কয়েকটি জরিপচিত্র by শহিদুল ইসলাম
মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব বাড়ছে না কমছে, এ নিয়ে গবেষণা অনেকদূর এগিয়ে গেছে। গবেষকরা এ বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত। একপক্ষ বলছে বাড়ছে, অন্য পক্ষ বলছে কমছে। উভয় পক্ষই তাদের বক্তব্যের পক্ষে প্রচুর তথ্য-প্রমাণ হাজির করছে। কোনো পক্ষকেই ঝট করে নিজের বিশ্বাস অনুসারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
গবেষকদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের সঠিক সমাধান আজও হয়নি। তাই এডওয়ার্ড সাঈদ প্রশ্ন তুলেছেন-লেখক, গবেষক ও বুদ্ধিজীবীরা কি কখনো নিরপেক্ষ ও অরাজনৈতিক হতে পারেন? যদি হন, তাহলে তা কিভাবে এবং কতদূর? (Humanism and Democratic criticism, Columbia Uni. Press, New York, 2004. P. 12) ধর্মীয় মৌলবাদের কথা উঠলেই সবার মনে ইসলামী মৌলবাদের কথাই মনে পড়ে-ইহুদি ও খ্রিস্টান মৌলবাদের কথা মনেই আসে না। আমি দূর অতীতে যাব না। এই মুহূর্তের কথাই বলব। ইসলামী মৌলবাদের বিধ্বংসী প্রভাবের কথা সচেতন সবাই জানেন। শুধু তালেবান নয়, সমগ্র মুসলিম বিশ্বে মৌলবাদ নানা রকম চেহারা নিয়ে বিরাজমান। সেখানে প্রযুক্তির দরজা হা করে খুলে দিলেও, বিজ্ঞানের দরজা একরকম বন্ধই আছে। আজকের আলোচ্য বিষয় তা নয়। শুধু এটুকু বলব, 'ইসলামী মৌলবাদ' মুসলমানদেরই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এবং করে চলেছে। যাঁরা ধর্মীয় পুনর্জাগরণের পক্ষে লিখছেন তাঁদের অনেকেই ইসলামী মৌলবাদের চেয়ে খ্রিস্টীয় মৌলবাদের দিকে পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেষ্টা করছেন। যেমন ২০০৩ সালে একটি মতবিনিময় সভায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাবলিউ বুশ মহম্মদ আব্বাসকে বলেন, "ঈশ্বর আমাকে বলেছেন, 'জর্জ যাও, আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের ধ্বংস করো।' আমি তাই করেছি। তারপর গড্ বলেন, 'জর্জ, যাও, ইরাকের সন্ত্রাস শেষ করো।' আমি তাই করেছি।" বব উডওয়ার্ডের 'প্ল্যান অব অ্যাটাক' বইয়ে লেখক লিখেছেন যে বুশ তাঁকে বলেছেন, 'আমি ঈশ্বরের আজ্ঞাবহ। তাঁর নির্দেশ পালন করা আমার কর্তব্য।' (Thomas Patkai Against Religion, Scribe short Books, মেলবোর্ন, 2007, P.75-76)। এর পরও আমরা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের ধ্বজাধারীদের 'সন্ত্রাসী' বলব না? জর্জ মার্টিন তাঁর বিখ্যাত আকর গ্রন্থ 'বিজ্ঞানের ইতিহাস' গ্রন্থে বলেছেন যে এক হাজার-দুই হাজার বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা যতটা ধার্মিক ছিলেন, আমরা আজ ততটা খাঁটি ধার্মিক নই। কাজেই মানুষের জীবনে ধর্মের প্রভাব বাড়ছে না কমছে, এ নিয়ে যেমন গবেষণা দিন দিন বাড়ছে, তেমনি গবেষকরা ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নিয়ে পাঠকের সামনে হাজির হচ্ছেন।
দুই. যাঁরা ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ছাপ ফলাফলের ওপর পড়বেই। আবার পাঠকও তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কেউ এ-মত, আবার কেউ ও-মত সমর্থন করেন। সুতরাং এ নিয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বেশ কষ্টকর। কিন্তু লাখো-কোটি মানুষের মুখ দিয়ে যা বের হয়, তা অস্বীকার করাও বেশ কষ্টের। পাঠকেরা জানেন, এ বছর আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বহু দেশের লোক গণনার বছর। ইউরোপের অনেক দেশেই লোক গণনার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে বিবিসি সংবাদের জন ম্যাকমানাস একটি সার্ভে রিপোর্টের সারসংক্ষেপ গত ২১ মার্চ ২০১১ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। সেই রিপোর্টটির নাম 'ব্রিটেনের তিনের দুই অংশ মানুষ ধার্মিক নন।' (http://www.bbc.co.uk/news/uk-12799801. ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (BHA) সার্ভেটি পরিচালনা করছে। তাদের গবেষণার সঙ্গে ব্রিটেনের লোক গণনার মধ্যে একটি সাযুজ্য লক্ষ করা যায়। সেনশাস ফর্ম সম্পর্কে তারা প্রশ্ন তুলেছে। ধর্ম সম্পর্কে এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে যে ধর্মবিশ্বাসীদের সংখ্যাটি বড় হয়ে দেখা যায়। ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ সাংস্কৃতিক কারণে এমন উত্তরে টিক দেয় যে মনে হয় সে ধর্মে বিশ্বাসী। তবে 'জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস' এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। BHA প্রমাণ হিসেবে বলছে, লোক গণনা অনুযায়ী ৬১ শতাংশ মানুষ বলছে তারা ধর্মে বিশ্বাস করে কিন্তু BHA সার্ভে প্রশ্নোত্তরের 'আপনি কি ধার্মিক?' প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ শতাংশ মানুষ বলছে 'না'। সার্ভে একসঙ্গে পরিচালিত হয় ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে। দক্ষিণ সীমানার ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা বলছে যে তাদের এটি ধর্ম আছে। কিন্তু মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ বলছে 'তারা ধার্মিক' এবং ৬৫ শতাংশ মানুষ বলছে 'তারা ধার্মিক নয়'। খ্রিস্টান বলে দাবিদারদের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক মানুষ বলছে 'তারা যীশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে। তিনি একজন প্রকৃত মানুষ, যিনি মারা গিয়েছিলেন কিন্তু আবার ফিরে এসেছিলেন এবং তিনি ঈশ্বরের পুত্র।' ২৭ শতাংশ মানুষ এতে একেবারেই বিশ্বাস করে না; ২৫ শতাংশ অনিশ্চিত। স্কটল্যান্ডের ৪২ শতাংশ মানুষ বলে, তারা কোনো ধর্মের অন্তর্গত নয়। অথচ পরবর্তী প্রশ্ন 'আপনি কি ধার্মিক?'-এর উত্তরে বলে 'না'। BHA-এর প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু কপসন জাতীয়ভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন, যেন ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ সঠিকভাবে তাদের 'অবিশ্বাস' লিপিবদ্ধ করতে পারে।
তিন. ২২ মার্চ, ২০১১ বিবিসির 'বিজ্ঞান ও পরিবেশ' শীর্ষক ওয়েবসাইটে (http://www.bbc.co.uk/news/science-environment-12811197?) 'পৃথিবীর ৯টি দেশে ধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে' শীর্ষক আরেকটি সার্ভে রিপোর্ট করেছে। বিবিসির ডালাসের রিপোর্টার জেশন পামার বলছেন-গবেষণায় দেখা যায়, কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না এমন দাবিদার মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকার ডালাসের আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটিতে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৯টি দেশে ধর্ম বিলুপ্তির পথে। গবেষকদল শতাব্দীর পর শতাব্দীর লোক গণনার রিপোর্টে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর ঘেঁটে এ সিদ্ধান্তে পেঁৗছেছেন। দেশগুলো হলো : অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, দ্য চেক রিপাবলিক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, দ্য নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড। ড. উইনার বলেন, 'আধুনিক ইহজাগতিক গণতান্ত্রিক বহু দেশে মানুষের মধ্যে একটা ঝোঁক দেখা যাচ্ছে যে তারা নিজেদের কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে দেখাতে উৎসাহ বোধ করছে। তাদের সংখ্যা নেদারল্যান্ডসে ৪০ শতাংশ। চেক রিপাবলিকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। ওই গবেষণায় তাঁরা যে বিভিন্নমুখী মডেল ব্যবহার করেছেন, তা সর্বত্র একই। সব দেশেই এ রকম ইঙ্গিত পরিষ্কার যে ধর্ম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
