রুপালি পর্দায় অ্যালান পো

গোয়েন্দা-গল্পের জনক অ্যাডগার অ্যালান পো এবার নিজেই ঢুকে পড়ছেন রহস্যের ধাঁধায়। ১৮৪৫ সালের জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়েছিল তাঁর অন্যতম সৃষ্টি ‘র‌্যাভেন’। এই কবিতায় খ্যাপাটে এক প্রেমিকের গল্প বলেছেন পো। ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার উন্মাদনায় সেই প্রেমিক খুন করতে থাকে একের পর এক।


সেই কবিতা এবার গল্পের রূপ নিয়ে উঠে এসেছে হলিউডের পর্দায়। পরিচালক জেমস ম্যাকটেইগুর ছবি র‌্যাভেন মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল।
ছবির গল্পে পরিচালক দর্শকদের নিয়ে যাবেন ১৯ শতকের বাল্টিমোরে। কবি, লেখক, প্রকাশক ও সমালোচক—পোয়ের জীবনের শেষ পাঁচটি দিনের গল্প নিয়েই এই ছবি। কিন্তু তা নিছক জীবনীনির্ভর ছকে বাঁধা কোনো গল্প নয়। পোয়ের মৃত্যুর আসল কারণ আজও রহস্যের কুয়াশায় ঢাকা তাঁর গল্পের মতোই। এখানেই পরিচালক পেয়েছেন সত্যের সঙ্গে কল্পনাকে মিশিয়ে দেওয়ার অবাধ স্বাধীনতা।
ছবির শুরুতেই দুটো রহস্যজনক খুন! এক মা ও তাঁর মেয়েকে নৃশংসভাবে খুন করেছে কে বা কারা। দুঁদে গোয়েন্দা এমেট ফিল্ডসের তদন্তে ধরা পড়ে, এই খুন দুটির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে পোয়ের লেখা গল্প! স্বাভাবিকভাবেই পুলিশের প্রথম সন্দেহ পোয়ের দিকে। কিন্তু পো যখন জেরার মুখে, সেই সময় আবার খুন! এবং এই খুনটাও যেন পোয়ের গল্প অনুসরণ করেই ঘটিয়েছে ঘাতক।
পো যে খুনি নন, ততক্ষণে তা পরিষ্কার। এ-ও পরিষ্কার, খুনি খুন করে চলেছে পোয়ের রচিত কাহিনিকে অনুসরণ করেই। এই হত্যাকারীকে আটকাতে পোয়ের সাহায্য নেওয়ার বিকল্প নেই। পো নিজেও রাজি। কারণ, ঘাতকের পরের লক্ষ্য পোয়ের কাছেরই একজন। এর পরই শুরু হলো গোয়েন্দা ফিল্ডস আর লেখক পোয়ের যৌথ অভিযান। পোয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জন ক্যুসাক।
র‌্যাভেন-এর পাশাপাশি চিত্রনাট্যকার বেন লিভিংস্টোন ও হানা শেক্সপিয়ার ছবির গল্পে দেদার ব্যবহার করেছেন পোয়ের অন্যান্য সৃষ্টি। ‘দ্য পিট অ্যান্ড দ্য পেন্ডুলাম,’ ‘দ্য মাসক অব দ্য রেড ডেথ,’ ‘দ্য প্রিম্যাচিউর বুরিয়াল,’ ‘দ্য মার্ডার্স ইন দ্য রু মর্গ’ ও পোয়ের অনবদ্য কবিতা ‘অ্যানাবেল লি’।
পোয়ের রহস্যগল্পই দর্শকদের টানটান উত্তেজনার মধ্যে ধরে রাখতে যথেষ্ট। এর সঙ্গে যদি যুক্ত হয় বাড়তি ক্লাইম্যাক্স, তা তো সোনায় সোহাগা। পো নিজেই যে ঢুকে পড়ছেন তাঁর গল্পের মধ্যে। এইবেলা তিনি শুধু রহস্য-লেখক নন, তিনি রহস্যের জট খুলতে ব্যাকুল এক অতিথি গোয়েন্দাও। জয় হবে কার, পোয়ের ক্ষুরধার বুদ্ধির? নাকি পোয়ের গল্প থেকেই রহস্যময় সব খুনের অনুপ্রেরণা খুঁজে নেওয়া সেই খুনির?
সেরেন্ডিপিটি-এর মতো দুর্দান্ত রোমান্টিক ছবি উপহার দেওয়া ক্যুসাককে এই ছবিতে অনেক দিন পর সত্যিকারের অ্যাকশনে দেখবে তাঁর ভক্তরা। পৃথিবী ধ্বংসের গল্প নিয়ে বানানো থ্রিলার ২০১২-তেও সেই অর্থে তাঁকে মারধর করতে হয়নি। তাঁর রোমান্টিক কমেডি ধাঁচের ছবিগুলো এতটাই জনপ্রিয়, অনেকেই হয়তো ভুলেই গেছেন, এই ক্যুসাক কিন্তু মার্শাল আর্টে খুবই দক্ষ, একজন ব্ল্যাকবেল্টধারী।
এই ছবিতে বেশ কিছু দুর্দান্ত অ্যাকশন দৃশ্যে ক্যুসাককে আবিষ্কার করবে দর্শক। ক্যুসাক নিজেও খুবই উপভোগ করেছেন চরিত্রটি, ‘যেকোনো অভিনেতাই পোয়ের চরিত্রে অভিনয় করতে চাইবে। তিনি ছিলেন এই বিশ্বের একজন অনাথ এবং গুপ্তবিশ্বের (আন্ডারওয়ার্ল্ড) একজন পথিকৃৎ।’
উনিশ শতকের বাল্টিমোরকে নিখুঁতভাবে তুলে ধরতে ছবির শুটিং হয়েছে হাঙ্গেরি, বেলগ্রেড আর সার্বিয়ায়। ছবির বেশির ভাগ দৃশ্য রাতের অন্ধকারের রহস্যে ঢাকা। ক্যুসাক মজা করে বলেছেন, ‘মাঝেমধ্যে নিজেকে মনে হয়েছে একটা ভ্যাম্পায়ার।’
 রাজীব হাসান
তথ্য: বার্তা সংস্থা

No comments

Powered by Blogger.