অগ্নিকাণ্ডে শোকস্তব্ধ জাপান গার্ডেন সিটিঃ নির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটি রয়েই গেছে
শোকে মুহ্যমান জাপান গার্ডেন সিটি। সেখানকার প্রতিটি ভবনে উড়ছে কালো পতাকা। শোকাতুর বাসিন্দারা এখনও পরে আছেন কালো ব্যাজ। রাজধানীর সবচেয়ে বড় এই আবাসিক কমপ্লেক্সে অগ্নিকাণ্ড ঘটে ১১ ফেব্রুয়ারি রাতে। ৬ নম্বর ভবনের ১১ তলার একটি কক্ষ থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ার পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দুই ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি একই পরিবারের সাতজনকে।
মায়ের বুকের ওপর পড়ে থাকা নিথর সন্তান ও অন্যান্য লাশ দেখে জানা যায় তারা অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যাননি। মারা গেছেন বিষাক্ত গ্যাসে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে। ভবনের ছাদের দরজা বন্ধ থাকায় নিরুপায় মৃত্যুর শিকার হয়েছেন তারা। দরজা খোলা থাকলে হয়তো এভাবে জীবন দিতে হতো না। ১৬ তলা ভবনের সবাই নিচে নেমে এলে ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা বলেছিলেন, ভেতরে কেউ নেই—হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। পরে দেখা গেল, সাতটি লাশ পড়ে আছে ১৫ তলার সিঁড়িতে। যথাসময়ে চেষ্টা করলে হয়তো তাদের উদ্ধার করা যেত জীবিত অবস্থায়। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভবনটির ১১ তলা থেকে ১৩ তলা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়ে গেছে ১১০১ ফ্ল্যাটের ৫টি কক্ষই। ভাগ্য ভালো যে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের ধারণা, গ্যাস সিলিন্ডার অথবা সিগারেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের মতে, সম্ভবত আগুন লেগেছে শর্ট সার্কিটের কারণে।
এই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে সহজেই আঁচ করা যায়, রাজধানীতে ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দাদের জীবন কতটা অরক্ষিত। এর আগে ঘটে যাওয়া এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে আমরা যে কোনো শিক্ষাই নিইনি তারও আরেকটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত রেখে গেল এ ঘটনা। গত ৭ জানুয়ারি তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে বস্তিতে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ভবন। এর একাধিক ভবনে ছিল একাধিক ফ্ল্যাট। গত বছর ১৩ মার্চ দেশের বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের ওপরের ৭টি ফ্লোর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৭ জন, আহত হন শতাধিক। দাউ দাউ জ্বলতে থাকা আগুনের তাণ্ডব নির্যাপণ করতে দমকল বাহিনীর সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, সেখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল। এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে স্মরণকালের ভয়ঙ্করতম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল।
এবার মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির অগ্নিকাণ্ড দেখিয়ে দিল, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি থেকে আমরা মোটেই মুক্ত নই। এই অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারাও। তারা অভিযোগ করেছেন, মালিকরা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেই খালাস। প্রতিটি ভবনে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও পানির সংযোগ ছিল না। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সবগুলোই ছিল অকেজো। বিধি অনুযায়ী অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায়ও ত্রুটি রয়েছে। এ অবস্থায় ৩০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা ‘স্যাটেলাইট সিটি’ নামকরণের তাত্পর্য কোথায়, তা নিয়েও ভাবনার অবকাশ আছে। এখানে হস্তান্তরিত ১৯টি বিল্ডিংয়ে বসবাস করছেন প্রায় ১১ হাজার মানুষ। অথচ আবাসিক সুবিধা যথেষ্ট কম। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি অ্যাপার্টমেন্ট। একটিতে আগুন লাগলে অন্যটিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা মোটেই অমূলক নয়। সিটির প্রবেশ পথ তুলনামূলকভাবে সঙ্কুচিত। রাজউক থেকে অনুমোদন আনা হলেও মাঠের জায়গায় আরও তিনটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে মালিকপক্ষের।
নিয়মমাফিক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি না করার বিষয়টি তো রাজউকের এখতিয়ারে। ‘সিটি’ নাম নিয়ে গগনচুম্বি ফ্ল্যাটবাড়ি তাদের নকশা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে কিনা তার নজরদারি করবে কে? এ ধরনের বিশাল স্থাপনায় সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা আছে কিনা তা দেখার দায় কার? এসব প্রশ্নের কোনোই জবাব নেই। শুধু সর্বনাশ ঘটে যাওয়ার পর সরকারপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সান্ত্বনামূলক হম্বিতম্বি করেন। তার ফলাফল শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় অশ্বডিম্বে। এবার ঘটনার পর স্থানীয় এমপি ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। ভূমিদস্যু ও প্রতারকদের বিহিত করার কথাও বলেছেন। বস্তুত এসব ফাঁকা আওয়াজের কোনো মূল্য নেই, যতক্ষণ না তা বাস্তবায়িত হয়।
