কোনো হত্যাকাণ্ডই ইসলাম সমর্থন করে না by মুফতি এনায়েতুল্লাহ
রাজধানীর পার্শ্ববর্তী এলাকা সাভারের আমিনবাজারে বড়দেশী গ্রামে শবেবরাতের রাতে ডাকাত সন্দেহে ছয় ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। এ আলোচিত ও নির্মম হত্যাকাণ্ড নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। আমরা চাই, এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক যথাযথ বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।
এ অপরাধের শাস্তি না হলে ভবিষ্যতে আমাদের এর চেয়ে বড় কিছু দেখতে হবে। ইসলাম নির্যাতন, অনিষ্ট, দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও খুনোখুনি করাকে মারাত্মক পাপ ও জঘন্য অপরাধ বলে গণ্য করে। ইসলাম মানবতাবিরোধী সব ধরনের রক্তক্ষয় ও অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নিরীহ মানুষ হত্যাকে প্রশ্রয় দেয় না। এমনিভাবে সমাজে ফিতনা-ফ্যাসাদ, বিপর্যয়, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করাকে হত্যার চেয়েও জঘন্যতম অপরাধ সাব্যস্ত করা হয়েছে।
ইসলামী শরিয়তে মানুষ তো দূরের কথা, কোনো সাধারণ প্রাণীকেও হত্যা করা বা কষ্ট দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'আর তোমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করো না।' সূরা আনআম : ১৫১
কোরআনুল কারিমে সন্ত্রাস ও হত্যাকা ের কঠোরতম শাস্তির বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, 'কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন ও তাকে লানত (অভিশাপ) করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।' সূরা নিসা :৯৩
এভাবে হাদিসের দ্বারাও অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে ইসলাম নিষিদ্ধ প্রমাণিত করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে নববীতে ইরশাদ হচ্ছে, 'একজন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত-সম্মানে হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ হারাম।'
অন্য হাদিসে আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'আমার উম্মতের মধ্য থেকে কারও ওপর (অন্যায়ভাবে) অস্ত্র প্রয়োগ করল সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' 'কোনো মানুষকে হত্যা করা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ছাড়া (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল; (আবার এমনিভাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিল।' সূরা মায়িদা : ৩২ হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে, তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার'। _বুখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, সেখানে যেন কেউ উপস্থিত না থাকে। কারণ এ হত্যাকাণ্ডের সময় যে ব্যক্তি উপস্থিত থাকবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে না, তার ওপরও অভিশাপ অবতীর্ণ হবে। _বায়হাকি
জনমনে আতঙ্ক বা ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে_ ইসলাম এ ধরনের কোনো কাজ বা আচরণ করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হজরত জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কারও হাতে উলঙ্গ (খাপমুক্ত) তরবারি বের করতে নিষেধ করেছেন। _আবু দাউদ ও তিরমিযী
আরেক হাদিসে তিনি কারও প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে কথা বলতেও নিষেধ করেছেন। এমন পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হারাম করা হয়েছে, যে পরিবেশ নিশ্চিত রক্তক্ষয়ী পরিণতি বরণ করবে। তিনি বলেছেন, 'তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্রের মাধ্যমে ইশারা না করে, কারণ শয়তান কখন তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেবে এবং সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে, তা সে অনুভবও করতে পারবে না।' _বুখারি ও মুসলিম
কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নয় আরেকজন মুসলমানকে ভয় দেখানো। এটাই ইসলাম; আর ইসলামের বিধান। ইসলাম সর্বদা সমাজে শান্তি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। আর এ লক্ষ্যেই ইসলামের সব কর্মসূচি। উন্মুক্ত তরবারি বা অন্য কোনো অস্ত্র দেখলে মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে, ইসলাম এটাও বরদাশত করে না। জনমানসে শান্তির জোয়ার প্রবাহিত করার জন্যই ইসলামের আগমন। যারা জনজীবনে অশান্তি সৃষ্টি করবে, সূরা মায়িদার ওই আয়াতে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে। ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার ব্যাপারে ইসলাম কঠোরভাবে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে।
সুতরাং ইসলামে সন্ত্রাসবাদের যে নূ্যনতম সমর্থন নেই, এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সন্দেহ হলেই কাউকে আক্রমণ করা যাবে না; বরং যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর অন্যথা মহাপাপ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরাম ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর নির্যাতন সহ্য করেছেন। যখন তারা নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তখন তারা কি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে ইসলামের দুশমনদের হত্যা করতে পারতেন না? প্রতিশোধের নিমিত্তে প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারতেন না? বরং তারা অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুকেই বরণ করেছেন, তবুও অনিয়মতান্ত্রিক পথ, সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেননি বা কোনো ধরনের বক্র চিন্তাও করেননি। পত্রিকার ভাষ্যমতে, বড়দেশী এলাকার মানুষ ডাকাতদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তাই বলে বিনা বিচারে সত্যতা যাচাই না করে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া শুধু আইনের দৃষ্টিতেই নয়; এটা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ হয়েছে।
