অভিমত ভিন্নমত

বন সম্প্রসারণ, না ভূমি আগ্রাসন ভূমি সমস্যা পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রধানতম সমস্যা আর মৌলিক সব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে। এরই মধ্যে ভূমি কমিশন আইন সংশোধন ও ভূমি জরিপ-প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।


অথচ সাম্প্রতিকতম খবর হলো, খাগড়াছড়িতে প্রায় ১২ হাজার ৮৯৪ একর জায়গায় বনাঞ্চল সম্প্রসারণের উদ্যোগ। এটি ভূমি জরিপের প্রক্রিয়াকে জটিলতর ও বাধাগ্রস্ত করবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবৎ যত ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে, তার কোনো ক্ষেত্রেই ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন করা হয়নি। ১৯৬০ সালে কাপ্তাই বাঁধ নির্মাণের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার আর ১৯৯৭ সালের পর ভারত-প্রত্যাগত উদ্বাস্তুদের পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসন এখনো হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে অনেকটা তোড়জোড় করেই ভূমি জরিপের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রচেষ্টা তো রয়েছেই। আর এরই মধ্যে বন বিভাগের হাজার হাজার একর জমি অধিগ্রহণের যৌক্তিকতা কী?
সেচ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প, পর্যটন, বন সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ, ইকো পার্ক, রাবার চাষ প্রকল্প, চা-বাগান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, এপিবিএন, আনসার ও শত শত অস্থায়ী সেনাক্যাম্প, ইটভাটার জন্য ইজারা, সমতলের উদ্বাস্তু ও ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসন—কতভাবেই না জমি দখল ও অধিগ্রহণের পাঁয়তারা! তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের বসবাস ও চাষযোগ্য ভূমি কতটুকুই বা থাকে? তারা যাবে কোথায়? বাঁচবে কীভাবে?
বনাঞ্চল সম্প্রসারণের জন্য প্রাথমিকভাবে যেসব জমি চিহ্নিত করা হয়েছে—রেকস্যা, ছোট ও বড় মেরুৎ, তারাবন্যে, হাজাছড়া প্রভৃতি মৌজা। মূলত দীঘিনালার সেসব বিস্তীর্ণ এলাকা, যেখানে পার্বত্য চুক্তির পরে অভ্যন্তরীণ ও ভারত-প্রত্যাগত উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসন করা হয়েছে (কিছু অংশ) বা করা হবে বলে নির্ধারিত ছিল। আর ওই এলাকাতেই বনাঞ্চল সম্প্রসারণ করতে হবে! তাও আবার নতুন করে আদিবাসীদের উদ্বাস্তু বানিয়ে এবং নতুনভাবে আবারও পুনর্বাসনের আশ্বাসে! এতে সার্বিকভাবে পার্বত্য ভূমি জরিপ-প্রক্রিয়ায় একটি বিরূপ প্রভাব নিশ্চয়ই পড়বে।
ভারতবর্ষে ব্রিটিশ রাজত্ব বিস্তারের আগে আদিবাসীদের জঙ্গলের ওপর একক আধিপত্য ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করেই বন ও বনজের সান্নিধ্যে থেকেই স্মরণাতীতকাল ধরে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে এসেছে। ১৮৬৫ সালের বন আইন অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার গাছে ঢাকা যেকোনো এলাকাকে সরকারি বনভূমি হিসেবে গণ্য করার অধিকার অর্জন করে। পরে ১৮৮৫ সালে বন সংরক্ষণের নামে প্রথম আদিবাসীদের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ, পাকিস্তান আর অধুনা বাংলাদেশ সরকারের সব কটি শাসনামলেই আদিবাসীদের জমি-বন-ভূমি-বসতভিটা-সর্বোপরি অস্তিত্বকেই অধিগ্রহণ, নিশ্চিহ্ন ও জবরদস্তি দখল করার পাঁয়তারা চলছে তো চলছেই। কবে বন্ধ হবে উন্নয়ন-সংরক্ষণ-সম্প্রসারণের নামে এই সর্বগ্রাসী আগ্রাসন?
অস্তিত্বের শেকলে টান পড়লে বিরোধিতা আপনিই উপস্থিত হয়। তাই এই ভূমি-আগ্রাসী কার্যক্রম বন্ধ হোক।
সুলভ চাকমা, শিক্ষার্থী, নটর ডেম কলেজ।

