চারদিক-আদমজী ক্যান্ট. পাবলিকের সুবর্ণজয়ন্তী by মোছাব্বের হোসেন
‘ওই যে জায়গাটা দেখছিস, মনে আছে, ওখানে আমরা কত দিন একসঙ্গে বসে আড্ডা দিয়েছি? চল, ওখানে গিয়ে আবারও আজ বসি, সেই আড্ডায় ফিরে যাই।’ বলেই ১০ থেকে ১২ জন বন্ধু একসঙ্গে ছুটে গেল তাঁদের সেই পুরোনো আড্ডার জায়গায় আর আপন মনে সেই দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করতে লাগল।
এভাবে সেদিন নানা বয়সের মানুষ মিলেছিল একসঙ্গে। তারা যেন আবার ফিরে গেল সেই সোনাঝরা দিনগুলোতে—বলা হচ্ছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের কথা। সম্প্রতি দেশের অন্যতম ও স্বনামধন্য এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ বছর পূর্ণ হলো। এ উপলক্ষে গত ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর দুই দিনব্যাপী আয়োজন করা হয় সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন অনুষ্ঠান।
প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টানে এই সময় ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে এখানে ছুটে এসেছিল, মিলেছিল প্রাণের টানে। সকালের শিশিরভেজা মাঠ, শীতের মিষ্টি রোদের পরশ আর একে একে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আলিঙ্গন—সব মিলিয়ে এক অন্য রকম অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় সবার মনে। ‘১৯৭৪ সালের এইচএসসির ব্যাচ আমরা। একসময় কত আনন্দ করতাম আমরা এখানে, কত আনন্দের স্মৃতি আছে এই কলেজ ঘিরে, তার সব আজ একে একে মনে পড়ছে। এমন অনেক বন্ধু আছে, ৩৫ বছর পর দেখা হলো। প্রথম চিনতে কষ্ট হলেও ভুলে যাইনি। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গ বুকে জড়িয়ে থেকেছি অনেকক্ষণ। তবে আজ বন্ধু হাফিজের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। ১৯৭৭ সালে বগুড়ায় এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে আমাদের বন্ধুটি।’ কথাগুলো বলছিলেন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শহীদুদ্দিন আহমেদ। কথায় যেন তাঁর আবেগ ধরে আসে। কথার শেষে তিনি পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন অবস্থা সবারই। বন্ধুদের সঙ্গে কত দিন পর দেখা হলো! আবার কবে দেখা হবে, কে জানে? তাই ছবি তোলা চাই-ই চাই। কেউ বন্ধুকে দেখে বলছেন, ‘কিরে, তোর বাচ্চা কয়টা? মাথা তো স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছিস!’ রসিকতা করে আরেক বন্ধু বলছেন, ‘তোর চুল-দাড়ি তো কাশফুলের মতো সাদা হয়ে গেছে, বুড়ো হয়ে গেছিস।’ অপর বন্ধু ঝটপট বলেন, ‘আর তুই বুঝি এখনো কচি খোকা রয়ে গেছিস?’
বেশ জমজমাট আড্ডা দিচ্ছে প্রায় ২০ জনের একটি দল। এগিয়ে যাই তাঁদের দিকে। শওকত জামান একমনে বন্ধুদের ছবি তুলছেন, এরই ফাঁকে কথা বলা। ‘আমরা ১৯৭৯ সালের এসএসসির ব্যাচ ছিলাম। বন্ধুরা অনেকেই দেশের বাইরে থাকে। ঠিক করে রেখেছি, স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তীতে সবাই একত্র হব। সেই থেকেই প্রস্তুতি শুরু। আজ আমরা সবাই একত্র হয়েছি। সেই সব দিনের স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে।’ এই দলের এক বন্ধু কাজী ইমাম যোগ করে বললেন, ‘কয়েকজন বন্ধুকে ৩০ বছর পর দেখলাম। কী যে আনন্দ, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
১৯৫৮ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গুল মোহম্মাদ আদমজীর স্ত্রী। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। ১৯৬০ সালের শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান করা হতো ইংরেজি মাধ্যমে। স্বাধীনতার পর এখানে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়। সেদিনের সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বয়স এখন ৫০।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী আক্কু চৌধুরী, ১৯৬৫ সালে এই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে শহীদ রুমী এই স্কুলেই আমাদের বড় ভাই ছিলেন। মনে আছে, নতুন বই নেওয়ার সময় তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। সে সময় দুই শাখার ৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আমরা তিনজন বাঙালি ছাত্র ছিলাম। আমাদের বাঙালি শিক্ষক আহম্মদ স্যার ও আমরা তিনজন সবার কাছে সব সময় বাঙালিদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করতাম। আজ এখানে এসে সেসব কথাই বারবার মনে পড়ছে।’ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেজেছিল ভিন্ন সাজে। নাচ-গানসহ নানা আয়োজন ছিল দুই দিন ধরে। এর ফাঁকে ফাঁকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্মৃতির কথা বলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পর্বটি ছিল ২৪ তারিখ; আর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পর্বটি ছিল ২৫ তারিখ। এই প্রতিষ্ঠানের ২০০৫ সালের এইচএসসি ব্যাচের মাহাফুজ, ইকবাল ও তাঁদের বন্ধুরা আলাপ করছিলেন এখানে পড়ার সময়কার নানা মজার ঘটনা নিয়ে। মাহাফুজ বলেন, ‘আজ এখানে সব বন্ধু একত্র হয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। এখানকার মাটি ও প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে আমাদের আত্মার যে বন্ধন, তা কখনোই ভোলার নয়।’
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে রাত। কিন্তু পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে সেদিকে যেন কারও কোনো খেয়াল থাকে না!