ইসলাম মানুষে-মানুষে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্য স্থাপনের মাধ্যমে একটি শান্তি ও সমৃদ্ধির পৃথিবী গড়ার তাগিদ দিয়েছে। ইসলাম কখনোই অশান্তি, খুন, রাহাজানি, হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা প্রভৃতি কার্যকলাপ সমর্থন করে না।
muftianaet@gmail.com
ইসলামী শরিয়তে মানুষ তো দূরের কথা, কোনো সাধারণ প্রাণীকেও হত্যা করা বা কষ্ট দেওয়া অবৈধ ঘোষণা করেছে। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হচ্ছে, 'আর তোমরা অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করো না।' সূরা আনআম : ১৫১
কোরআনুল কারিমে সন্ত্রাস ও হত্যাকা ের কঠোরতম শাস্তির বিধান সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে, 'কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম, সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি রুষ্ট হবেন ও তাকে লানত (অভিশাপ) করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।' সূরা নিসা :৯৩
এভাবে হাদিসের দ্বারাও অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যাকে ইসলাম নিষিদ্ধ প্রমাণিত করেছে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে নববীতে ইরশাদ হচ্ছে, 'একজন মুসলমানের জন্য অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও ইজ্জত-সম্মানে হস্তক্ষেপ করা সম্পূর্ণ হারাম।'
অন্য হাদিসে আরও ইরশাদ হচ্ছে, 'আমার উম্মতের মধ্য থেকে কারও ওপর (অন্যায়ভাবে) অস্ত্র প্রয়োগ করল সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।' 'কোনো মানুষকে হত্যা করা কিংবা পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কাজ (করার শাস্তি বিধান) ছাড়া (অন্য কোনো কারণে) কেউ যদি কাউকে হত্যা করে, সে যেন গোটা মানবজাতিকেই হত্যা করল; (আবার এমনিভাবে) যদি কেউ একজনের প্রাণ রক্ষা করে, তবে সে যেন গোটা মানবজাতিকেই বাঁচিয়ে দিল।' সূরা মায়িদা : ৩২ হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, 'কিয়ামতের দিন মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম যে বিচার করা হবে, তা তাদের মধ্যে সংঘটিত রক্তপাত ও হত্যার বিচার'। _বুখারি ও মুসলিম
হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যেখানে কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়, সেখানে যেন কেউ উপস্থিত না থাকে। কারণ এ হত্যাকাণ্ডের সময় যে ব্যক্তি উপস্থিত থাকবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে রক্ষা করার চেষ্টা করবে না, তার ওপরও অভিশাপ অবতীর্ণ হবে। _বায়হাকি
জনমনে আতঙ্ক বা ভীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে_ ইসলাম এ ধরনের কোনো কাজ বা আচরণ করতেও কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। হজরত জাবির (রাঃ) বর্ণনা করেছেন; তিনি বলেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কারও হাতে উলঙ্গ (খাপমুক্ত) তরবারি বের করতে নিষেধ করেছেন। _আবু দাউদ ও তিরমিযী
আরেক হাদিসে তিনি কারও প্রতি অস্ত্র দ্বারা ইশারা করে কথা বলতেও নিষেধ করেছেন। এমন পরিবেশ-পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হারাম করা হয়েছে, যে পরিবেশ নিশ্চিত রক্তক্ষয়ী পরিণতি বরণ করবে। তিনি বলেছেন, 'তোমাদের কেউ যেন তার ভাইয়ের প্রতি অস্ত্রের মাধ্যমে ইশারা না করে, কারণ শয়তান কখন তার হাত থেকে অস্ত্র কেড়ে নেবে এবং সে জাহান্নামের গর্তে পতিত হবে, তা সে অনুভবও করতে পারবে না।' _বুখারি ও মুসলিম
কোনো মুসলমানের জন্য জায়েজ নয় আরেকজন মুসলমানকে ভয় দেখানো। এটাই ইসলাম; আর ইসলামের বিধান। ইসলাম সর্বদা সমাজে শান্তি নিশ্চিত করতে সচেষ্ট। আর এ লক্ষ্যেই ইসলামের সব কর্মসূচি। উন্মুক্ত তরবারি বা অন্য কোনো অস্ত্র দেখলে মানুষের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হতে পারে, ইসলাম এটাও বরদাশত করে না। জনমানসে শান্তির জোয়ার প্রবাহিত করার জন্যই ইসলামের আগমন। যারা জনজীবনে অশান্তি সৃষ্টি করবে, সূরা মায়িদার ওই আয়াতে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কঠোর শাস্তির কথা উল্লেখ করেছে। ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করার ব্যাপারে ইসলাম কঠোরভাবে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছে।
সুতরাং ইসলামে সন্ত্রাসবাদের যে নূ্যনতম সমর্থন নেই, এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। সন্দেহ হলেই কাউকে আক্রমণ করা যাবে না; বরং যাচাই-বাছাইয়ের পর ব্যবস্থা নিতে হবে। এর অন্যথা মহাপাপ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ও তার সাহাবায়ে কেরাম ইতিহাসের সবচেয়ে বর্বর নির্যাতন সহ্য করেছেন। যখন তারা নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তখন তারা কি সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে ইসলামের দুশমনদের হত্যা করতে পারতেন না? প্রতিশোধের নিমিত্তে প্রতিপক্ষের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারতেন না? বরং তারা অমানবিক নির্যাতন সহ্য করে মৃত্যুকেই বরণ করেছেন, তবুও অনিয়মতান্ত্রিক পথ, সন্ত্রাসের পথ অবলম্বন করেননি বা কোনো ধরনের বক্র চিন্তাও করেননি। পত্রিকার ভাষ্যমতে, বড়দেশী এলাকার মানুষ ডাকাতদের দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছিলেন, তাই বলে বিনা বিচারে সত্যতা যাচাই না করে এভাবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া শুধু আইনের দৃষ্টিতেই নয়; এটা ইসলামের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধ হয়েছে।
ইসলাম মানুষে-মানুষে হৃদ্যতা ও সৌহার্দ্য স্থাপনের মাধ্যমে একটি শান্তি ও সমৃদ্ধির পৃথিবী গড়ার তাগিদ দিয়েছে। ইসলাম কখনোই অশান্তি, খুন, রাহাজানি, হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা প্রভৃতি কার্যকলাপ সমর্থন করে না।
muftianaet@gmail.com
No comments