চার. এর চেয়ে বেশি তথ্য আপাতত খুঁজে পেলাম না। এ বছরের লোক গণনার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর একটি পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে বলে তাঁরা মনে করেন। ২৩ মার্চ ২০১১ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি সাইটে একই রেজাল্ট প্রকাশ করে। 'ধ্বংসের পথে ধর্ম'। সেখানেও ৯টি দেশের উল্লেখ রয়েছে। তবে এটা মূলত নিউজিল্যান্ডের গবেষণার ফল। দেখা যায় যে সেখানকার অর্ধেক জনগোষ্ঠী কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা দাবি করেনি। ভিয়াসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক পিটার লাইনহ্যাম বলেন যে ১৯৫০ সালে ১০ ভাগ নিউজিল্যান্ডবাসী কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করেনি। ২০০৬ সালের সেনসাস রিপোর্টে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ। ২০১১ সালের সেনসাস রিপোর্ট আগামী বছর কোনো সময়ে প্রকাশিত হলে সর্বশেষ সংখ্যা জানা যাবে। তবে তিনি দাবি করেন, তা অবশ্যই ৫০ শতাংশ অতিক্রম করবে। লাইনহ্যাম অবশ্য স্বীকার করেছেন যে এ রকম গবেষণা অন্য কোনো দেশে ভিন্ন চিত্র সরবরাহ করবে। পশ্চিমের দেশগুলোর বাইরের দেশে এর বিপরীত চিত্রটাই দেখা যাবে। সেসব দেশে ধর্মের বিস্তার লাভ চোখে পড়বে। (http://an.news.yahoo.com/ thewst/a/-breaking/9058938/religion-set-exti).
পাঁচ. ২২ মার্চ পর্যন্ত ৪০৩ জন এর ওপর মন্তব্য করেছেন। ওই দিনই ছিল মন্তব্য প্রদানের শেষ দিন। ৪০৩ নম্বর সর্বশেষ মন্তব্যকারী লুথার মিরভয়েড বলছেন, 'যখন ধর্মবিশ্বাসীদের সংখ্যা কমছে, তখন আমি দেখছি যে খ্রিস্টান, ইহুদি, মুসলিম ও হিন্দু মৌলবাদীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব মৌলবাদী একে অন্যের ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু ও মারমুখী। সহযোগিতার মনোভাব তাদের মধ্যে লুপ্ত। আমরা যারা মৌলবাদে বিশ্বাস করি না, এটা তাদের জন্য ভয়াবহ।' ৪০১ নম্বর মন্তব্যে এক বৌদ্ধ থিওনেসিন লিখেছেন, 'বৌদ্ধধর্ম প্রচারক গৌতম বুদ্ধ একজন মরণশীল মানুষ। ঈশ্বর নন। নিজেকে ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ বলে দাবি করেননি তিনি। তিনি আকাশে বাস করেন না এবং সেখান থেকে পৃথিবীর সব কিছুর ওপর খবরদারি করেন না। তিনি 'সত্য' শিখিয়েছেন। সেটাই আমার একমাত্র আশা। মানুষ এখনো সত্যে বিশ্বাস করে।' cry (কান্না) নামে একজন লিখেছেন 'ওই তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেই কেন? আমি সেই সব রাজনীতিবিদের সম্পর্কে ক্লান্ত, যাঁরা সরকারে, নৈতিকতায় ও আইনে ধর্মকে টেনে আনেন।' এঁদের তিনি 'হিপোক্রেট' বলেছেন। ৩৯৯ নম্বরে ক্রিস লিখেছেন, 'বিজ্ঞান : আমরা যতই বেশি পৃথিবীকে জানব, ততই কোনো উচ্চতর সত্তার অস্তিত্বের সম্ভাবনাও প্রয়োজন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
১০ এপ্রিল পার্থ, অস্ট্রেলিয়া
লেখক : শিক্ষাবিদ
