দমন-পীড়ন সমাধান নয়-ঢালাও গ্রেপ্তার ও মামলা

তিন দিনের সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সময় পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের জের ধরে বিভিন্ন স্থানে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের পাইকারি হারে গ্রেপ্তার ও মামলা দায়ের করা হয়েছে। সব সময় দেখা গেছে, হরতালের সময় থানা-পুলিশের দৌরাত্ম্য বাড়ে। আতঙ্ক সৃষ্টি করে তারা বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নিপীড়ন চালায়। এটা উদ্বেগজনক।


হরতালের আগে বলা হয়েছিল, ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে। কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আদালতের সামনে হাজির করা হবে। সাক্ষী-প্রমাণ ও তথাকথিত স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই পদ্ধতি কেউ সমর্থন করে না। কারণ, এতে নিরীহ লোকজনকে ধরে এনে শাস্তি দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। সাধারণ বিচারে যে জামিন ও অন্যান্য সুযোগ থাকে, সে সুযোগ এখানে থাকে না। তার পরও ব্যবস্থাটি চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, শুধু তাৎক্ষণিক শাস্তিই নয়, কোনো সংঘর্ষের ঘটনার জের ধরে গণগ্রেপ্তার ও মামলা চালানো হচ্ছে।
এটা বেআইনি কাজ। এতে একদিকে যেমন নিরীহ লোকজন হয়রানির শিকার হয়, অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কিছু অসৎ সদস্য সুযোগ বুঝে লোকজনকে মামলার ভয় দেখিয়ে উৎকোচ আদায়ে লিপ্ত হন। তাঁদের অস্তগামী ভাবমূর্তি আরও কালিমালিপ্ত হয়। বিরোধী দলের হরতাল-অবরোধ-অবস্থান কর্মসূচির সময় পুলিশ প্রশাসনের বেপরোয়া আচরণ জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে হরতাল সমর্থনকারীদের সঙ্গে পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে তিনজন নিহত ও বিএনপির অন্তত দুই শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। গ্রেপ্তার হন ৫৮ জন। কিন্তু অবাক হওয়ার মতো ঘটনা হলো, দুটি মামলায় বিশ্বনাথের আট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানসহ আট হাজার জনকে আসামি দেখানো হয়েছে। যেহেতু এই বিপুলসংখ্যক আসামির সুনির্দিষ্ট নাম নেই, তাই পুলিশের সামনে এখন বিরাট সম্ভাবনা খুলে গেছে। যে কাউকে ধরে আসামির তালিকায় ঢোকানো যায়। আবার চাপ সৃষ্টি করে উৎকোচ আদায় করার সুযোগও থাকে।
হরতালের সময় বিক্ষুব্ধ কর্মীরা অনেক সময় থানা বা সরকারি ভবন আক্রমণ করেন, গাড়ি জ্বালিয়ে দেন, ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশ সদস্যদের আহত করেন, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এই সব ক্ষয়ক্ষতির দায় নিশ্চয়ই সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দল ও নেতাদের ওপর বর্তায়। এ জন্য অভিযুক্ত নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট মামলা ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হলে তার কিছু যুক্তি হয়তো থাকে। কিন্তু হাজার হাজার ‘অজ্ঞাতনামা’ ব্যক্তিকে আসামি বানিয়ে মামলা করা হলে পুলিশ প্রশাসনের কাজের পদ্ধতিই প্রশ্নবিদ্ধ হয়।
গণগ্রেপ্তার ও মামলার পথ যথাসম্ভব পরিহার করা উচিত। নির্যাতন জনমনের ক্ষোভ উসকে দেয়, যা কখনো কাম্য নয়। পুলিশের দায়িত্ব হলো, যেকোনো পরিস্থিতি ধৈর্য ও সাহসিকতার সঙ্গে মোকাবিলা করা। এই পদ্ধতি পুলিশের অবশ্য অনুকরণীয় হতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.