পরপর কয়েকটি ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারকে সারাদেশের ফ্ল্যাটবাড়ির নিরাপত্তামূলক দিকগুলো খতিয়ে দেখতে হবে, দমকল বাহিনীকে দায়িত্বশীল করার পাশাপাশি সাজাতে হবে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে। আপাতত নিজ ঘরে বেঘোরে জীবন দেয়ার ঝুঁকি থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা নিন।
এই ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে সহজেই আঁচ করা যায়, রাজধানীতে ফ্ল্যাটবাড়ির বাসিন্দাদের জীবন কতটা অরক্ষিত। এর আগে ঘটে যাওয়া এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড থেকে আমরা যে কোনো শিক্ষাই নিইনি তারও আরেকটি ন্যক্কারজনক দৃষ্টান্ত রেখে গেল এ ঘটনা। গত ৭ জানুয়ারি তেজগাঁওয়ের বেগুনবাড়িতে বস্তিতে লাগা আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ভবন। এর একাধিক ভবনে ছিল একাধিক ফ্ল্যাট। গত বছর ১৩ মার্চ দেশের বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সের ওপরের ৭টি ফ্লোর পুড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৭ জন, আহত হন শতাধিক। দাউ দাউ জ্বলতে থাকা আগুনের তাণ্ডব নির্যাপণ করতে দমকল বাহিনীর সময় লাগে প্রায় ৮ ঘণ্টা। শেষ পর্যন্ত জানা যায়, সেখানে অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি ছিল। এর আগে ২০০৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি কারওয়ান বাজারের বিএসইসি ভবনে স্মরণকালের ভয়ঙ্করতম অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। তখন উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল।
এবার মোহাম্মদপুরের জাপান গার্ডেন সিটির অগ্নিকাণ্ড দেখিয়ে দিল, অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটি থেকে আমরা মোটেই মুক্ত নই। এই অভিযোগে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন সেখানকার বাসিন্দারাও। তারা অভিযোগ করেছেন, মালিকরা ফ্ল্যাট হস্তান্তর করেই খালাস। প্রতিটি ভবনে ফায়ার এক্সটিংগুইশার থাকলেও পানির সংযোগ ছিল না। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের সবগুলোই ছিল অকেজো। বিধি অনুযায়ী অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থায়ও ত্রুটি রয়েছে। এ অবস্থায় ৩০ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা ‘স্যাটেলাইট সিটি’ নামকরণের তাত্পর্য কোথায়, তা নিয়েও ভাবনার অবকাশ আছে। এখানে হস্তান্তরিত ১৯টি বিল্ডিংয়ে বসবাস করছেন প্রায় ১১ হাজার মানুষ। অথচ আবাসিক সুবিধা যথেষ্ট কম। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি অ্যাপার্টমেন্ট। একটিতে আগুন লাগলে অন্যটিতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা মোটেই অমূলক নয়। সিটির প্রবেশ পথ তুলনামূলকভাবে সঙ্কুচিত। রাজউক থেকে অনুমোদন আনা হলেও মাঠের জায়গায় আরও তিনটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে মালিকপক্ষের।
নিয়মমাফিক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি না করার বিষয়টি তো রাজউকের এখতিয়ারে। ‘সিটি’ নাম নিয়ে গগনচুম্বি ফ্ল্যাটবাড়ি তাদের নকশা অনুযায়ী তৈরি হচ্ছে কিনা তার নজরদারি করবে কে? এ ধরনের বিশাল স্থাপনায় সম্ভাব্য অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধের সব ব্যবস্থা আছে কিনা তা দেখার দায় কার? এসব প্রশ্নের কোনোই জবাব নেই। শুধু সর্বনাশ ঘটে যাওয়ার পর সরকারপক্ষের কর্তাব্যক্তিরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সান্ত্বনামূলক হম্বিতম্বি করেন। তার ফলাফল শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় অশ্বডিম্বে। এবার ঘটনার পর স্থানীয় এমপি ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হাউজিং কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। ভূমিদস্যু ও প্রতারকদের বিহিত করার কথাও বলেছেন। বস্তুত এসব ফাঁকা আওয়াজের কোনো মূল্য নেই, যতক্ষণ না তা বাস্তবায়িত হয়।
পরপর কয়েকটি ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডের অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারকে সারাদেশের ফ্ল্যাটবাড়ির নিরাপত্তামূলক দিকগুলো খতিয়ে দেখতে হবে, দমকল বাহিনীকে দায়িত্বশীল করার পাশাপাশি সাজাতে হবে প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জাম দিয়ে। আপাতত নিজ ঘরে বেঘোরে জীবন দেয়ার ঝুঁকি থেকে মানুষকে নিরাপদ রাখার ব্যবস্থা নিন।
No comments