‘দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি’
প্রথম আলোয় প্রকাশিত মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘দুঃখটাকে ভাগাভাগি করি’ লেখাটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবে অত্যন্ত জরুরি পরামর্শ উঠে এসেছে।
আমার মনে পড়ে, ২০০৩-০৪ সেশনে আমরা যখন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে ভর্তি হয়েছিল, তখন ছিলাম ১২০ জন। কিছুদিনের মধ্যেই ১০ জন ভর্তি বাতিল করে অন্যত্র চলে যায়। তারপর আমরা ১১০ জন চার বছর একসঙ্গে পড়াশোনা করি। আমার এক বন্ধু বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল। সেখানে এক মাস পড়ার পর সে ভর্তি বাতিল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। পরে শুনেছি, বুয়েটে তার আসনটি নাকি চার বছর ফাঁকাই ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রায় এক মাস পর্যন্ত মাইগ্রেশনের সময় দেওয়া হয় (যদিও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় না)। কিন্তু এরপর যদি কেউ ভর্তি বাতিল করে অন্য কোথাও চলে যায়, তাহলে আর সেই ফাঁকা আসনগুলো পূরণ করা হয় না। এভাবে প্রতিবছর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেক আসন ফাঁকা থাকে। তা ছাড়া আবার দেখা যায়, একই সঙ্গে পড়াশোনা শুরু করে চার বছর পর কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাকরি করে; আবার কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ে ছয় বছরেও অনার্স কোর্স শেষ করতে পারে না। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসনও ফাঁকা থাকবে না এবং সেশনজটও অনেক কমে যাবে।
গত বছর একমাত্র শাবিপ্রবিতে এসএমএসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। এ বছর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসএমএসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সেটা যে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কষ্ট কতটা কমিয়ে দিয়েছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বড় কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে এসএমএসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করে ভর্তি পরীক্ষা নিতে দেখা যায়নি। শিগগিরই নেবে বলেও মনে হচ্ছে না। রুয়েট, কুয়েট, চুয়েট আগে যখন বিআইটি ছিল, তখন সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিত। এখন বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পর তারাও আর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয় না। শিক্ষার্থীদের দুঃখ-কষ্টের কথা অনেকেই বুঝতে চায় না।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বায়ত্তশাসিত হওয়ার পরও দেখা যায়, সরকার বদল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসনেরও বদল হয়। দলীয় লোক বসানো হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যের আসনে। তাই সরকার থেকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার নির্দেশ দিলে নিশ্চয়ই উপাচার্য মহোদয় অমত করবেন না। সরকার কি লাখ লাখ শিক্ষার্থীর কষ্টের কথা, অভিভাবকদের কষ্টের কথা চিন্তা করে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এতটুকু কাজ করতে পারে না?
মো. আমিনুর রহমান
কম্পিউটার প্রকৌশলী।
amin_cse71@yahoo.com

ভুলে ভরা নতুন বই
গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, বছরের প্রথম দিন। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি। নতুন বছরের প্রথম দিনে নতুন বই। তাও আবার বিনা মূল্যে। খুদে শিক্ষার্থীদের সেকি আনন্দ! আমি একজন শিক্ষাকর্মী হিসেবে এ আনন্দঘন পরিবেশ অবলোকন করেছি। এ আনন্দকে নিরানন্দের অতলে নিক্ষেপ করা হয়েছে দায়সারা গোছের প্রকাশনা।
দেশের উত্তর সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়। জেলার সদর উপজেলার গলেহাহাট আলিম (প্রস্তাবিত ফাজিল) মাদ্রাসায় সারা দেশের মতোই বই বিতরণ করা হয়েছে ১ জানুয়ারি। দাখিল প্রথম শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত বিতরণ করা দাখিল ষষ্ঠ ও দাখিল সপ্তম শ্রেণীর ‘বাঙলা সাহিত্য’ বই দুটিতে চোখ রাখার সুযোগ পেয়েছি।
ষষ্ঠ শ্রেণীর বাঙলা সাহিত্যের গদ্যাংশে সূচিপত্র ১৩-তে সাইয়েদ মুহাম্মদ আমীনুল ইসলামের ‘হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রা:)’ প্রবন্ধটি ৫৫ পৃষ্ঠায় শুরু হয়েছে। এর শেষ কোথায়, তা তো বইতে নেই-ই বরং ধারাক্রম অনুযায়ী পরের পদ্যাংশে গোলাম মোস্তফার ‘মুনাজাত’, মোহাম্মদ মুনিরুজ্জামানের ‘এলো যে মুহম্মদ’ পদ্যাংশের কোনো অস্তিত্বই নেই। হতে পারে দু-একটা বইয়ে বাইন্ডিং ত্রুটি। না, প্রায় সব বইয়ের একই অবস্থা। দাখিল সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যসূচি বাংলা বইয়ের দ্বিতীয় প্রবন্ধটি ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ‘সত্যবাদী যুবক’ প্রবন্ধটির ১০ পৃষ্ঠা আরও অপরিচ্ছন্ন। সৈয়দ মুজতবা আলীর প্রবন্ধ ‘অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর’ প্রবন্ধটি শুরু হয়েছে বইয়ের ৫০ পৃষ্ঠায়। শেষ ৫১ পৃষ্ঠায়। ৫২ পৃষ্ঠায় লেখক, পাঠ পরিচিতি, শব্দার্থ শেষে শুরু করা হয়েছে অনুশীলনী প্রশ্ন পর্ব। ৫৩ পৃষ্ঠায় প্রশ্নের ক্রমমান ২, ৩, ৪ উল্লেখ থাকলেও নেই প্রশ্ন। পুরো পাতাই ধবধবে সাদা। ‘হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রঃ)’ প্রবন্ধটি বইয়ের ৫৪ পৃষ্ঠায় শুরু হয়ে ৫৮ পৃষ্ঠায় শেষ হয়েছে। এই প্রবন্ধের ৫৬ পৃষ্ঠাটি পুরোপুরি সাদা। শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃক বাজারে আসা আলিম ও ফাজিল শাখার বাঙলা সাহিত্যের পাঠ্যসূচির অবস্থা এতই খারাপ যে প্রতিটি প্রবন্ধ, কবিতা, গল্পের প্রতি বাক্যেই অসংখ্য বানান ভুল, বিভ্রান্তকর তথ্যে পরিপূর্ণ। এসব ভুলের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে জবাবদিহি করা উচিত।
রহিম আব্দুর রহিম
শিশু সংগঠক, শিক্ষক।
md.rahim31@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.