স্বাধীন রাষ্ট্র ও আমাদের করণীয় by মোহাম্মদ মতিন উদ্দিন
আমাদের অর্থাত্ এ দেশের জনগণের করণীয় হচ্ছে বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। পাঠক সমাজ লক্ষ্য করুন, আমি কিন্তু এ কথা বলছি না যে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার রাজনীতি আমাদের করতে হবে, আমি বলছি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি আমাদের করতে হবে।
স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক সংগ্রাম শুরু হয়েছে বাংলা ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। সেই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা করেছি, এ রাষ্ট্রটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। তবে প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার সংগ্রাম এখনও অসম্পূর্ণ থেকে গেছে। এটাকে সম্পূর্ণ করার রাজনীতিই আমাদের এখনকার করণীয়। ঐতিহাসিক তথ্য বিশ্লেষণ করলে আমরা তথা এ দেশের জনগণ এখনও বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার কাজটি সম্পূর্ণ করতে পারিনি এ কথা অস্বীকার করা যাবে না।
আমার এসব কথা শুনলে অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন, কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে অবাক হওয়ার কোনো কারণ থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আবেগের তাড়নায় কথা না বলে, বাস্তবতা বিচারের নিরিখে কথা বলা ও শোনার মানসিকতা থাকলে আমরা পরিষ্কার দেখতে পাব আমাদের রাষ্ট্রটি অর্থাত্ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এখনও দুর্বলতার মধ্যেই পড়ে আছে।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা, ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, জাতীয় অর্থনীতি বিকাশের প্রশ্নে নিজ দেশীয় সম্পদের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব বহাল রেখে স্বাধীনভাবে নিজ দেশীয় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা, পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে নিজ দেশীয় স্বার্থের অর্থাত্ জাতীয় স্বার্থের আঙ্গিকে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করা। মূলগতভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, নিজ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্নে সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার যোগ্যতা অর্জন এবং তা বজায় রেখে চলাই হচ্ছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি উপরোক্ত কাজগুলো করতে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে? আমার দেখা মতে তা হয়নি। অন্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের তল্পিবাহক হিসেবেই আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সদা তত্পর থেকেছে এবং এখনও থাকছে। এই যদি হয় অবস্থা, তবে আমরা কি বলতে পারি আমাদের রাষ্ট্রটি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
জনগণের নিরাপত্তা বিধানের প্রসঙ্গে যদি আসি, তবে এটা এ দেশবাসী সহজেই দেখতে পাবে প্রায় সময়ই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের দেশের সাধারণ কৃষকদের গুলি করে হত্যা করেই চলেছে। অথচ এর প্রতিবাদে এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। মাঝে মাঝে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠক ছাড়া এ দেশের সীমান্ত এলাকায় জনগণের নিরাপত্তা বিধানে শাসকরা আর কিছু করছেন না। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বের কোথাও প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে আমার জানা নেই। অর্থাত্ এ দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাধররা এর প্রতিকারে অক্ষম। অথচ যে রাষ্ট্র কর্তৃক এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তাদের আমরা বলছি বন্ধু রাষ্ট্র। কম-বেশি এ রকম ঘটনা এ দেশের প্রতিটি সরকারের আমলেই ঘটেছে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে যে রাষ্ট্র কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে না, সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতাবানরা কি করছেন?
ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা যদি বলি, সেখানেও দেখি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশভুক্ত এলাকা আমরা ১৯৭৪ সালে হস্তান্তর করলেও প্রতিপক্ষ তার এলাকা এখনও তার দখলেই রেখেছে। এমনকি সমুদ্রবক্ষে জেগে ওঠা তালপট্টি দ্বীপটি বাংলাদেশের সীমারেখায় পড়লেও সেটি পার্শ্ববর্তী দেশ দখল করে বসে আছে। আর এ ধরনের একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে আমরা আমাদের রাস্তাঘাট-নৌপথ-আকাশপথ-সমুদ্রবন্দর তাদের ব্যবহারের জন্য চুক্তি করছি। এটা কি ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের লক্ষণ?
জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের প্রশ্নে নিজ দেশীয় সম্পদের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব বহাল রেখে স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও আমরা উল্টো পথে চলছি। নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিদ্যুত্-বন্দর নিয়ে বিভিন্ন অসম চুক্তির মাধ্যমে আমরা বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছি, নিজ দেশে শিল্প বিকাশের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপরও আমরা কোনো জাতীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছি না, বিশ্বায়নের দোহাই পেড়ে দেশীয় বাজারকে আমরা অন্যের জন্য খুলে দিয়েছি। আর নিজের দেশের শিল্পপণ্যের বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছি বিদেশে। এমন সব পণ্য উত্পাদনে আমরা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উত্সাহিত করছি, যা বিশ্বের বাজারে আধিপত্য বিস্তারকারী বহুজাতিক বৃহত্ পুঁজির স্বার্থের চাহিদাকে পূরণ করে চলেছে। এসব পণ্য সরাসরি বাজারজাত করার ক্ষমতাও এ দেশের শিল্পপতিদের নেই, তারা ঠিকাদার মাত্র। দেশে কলকারখানার বিকাশ ঘটানোর প্রশ্নে দেশীয় বাজারের ওপর জাতীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে আমরা দেশীয় শ্রমের জন্য বিদেশে বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে কাজ করার জন্য আমরা আমাদের দেশের সেনাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পাঠিয়ে জাতীয় গৌরবের ঢাকঢোল বাজাচ্ছি। অথচ আমাদের সীমান্তে যে অশান্তি ঘটেই চলেছে, সেই প্রশ্নে যথাযথ ভূমিকা নেই। নিজ দেশের সীমান্তে জনগণের জীবনকে নিরাপত্তাহীনতার গহ্বরে রেখে বিশ্বের অন্য দেশের শান্তিরক্ষার জন্য আমরা আমাদের সেনাদের প্রেরণ করছি। এর থেকে হাস্যকর এবং দায়িত্বহীন আচরণ আর কি আছে? অর্থাত্ এ দেশের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের চরিত্রই হচ্ছে নিজ দেশের সম্পদ, বাজার, বন্দর, সেনা সদস্যদের বহুজাতিক বৃহত্ পুঁজির ধারক-বাহক রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে কাজ করে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোষ্ঠীগত বা দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করা। দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রধান বিষয় নয়। আগ্রাসী বহুজাতিক বৃহত্ পুঁজির স্বার্থে কাজ করার ধারায় তারা যা উপার্জন করে, সেটাও দেশে না রেখে বিদেশে গচ্ছিত রাখতেই এরা ভালোবাসে। সামান্য অসুখ-বিসুখে বিদেশে যাওয়া, নিজেদের ছেলেমেয়ের শিক্ষার জন্য বিদেশে ব্যবস্থা করা, বিদেশে ঘর-বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসা এটা একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়। স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের বা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্র এমন হতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা এ রকম দেখে আসছি।
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিশ্ব আধিপত্যকে সহায়তা দান এর অন্তর্ভুক্ত। এ যদি হয় অবস্থা, তবে আমরা কোনো যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে কি করে বলতে পারি, আমরা নিরুদ্বিগ্ন অবস্থায় বসবাস করছি! স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যা পড়ে তার ধারে-কাছেও আমাদের অবস্থান নেই। মহাশক্তিধরদের তাঁবেদারি করে চলাই কি আমাদের বৈশিষ্ট্য?
অর্থাত্ বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এমন যে, আমাদের যে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আছে—তা পূর্ণাঙ্গাকারে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের রাজনৈতিকভাবে করণীয়। অতএব আমাদের রাজনীতি হবে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উল্লিখিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। যারা দেশপ্রেমের কথা বলেন, তারা কি বিষয়টিকে উপেক্ষা করতে পারবেন?
