দলীয় বিবেচনায় পরিবেশক নিয়োগ নয়-চিনি ও ভোজ্যতেল
সাম্প্রতিক সময়ে যে দুটি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে, তা হলো চিনি আর ভোজ্যতেল। নানা রকমের তৎপরতা সত্ত্বেও এ দুটি পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সরকার ঠেকাতে পারেনি, কখনো কখনো পণ্য দুটির দাম বিস্ময়কর মাত্রায় বেড়েছে।
এই সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে সরকার চিনি ও ভোজ্যতেলের বিপণনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা কতটা ফলপ্রসূ হয়, তাও দেখার বিষয়।
চিনি ও ভোজ্যতেলের বিপণনের ক্ষেত্রে প্রচলিত ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) বা সরবরাহ আদেশ-প্রথা তুলে দিয়ে পরিবেশক-প্রথা চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে পরিবেশক নিয়োগ নীতিমালা চূড়ান্তকরণের প্রক্রিয়া চলছে। চিনি ও ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উৎসাহ কম, তাঁরা প্রথা পরিবর্তনের জন্য আরও সময় চান বলে জানা গেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন, সময় চাওয়ার মানে বিষয়টিকে প্রলম্বিত করা। অর্থাৎ ডিও-প্রথা তুলে দিয়ে পরিবেশক-প্রথা চালু করার ক্ষেত্রে সরকারের সিদ্ধান্তকে আরোপিত বা চাপিয়ে দেওয়া বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এটা আরোপ করা ছাড়া আর কী উপায় থাকতে পারে, যখন চিনি ও ভোজ্যতেলের বাজারের অস্বাভাবিক আচরণের কোনো যুক্তিসংগত কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন না সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা? অস্বাভাবিক মুনাফা লাভের প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে সরকারের নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থাই কাম্য, যদি সেই নিয়ন্ত্রণ ফলপ্রসূ হয়।
পরিবেশক নিয়োগ থেকে শুরু করে তাঁদের দায়িত্বশীল ও সততাপূর্ণ ব্যবসায়িক আচরণ নিশ্চিত করা পর্যন্ত পুরো ব্যবস্থাটি সঠিকভাবে পরিচালিত হলে এ ব্যবস্থার সুফল পাওয়া সম্ভব। পরিবেশক নিয়োগ নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রতিটি পণ্যের মোড়কের গায়ে পণ্যের খুচরা মূল্য ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু দেখা যায়, উল্লিখিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য বিক্রি হয় এই অজুহাতে যে, সরবরাহ কম। পরিবেশকদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় বাজারের গতিপ্রকৃতি দেখে পরিবেশকেরা পণ্য তোলেন। কখনো অপেক্ষা করেন বাজারে সংকট বাড়ার, যাতে তাঁদের বাড়তি মুনাফা হয়। বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে অনেক পরিবেশক পণ্য তোলেন না। আবার অনেক সময় অসাধু পরিবেশকেরা যোগসাজশ করেও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মতলবে পণ্য তোলা থেকে বিরত থাকেন।
সুতরাং বিষয়টি কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, তা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তথা সরকারকে গভীরভাবে ভেবে দেখতে হবে। পরিবেশক-প্রথা নতুন কিছু নয়। সার ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের ক্ষেত্রে এ প্রথার অনেক সমস্যা এর আগে লক্ষ করা গেছে। পরিবেশক নিয়োগে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা এবং দলীয় লোকদের ব্যবসায়িক অসদাচরণ সরকারের ভালো উদ্যোগগুলো শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। চিনি ও ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে এবার যেন তা না হয়, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী সম্প্রদায়েরও উচিত এ বিষয়ে সরকারকে সহযোগিতা করা।
No comments