চারদিক-নতুনভাবেই শুরু হোক বছরটা by শারমিন নাহার
চলে গেল আরেকটি বছর। এসেছে নতুন বছর। পুরোনো বছরের প্রাপ্তিতে ঝুলিটা কখনো পূর্ণ আবার কখনো বা শূন্য রয়ে যায় কারও কারও কাছে। হিসাবের খাতায় কী যোগ হলো আর কী হলো না সে চিন্তা না করে নতুন সম্ভাবনা নিয়েই মানুষ পথ চলে আর স্বপ্ন বোনে। পুরোনো বছরটা কেমন ছিল আর নতুন বছর কেমন হতে পারে এমন ভাবনা তো সবারই থাকে। আর ভাবনাগুলোর মধ্যে মানুষে মানুষে থাকে ফারাক।
সকাল আটটা বেজে কয়েক মিনিট। হাতের মধ্যেই ঘুরছে বেলন। অতি দ্রুত একেকটি রুটি বানিয়ে চুল্লিতে বসিয়ে দিচ্ছেন পুরান ঢাকার লালবাগে অবস্থিত নামহীন রুটির দোকানের মালিক নাদের আলী। ব্যস্ততা তাঁকে কথা বলার অবসর দেয় না। তার পরও একবারের জন্য মুখ ফিরিয়ে কথা বলে নেন তিনি।
কেমন কেটেছে ২০১০ সাল?
প্রথমে প্রশ্নটা ধরতেই পারেননি নাদের আলী। বুঝতে বাকি রইল না, নতুন বছরের হিসাব এঁদের কাছে ম্লান। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলেন, ‘নতুন বছর আবার কী! প্যাট ভইরা পোলা-মাইয়াগো নিয়া খাইতে পারলেই হয়! অ্যার বেশি কিছু চাওনের নাই।’
এরপর গন্তব্যের দিকে ছুটতে রিকশা ডাকি। চালক হেদায়েত উদ্দিন মনের সুখে শীতের সকালে পঙ্খিরাজের মতো চালিয়ে নেন রিকশা। কণ্ঠে তাঁর গান। গানের সুরের মতোই মনে তাঁর উথাল-পাতাল ঢেউ। বগুড়ার এই রিকশাচালক পেটের দায়ে ইট-পাথরের এই শহরে এসেছেন। গত পাঁচ বছরেও কিনতে পারেননি নিজের একটি রিকশা। তাই একটা রিকশা ভাড়ায় চালান। ২০১১ সালে নতুন বছরে স্বপ্ন তাঁর একটাই, ‘এইবার এটটা রিকশা কিনুম। শহর ছাইড়া দ্যাশ বগড়া যামু। পোলা-মাইয়া লইয়া একসাথে থাকুম।’ বোঝাই যায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে না থাকার কষ্ট হেদায়েত উদ্দিনকে পোড়ায়। আর তাই এ বছরই তিনি সন্তানদের কাছে পাড়ি জমাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁদের প্রায়ই আনাগোনা, তাঁরা নিশ্চয়ই চেনেন চকলেট বিক্রেতা ছোট্ট পলাশকে। বড় আপু আর ভাইয়াদের দেখলেই যে ছুটে আসে। আদুরে গলায় একটা চকলেট কেনার জন্য আবদার করে বসে। পলাশকে প্রশ্ন করি কেমন যাবে তার ২০১১ সাল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাফেরার বদৌলতে নতুন বছরের ধারণা তার কাছে স্পষ্ট। দুরন্ত পলাশের ঝটপট উত্তর, ‘এই বছর যেন মেলা চকলেট বেচতি পারি। আর মায়েরে যেন খুশি রাখতে পারি।’ মাকে বড্ড ভালোবাসে পলাশ। তাই নতুন বছরে মাকে বেশি খুশি দেখতে চায় সে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা পণ্ডিতের আশা, নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ যেন থাকে শান্ত। হরতালের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন দেশের শিক্ষাঙ্গনকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দেয়।
কয়েক দিন বাদেই বাংলার মাটিতে বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসর। দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মুখে হাসি ফোটাতে টাইগাররা ব্যাট, বল আর হেলমেট নিয়ে নেমে পড়বেন মাঠের যুদ্ধে জয়ী হতে। নতুন বছর নিয়ে ক্রিকেটারদের ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মাদ আশরাফুলকে। তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল আমার ক্যারিয়ারের জন্য খুব একটা অনুকূলে ছিল না। তবে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের স্বর্ণ জেতা ছিল বড় অর্জন।’ ২০১১ সাল নতুন বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন এই ক্রিকেটার।
