চরাচর-ভাওয়াল রাজবাগান by সাইফুল ইসলাম খান
কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে ভাওয়াল পরগনার রাজা ও রাজত্ব। কিন্তু ভাওয়াল রাজবংশের অনেক স্থাপত্য নিদর্শন এখনো রয়ে গেছে কালের ইতিহাসে সাক্ষী হয়ে। রাজবংশের বিলুপ্তির দেড় শ বছর পরও এসব স্থাপত্য মানুষকে বিমোহিত করে।
ভাওয়াল রাজবাড়ি, শ্মশান, মন্দির, রাজদিঘি ইত্যাদির মতো ভাওয়াল রাজবাগানও তাঁদের অনন্যকীর্তি। ভাওয়াল পরগনার রাজাদের রাজবাড়ি বর্তমান জয়দেবপুর শহরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত। এটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ভাওয়াল রাজবাড়ি থেকে দুই কিলোমিটার পূর্বদিকে ভাওয়াল রাজবাগান অবস্থিত। ১৯ একর ৭ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত রাজবাগানটি প্রতিষ্ঠা করেন রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী। ভাওয়াল সন্ন্যাসী নামে খ্যাত রাজা রমেন্দ্র নারায়ণ রায়চৌধুরী এখানে একটি পদ্মপুকুরও খনন করেন। বিলাসী ও শৌখিন এ রাজা পদ্মপুকুরের মাঝখানে নির্মাণ করেন খিলানযুক্ত ইমারত মহল। এটির নাম ছিল ছায়ামহল। ছায়ামহলে রাতে জ্বলত অনেক মোমবাতি। কোর্ট অব ওয়ার্ড-এর মতে, সে ছায়ামহলের ভগ্নাবশেষ এখনো পদ্মপুকুরে বিদ্যমান। রাজা, রানি, রাজপুত্র বা রাজবাড়ির সদস্যদের বাগানবাড়ি হিসেবে তখন এটি ব্যবহৃত হতো। ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ঠিক এক বছর আগে ভাওয়াল রাজবংশের পতন ঘটে। আর তখন থেকে এ কোর্ট অব ওয়ার্ডস ভাওয়াল রাজ এস্টেট রাজবাগানটি পরিচালনা করে আসছে। আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ নানা ধরনের ফুল, ফল ও বনজ বৃক্ষ দ্বারা বাগানটি পরিপূর্ণ। বর্তমানে এসব বৃক্ষের সংখ্যা দুই হাজার। এদের মধ্যে কয়েকটি গাছ বেশ পুরনো। এ ছাড়া আছে দু-একটি দুর্লভ প্রজাতির গাছ। পর্যটকদের জন্য বাগানের ভেতরে আছে তিনটি বিশ্রামাগার। একটি ভিআইপি কটেজ, অন্য দুটি সাধারণ কটেজ। নিরাপত্তার জন্য আছে একটি আনসার ক্যাম্প। যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পিকনিক বা অবকাশযাপনের জন্য রাজবাগানের এ কটেজগুলো ভাড়া নিতে পারেন। ভিআইপি কটেজের ভাড়া দৈনিক ১০ হাজার টাকা এবং সাধারণ কটেজের ভাড়া দৈনিক ছয় হাজার টাকা। পূর্ব, দক্ষিণ ও পশ্চিম-তিন দিকে বাগানটি জলাশয়বেষ্টিত। বর্ষাকালে এখানে চমৎকার নৈসর্গিক পরিবেশ তৈরি হয়। আর শীতকালে কোলাহলমুক্ত শান্ত পরিবেশ। শেষ বিকেলে কখনো কখনো পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে ওঠে রাজবাগান। কালের সাক্ষী ভাওয়াল রাজবাগানটি দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীকাল কোর্ট অব ওয়ার্ডসের বেদখলে ছিল। ২০০৫ সালের শুরুর দিকে কোর্ট অব ওয়ার্ডস এটি পুনরুদ্ধার করে। এরপর এটিকে বিনোদন পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা হয়। একই সঙ্গে এটিকে গড়ে তোলা হয় পিকনিক স্পট হিসেবে। কিন্তু এ রাজবাগানের চারপাশে নিরাপত্তাপ্রাচীর নেই। ঐতিহাসিক পদ্মপুকুরটিও শ্রীহীন। বাগানের অভ্যন্তরে সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাও আশাব্যঞ্জক নয়। কোর্ট অব ওয়ার্ডস যদি এসব বিষয়ে মনোযোগী হয়, তবে এটি হবে তাদের আয়ের একটি বড় উৎস আর বিনোদনপ্রত্যাশীরা পাবে কাঙ্ক্ষিত আনন্দ।
সাইফুল ইসলাম খান
সাইফুল ইসলাম খান
No comments