দুই. যাঁরা ধর্ম নিয়ে গবেষণা করেন, তাঁদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ছাপ ফলাফলের ওপর পড়বেই। আবার পাঠকও তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে কেউ এ-মত, আবার কেউ ও-মত সমর্থন করেন। সুতরাং এ নিয়ে একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো বেশ কষ্টকর। কিন্তু লাখো-কোটি মানুষের মুখ দিয়ে যা বের হয়, তা অস্বীকার করাও বেশ কষ্টের। পাঠকেরা জানেন, এ বছর আমাদের দেশসহ পৃথিবীর বহু দেশের লোক গণনার বছর। ইউরোপের অনেক দেশেই লোক গণনার ফল প্রকাশ করা হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে বিবিসি সংবাদের জন ম্যাকমানাস একটি সার্ভে রিপোর্টের সারসংক্ষেপ গত ২১ মার্চ ২০১১ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। সেই রিপোর্টটির নাম 'ব্রিটেনের তিনের দুই অংশ মানুষ ধার্মিক নন।' (http://www.bbc.co.uk/news/uk-12799801. ব্রিটিশ হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (BHA) সার্ভেটি পরিচালনা করছে। তাদের গবেষণার সঙ্গে ব্রিটেনের লোক গণনার মধ্যে একটি সাযুজ্য লক্ষ করা যায়। সেনশাস ফর্ম সম্পর্কে তারা প্রশ্ন তুলেছে। ধর্ম সম্পর্কে এমনভাবে প্রশ্ন করা হয়েছে যে ধর্মবিশ্বাসীদের সংখ্যাটি বড় হয়ে দেখা যায়। ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ সাংস্কৃতিক কারণে এমন উত্তরে টিক দেয় যে মনে হয় সে ধর্মে বিশ্বাসী। তবে 'জাতীয় পরিসংখ্যান অফিস' এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। BHA প্রমাণ হিসেবে বলছে, লোক গণনা অনুযায়ী ৬১ শতাংশ মানুষ বলছে তারা ধর্মে বিশ্বাস করে কিন্তু BHA সার্ভে প্রশ্নোত্তরের 'আপনি কি ধার্মিক?' প্রশ্নের উত্তরে ৬৫ শতাংশ মানুষ বলছে 'না'। সার্ভে একসঙ্গে পরিচালিত হয় ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং স্কটল্যান্ডে। দক্ষিণ সীমানার ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা বলছে যে তাদের এটি ধর্ম আছে। কিন্তু মাত্র ২৯ শতাংশ মানুষ বলছে 'তারা ধার্মিক' এবং ৬৫ শতাংশ মানুষ বলছে 'তারা ধার্মিক নয়'। খ্রিস্টান বলে দাবিদারদের অর্ধেকেরও কম সংখ্যক মানুষ বলছে 'তারা যীশু খ্রিস্টকে বিশ্বাস করে। তিনি একজন প্রকৃত মানুষ, যিনি মারা গিয়েছিলেন কিন্তু আবার ফিরে এসেছিলেন এবং তিনি ঈশ্বরের পুত্র।' ২৭ শতাংশ মানুষ এতে একেবারেই বিশ্বাস করে না; ২৫ শতাংশ অনিশ্চিত। স্কটল্যান্ডের ৪২ শতাংশ মানুষ বলে, তারা কোনো ধর্মের অন্তর্গত নয়। অথচ পরবর্তী প্রশ্ন 'আপনি কি ধার্মিক?'-এর উত্তরে বলে 'না'। BHA-এর প্রধান নির্বাহী অ্যান্ড্রু কপসন জাতীয়ভাবে প্রচারণা শুরু করেছেন, যেন ধর্মে অবিশ্বাসী মানুষ সঠিকভাবে তাদের 'অবিশ্বাস' লিপিবদ্ধ করতে পারে।
তিন. ২২ মার্চ, ২০১১ বিবিসির 'বিজ্ঞান ও পরিবেশ' শীর্ষক ওয়েবসাইটে (http://www.bbc.co.uk/news/science-environment-12811197?) 'পৃথিবীর ৯টি দেশে ধর্ম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে' শীর্ষক আরেকটি সার্ভে রিপোর্ট করেছে। বিবিসির ডালাসের রিপোর্টার জেশন পামার বলছেন-গবেষণায় দেখা যায়, কোনো ধর্মে বিশ্বাস করে না এমন দাবিদার মানুষের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমেরিকার ডালাসের আমেরিকান ফিজিক্যাল সোসাইটিতে পেশ করা রিপোর্টে বলা হয়েছে, পৃথিবীর ৯টি দেশে ধর্ম বিলুপ্তির পথে। গবেষকদল শতাব্দীর পর শতাব্দীর লোক গণনার রিপোর্টে এ-সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর ঘেঁটে এ সিদ্ধান্তে পেঁৗছেছেন। দেশগুলো হলো : অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, কানাডা, দ্য