নাম বদলের রাজনীতিঃ সরকারের আসল উদ্দেশ্য পরিষ্কার
সরকার জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম বদলে দিয়েছে। মন্ত্রিসভার সর্বশেষ নিয়মিত বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে প্রমাণ হয়, এ মুহূর্তে প্রতিপক্ষ দলের নেতার নামে থাকা কোনো স্থাপনার নাম মুছে ফেলাকেই তারা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।
আর এ কাজটি করতে গিয়ে সরকার গণতান্ত্রিক রাজনীতিকেই শুধু সঙ্কটাপন্ন করে তোলেনি, দেশবাসীর মধ্যে দ্বিধাবিভক্তিকে আরও শানিত করে তুলল। ক্ষমতাসীনদের এই দৃষ্টিভঙ্গি দেশ ও জাতির জন্য কী পরিণতি ডেকে আনবে, তা বলে বোঝানোর প্রয়োজন হয় না। ক্ষমতার জোরে যেনতেন প্রকারে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার অপচেষ্টা যে নিজেদের জন্যই বিপদ ডেকে আনবে, সেটা ভুলে যাওয়ার পুরনো অভ্যাসই অটুট রয়ে গেছে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। নাম বদলের সিদ্ধান্তের পর এটা জোর দিয়েই বলা যায়।
যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের আলোকে কোনো স্বৈরশাসক ও অবৈধ শাসকের নামে বাংলাদেশে কোনো স্থাপনার নাম থাকবে না বলে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলে দেশের প্রধান বিমানবন্দরটি এখন থেকে পরিচিত হবে হজরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর হিসেবে। এক্ষেত্রে নিজেদের হীন মনোবৃত্তি আড়াল করতে চালাকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই ধরা পড়বে। কারণ পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসকদের এবং তাদের শাসনকালকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ হয় তারও পরে। বিচারপতি সাত্তারের সরকারই ১৯৮১ সালে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করে। তার আগে জিয়ার শাসনামলেই এ বিমানবন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৭৯ সালে তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় স্থানান্তরিত হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অর্থাত্ নামকরণের সময় দেশে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারই ক্ষমতায় ছিল। তাই জোট সরকারের নাম পাল্টানোর রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই এখানে নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
কারণ, জিয়াউর রহমান সৃষ্ট দল বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া আধিপত্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। সম্ভবত এজন্যই ক্ষমতাসীন দলের যত রাগ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার ওপর। মনে রাখা দরকার, নাম বদলের অসুস্থ রাজনীতি দিয়ে আর যা-ই হোক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ছোট করা যায় না; বরং তাতে জোট সরকারের ক্ষুদ্রতাই প্রকট হয়ে ওঠে।
দেশের প্রধান বিমানবন্দর হিসেবে বিগত ৩০ বছর ধরে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। ১৬টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স নিয়মিত এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। বছরে প্রায় ৫ লাখ যাত্রী এখান দিয়ে আসা-যাওয়া করে। হঠাত্ করে এর নাম পরিবর্তন দেশ-বিদেশে নির্বাচিত বর্তমান সরকার ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ না করে পারে না। এভাবে নাম পরিবর্তন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কূটচাল দেশের রাজনৈতিক হানাহানি গভীর করে তুলবে, এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। বিএনপি জোট সরকারের শেষদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকেই সৃষ্ট এক-এগারোর ঘটনা ও পরবর্তী দু’বছরের দুঃসময়ের শিক্ষাকে ভুলে না গেলে ক্ষমতার এমন দম্ভ দেখা যেত না আওয়ামী মহাজোট সরকারের সিদ্ধান্তে। এমনিতেই দেশের সামগ্রিক অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা এখনও সম্ভব হয়নি। তখন থেকে বিনিয়োগ ও শিল্প-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা শুরু হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য সেখানে সরকারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক হানাহানিকেই উস্কে দেয়ার শামিল। ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পার হয়ে গেলেও কোনো ক্ষেত্রেই সফলতার কিছু দেখাতে পারেনি মহাজোট সরকার। রাজধানীতে উন্নয়ন সহযোগী নামে পরিচিত ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বৈঠকেও একই মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে। তারা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপরই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়াও সরকারের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে লম্বা করণীয়ও নির্দেশ করা হয়েছে। অতি সঙ্গত কারণেই তারা পরিষ্কারভাবে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাড়াবাড়ি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকার যখন নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা উস্কে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমাদের হতাশ হয়ে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না। পুরনো ধারা অনুসরণ করে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত যে দেশের রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর ও প্রসারিত করবে—সেটা সাধারণ মানুষও উপলব্ধি করে। এরপর দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী মহাজোট সরকারের আসল উদ্দেশ্য আড়াল করার আর কোনো উপায় থাকল বলা যাবে না।
যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া রায়ের আলোকে কোনো স্বৈরশাসক ও অবৈধ শাসকের নামে বাংলাদেশে কোনো স্থাপনার নাম থাকবে না বলে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। তাই বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের নাম মুছে ফেলে দেশের প্রধান বিমানবন্দরটি এখন থেকে পরিচিত হবে হজরত শাহজালাল (রহ.) বিমানবন্দর হিসেবে। এক্ষেত্রে নিজেদের হীন মনোবৃত্তি আড়াল করতে চালাকির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে দেখলেই ধরা পড়বে। কারণ পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপিল বিভাগের রায়ে সুনির্দিষ্টভাবে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলকারী স্বৈরশাসকদের এবং তাদের শাসনকালকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নামকরণ হয় তারও পরে। বিচারপতি সাত্তারের সরকারই ১৯৮১ সালে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নামকরণ করে। তার আগে জিয়ার শাসনামলেই এ বিমানবন্দর নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং ১৯৭৯ সালে তেজগাঁও থেকে কুর্মিটোলায় স্থানান্তরিত হয় ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। অর্থাত্ নামকরণের সময় দেশে নির্বাচিত বেসামরিক সরকারই ক্ষমতায় ছিল। তাই জোট সরকারের নাম পাল্টানোর রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই এখানে নগ্নভাবে প্রকাশ হয়ে পড়েছে।
কারণ, জিয়াউর রহমান সৃষ্ট দল বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের একচেটিয়া আধিপত্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। সম্ভবত এজন্যই ক্ষমতাসীন দলের যত রাগ বিএনপির প্রতিষ্ঠাতার ওপর। মনে রাখা দরকার, নাম বদলের অসুস্থ রাজনীতি দিয়ে আর যা-ই হোক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ছোট করা যায় না; বরং তাতে জোট সরকারের ক্ষুদ্রতাই প্রকট হয়ে ওঠে।
দেশের প্রধান বিমানবন্দর হিসেবে বিগত ৩০ বছর ধরে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বিশ্বজুড়ে সুপরিচিত। ১৬টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স নিয়মিত এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে। বছরে প্রায় ৫ লাখ যাত্রী এখান দিয়ে আসা-যাওয়া করে। হঠাত্ করে এর নাম পরিবর্তন দেশ-বিদেশে নির্বাচিত বর্তমান সরকার ও মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি হিসেবে আমাদের পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ না করে পারে না। এভাবে নাম পরিবর্তন করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার কূটচাল দেশের রাজনৈতিক হানাহানি গভীর করে তুলবে, এটা চোখ বন্ধ করে বলা যায়। বিএনপি জোট সরকারের শেষদিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকেই সৃষ্ট এক-এগারোর ঘটনা ও পরবর্তী দু’বছরের দুঃসময়ের শিক্ষাকে ভুলে না গেলে ক্ষমতার এমন দম্ভ দেখা যেত না আওয়ামী মহাজোট সরকারের সিদ্ধান্তে। এমনিতেই দেশের সামগ্রিক অবস্থা হতাশাব্যঞ্জক। অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দু’বছরে সৃষ্ট অর্থনৈতিক-সামাজিক-রাজনৈতিক বিপর্যয় কাটিয়ে সুস্থ গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে আনা এখনও সম্ভব হয়নি। তখন থেকে বিনিয়োগ ও শিল্প-বাণিজ্যে যে স্থবিরতা শুরু হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার জন্য যেখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অপরিহার্য সেখানে সরকারের সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক হানাহানিকেই উস্কে দেয়ার শামিল। ক্ষমতা গ্রহণের এক বছর পার হয়ে গেলেও কোনো ক্ষেত্রেই সফলতার কিছু দেখাতে পারেনি মহাজোট সরকার। রাজধানীতে উন্নয়ন সহযোগী নামে পরিচিত ঋণদাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বৈঠকেও একই মনোভাব প্রকাশ করা হয়েছে। তারা সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপরই সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। এছাড়াও সরকারের ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে লম্বা করণীয়ও নির্দেশ করা হয়েছে। অতি সঙ্গত কারণেই তারা পরিষ্কারভাবে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বাড়াবাড়ি গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। এসবকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সরকার যখন নতুন করে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা উস্কে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন আমাদের হতাশ হয়ে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না। পুরনো ধারা অনুসরণ করে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত যে দেশের রাজনৈতিক বিভাজন আরও গভীর ও প্রসারিত করবে—সেটা সাধারণ মানুষও উপলব্ধি করে। এরপর দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় আসা আওয়ামী মহাজোট সরকারের আসল উদ্দেশ্য আড়াল করার আর কোনো উপায় থাকল বলা যাবে না।
No comments