অন্যকে সাজিয়ে খুশি করে যাঁর তৃপ্তি, তিনি রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। ২০১১ সালে প্রত্যাশা তাঁর একটাই, তা হলো, একইভাবে যেন মানুষকে খুশি করে যেতে পারেন। আর স্বপ্ন দেখেন দেশকে ভালোবেসে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
সুরের ভুবনে বিচরণ করে যিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন, তিনি কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। নতুন বছরে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখতে চান এই শিল্পী। আর বেছে বেছে ভালো কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি ধারণের কথা বলেন নতুন প্রজন্মকে।
নতুন বছর নিয়ে কত কথাই না বলেন সবাই! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর অব এমিরেটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নতুন বছরে তাঁর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, নিজেকে প্রতিনিয়ত জানা আর পড়াশোনা করেই কাটাবেন এবারের বছরটা। সেই সঙ্গে করবেন পত্রিকা সম্পাদনার কাজ। এ ছাড়া সাতচল্লিশ আর একাত্তরের স্বাধীনতা নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক বই দুই যাত্রায় এক পথিক-এর তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করার ইচ্ছা তাঁর। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম এর মাধ্যমেই জানবে ইতিহাস। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার কাজটিও নতুন বছরে আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা তাঁর।
প্রবীণ শিক্ষক ও সাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ বলেন, নতুন বছরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সব অস্থিরতা কাটিয়ে দেশ এগিয়ে যাক। আর সাহিত্য-অঙ্গনে নতুন মুখের সমাবেশ ঘটুক।
সময় থেমে থাকে না। আর সেই হিসাবেই এসেছে আর একটা নতুন বছর। এর সঙ্গে এসেছে নতুন সম্ভাবনা। বাতাসের সঙ্গে হয়তো কিছুটা ধুলোবালি আসে, তার পরও মানুষ নিঃশ্বাস নেয়, বেঁচে থাকে স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষায়। তেমনি করে ২০১১ সালের নতুন বছরটি হোক স্বপ্নে ভরা—সুন্দর আর পরিপূর্ণ।
কেমন কেটেছে ২০১০ সাল?
প্রথমে প্রশ্নটা ধরতেই পারেননি নাদের আলী। বুঝতে বাকি রইল না, নতুন বছরের হিসাব এঁদের কাছে ম্লান। কিছুক্ষণ সময় নিয়ে বলেন, ‘নতুন বছর আবার কী! প্যাট ভইরা পোলা-মাইয়াগো নিয়া খাইতে পারলেই হয়! অ্যার বেশি কিছু চাওনের নাই।’
এরপর গন্তব্যের দিকে ছুটতে রিকশা ডাকি। চালক হেদায়েত উদ্দিন মনের সুখে শীতের সকালে পঙ্খিরাজের মতো চালিয়ে নেন রিকশা। কণ্ঠে তাঁর গান। গানের সুরের মতোই মনে তাঁর উথাল-পাতাল ঢেউ। বগুড়ার এই রিকশাচালক পেটের দায়ে ইট-পাথরের এই শহরে এসেছেন। গত পাঁচ বছরেও কিনতে পারেননি নিজের একটি রিকশা। তাই একটা রিকশা ভাড়ায় চালান। ২০১১ সালে নতুন বছরে স্বপ্ন তাঁর একটাই, ‘এইবার এটটা রিকশা কিনুম। শহর ছাইড়া দ্যাশ বগড়া যামু। পোলা-মাইয়া লইয়া একসাথে থাকুম।’ বোঝাই যায়, পরিবার-পরিজন নিয়ে একসঙ্গে না থাকার কষ্ট হেদায়েত উদ্দিনকে পোড়ায়। আর তাই এ বছরই তিনি সন্তানদের কাছে পাড়ি জমাবেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাঁদের প্রায়ই আনাগোনা, তাঁরা নিশ্চয়ই চেনেন চকলেট বিক্রেতা ছোট্ট পলাশকে। বড় আপু আর ভাইয়াদের দেখলেই যে ছুটে আসে। আদুরে গলায় একটা চকলেট কেনার জন্য আবদার করে বসে। পলাশকে প্রশ্ন করি কেমন যাবে তার ২০১১ সাল। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘোরাফেরার বদৌলতে নতুন বছরের ধারণা তার কাছে স্পষ্ট। দুরন্ত পলাশের ঝটপট উত্তর, ‘এই বছর যেন মেলা চকলেট বেচতি পারি। আর মায়েরে যেন খুশি রাখতে পারি।’ মাকে বড্ড ভালোবাসে পলাশ। তাই নতুন বছরে মাকে বেশি খুশি দেখতে চায় সে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শর্মিষ্ঠা পণ্ডিতের আশা, নতুন বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার পরিবেশ যেন থাকে শান্ত। হরতালের নামে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন দেশের শিক্ষাঙ্গনকে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে না দেয়।
কয়েক দিন বাদেই বাংলার মাটিতে বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসর। দেশের কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমীর মুখে হাসি ফোটাতে টাইগাররা ব্যাট, বল আর হেলমেট নিয়ে নেমে পড়বেন মাঠের যুদ্ধে জয়ী হতে। নতুন বছর নিয়ে ক্রিকেটারদের ভাবনা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি জাতীয় দলের খেলোয়াড় এবং সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মাদ আশরাফুলকে। তিনি বলেন, ‘২০১০ সাল আমার ক্যারিয়ারের জন্য খুব একটা অনুকূলে ছিল না। তবে এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের স্বর্ণ জেতা ছিল বড় অর্জন।’ ২০১১ সাল নতুন বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন এই ক্রিকেটার।
অন্যকে সাজিয়ে খুশি করে যাঁর তৃপ্তি, তিনি রূপবিশেষজ্ঞ কানিজ আলমাস খান। ২০১১ সালে প্রত্যাশা তাঁর একটাই, তা হলো, একইভাবে যেন মানুষকে খুশি করে যেতে পারেন। আর স্বপ্ন দেখেন দেশকে ভালোবেসে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার।
সুরের ভুবনে বিচরণ করে যিনি শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন, তিনি কণ্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী। নতুন বছরে নিজেকে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে দেখতে চান এই শিল্পী। আর বেছে বেছে ভালো কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি। একই সঙ্গে দেশীয় সংস্কৃতি ধারণের কথা বলেন নতুন প্রজন্মকে।
নতুন বছর নিয়ে কত কথাই না বলেন সবাই! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর অব এমিরেটাস সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নতুন বছরে তাঁর কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, নিজেকে প্রতিনিয়ত জানা আর পড়াশোনা করেই কাটাবেন এবারের বছরটা। সেই সঙ্গে করবেন পত্রিকা সম্পাদনার কাজ। এ ছাড়া সাতচল্লিশ আর একাত্তরের স্বাধীনতা নিয়ে ইতিহাসভিত্তিক বই দুই যাত্রায় এক পথিক-এর তৃতীয় খণ্ড প্রকাশ করার ইচ্ছা তাঁর। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম এর মাধ্যমেই জানবে ইতিহাস। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন হওয়ার কাজটিও নতুন বছরে আরও ত্বরান্বিত হবে বলে আশা তাঁর।
প্রবীণ শিক্ষক ও সাহিত্যিক হায়াৎ মামুদ বলেন, নতুন বছরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সব অস্থিরতা কাটিয়ে দেশ এগিয়ে যাক। আর সাহিত্য-অঙ্গনে নতুন মুখের সমাবেশ ঘটুক।
সময় থেমে থাকে না। আর সেই হিসাবেই এসেছে আর একটা নতুন বছর। এর সঙ্গে এসেছে নতুন সম্ভাবনা। বাতাসের সঙ্গে হয়তো কিছুটা ধুলোবালি আসে, তার পরও মানুষ নিঃশ্বাস নেয়, বেঁচে থাকে স্বপ্ন বাস্তবায়নের আকাঙ্ক্ষায়। তেমনি করে ২০১১ সালের নতুন বছরটি হোক স্বপ্নে ভরা—সুন্দর আর পরিপূর্ণ।
No comments