চেক রিপাবলিক, ফিনল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, দ্য নেদারল্যান্ডস, নিউজিল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ড। ড. উইনার বলেন, 'আধুনিক ইহজাগতিক গণতান্ত্রিক বহু দেশে মানুষের মধ্যে একটা ঝোঁক দেখা যাচ্ছে যে তারা নিজেদের কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীনভাবে দেখাতে উৎসাহ বোধ করছে। তাদের সংখ্যা নেদারল্যান্ডসে ৪০ শতাংশ। চেক রিপাবলিকে সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। ওই গবেষণায় তাঁরা যে বিভিন্নমুখী মডেল ব্যবহার করেছেন, তা সর্বত্র একই। সব দেশেই এ রকম ইঙ্গিত পরিষ্কার যে ধর্ম নিশ্চিহ্ন হওয়ার পথে।
চার. এর চেয়ে বেশি তথ্য আপাতত খুঁজে পেলাম না। এ বছরের লোক গণনার ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর একটি পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে বলে তাঁরা মনে করেন। ২৩ মার্চ ২০১১ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার একটি সাইটে একই রেজাল্ট প্রকাশ করে। 'ধ্বংসের পথে ধর্ম'। সেখানেও ৯টি দেশের উল্লেখ রয়েছে। তবে এটা মূলত নিউজিল্যান্ডের গবেষণার ফল। দেখা যায় যে সেখানকার অর্ধেক জনগোষ্ঠী কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা দাবি করেনি। ভিয়াসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক পিটার লাইনহ্যাম বলেন যে ১৯৫০ সালে ১০ ভাগ নিউজিল্যান্ডবাসী কোনো ধর্মের সঙ্গে সম্পৃক্ততা স্বীকার করেনি। ২০০৬ সালের সেনসাস রিপোর্টে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ শতাংশ। ২০১১ সালের সেনসাস রিপোর্ট আগামী বছর কোনো সময়ে প্রকাশিত হলে সর্বশেষ সংখ্যা জানা যাবে। তবে তিনি দাবি করেন, তা অবশ্যই ৫০ শতাংশ অতিক্রম করবে। লাইনহ্যাম অবশ্য স্বীকার করেছেন যে এ রকম গবেষণা অন্য কোনো দেশে ভিন্ন চিত্র সরবরাহ করবে। পশ্চিমের দেশগুলোর বাইরের দেশে এর বিপরীত চিত্রটাই দেখা যাবে। সেসব দেশে ধর্মের বিস্তার লাভ চোখে পড়বে। (http://an.news.yahoo.com/ thewst/a/-breaking/9058938/religion-set-exti).
পাঁচ. ২২ মার্চ পর্যন্ত ৪০৩ জন এর ওপর মন্তব্য করেছেন। ওই দিনই ছিল মন্তব্য প্রদানের শেষ দিন। ৪০৩ নম্বর সর্বশেষ মন্তব্যকারী লুথার মিরভয়েড বলছেন, 'যখন ধর্মবিশ্বাসীদের সংখ্যা কমছে, তখন আমি দেখছি যে খ্রিস্টান, ইহুদি, মুসলিম ও হিন্দু মৌলবাদীর সংখ্যা বাড়ছে। এসব মৌলবাদী একে অন্যের ধর্মের প্রতি অসহিষ্ণু ও মারমুখী। সহযোগিতার মনোভাব তাদের মধ্যে লুপ্ত। আমরা যারা মৌলবাদে বিশ্বাস করি না, এটা তাদের জন্য ভয়াবহ।' ৪০১ নম্বর মন্তব্যে এক বৌদ্ধ থিওনেসিন লিখেছেন, 'বৌদ্ধধর্ম প্রচারক গৌতম বুদ্ধ একজন মরণশীল মানুষ। ঈশ্বর নন। নিজেকে ঈশ্বরের প্রেরিত পুরুষ বলে দাবি করেননি তিনি। তিনি আকাশে বাস করেন না এবং সেখান থেকে পৃথিবীর সব কিছুর ওপর খবরদারি করেন না। তিনি 'সত্য' শিখিয়েছেন। সেটাই আমার একমাত্র আশা। মানুষ এখনো সত্যে বিশ্বাস করে।' cry (কান্না) নামে একজন লিখেছেন 'ওই তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নেই কেন? আমি সেই সব রাজনীতিবিদের সম্পর্কে ক্লান্ত, যাঁরা সরকারে, নৈতিকতায় ও আইনে ধর্মকে টেনে আনেন।' এঁদের তিনি 'হিপোক্রেট' বলেছেন। ৩৯৯ নম্বরে ক্রিস লিখেছেন, 'বিজ্ঞান : আমরা যতই বেশি পৃথিবীকে জানব, ততই কোনো উচ্চতর সত্তার অস্তিত্বের সম্ভাবনাও প্রয়োজন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
১০ এপ্রিল পার্থ, অস্ট্রেলিয়া
লেখক : শিক্ষাবিদ
No comments