আমরা প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির স্বাধীন সার্বভৌম চরিত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আমাদের বন্দর, বাজার, বিদ্যুত্, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যেত না। মুখে সোনার বাংলা, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ঘোষিত হলেও স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পরও যে তা অর্জিত হচ্ছে না; তার কারণ একটাই—আমরা বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করে তুলতে সক্ষম হইনি। যতদিন এ কাজ সম্পন্ন হবে না, অর্থাত্ এ দেশীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের দালালি বা কমিশনভোগী চরিত্র পরিবর্তন না হবে, ততদিন এ দেশের অনেক সমস্যাই জিইয়ে থাকবে। ছাত্র রাজনীতিতে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, অরাজকতা এখান থেকেই সৃষ্ট। অতএব কেউ যদি মনে করেন ছাত্র রাজনীতির বর্তমান চরিত্র থেকে ছাত্র রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে, তবে ছাত্র রাজনীতির সামনে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির স্বাধীন সার্বভৌম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের তথা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই তুলে ধরতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের মোহে যারা মোহগ্রস্ত, তাদের মুখে আদর্শভিত্তিক রাজনীতিতে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করার কথা শোভা পায় না। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের ধারায় নিজ দেশের অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণ করার কারণে দেশীয় সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে, সম্পদের এ ঘাটতির কারণেই এ দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র এ রকম কেন হলো? কি ঐতিহাসিক কারণ এর মাঝে লুকিয়ে আছে? আমরা জানি, এক সময় বর্তমান বাংলাদেশ ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে যেসব ইতিহাসবিদ গবেষণা করেছেন তাদের একজন বলেছেন, ‘ভারতের অতীত ইতিহাস বলতে যদি কিছু থাকে তো তার সবখানি হলো পর পর বিজিত হওয়ার ইতিহাস। ভারতীয় সমাজের কোনো ইতিহাস নেই, অন্তত জানা কোনো ইতিহাস। ভারতের ইতিহাস হলো শুধু একের পর এক বহিরাক্রমণকারীর ইতিহাস, যারা ওই অপ্রতিরোধী অপরিবর্তমান সমাজের নিষ্ক্রিয় ভিত্তিতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে গেছে।’
আরবি, তুর্কি, তাতার, মোগল যারা একের পর এক ভারত প্লাবিত করেছে তারা অচিরেই হারিয়ে গেছে; ইতিহাসের এক চিরন্তন নিয়ম অনুসারে বর্বর বিজয়ীরা নিজেরাই বিজিত হয়েছে তাদের প্রজাদের উন্নততর সভ্যতায়। ব্রিটিশরাই হলো প্রথম বিজয়ী, যারা হিন্দুসভ্যতার চেয়ে উন্নত এবং সেই হেতু অনধিগম্য। স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে ভেঙে দিয়ে, স্থানীয় শিল্পকে উন্মুলিত করে এবং স্থানীয় সমাজে যা কিছু মহত্ ও উন্নত ছিল তাকে সমতল করে দিয়ে ব্রিটিশরা সে সভ্যতাকে চূর্ণ করেছিল।
ভারতবর্ষে উত্তরোত্তর ব্রিটিশ শাসন প্রসারের ইতিহাস একই সঙ্গে প্রাক-ব্রিটিশ ভারতের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে ব্রিটিশ পুঁজির স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিবর্তনের ইতিহাসও বটে। ব্রিটিশ কর্তৃক সূচিত এ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা থেকে আজও আমরা মুক্ত হতে পারিনি। ঔপনিবেশিক স্বার্থে গঠিত রাষ্ট্রযন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এখনও যেমন আমাদের রাষ্ট্রীয় চরিত্রে বর্তমান, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে গড়ে ওঠা নব্য দালাল পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের কর্তৃত্ব বর্তমান। অর্থাত্ আমরা নামেমাত্র ঔপনিবেশিক ধারা থেকে মুক্ত হয়েছি, স্বাধীন সার্বভৌম হয়েছি। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে স্বাধীন সার্বভৌম হিসেবে গড়ে তোলার বা প্রতিষ্ঠা করার রাজনীতিই আমাদের করতে হবে।
আমার এসব কথা শুনলে অনেকেই বিস্মিত হতে পারেন, কিন্তু একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটু গভীরভাবে চিন্তা করে দেখলে অবাক হওয়ার কোনো কারণ থাকবে বলে আমার মনে হয় না। আবেগের তাড়নায় কথা না বলে, বাস্তবতা বিচারের নিরিখে কথা বলা ও শোনার মানসিকতা থাকলে আমরা পরিষ্কার দেখতে পাব আমাদের রাষ্ট্রটি অর্থাত্ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটি তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এখনও দুর্বলতার মধ্যেই পড়ে আছে।
একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা, ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, জাতীয় অর্থনীতি বিকাশের প্রশ্নে নিজ দেশীয় সম্পদের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব বহাল রেখে স্বাধীনভাবে নিজ দেশীয় অর্থনৈতিক নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়ন করা, পররাষ্ট্রনীতির প্রশ্নে নিজ দেশীয় স্বার্থের অর্থাত্ জাতীয় স্বার্থের আঙ্গিকে অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সম্পর্ক নির্ধারণ করা। মূলগতভাবে বলতে গেলে বলতে হয়, নিজ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রশ্নে সার্বভৌমত্ব বজায় রাখার যোগ্যতা অর্জন এবং তা বজায় রেখে চলাই হচ্ছে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব কি উপরোক্ত কাজগুলো করতে সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে? আমার দেখা মতে তা হয়নি। অন্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের তল্পিবাহক হিসেবেই আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সদা তত্পর থেকেছে এবং এখনও থাকছে। এই যদি হয় অবস্থা, তবে আমরা কি বলতে পারি আমাদের রাষ্ট্রটি প্রকৃত অর্থে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে?
