ভর্তিতে অর্থ আদায়-ফয়েজের বক্তব্যকে মিথ্যা বললেন সাবেক ডিসি

স্কুলে ভর্তি বাবদ অর্থ আদায়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদের বক্তব্যকে মিথ্যা বললেন সাবেক জেলা প্রশাসক আশরাফ শামীম। একসময় চট্টগ্রামে স্কুলভিত্তিক পৃথক ভর্তি পরীক্ষা হলেও ভর্তি-বাণিজ্য ঠেকাতে আশরাফ শামীম ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করে জেলা প্রশাসনের মনিটরিং পদ্ধতি চালু করেছিলেন।


আর তাতে ভর্তিতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তদবির-বাণিজ্য।
এর আগে গত ২০ জুলাই কালের কণ্ঠে প্রকাশিত 'চট্টগ্রামে সরকারি স্কুলে ভর্তির ৪০ লাখ টাকা ডিসির কাছে' শীর্ষক সংবাদে বর্তমান জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহম্মদ বলেন, 'ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের জেলা প্রশাসক যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা ও অর্থ খরচ চালিয়েছেন, সেটাই অব্যাহত আছে।' তিনি আরো বলেন, এসব টাকা কোন খাতে খরচ হবে, তা ভর্তি কমিটির সভায় নির্ধারণ হয়ে থাকে। কোনো টাকার অপচয় হয়নি কিংবা জেলা প্রশাসন বা তিনি ভোগ করেননি। তবে ভর্তিপ্রক্রিয়ায় আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় এখন ভর্তি ও তদবির-বাণিজ্য কমেছে।
বর্তমান জেলা প্রশাসকের এই বক্তব্য কালের কণ্ঠে প্রকাশের পর তা অস্বীকার করে সাবেক জেলা প্রশাসক ও বর্তমানে শিল্পমন্ত্রীর একান্ত সচিব আশরাফ শামীম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি জেলা প্রশাসক থাকাকালীন ভর্তি-বাণিজ্য ঠেকাতে ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে পরিবর্তন এনেছি সত্য; কিন্তু কোনো টাকা নিইনি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুধু মনিটরিং করা হয়েছে।'
আশরাফ শামীম আরো বলেন, 'আমার সময়ে বিভিন্ন স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটি একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করত। শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে নগরের ৯ সরকারি স্কুলকে দুটি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছিল এবং সেই অনুযায়ী স্কুল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষা নিত। একজন ম্যাজিস্ট্রেট সার্বক্ষণিক পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে পরীক্ষা পরিচালনা ও উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর ফলাফল শিট তৈরি করতেন। ওই শিট পরীক্ষার দিন রাতের মধ্যেই আমার কাছে পৌঁছত। এই শিটের বাইরে কোনো শিক্ষার্থীকে ভর্তি করানোর বিধান ছিল না। আর এ জন্য স্কুলগুলো থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হতো না। তাই আমি অর্থ নিতাম বলে বর্তমান জেলা প্রশাসক যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্য নয়।'
ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন জেলা প্রশাসকের কাজের মধ্যে পড়ে না জানিয়ে আশরাফ শামীম বলেন, 'একজন জেলা প্রশাসকের অনেক কাজ থাকে। এত কাজের মধ্যে স্কুলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন ও তা কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার বাড়তি দায়িত্ব জেলা প্রশাসকের কাঁধে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। স্বচ্ছতা নিশ্চিতের জন্য মনিটরিং বাড়িয়ে দিলেই হয়।'
আশরাফ শামীমের বক্তব্যকে সত্য আখ্যা দিয়ে মহানগরের বিভিন্ন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকরা জানান, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আশরাফ শামীমের সময় জেলা প্রশাসনকে কোনো টাকা জমা দিতে হতো না। কিন্তু বর্তমান জেলা প্রশাসকের সময়ে ভর্তি ফরম বিক্রির ৫০ শতাংশ টাকা জেলা প্রশাসনে জমা দিতে হয়।
উল্লেখ্য, তিন বছর ধরে বর্তমান জেলা প্রশাসন নগরের ৯টি সরকারি স্কুল থেকে ভর্তি পরীক্ষার ফি বাবদ ৪০ লাখ টাকা আদায় করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরের ৯টি সরকারি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে ভর্তির জন্য প্রতিবছর গড়ে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি ফরম জমা দিয়ে থাকে। এগুলো হলো- কলেজিয়েট স্কুল, মুসলিম হাই স্কুল, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, বাকলিয়া সরকারি ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাসিরাবাদ সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও ডা. খাস্তগীর স্কুল। একেকটি ভর্তি ফরমের মূল্য ১০০ টাকা হলেও নীতিমালা অনুযায়ী মাত্র ৫০ শতাংশ দেওয়া হয় স্কুলগুলোকে। বাকি ৫০ শতাংশ জেলা প্রশাসকের কাছে রেখে দেওয়া হয়। স্কুলে পাঠানো ৫০ শতাংশ টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার খাতা কেনা থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচ বহন করা হয়। এসব খরচের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞপ্তি প্রচার, আবেদন ফরম প্রস্তুত ও উত্তরপত্র মুদ্রণ, যাতায়াত ফরম বিতরণ, আসনবিন্যাস, পরীক্ষা গ্রহণ, আপ্যায়নসহ বিদ্যালয়ের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সম্মানী।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের কাছে থাকা ৫০ শতাংশ টাকা দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, তা পরীক্ষা কেন্দ্রে সরবরাহ, উত্তরপত্র মূল্যায়নের সম্মানী, আপ্যায়ন, ডিকোডিং, ম্যাজিস্ট্রেটদের সম্মানী, ট্রেজারি খরচ, পরীক্ষার দিন পুলিশের সম্মানী এবং জেলা প্রশাসনের তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের সম্মানী দেওয়া হয়।

No comments

Powered by Blogger.