এবার বাড়ি যাওয়ার কষ্ট by মিঠুন চৌধুরী

শেষ হয়ে গেছে ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। দূরপাল্লার বাসের টিকিটও প্রায় শেষ। যাঁরা টিকিট কাটেননি, তাঁরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। কারণ, যেসব বাসের টিকিট আছে, সেগুলোতে নেওয়া হচ্ছে বর্ধিত ভাড়া—এমন অভিযোগ ক্রেতাদের।


এদিকে যাত্রীদের অসহায়ত্বের সুযোগে রং করে রাস্তায় নামানো হচ্ছে কিছু লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি। সঙ্গে ভাঙা রাস্তার ভোগান্তি তো আছেই। ফলে দুর্ভোগ-কষ্টের শঙ্কার মধ্যেই বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে নগরবাসী।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের চলাচলের প্রধান মাধ্যম বাস। দূরপাল্লার প্রথম সারির প্রায় সব বাসেরই অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। এখন অন্যান্য পরিবহনের বাসের টিকিটের জন্য ঘুরছে যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, কিছু কিছু পরিবহনে গত বছরের তুলনায় বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। নগরের বিভিন্ন স্থানে রং ও মেরামতের কাজ চলছে পুরোনো বাসের। ঈদে এসব গাড়িও রাস্তায় নামবে।
তবে বাস মালিক সমিতির নেতারা বলছেন, এবার ঈদের ছুটি লম্বা হওয়ায় ঘরমুখী মানুষের চাপ কম থাকবে। তাঁদের দাবি, পর্যাপ্ত বাস থাকায় যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়বে না।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, রেলের ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। সব আন্তনগর ও মেইল ট্রেন মিলিয়ে পাঁচ হাজার যাত্রী প্রতিদিন চট্টগ্রাম ছেড়ে যেতে পারবেন। তবে দাঁড়িয়েও যাবেন ১০ থেকে ১১ হাজার যাত্রী। সেই হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১৬ হাজার যাত্রী চট্টগ্রাম ছেড়ে যাবে। ঈদ উপলক্ষে চলবে নোয়াখালী ও চাঁদপুরের দুটি বিশেষ ট্রেনও।
তবে স্টেশনে টিকিট বিক্রি শেষ হলেও টিকিট মিলছে কালোবাজারিদের কাছে। দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম দিয়ে টিকিট কিনছে সাধারণ যাত্রীরা। নগরের জুবিলি রোডের বাসিন্দা শামসুল ইসলাম বলেন, ‘ঈদে সিলেটে বাড়ি যাওয়ার জন্য স্টেশনে টিকিট পাইনি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করে দ্বিগুণ দামে কালোবাজারির কাছ থেকে টিকিট কিনেছি।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা (বিআরটিসি) সূত্র জানায়, ঈদে চট্টগ্রাম থেকে তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও সৈয়দপুর ছয়টি রুটে মোট ৩০টি বাস চলাচল করবে। এর সঙ্গে নগরে চলাচলকারী দুটি বাস যোগ হতে পারে বহরে।
বিআরটিসির চট্টগ্রাম ডিপোর ব্যবস্থাপক দীপন চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘দূরপাল্লার বাসের টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে আমরা সীমিত সাধ্যের মধ্যে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
আন্তজেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে সারা দেশে ঈদ উপলক্ষে ৬০টি রুটে বাস চলাচল করবে। বছরের অন্যান্য সময়ে সাধারণত দৈনিক ৭০০ বাস যাওয়া-আসা করে। ঈদের দিনে এক হাজার বাস চলাচল করবে।
নগরের বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ঠাকুরগাঁও এক হাজার ১০০ টাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯৫০ টাকা, নীলফামারী এক হাজার টাকা, দিনাজপুর এক হাজার টাকা, মেহেরপুর ৯৫০ টাকা, কুড়িগ্রাম এক হাজার টাকা এবং রংপুরের টিকিট ৯৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা বলছে, গত ঈদের তুলনায় এই ভাড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি। নগরের আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, অলংকার, নয়াবাজার, সাগরিকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পুরোনো বাস রং ও মেরামতের কাজ করতে দেখা গেছে। এসব বাসই ঈদে যাত্রী পরিবহনের কাজে ব্যবহূত হবে। আন্তজেলা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ফিটনেসবিহীন কোনো বাসই দূরপাল্লায় চলাচল করতে পারে না। কারণ দীর্ঘ দূরত্বে ফিটনেসবিহীন বাস পৌঁছাতেই পারবে না। এ ছাড়া বাড়তি ভাড়াও আদায় করা হচ্ছে না। সরকার নির্ধারিত ভাড়াই আদায় করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.