জনগণের নিরাপত্তা বিধানের প্রসঙ্গে যদি আসি, তবে এটা এ দেশবাসী সহজেই দেখতে পাবে প্রায় সময়ই বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আমাদের দেশের সাধারণ কৃষকদের গুলি করে হত্যা করেই চলেছে। অথচ এর প্রতিবাদে এ দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাধররা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন। মাঝে মাঝে আনুষ্ঠানিক পতাকা বৈঠক ছাড়া এ দেশের সীমান্ত এলাকায় জনগণের নিরাপত্তা বিধানে শাসকরা আর কিছু করছেন না। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বের কোথাও প্রতিনিয়ত ঘটছে বলে আমার জানা নেই। অর্থাত্ এ দেশের রাজনৈতিক ক্ষমতাধররা এর প্রতিকারে অক্ষম। অথচ যে রাষ্ট্র কর্তৃক এসব ঘটনা ঘটানো হচ্ছে তাদের আমরা বলছি বন্ধু রাষ্ট্র। কম-বেশি এ রকম ঘটনা এ দেশের প্রতিটি সরকারের আমলেই ঘটেছে। জনগণের জীবনের নিরাপত্তা বিধানে যে রাষ্ট্র কার্যকর ভূমিকা নিতে পারে না, সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতাবানরা কি করছেন?
ভূখণ্ডগত সার্বভৌমত্ব রক্ষার কথা যদি বলি, সেখানেও দেখি চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশভুক্ত এলাকা আমরা ১৯৭৪ সালে হস্তান্তর করলেও প্রতিপক্ষ তার এলাকা এখনও তার দখলেই রেখেছে। এমনকি সমুদ্রবক্ষে জেগে ওঠা তালপট্টি দ্বীপটি বাংলাদেশের সীমারেখায় পড়লেও সেটি পার্শ্ববর্তী দেশ দখল করে বসে আছে। আর এ ধরনের একটি রাষ্ট্রের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে আমরা আমাদের রাস্তাঘাট-নৌপথ-আকাশপথ-সমুদ্রবন্দর তাদের ব্যবহারের জন্য চুক্তি করছি। এটা কি ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্বের লক্ষণ?
জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের প্রশ্নে নিজ দেশীয় সম্পদের ওপর জাতীয় কর্তৃত্ব বহাল রেখে স্বাধীনভাবে অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও আমরা উল্টো পথে চলছি। নিজ দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ, বিদ্যুত্-বন্দর নিয়ে বিভিন্ন অসম চুক্তির মাধ্যমে আমরা বিদেশিদের হাতে তুলে দিচ্ছি, নিজ দেশে শিল্প বিকাশের স্বার্থে অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপরও আমরা কোনো জাতীয় নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখছি না, বিশ্বায়নের দোহাই পেড়ে দেশীয় বাজারকে আমরা অন্যের জন্য খুলে দিয়েছি। আর নিজের দেশের শিল্পপণ্যের বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছি বিদেশে। এমন সব পণ্য উত্পাদনে আমরা দেশীয় বিনিয়োগকারীদের উত্সাহিত করছি, যা বিশ্বের বাজারে আধিপত্য বিস্তারকারী বহুজাতিক বৃহত্ পুঁজির স্বার্থের চাহিদাকে পূরণ করে চলেছে। এসব পণ্য সরাসরি বাজারজাত করার ক্ষমতাও এ দেশের শিল্পপতিদের নেই, তারা ঠিকাদার মাত্র। দেশে কলকারখানার বিকাশ ঘটানোর প্রশ্নে দেশীয় বাজারের ওপর জাতীয় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে শিল্পের বিকাশ ঘটিয়ে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করে আমরা দেশীয় শ্রমের জন্য বিদেশে বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছি। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে কাজ করার জন্য আমরা আমাদের দেশের সেনাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে পাঠিয়ে জাতীয় গৌরবের ঢাকঢোল বাজাচ্ছি। অথচ আমাদের সীমান্তে যে অশান্তি ঘটেই চলেছে, সেই প্রশ্নে যথাযথ ভূমিকা নেই। নিজ দেশের সীমান্তে জনগণের জীবনকে নিরাপত্তাহীনতার গহ্বরে রেখে বিশ্বের অন্য দেশের শান্তিরক্ষার জন্য আমরা আমাদের সেনাদের প্রেরণ করছি। এর থেকে হাস্যকর এবং দায়িত্বহীন আচরণ আর কি আছে? অর্থাত্ এ দেশের রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের চরিত্রই হচ্ছে নিজ দেশের সম্পদ, বাজার, বন্দর, সেনা সদস্যদের বহুজাতিক বৃহত্ পুঁজির ধারক-বাহক রাষ্ট্রগুলোর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে কাজ করে নিজেদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, গোষ্ঠীগত বা দলীয় স্বার্থ চরিতার্থ করা। দেশের স্বার্থ, জনগণের স্বার্থ তথা জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা প্রধান বিষয় নয়। আগ্রাসী বহুজাতিক বৃহত্ পুঁজির স্বার্থে কাজ করার ধারায় তারা যা উপার্জন করে, সেটাও দেশে না রেখে বিদেশে গচ্ছিত রাখতেই এরা ভালোবাসে। সামান্য অসুখ-বিসুখে বিদেশে যাওয়া, নিজেদের ছেলেমেয়ের শিক্ষার জন্য বিদেশে ব্যবস্থা করা, বিদেশে ঘর-বাড়িসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসা এটা একটু লক্ষ্য করলেই দেখা যায়। স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশের বা রাষ্ট্রের রাজনৈতিক চরিত্র এমন হতে পারে না। অথচ বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই আমরা এ রকম দেখে আসছি।
পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদী শক্তির বিশ্ব আধিপত্যকে সহায়তা দান এর অন্তর্ভুক্ত। এ যদি হয় অবস্থা, তবে আমরা কোনো যুক্তির ওপর দাঁড়িয়ে কি করে বলতে পারি, আমরা নিরুদ্বিগ্ন অবস্থায় বসবাস করছি! স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের মধ্যে যা পড়ে তার ধারে-কাছেও আমাদের অবস্থান নেই। মহাশক্তিধরদের তাঁবেদারি করে চলাই কি আমাদের বৈশিষ্ট্য?
অর্থাত্ বিষয়টি দাঁড়াচ্ছে এমন যে, আমাদের যে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব আছে—তা পূর্ণাঙ্গাকারে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের রাজনৈতিকভাবে করণীয়। অতএব আমাদের রাজনীতি হবে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার লড়াই। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের উল্লিখিত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠার লড়াই। যারা দেশপ্রেমের কথা বলেন, তারা কি বিষয়টিকে উপেক্ষা করতে পারবেন?
