অবৈধ ভিওআইপি-শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে

সংবাদটি গা শিউরে ওঠার মতো হলেও নতুন নয়। দেশে লুটপাট যে অব্যাহতভাবে চলছে, তার প্রকৃষ্ট ও অন্যতম উদাহরণ হলো ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল বা ভিওআইপি ফোনের অবৈধ ব্যবসা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত এক সংবাদে বলা হয়েছে, প্রতিদিন ১৭ কোটি টাকার বিদেশি কলের অর্থ চুরি হয়ে যাচ্ছে।


সংশ্লিষ্ট মহলের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, শুধু এই লুট, অনিয়ম বা অবৈধ কারবারে যে অর্থ ক্ষতি হচ্ছে, তা বন্ধ করতে পারলে মাত্র পাঁচ বছরে পদ্মা সেতু নির্মাণের অর্থ জোগাড় হয়ে যাবে। এ বিশাল পরিমাণ অর্থ চুরি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ এবং অর্থনীতিবিদ ও টেলিকম বিশেষজ্ঞরা জোর প্রতিবাদ জানালেও কারো মধ্যে কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের শাসনামলে অভিযান চালিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনেছিল বটে, কিন্তু নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর দিনে দিনে প্রকট হয়ে উঠেছে এই চৌর্যবৃত্তি। এ ব্যবসা যে চোখের বাইরে বা চেষ্টা করেও এর সঙ্গে যুক্তদের ধরা যাচ্ছে না, তা কিন্তু নয়। প্রায় প্রকাশ্যেই চলছে ভিওআইপির এ ব্যবসা। সুতরাং ধারণা করতে কোনোই অসুবিধা হয় না যে এর পেছনে সংশ্লিষ্ট কোনো কোনো মহলের সহযোগিতা রয়েছে। ১৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ডোমেস্টিক নেটওয়ার্ক কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ১ আগস্ট টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনুও এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছেন, কেন এ অবৈধ ব্যবসা বন্ধ হচ্ছে না? জানা গেছে, বর্তমানে চারটি ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের সঙ্গে আরো ২৩টি গেটওয়ে যুক্ত হতে যাচ্ছে এবং আসছে কয়েক হাজার ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল বা ভিওআইপি সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স। গত বছর আইজিডব্লিউ, আইজিএক্স ও আইআইজি এই তিন ধরনের কাঠামোতে লাইসেন্সের জন্য ১৫৩টি আবেদন জমা হয়েছিল। এর মধ্যে সরকারের ডাক টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ৮৫টি প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স দিতে নির্দেশ দিয়েছে গত ৯ ফেব্রুয়ারি। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে চারটি গেটওয়েকে সামাল দিতে পারছে না নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ; সেখানে এত প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে? ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল মূলত একটি ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিকে আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু বাংলাদেশে ১৯৯৭ সালে যখন এ প্রযুক্তি প্রথম ব্যবহার করা হয়, তখন থেকেই চলছে রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় দুর্নীতি। এ ভিওআইপির অবৈধ ব্যবসা জোট সরকারের সময় প্রকট আকার ধারণ করে প্রায় উন্মুক্তভাবে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়। ক্ষমতাসীনদের নিকটজন পরিচয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কিছু মানুষ। এটি অবশ্যই সাশ্রয়ী একটি ব্যবস্থা। কিন্ত সে ব্যবস্থা অনুমতির মধ্য দিয়ে সরকারকে রাজস্ব প্রদান করে নিয়মমাফিক বিটিআরসির মধ্য দিয়ে চালানোর কথা। তা না করে প্রায় সবটাই সরাসরি বিটিআরসিকে ফাঁকি দিয়ে এই চুরির কাজটি চালানো হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিটিআরসিকে ফাঁকি দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে অচিরেই ধরতে হবে। এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনায় কাউকে আইন অমান্য করতে প্রশ্রয় দিলে আর অন্যদের ব্যাপারে কঠোর হওয়া সম্ভব হবে না। সুতরাং কোনো আপস না করে শক্ত হাতে এ অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করা একান্ত কর্তব্য হয়ে পড়েছে।

No comments

Powered by Blogger.