ভাষার মাসে আমাদের প্রত্যয়
ফেব্রুয়ারি এলেই শুরু হয় বায়ান্ন সালে ভাষার জন্য আন্দোলন, আর আত্মদানকে কেন্দ্র করে আলোচনা, সভা-সেমিনার আর লেখালেখি। বইমেলার আয়োজন আর শহীদ মিনারের শ্রীবর্ধনসহ অস্থায়ী শহীদ মিনার নির্মাণের কাজও চলে মহা উদ্যমে।
একুশের সকালে নগ্ন পায়ে হেঁটে চলা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ভাষা শহীদদের প্রতি অদ্ভুত শ্রদ্ধা জানাতে নীরব দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষণিক সময়। ভাষা শহীদদের ছবি সম্বলিত পোস্টার, আবেগময় কথাসহ ঝুলতে থাকে দেয়াল আর বৈদ্যুতিক খুঁটিতে। এ সবই সীমাবদ্ধ ফেব্রুয়ারি মাসে। বায়ান্ন সালে ভাষার জন্য আত্মবিসর্জন দেয়া হয়েছিল বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি সম্প্রসারণ আর সর্বত্র ব্যবহারের যে মহত্ উদ্দেশ্য নিয়ে অর্ধশতাব্দী পর আজও তা পূর্ণ হয়নি পুরোমাত্রায়। আর হবেই বা কিভাবে (?) যারা ভাষা দিবসে মাতম করে, তাদের সন্তানরা যখন ইংলিশ স্কুলে পড়ে, যখন ভাষার ধারক বাহকসহ অফিসের বস থেকে পিয়ন পর্যন্ত নিজের নামটা ইংরেজিতে লিখতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, যখন বিদ্যালয়গুলোতে বাংলার তুলনায় ইংরেজি গুরুত্ব পায় বেশি, তখন স্বপ্ন পূরণ না হওয়াই স্বাভাবিক। যে দেশের অফিস-আদালত, আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বাংলার চেয়ে ইংরেজি ব্যবহার হয় বেশি, সে দেশে বাংলা অবহেলিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্য আর বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই, যখন দেখি এ দেশের শপিংমল থেকে আরম্ভ করে চা দোকানের সাইনবোর্ডটা পর্যন্ত ইংরেজিতে। বড়ই ব্যথা পাই। যখন দেখি ৮ই ফাল্গুনের উপর ২১-এর রাজত্ব। যখন দেখি বাংলা ভাষার জন্মদিন পালন করা হয় বেখাপ্পা আয়োজনে ইংরেজিতে। আমরা জানি ভাষার ক্ষেত্রে সাদুচলিতের মিশ্রণ দোষণীয়। কিন্তু আমাদের সন্তানরা বাংলার সঙ্গে ইংরেজির মিশ্রণ না ঘটালে তাদের কথায় প্রাণ সঞ্চার হয় না। বোরহানি যেমন খানায় স্বাদ বাড়ায়, ইংরেজিও তাদের কথায় রস বাড়ায়। ভাব দেখে মনে হয় বাংলায় কথা বললে মান যায়। তাই জাতে উঠতে ইংরেজি ব্যবহার করি। আমি ইংরেজি ভাষাকে অবমূল্যায়ন করছি না, বরং বাংলা ভাষার প্রতি আমাদের আন্তরিকতার অভাব রয়েছে, সেটাই বলছি।
হালজামানায় কিছু এফএম রেডিওতে বাংলাকে এমন ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে উচ্চারণ করে, মনে হয় বাংলা একটি অশ্রাব্য ভাষা, আমি মনে করি এটা বাংলার প্রতি তাদের অনাগ্রহ আর অযত্নের বহিঃপ্রকাশ। দেশে বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এটা বাংলা ভাষার জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ ধ্বনি। বাংলা ভাষায় যত সহজে ভাব আদান প্রদান করা যায়, অন্য ভাষায় তা করা যায় না। এটা বাংলা ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যা বর্ণাধিক্য থেকেই অনুমান করা যায়। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পাওয়ায় আমি যেমন আনন্দিত, তেমনি সর্বস্তরের মানুষের ভাষা হতে না পারায় আমি মর্মাহত। বাংলা ভাষা আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হতে পারে। কিন্তু সংসদ ও আদালতের ভাষা, বিজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তির ভাষা, সাইনবোর্ড-ব্যানারের ভাষা হতে পারেনি। এটা বাংলার প্রতি অবিচার বৈ অন্য কিছু নয়। মনে হয় বাংলা ‘শব্দ রাষ্ট্রের’ ভাষা। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাষা। যারা অশিক্ষিত অর্থাত্ বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা জানে না, তাদের ভাষা। তাই শুধু ভাষার মাসেই নয়, বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকতে হবে বছরব্যাপী। বাংলাকে উচ্চারণ করতে হবে বিশুদ্ধভাবে। তাহলে ভাষার জন্য আত্মদান সফল হবে, এটাই হোক ভাষার মাসে আমাদের প্রত্যয়।
রেজাউল করিম চাঁদপুরী
হালজামানায় কিছু এফএম রেডিওতে বাংলাকে এমন ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে উচ্চারণ করে, মনে হয় বাংলা একটি অশ্রাব্য ভাষা, আমি মনে করি এটা বাংলার প্রতি তাদের অনাগ্রহ আর অযত্নের বহিঃপ্রকাশ। দেশে বর্তমানে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। এটা বাংলা ভাষার জন্য ভয়ঙ্কর বিপদ ধ্বনি। বাংলা ভাষায় যত সহজে ভাব আদান প্রদান করা যায়, অন্য ভাষায় তা করা যায় না। এটা বাংলা ভাষার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। যা বর্ণাধিক্য থেকেই অনুমান করা যায়। বাংলা ভাষা রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা পাওয়ায় আমি যেমন আনন্দিত, তেমনি সর্বস্তরের মানুষের ভাষা হতে না পারায় আমি মর্মাহত। বাংলা ভাষা আমাদের রাষ্ট্রীয় ভাষা হতে পারে। কিন্তু সংসদ ও আদালতের ভাষা, বিজ্ঞাপন-বিজ্ঞপ্তির ভাষা, সাইনবোর্ড-ব্যানারের ভাষা হতে পারেনি। এটা বাংলার প্রতি অবিচার বৈ অন্য কিছু নয়। মনে হয় বাংলা ‘শব্দ রাষ্ট্রের’ ভাষা। সমাজে পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাষা। যারা অশিক্ষিত অর্থাত্ বাংলা ছাড়া অন্য ভাষা জানে না, তাদের ভাষা। তাই শুধু ভাষার মাসেই নয়, বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকতে হবে বছরব্যাপী। বাংলাকে উচ্চারণ করতে হবে বিশুদ্ধভাবে। তাহলে ভাষার জন্য আত্মদান সফল হবে, এটাই হোক ভাষার মাসে আমাদের প্রত্যয়।
রেজাউল করিম চাঁদপুরী
No comments