প্রিয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টানে এই সময় ছেলে-বুড়ো সবাই মিলে এখানে ছুটে এসেছিল, মিলেছিল প্রাণের টানে। সকালের শিশিরভেজা মাঠ, শীতের মিষ্টি রোদের পরশ আর একে একে পুরোনো বন্ধুদের সঙ্গে আলিঙ্গন—সব মিলিয়ে এক অন্য রকম অনুভূতি দোলা দিয়ে যায় সবার মনে। ‘১৯৭৪ সালের এইচএসসির ব্যাচ আমরা। একসময় কত আনন্দ করতাম আমরা এখানে, কত আনন্দের স্মৃতি আছে এই কলেজ ঘিরে, তার সব আজ একে একে মনে পড়ছে। এমন অনেক বন্ধু আছে, ৩৫ বছর পর দেখা হলো। প্রথম চিনতে কষ্ট হলেও ভুলে যাইনি। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গ বুকে জড়িয়ে থেকেছি অনেকক্ষণ। তবে আজ বন্ধু হাফিজের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে। ১৯৭৭ সালে বগুড়ায় এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে আমাদের বন্ধুটি।’ কথাগুলো বলছিলেন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন শিক্ষার্থী শহীদুদ্দিন আহমেদ। কথায় যেন তাঁর আবেগ ধরে আসে। কথার শেষে তিনি পরিবারের সন্তানদের নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এমন অবস্থা সবারই। বন্ধুদের সঙ্গে কত দিন পর দেখা হলো! আবার কবে দেখা হবে, কে জানে? তাই ছবি তোলা চাই-ই চাই। কেউ বন্ধুকে দেখে বলছেন, ‘কিরে, তোর বাচ্চা কয়টা? মাথা তো স্টেডিয়াম বানিয়ে ফেলেছিস!’ রসিকতা করে আরেক বন্ধু বলছেন, ‘তোর চুল-দাড়ি তো কাশফুলের মতো সাদা হয়ে গেছে, বুড়ো হয়ে গেছিস।’ অপর বন্ধু ঝটপট বলেন, ‘আর তুই বুঝি এখনো কচি খোকা রয়ে গেছিস?’
বেশ জমজমাট আড্ডা দিচ্ছে প্রায় ২০ জনের একটি দল। এগিয়ে যাই তাঁদের দিকে। শওকত জামান একমনে বন্ধুদের ছবি তুলছেন, এরই ফাঁকে কথা বলা। ‘আমরা ১৯৭৯ সালের এসএসসির ব্যাচ ছিলাম। বন্ধুরা অনেকেই দেশের বাইরে থাকে। ঠিক করে রেখেছি, স্কুলের সুবর্ণজয়ন্তীতে সবাই একত্র হব। সেই থেকেই প্রস্তুতি শুরু। আজ আমরা সবাই একত্র হয়েছি। সেই সব দিনের স্মৃতি চোখের সামনে ভাসছে।’ এই দলের এক বন্ধু কাজী ইমাম যোগ করে বললেন, ‘কয়েকজন বন্ধুকে ৩০ বছর পর দেখলাম। কী যে আনন্দ, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
১৯৫৮ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন গুল মোহম্মাদ আদমজীর স্ত্রী। এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান। ১৯৬০ সালের শুরুতে এই প্রতিষ্ঠানে পাঠ দান করা হতো ইংরেজি মাধ্যমে। স্বাধীনতার পর এখানে বাংলা মাধ্যমে শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়। সেদিনের সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির বয়স এখন ৫০।
এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষার্থী আক্কু চৌধুরী, ১৯৬৫ সালে এই স্কুলে ভর্তি হন। তিনি বলেন, ‘শহীদ জননী জাহানারা ইমামের বড় ছেলে শহীদ রুমী এই স্কুলেই আমাদের বড় ভাই ছিলেন। মনে আছে, নতুন বই নেওয়ার সময় তিনি আমাকে সাহায্য করেছিলেন। সে সময় দুই শাখার ৭০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে আমরা তিনজন বাঙালি ছাত্র ছিলাম। আমাদের বাঙালি শিক্ষক আহম্মদ স্যার ও আমরা তিনজন সবার কাছে সব সময় বাঙালিদের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করতাম। আজ এখানে এসে সেসব কথাই বারবার মনে পড়ছে।’ সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে গোটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেজেছিল ভিন্ন সাজে। নাচ-গানসহ নানা আয়োজন ছিল দুই দিন ধরে। এর ফাঁকে ফাঁকে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা তাঁদের স্মৃতির কথা বলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের বর্তমান শিক্ষার্থীদের পর্বটি ছিল ২৪ তারিখ; আর প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের পর্বটি ছিল ২৫ তারিখ। এই প্রতিষ্ঠানের ২০০৫ সালের এইচএসসি ব্যাচের মাহাফুজ, ইকবাল ও তাঁদের বন্ধুরা আলাপ করছিলেন এখানে পড়ার সময়কার নানা মজার ঘটনা নিয়ে। মাহাফুজ বলেন, ‘আজ এখানে সব বন্ধু একত্র হয়েছি। অনেক ভালো লাগছে। এখানকার মাটি ও প্রতিটি ঘাসের সঙ্গে আমাদের আত্মার যে বন্ধন, তা কখনোই ভোলার নয়।’
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে রাত। কিন্তু পুরোনো বন্ধুদের কাছে পেয়ে সেদিকে যেন কারও কোনো খেয়াল থাকে না!
No comments