুনালে হাজির না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল তাঁর সাক্ষ্য অসমাপ্ত রেখেই যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের জন্য আদেশ দিয়েছিলেন। তবে ট্রাইব্যুনালের আদেশে বলা হয়, আসামিপক্ষ যদি সাফাই সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আবেদন করে এবং যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারে, তবে বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। কিন্তু আসামিপক্ষে আর সাফাই সাক্ষী না হওয়ায় ট্রাইব্যুনাল গতকাল এক আদেশে আগামী ৭ জানুয়ারি যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করেন।
সাকা চৌধুরীর আবেদন প্রত্যাহার : বিচারপতি নিজামুল হকের সঙ্গে ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথিত স্কাইপ কথোপকথনের সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল-১-এর আর কোনো বিচারক সম্পৃক্ত ছিলেন কি না তার ব্যাখ্যা চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর করা আবেদনের ওপর গতকাল আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল। একই সঙ্গে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা এবং বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে সমন জারির আবেদনের ওপরও আদেশ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সাকা চৌধুরীর আইনজীবী আহসানুল হক হেনা ও ব্যারিস্টার ফখরুল ইসলাম গতকাল দুপুরে ওই আবেদন প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। তাঁরা বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে করা আবেদনের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এ ছাড়া প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুমকে প্রত্যাহার ও ট্রাইব্যুনালে অ্যাটর্নি জেনারেলের শুনানির এখতিয়ার নিয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি করতে সময়ের আবেদন করেন তাঁরা। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এ আবেদনের বিরোধিতা করেন। তাঁরা বলেন, এ আবেদনের ওপর শুনানি আগেই শেষ হয়েছে। তাই এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ থাকা প্রয়োজন। উভয় পক্ষে দুই দফা শুনানি শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এবং বিচারপতি নিজামুল হকের বিরুদ্ধে সমন জারির আবেদন উত্থাপিত হয়নি মর্মে খারিজ করেন। এ ছাড়া বিচারকদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে করা আবেদনের ওপর ১০ জানুয়ারি আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
সাকা চৌধুরীর আইনজীবীদের হট্টগোল : গতকাল শুনানিকালে সাকা চৌধুরীকে আসামির কাঠগড়ায় তোলা হয়নি। তবে এ শুনানিকে কেন্দ্র করে গতকাল দুপুরে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ট্রাইব্যুনালে ঢোকার চেষ্টা করেন। ট্রাইব্যুনালের আগের নির্দেশ মেনে ১০ জনের বেশি আইনজীবীকে ঢোকার অনুমতি দিতে না চাইলে আইনজীবীরা হৈচৈ করতে থাকেন। তাঁরা ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার নাসিরউদ্দিনের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ওই সময় সাকা চৌধুরীর স্ত্রী ও ছেলেও হৈচৈ করেন। প্রায় ১০ মিনিট ধরে এ অবস্থা চলে।
No comments