আমরা প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির স্বাধীন সার্বভৌম চরিত্র প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে আমাদের বন্দর, বাজার, বিদ্যুত্, প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ বিদেশি আধিপত্যবাদী শক্তির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হতে দেখা যেত না। মুখে সোনার বাংলা, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ঘোষিত হলেও স্বাধীনতার প্রায় ৩০ বছর পরও যে তা অর্জিত হচ্ছে না; তার কারণ একটাই—আমরা বাংলাদেশকে প্রকৃত অর্থে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন করে তুলতে সক্ষম হইনি। যতদিন এ কাজ সম্পন্ন হবে না, অর্থাত্ এ দেশীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের দালালি বা কমিশনভোগী চরিত্র পরিবর্তন না হবে, ততদিন এ দেশের অনেক সমস্যাই জিইয়ে থাকবে। ছাত্র রাজনীতিতে টেন্ডারবাজি, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, অরাজকতা এখান থেকেই সৃষ্ট। অতএব কেউ যদি মনে করেন ছাত্র রাজনীতির বর্তমান চরিত্র থেকে ছাত্র রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে, তবে ছাত্র রাজনীতির সামনে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির স্বাধীন সার্বভৌম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অর্জনের তথা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যই তুলে ধরতে হবে। সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের মোহে যারা মোহগ্রস্ত, তাদের মুখে আদর্শভিত্তিক রাজনীতিতে ছাত্রদের উদ্বুদ্ধ করার কথা শোভা পায় না। রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব সাম্রাজ্যবাদী বিশ্বায়নের ধারায় নিজ দেশের অর্থনৈতিক নীতি-নির্ধারণ করার কারণে দেশীয় সম্পদ পাচার হয়ে যাচ্ছে অন্য দেশে, সম্পদের এ ঘাটতির কারণেই এ দেশের অর্থনীতির দুরবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরিত্র এ রকম কেন হলো? কি ঐতিহাসিক কারণ এর মাঝে লুকিয়ে আছে? আমরা জানি, এক সময় বর্তমান বাংলাদেশ ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই ভারতবর্ষের ইতিহাস সম্পর্কে বলতে গিয়ে যেসব ইতিহাসবিদ গবেষণা করেছেন তাদের একজন বলেছেন, ‘ভারতের অতীত ইতিহাস বলতে যদি কিছু থাকে তো তার সবখানি হলো পর পর বিজিত হওয়ার ইতিহাস। ভারতীয় সমাজের কোনো ইতিহাস নেই, অন্তত জানা কোনো ইতিহাস। ভারতের ইতিহাস হলো শুধু একের পর এক বহিরাক্রমণকারীর ইতিহাস, যারা ওই অপ্রতিরোধী অপরিবর্তমান সমাজের নিষ্ক্রিয় ভিত্তিতে তাদের সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে গেছে।’
আরবি, তুর্কি, তাতার, মোগল যারা একের পর এক ভারত প্লাবিত করেছে তারা অচিরেই হারিয়ে গেছে; ইতিহাসের এক চিরন্তন নিয়ম অনুসারে বর্বর বিজয়ীরা নিজেরাই বিজিত হয়েছে তাদের প্রজাদের উন্নততর সভ্যতায়। ব্রিটিশরাই হলো প্রথম বিজয়ী, যারা হিন্দুসভ্যতার চেয়ে উন্নত এবং সেই হেতু অনধিগম্য। স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে ভেঙে দিয়ে, স্থানীয় শিল্পকে উন্মুলিত করে এবং স্থানীয় সমাজে যা কিছু মহত্ ও উন্নত ছিল তাকে সমতল করে দিয়ে ব্রিটিশরা সে সভ্যতাকে চূর্ণ করেছিল।
ভারতবর্ষে উত্তরোত্তর ব্রিটিশ শাসন প্রসারের ইতিহাস একই সঙ্গে প্রাক-ব্রিটিশ ভারতের সামন্ততান্ত্রিক অর্থনীতি থেকে ব্রিটিশ পুঁজির স্বার্থে নিয়ন্ত্রিত পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বিবর্তনের ইতিহাসও বটে। ব্রিটিশ কর্তৃক সূচিত এ প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা থেকে আজও আমরা মুক্ত হতে পারিনি। ঔপনিবেশিক স্বার্থে গঠিত রাষ্ট্রযন্ত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এখনও যেমন আমাদের রাষ্ট্রীয় চরিত্রে বর্তমান, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সাম্রাজ্যবাদী একচেটিয়া পুঁজির স্বার্থে গড়ে ওঠা নব্য দালাল পুঁজিপতি ও ব্যবসায়ীদের কর্তৃত্ব বর্তমান। অর্থাত্ আমরা নামেমাত্র ঔপনিবেশিক ধারা থেকে মুক্ত হয়েছি, স্বাধীন সার্বভৌম হয়েছি। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে স্বাধীন সার্বভৌম হিসেবে গড়ে তোলার বা প্রতিষ্ঠা করার রাজনীতিই আমাদের করতে হবে।
No comments