রফতানি খাত চাঙ্গা করুনঃ ঋণ করে ঘি খেলে চলবে না
দেশের প্রধান প্রধান রফতানি খাত এখনও বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিদায়ী বছরের শেষার্ধের হিসাব-নিকাশ থেকে তা স্পষ্ট। এক খাতে কিছুটা অনুকূল হাওয়া লাগতেই অন্যখাতে ভাটার টান। দীর্ঘদিন বিশ্বমন্দার একটি প্রতিকূল প্রভাব সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে পড়েছিল রফতানি খাতে।
গত অক্টোবর-নভেম্বর থেকে উন্নত দেশগুলোতে মন্দা কাটতে শুরু করে। আশা করা গিয়েছিল এই মন্দার মেঘ কাটার সঙ্গে সঙ্গে রফতানি বাণিজ্য আবার আলোর মুখ দেখবে। সরকারের তরফ থেকেও বলা হচ্ছিল, অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে রফতানি আয়ের মন্দাভাবের উন্নতি ঘটবে। কিন্তু হিসাবের খাতায় উল্লেখযোগ্য কোনো প্রাপ্তি যোগ হয়নি।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে। এর পরিমাণও বিশাল, তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। শতকরা হিসেবে আয় কমেছে ৬ দশমিক ২০ ভাগ। গত ডিসেম্বর মাসেই রফতানি আয় কমেছে ২ শতাংশ। হিসাব মতে সবচেয়ে আয় কমেছে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে। যে খাত জাতীয় রফতানি আয়ের ৭৬ শতাংশের যোগানদার। তৈরি পোশাকের পরই আসে সিরামিক, চা, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, শাকসবজিসহ প্রধান রফতানি পণ্যের নাম। এগুলোর অবস্থাও হতাশাব্যঞ্জক। এদিকে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারও বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে। কৃষিখাতে আশানুরূপ অগ্রসর অর্জন হয়নি। অর্জিত হয়নি আমন ধান উত্পাদন এবং সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা। কৃষিখাতে বিরাজমান এই সঙ্কটের সঙ্গে রফতানি আয়ে ঘাটতি যোগ হয়ে এক নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তবে কিছু কিছু খাতে রফতানি আয় ইতিবাচক। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তামাক, পাটজাত পণ্য, কাঁচাপাট ইত্যাদি। এর মধ্যে কেবল ওষুধ রফতানিতেই সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ওষুধ রফতানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, জুলাই-ডিসেম্বরে মোট রফতানি আয় হয়েছে সাত হাজার ২৭৩ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলার। যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন হাজার ৩১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা কম।
গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। একই সময়ে ওভেন গার্মেন্টসের ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলের ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও টেক্সটাইল ফেব্রিক্সে ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ রফতানি আয় কমেছে। তার ওপর দেশে পোশাকশিল্পে বিভিন্ন ধরনের ঝুটঝামেলা লেগেই আছে। শ্রমিক অসন্তোষ, বিদ্যুত্ ঘাটতি ইত্যাদির ফলে কম-বেশি উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেই পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, বিগত তিন দশক ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান উত্স জনশক্তি খাতটিও এখন মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে রয়েছে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। প্রকৃত প্রস্তাবে এখানে এখনও কোনো শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত অবস্থার জন্য দায়ী প্রধানত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। প্রধানমন্ত্রীর কুয়েত সফরের পরও সেখানকার বন্ধ শ্রমবাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে আশ্বাস পাওয়া যায়নি। শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে সৌদি আরবের আশ্বাস বাস্তবরূপ পায়নি এখনও। নেপাল থেকে শ্রমিক নেয়া শুরু করলেও বৃহত্তম বাজার মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা, কূটনৈতিক তত্পরতার অভাবে জনশক্তি রফতানি খাতে এ ভয়াবহ সঙ্কট নেমে এসেছে।
এ অবস্থায় যদি রফতানি আয়ের প্রধান খাতগুলোতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং কূটনৈতিক তত্পরতার অভাবে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেই লোকসানের পরিমাণ হিসাব কষে বের করা কঠিন হবে। এদিকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আছে বিনিয়োগ স্থবিরতা। বিনিয়োগ বাড়ছে না, কিন্তু বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, কঠিন শর্তে ঋণ নিয়ে পরিচালিত প্রকল্প দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাহায্যের আগে নিজেদের সম্ভাবনাময় খাতগুলো চাঙ্গা করতে হবে। ঋণ করে ঘি খেলে চলবে না। রফতানি আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সার্বিক উত্পাদন বাড়ানোর বিষয়টি জড়িত। এজন্য একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দলে দলে লাগাতার কোন্দলের আবহে জাতীয় আয়ের কোনো খাতের দিকে অখণ্ড মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় প্রধানত সরকারের।
চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় রফতানি আয় কমেছে। এর পরিমাণও বিশাল, তিন হাজার কোটি টাকারও বেশি। শতকরা হিসেবে আয় কমেছে ৬ দশমিক ২০ ভাগ। গত ডিসেম্বর মাসেই রফতানি আয় কমেছে ২ শতাংশ। হিসাব মতে সবচেয়ে আয় কমেছে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে। যে খাত জাতীয় রফতানি আয়ের ৭৬ শতাংশের যোগানদার। তৈরি পোশাকের পরই আসে সিরামিক, চা, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য, শাকসবজিসহ প্রধান রফতানি পণ্যের নাম। এগুলোর অবস্থাও হতাশাব্যঞ্জক। এদিকে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজারও বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে। কৃষিখাতে আশানুরূপ অগ্রসর অর্জন হয়নি। অর্জিত হয়নি আমন ধান উত্পাদন এবং সরকারের ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা। কৃষিখাতে বিরাজমান এই সঙ্কটের সঙ্গে রফতানি আয়ে ঘাটতি যোগ হয়ে এক নেতিবাচক অবস্থা সৃষ্টি করেছে। তবে কিছু কিছু খাতে রফতানি আয় ইতিবাচক। এর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, তামাক, পাটজাত পণ্য, কাঁচাপাট ইত্যাদি। এর মধ্যে কেবল ওষুধ রফতানিতেই সন্তোষজনক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে। ওষুধ রফতানি বেড়েছে ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যমতে, জুলাই-ডিসেম্বরে মোট রফতানি আয় হয়েছে সাত হাজার ২৭৩ দশমিক ৯০ মার্কিন ডলার। যা পূর্ববর্তী বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন হাজার ৩১৭ কোটি ৫২ লাখ টাকা কম।
গত অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তৈরি পোশাকের রফতানি কমেছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। একই সময়ে ওভেন গার্মেন্টসের ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ, হোম টেক্সটাইলের ১২ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও টেক্সটাইল ফেব্রিক্সে ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ রফতানি আয় কমেছে। তার ওপর দেশে পোশাকশিল্পে বিভিন্ন ধরনের ঝুটঝামেলা লেগেই আছে। শ্রমিক অসন্তোষ, বিদ্যুত্ ঘাটতি ইত্যাদির ফলে কম-বেশি উত্পাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ অবস্থায় বিদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে গেলে এর নেতিবাচক প্রভাব দেশের সার্বিক অর্থনীতিতেই পড়বে, তাতে সন্দেহ নেই। উল্লেখ্য, বিগত তিন দশক ধরে তিলে তিলে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের রফতানি আয়ের প্রধান উত্স জনশক্তি খাতটিও এখন মারাত্মক বিপর্যয়ের সম্মুখীন। ভয়াবহ সঙ্কটের মুখে রয়েছে বিদেশে বাংলাদেশের শ্রমবাজার। প্রকৃত প্রস্তাবে এখানে এখনও কোনো শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা অব্যবস্থাপনায় জর্জরিত অবস্থার জন্য দায়ী প্রধানত জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো। প্রধানমন্ত্রীর কুয়েত সফরের পরও সেখানকার বন্ধ শ্রমবাজার পুনরায় চালুর বিষয়ে আশ্বাস পাওয়া যায়নি। শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে সৌদি আরবের আশ্বাস বাস্তবরূপ পায়নি এখনও। নেপাল থেকে শ্রমিক নেয়া শুরু করলেও বৃহত্তম বাজার মালয়েশিয়া বাংলাদেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি। জনশক্তি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা মনে করেন, সরকার, সংশ্লিষ্ট সংস্থা, কূটনৈতিক তত্পরতার অভাবে জনশক্তি রফতানি খাতে এ ভয়াবহ সঙ্কট নেমে এসেছে।
এ অবস্থায় যদি রফতানি আয়ের প্রধান খাতগুলোতে দক্ষ ব্যবস্থাপনা এবং কূটনৈতিক তত্পরতার অভাবে ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় তাহলে সেই লোকসানের পরিমাণ হিসাব কষে বের করা কঠিন হবে। এদিকে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে আছে বিনিয়োগ স্থবিরতা। বিনিয়োগ বাড়ছে না, কিন্তু বৈদেশিক ঋণ বাড়ছে। বাস্তবতা হচ্ছে, কঠিন শর্তে ঋণ নিয়ে পরিচালিত প্রকল্প দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। সাহায্যের আগে নিজেদের সম্ভাবনাময় খাতগুলো চাঙ্গা করতে হবে। ঋণ করে ঘি খেলে চলবে না। রফতানি আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সার্বিক উত্পাদন বাড়ানোর বিষয়টি জড়িত। এজন্য একটি পূর্বশর্ত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। দলে দলে লাগাতার কোন্দলের আবহে জাতীয় আয়ের কোনো খাতের দিকে অখণ্ড মনোযোগ দেয়া সম্ভব নয়। কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টির দায় প্রধানত সরকারের।
No comments