গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যা-চাই স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন-আইন ও সালিশ কেন্দ্র
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) অত্যন্ত উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে যে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে বেআইনি গ্রেপ্তার, গুম, খুন ও বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বেড়ে চলেছে, যা জনসাধারণের মনে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা ও আতঙ্ক তৈরি করেছে।
গুম-খুনের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের অনেকেরই অভিযোগ, এসব ঘটনায় প্রাথমিকভাবে আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা দায়ী থাকায় তাঁরা অনেকে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের পদক্ষেপ নিতে সাহস পাননি।
অধিকন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পর ও অন্য কয়েকটি ঘটনায় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে অপ্রত্যাশিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, তদন্তকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রাপ্য প্রতিকার, সমবেদনা ও সান্ত্বনার বিপরীতে হতাশা ও কষ্টের কারণ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে ব্যাপকভাবে শুরু হওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। পরবর্তী সময়ে ‘এলিট ফোর্স’ র্যাব ও পুলিশের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলমান থেকে গেছে। বিগত কয়েক বছরে সহস্রাধিক মানুষ গুম, খুন ও বন্দুকযুদ্ধের শিকার হলেও এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার আমরা দেখতে পাইনি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উপরিউক্ত বেআইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার প্রতিকার, তথা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে বা অবস্থান জানাতে এবং সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আন্তরিক সক্রিয়তা ও সফলতা দেখাতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আমরা মনে করি, গুম, খুন বা অন্য যেকোনো নামে ও যুক্তিতে চলমান এ হত্যাযজ্ঞের প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, বেঁচে থাকা বা আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো সন্দেহভাজন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অপ্রকাশ্য বা প্রকাশ্য রাজনৈতিক দলের কর্মীকে হত্যা করার এ তৎপরতা অবশ্যই আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সভ্যতার পরিপন্থী।
আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অনতিবিলম্বে আইন প্রয়োগকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অবশ্যই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ নিরপেক্ষতা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে; প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহিতায় বাধ্য করতে হবে; ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বেআইনি কাজের জন্য তাদের প্রাপ্য আইনি শাস্তি দিতে হবে।
গুম, খুনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে দৃশ্যমান আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্য সাদা পোশাকে বা পরিচয় গোপন রেখে কোনো ব্যক্তিকে যেন গ্রেপ্তার না করে, তা নিশ্চত করতে হবে। কী কারণে বা কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা অবশ্যই আত্মীয়স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীকে জানাতে হবে এবং অবিলম্বে আটক ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করতে হবে।
আমরা আরও মনে করি, এই বেআইনি তৎপরতা বন্ধ এবং জনজীবনের নিরাপত্তা ও ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণের স্বার্থে, ইতিমধ্যে সংঘটিত গুম, খুন বা বিচারবহির্ভূত অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে, একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘তদন্ত কমিশন’ গঠন করতে হবে। সরকার এই কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে এবং কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে বলে আমরা আশা করি।
সবশেষে, একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, সরকার ও দলমত-নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান।
অধিকন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ হওয়ার পর ও অন্য কয়েকটি ঘটনায় সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল থেকে অপ্রত্যাশিত বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, যা ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা, তদন্তকে প্রভাবিত করার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের প্রাপ্য প্রতিকার, সমবেদনা ও সান্ত্বনার বিপরীতে হতাশা ও কষ্টের কারণ হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি সরকারের আমলে অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে ব্যাপকভাবে শুরু হওয়া বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয়নি। পরবর্তী সময়ে ‘এলিট ফোর্স’ র্যাব ও পুলিশের মাধ্যমে বিভিন্ন নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চলমান থেকে গেছে। বিগত কয়েক বছরে সহস্রাধিক মানুষ গুম, খুন ও বন্দুকযুদ্ধের শিকার হলেও এসব ঘটনার কোনো প্রতিকার আমরা দেখতে পাইনি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক সত্য যে জনসাধারণের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকার এবং সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উপরিউক্ত বেআইনি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনজনিত ঘটনার প্রতিকার, তথা গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে বা অবস্থান জানাতে এবং সংশ্লিষ্ট দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো আন্তরিক সক্রিয়তা ও সফলতা দেখাতে চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে সরকার তথা আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের আন্তরিকতা, যোগ্যতা ও সক্ষমতা নিয়ে জনমনে সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হচ্ছে।
এমতাবস্থায়, আমরা মনে করি, গুম, খুন বা অন্য যেকোনো নামে ও যুক্তিতে চলমান এ হত্যাযজ্ঞের প্রবণতা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। মানবাধিকার, সাংবিধানিক অধিকার, বেঁচে থাকা বা আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো সন্দেহভাজন, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, অপ্রকাশ্য বা প্রকাশ্য রাজনৈতিক দলের কর্মীকে হত্যা করার এ তৎপরতা অবশ্যই আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও সভ্যতার পরিপন্থী।
আমরা মনে করি, এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য অনতিবিলম্বে আইন প্রয়োগকারী প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে অবশ্যই তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ নিরপেক্ষতা, সততা ও দক্ষতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে; প্রতিটি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিকে তাদের কাজের জন্য জবাবদিহিতায় বাধ্য করতে হবে; ব্যর্থতা, ভুলত্রুটি বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বেআইনি কাজের জন্য তাদের প্রাপ্য আইনি শাস্তি দিতে হবে।
গুম, খুনের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করতে দৃশ্যমান আন্তরিক চেষ্টা করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী কোনো প্রতিষ্ঠানের সদস্য সাদা পোশাকে বা পরিচয় গোপন রেখে কোনো ব্যক্তিকে যেন গ্রেপ্তার না করে, তা নিশ্চত করতে হবে। কী কারণে বা কোন অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তা অবশ্যই আত্মীয়স্বজন বা প্রত্যক্ষদর্শীকে জানাতে হবে এবং অবিলম্বে আটক ব্যক্তিকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করতে হবে।
আমরা আরও মনে করি, এই বেআইনি তৎপরতা বন্ধ এবং জনজীবনের নিরাপত্তা ও ভয়মুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতকরণের স্বার্থে, ইতিমধ্যে সংঘটিত গুম, খুন বা বিচারবহির্ভূত অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের ঘটনাগুলো খতিয়ে দেখতে, একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে শিক্ষক, আইনজীবী, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের সমন্বয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ‘তদন্ত কমিশন’ গঠন করতে হবে। সরকার এই কমিশনকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে এবং কমিশন কর্তৃক প্রদত্ত সিদ্ধান্ত ও সুপারিশ বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকবে বলে আমরা আশা করি।
সবশেষে, একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্রের সব নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, সরকার ও দলমত-নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আমরা আহ্বান জানাই।
আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক): মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা প্রতিষ্ঠান।
No comments