আদিবাসীদের অধিকার

আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সন্তু লারমা বলেছেন, “সরকার আদিবাসীদের ভাল চায় না; বরং আদিবাসীদের অস্তিত্ব বিলীন করে দিতে চায়। দেশে সাম্প্রদায়িক ও উগ্র জাতীয়তাবাদী শাসকগোষ্ঠী থাকলে অধিবাসীদের অধিকার কখনই পূরণ হবে না।’ সন্তু লারমা বৃহস্পতিবার রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন


অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন। বিশ্বে আদিবাসীদের অধিকার রক্ষার বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে; আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রতিটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতির উন্নয়নের অধিকার রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সচেতন থাকা উচিত, তাঁদের এ আন্দোলন যেন মাত্রা ছাড়িয়ে না যায় এবং এর ফলে দেশের অভ্যন্তরে জাতিগত হিংসা ও বিরোধ যেন সৃষ্টি না হয়। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব নেতাকেই বক্তব্য রাখার সময় সর্তক থাকতে হবে। বর্তমান সরকার আদিবাসীদের মঙ্গলাকাক্সক্ষী নয় বলে সন্তু লারমা যে অভিযোগ করেছেন, তা কি সঠিক? তাঁর এ কথা ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগেই পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। বর্তমান সরকার নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও এ চুক্তির বাস্তবায়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে পর্যায়ক্রমে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে একজন আদিবাসী নেতা হিসাবে সন্তু লারমার এ ধরনের বক্তব্য রাখা কি যুক্তিসঙ্গত? এতে আদিবাসী উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোকে অস্বীকার করা হয়। এর ফলে বিদেশেও বাংলাদেশ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হতে পারে।
বাংলাদেশে আদিবাসীদের সংখ্যা খুবই কম; গত আদমশুমারিতে বিষয়টি স্পষ্টভাবে জানা গেছে। শুধু পার্বত্য অঞ্চলেই নয়; বাংলাদেশের সমতল ভূমিতেও কিছু আদিবাসী নৃগোষ্ঠী রয়েছে। সুতরাং শুধু পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী উন্নয়ন নয়; সারাদেশেই আদিবাসী উন্নয়নের লক্ষ্যে সমন্বিত পরিকল্পনার কথা ভাবতে হবে। তবে বাংলাদেশে সমতল ভূমির আদিবাসীদের তেমন কোন সমস্যা নেই। পার্বত্য চট্টগ্রামেই শুধু আদিবাসী জনগোষ্ঠী বসবাস করে না; সেখানে বিপুলসংখ্যক বাঙালীও বসবাস করে। এক্ষেত্রে বাঙালী ও আদিবাসী নেতৃবৃন্দকে পারস্পরিক সহনশীলতার প্রতি অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
এদেশের বাঙালী-আদিবাসীদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। আদিবাসী ফোরামের সভাপতি লড়াই সংগ্রামের মাধ্যমে আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। তাঁর এ ধরনের বক্তব্য কাক্সিক্ষত হতে পারে না। তাঁরা লড়াই করবেন কাদের বিরুদ্ধে? আলোচনার মধ্য দিয়ে যে কোন বিরোধের মীমাংসা সম্ভব। একই সঙ্গে দেশের অধিকাংশের স্বার্থের কথাও ভাবা দরকার। খেয়াল রাখতে হবে, বর্তমান সরকারের ঔদার্যের সুযোগে কোন মহল যেন দেশের শান্তি ও স্থিতিশীল অবস্থা বিপন্ন করতে না পারে।

No comments

Powered by Blogger.