পবিত্র কোরআনের আলো-দায়িত্বনিষ্ঠরাই আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে

৬. ইন্না ফীখ্ তিলা-ফি ল্লাইলি ওয়ান্নাহা-রি ওয়ামা- খালাক্বা ল্লা-হু ফি চ্ছামা-ওয়া-তি ওয়ালআরদ্বি লাআ-ইয়া-তি লি্লক্বাওমি ইঁয়্যাত্তাক্বূন। ৭. ইন্না ল্লাযীনা লা-ইয়ারজূনা লিক্বা-আনা- ওয়ারাদ্বূ বিলহাইয়া-তি দ্দুনইয়া- ওয়াত্বমাআন্নূ বিহা- ওয়াল্লাযীনা হুম আ'ন আ-ইয়া-তিনা- গা-ফিলূন।


৮. উলা-য়িকা মা'ওয়া-হুমু ন্না-রু বিমা- কা-নূ ইয়াক্ছিবূন।
৯. ইন্না ল্লাযীনা আ-মানূ ওয়াআ'মিছুস্ সা-লিহা-তি ইয়াহ্দীহিম রাব্বুহুম বিঈমা-নিহিম; তাজরী মিন তাহ্তিহিমুল আনহা-রু ফী জান্না-তি ন্নায়ী'ম।
১০. দা'ওয়া-হুম ফীহা ছুব্হা-নাকা ল্লা-হুম্মা ওয়াতাহিয়্যাতুহুম ফীহা- ছালা-ম; ওয়াআ-খিরু দা'ওয়া-হুম আনিল হামদু লিল্লা-হি রাবি্বল আ'-লামীন।
[সুরা : সূরা ইউনুস, আয়াত : ৬-১০]

অনুবাদ : ৬. নিশ্চয়ই দিন ও রাতের পালাবদলে এবং আল্লাহ তায়ালা আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, তাতে সেই লোকদের জন্য বহু নিদর্শন রয়েছে যারা দায়িত্বনিষ্ঠ।
৭. যারা আমার সঙ্গে মিলিত হওয়ার প্রত্যাশী নয়, আর যারা পার্থিব জীবন নিয়েই সন্তুষ্ট এবং তাতেই পরিতৃপ্ত; আর যারা আমার নিদর্শনাবলি সম্পর্কে উদাসীন।
৮. এদের ঠিকানা জাহান্নাম, কেননা এটাই তারা অর্জন করেছে।
৯. (অপরদিকে) যাঁরা ইমান এনেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তাঁদের ইমানের কারণে তাঁদের প্রতিপালক তাঁদের এমন স্থানে পেঁৗছাবেন, যেখানে তাঁদের তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত, সেটা এক সমৃদ্ধ বাগান।
১০. সেখানে তাঁদের উল্লাস ধ্বনি হবে, হে আল্লাহ তুমি সব সীমাবদ্ধতা থেকে পবিত্র। আর তাঁরা সেখানে পরস্পরকে স্বাগত জানানোর জন্য যা বলবে তা হলো 'সালাম' (শান্তি)। তাঁদের শেষ ধ্বনি হবে সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি সমগ্র বিশ্বজগতের প্রতিপালক।

ব্যাখ্যা : ৫ নম্বর আয়াতে যেমন চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবীর স্বরূপ, গতিবিধি এবং এগুলোর পারস্পরিক সম্পর্ক বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে, তেমনি ৬ নম্বর আয়াতে সেগুলোর আধ্যাত্মিক তাৎপর্যের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। সূর্য কী, চন্দ্র কী এবং পৃথিবী কী রকম, সে সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক জ্ঞান দেওয়া এ আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য নয়। আয়াতগুলো লক্ষ করলে আমরা দেখতে পাই এগুলোর বর্ণনার সঙ্গে এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কারের সঙ্গে কোনো অসঙ্গতি নেই। কিন্তু বিজ্ঞানের সাম্প্রতিকতম আবিষ্কৃত সত্যগুলোর সঙ্গে তৎকালীন হাজার বছর ধরে মানব সমাজের কোনো ধারণা ছিল না। সূর্য যে আমাদের এ সৌরজগতের কেন্দ্র, পৃথিবী সূর্যের আরো অনেকগুলো গ্রহের মধ্যে একটি গ্রহ এবং চন্দ্র পৃথিবীর একটি উপগ্রহ_এসব সত্য তৎকালীন মানুষ জানত না। এমনকি পৃথিবী যে গোলাকার এবং এটা যে তার নিজের অক্ষের ওপর ও সূর্যের চারপাশে আহ্নিক পথের ওপর ঘূর্ণায়মান তাও মানুষ জানত না। আল্লাহ তায়ালা বিজ্ঞানের এসব সত্য ওহির মাধ্যমে মানুষকে শিখিয়ে দেওয়ার জন্য কোরআন নাজিল করেননি, তিনি কোরআন নাজিল করেছেন মানুষকে হেদায়াত বা সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য। এই আয়াতগুলোর উদ্দেশ্য আল্লাহর সৃষ্টি জগতের অপার রহস্য এবং মানুষের জীবনে এর প্রভাব সম্পর্কে উপলব্ধি জাগানো। এ জন্যই বলা হয়েছে যারা দায়িত্বনিষ্ঠ, তাঁদের জন্য এগুলোতে প্রচুর নিদর্শন রয়েছে। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টির রহস্য উদ্ঘাটনে উৎসাহিতও করেছেন। যারা আল্লাহর সানি্নধ্য বা জীবনের উৎকর্ষ চায় না, তারা ইহজীবনের ভোগবিলাস নিয়ে মত্ত, তারা উদাসীন। উদাসীনদের ঠিকানা জাহান্নাম।
৮ ও ৯ নম্বর আয়াতে এর বিপরীতে যে মু'মিন ও সৎকর্মশীলদের অবস্থান তাঁদের অপরিমেয় সৌভাগ্যের কথা বলা হয়েছে। কোরআন মজিদে তাঁদেরই অসংখ্যবার মুত্তাকি বা দায়িত্বনিষ্ঠ বলে অবহিত করা হয়েছে। তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য জান্নাত বা উদ্যানরাজিতে প্রবেশ করে আল্লাহর পবিত্রতার কথা বর্ণনা করবেন, পরস্পরে 'সালাম' বিনিময় করবেন এবং আল্লাহর প্রশংসায় মত্ত হবেন। তাঁরা যে তাঁদের অতীতের কর্মফল দ্বারা ভবিষ্যৎকে পরমানন্দময় করে তুলতে পেরেছেন, সে আনন্দ তাঁরা অকুণ্ঠচিত্তে প্রকাশ করবেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.