দুর্ভোগ লাঘবে ‘যুদ্ধপ্রস্তুতি’

ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নির্বিঘেœ ঘরে ফেরার জন্য সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে বা কার্যক্রম চালাচ্ছে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের তাকে উল্লেখ করেছেন যুদ্ধপ্রস্তুতি হিসেবে। যাত্রীরা ঈদের সময় নানা পথে যাওয়ার সময় যে সব ভোগান্তির মধ্যে পড়েন, যেমন ভাঙ্গা সড়ক, টিকেটের কালোবাজারি, চাঁদাবাজি, ছিনতাই ইত্যাদি, সেসব দূর করার


লক্ষ্যে সরকার এবার যে কাজ এরই মধ্যে শুরু করেছে মন্ত্রী সেই উদ্যোগটাকেই যুদ্ধপ্রস্তুতির সঙ্গে তুলনা করেছেন। রাজধানী নগরীতে প্রতিদিনই বহু লোক আসছে, প্রতিদিনই বহু লোক ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। এ হচ্ছে নিত্যদিনের ব্যাপার। কিন্তু ঈদের ছুটি তথা অবকাশে লোকজনের ঢাকা ছাড়াÑসে এক বিরাট ব্যাপার এবং সেই ঢাকা ছাড়ার জন্য প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নানা ধরনের ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রীদের। টিকেট কিনতে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকেই টিকেট পান না, শুনতে পান টিকেট ফুরিয়ে গেছে, কিংবা কালোবাজারির কাছ থেকে বেশি দামে টিকেট কিনতে হয়Ñ এভাবে প্রথম থেকে ভোগান্তির শুরু। বাসযাত্রীদের জন্য নানা স্থানে রাস্তা খারাপ, ভাঙ্গাচোরা ইত্যাদি কারণে দেরি হয় বা দুর্ভোগের যাত্রা, এসবের সঙ্গে রয়েছে যানজট। এমনি সব নানা ধরনের সঙ্কট। ঢাকা নগরীতে এখন কত লোকের বাস এ তথ্য যেমন সঠিকভাবে পাওয়া সম্ভব নয়, তেমনি প্রত্যেক বছর ঈদের সময় কত লোক ঢাকা ছাড়ে তারও সঠিক হিসেব কারও কাছে নেই। এখানে যেমন প্রতিদিন লোক বাইরে থেকে আসছে, তেমনি প্রতিবছর যে ঘরমুখো যাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে তা বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এত যাত্রী। প্রয়োজন বহু যানের। রেলের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে, বগিও বাড়ানো হচ্ছে, বাড়ানো হচ্ছে বাস এবং লঞ্চও। অগণিত যাত্রী। তাদের যেতেই হবে। কোন বাসটা ফিটনেসবিহীন। কোন লঞ্চটার নির্মাণই ত্রুটিপূর্ণ এসব বোঝা বা জানা যাত্রীদের পক্ষে সম্ভব নয়, সম্ভব নয় টিকেটের আসল দামের চাইতে বেশি টাকা দাবি করাÑ এগুলোসহ সবকিছু দেখার দায়িত্ব, যাত্রীদের দুর্ভোগ যাতে না হয় সেটা দেখা এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত রাখা সরকারেরই দায়িত্ব। সরকার এই লক্ষ্যে উদ্যোগ তথা কর্মযজ্ঞ শুরু করেছে বলে যোগাযোগমন্ত্রীর কথায় জানা গেল। একে তিনি যুদ্ধপ্রস্তুতি বলে উল্লেখ করেছেন। এই যুদ্ধপ্রস্তুতি তথা কর্মযজ্ঞ সফল হবে এটাই সবার প্রত্যাশা। এর সঙ্গে আরও প্রত্যাশা, এই কর্মযজ্ঞের বড় একটি কাজ রাস্তা মেরামত করা সেই কাজটি এবার ঈদ পার হলেই যেন থেমে না যায়। বহু রাস্তাই আমাদের খারাপ এবং যেগুলো মেরামত করা হচ্ছে সেগুলো যে পাকাপাকিভাবে ভাল হয়েই থাকবে তাও নয়। তাই রাস্তা মেরামত, সংস্কার বা পুনর্নির্মাণের কাজটিকে অব্যাহত রাখা উচিত। যাত্রীদের সামগ্রিক নিরাপত্তার বিষয়টিও একই সঙ্গে নিশ্চিত হবে। মানুষ এটাই চায়। দেখতে চায় যোগাযোগমন্ত্রীর যুদ্ধপ্রস্তুতির ফল। এ প্রসঙ্গেই উল্লেখ করা যায়, চট্টগ্রামের কাছে ট্রেন-ট্রাকে সংঘর্ষ তথা দুর্ঘটনার কথাটিও। লোকজন কম ছিল বলে হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ট্রাকটি রেলের ইঞ্জিনের ধাক্কায় দু’টুকরো হয়ে গেছে এবং ইঞ্জিনটিও পড়েছে কাত হয়ে। ফলে আট ঘণ্টা রেল চলাচল সেখানে বন্ধ ছিল। কোন প্রাণহানি হলে তার ক্ষতি পূরণ হবার নয়। তবে সম্পদের ক্ষতিও এই দরিদ্র দেশে কম নয়। রেলের ইঞ্জিন খুবই দামী জিনিস, দেশে তৈরি হয় না, বিদেশ থেকে আনতে হয়। এমন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এবং ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকটাও নিশ্চিত হওয়া জরুরী।

No comments

Powered by Blogger.