স্মরণ-বহুমাত্রিক হুমায়ুন আজাদ by আরাফাত শাহরিয়ার
১৯৮৪ সাল। হুমায়ুন আজাদের বয়স তখন সবে ৩৭ বছর। এ বয়সেই তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থ 'বাংলা ভাষা'-এর প্রথম খণ্ড বেরিয়ে গেছে। একদিন তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এলেন বিশ্বভারতীর এক প্রবীণ অধ্যাপক, সাবেক ডিন। অধ্যাপক সাহেব হুমায়ুন আজাদের কক্ষে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, 'ডক্টর হুমায়ুন আজাদকে কোথায় পাব বলতে পারেন?' হুমায়ুন
আজাদ বললেন, 'আমিই হুমায়ুন আজাদ।' বিশ্বভারতীর অধ্যাপকের তো বিশ্বাস হয় না। তিনি বলেই ফেললেন, 'যিনি বাংলা ভাষা সম্পাদনা করেছেন, তাঁর বয়স এত কম হতে পারে না।' হুমায়ুন আজাদ বলেন, 'কত হওয়া উচিত?' অধ্যাপক বলেন, 'অন্তত পঁচাত্তর, এর আগে এমন জ্ঞান হতে পারে না।' হুমায়ুন আজাদ আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছিলেন সব প্রথাকে। তাঁর সব বই, প্রবন্ধ, কবিতা সৃষ্টি হয়েছে প্রথাকে অস্বীকার করে। হুমায়ুন আজাদের জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল। নানাবাড়ি কামারগাঁও গ্রামে জন্ম হলেও মুন্সীগঞ্জ জেলার বিক্রমপুরের রাঢ়িখালকে হুমায়ুন আজাদ মনে করতেন তাঁর জন্মগ্রাম। এখানেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় কবিতা লেখা শুরু। ১৯৬২ সালে এসএসসি পাস করেন হুমায়ুন আজাদ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে তিনি ২১তম স্থান অধিকার করেছিলেন। ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকের পাট চুকিয়ে ১৯৬৪ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হন। চট্টগ্রাম সরকারি মহাবিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু। পরে অধ্যাপনা করেছেন চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৭৮ সালে তিনি যোগ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে।
১৯৭৫ সালে হুমায়ুন আজাদ বিয়ে করেন তাঁর সহপাঠী লতিফা কহিনূরকে। টেলিফোনে। এই বছরই বের হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অলৌকিক ইস্টিমার'। আজাদ-লতিফা দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্ধু'। উপন্যাস 'ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল', 'সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে', 'মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ', 'যাদুকরের মৃত্যু', 'রাজনীতিবিদগণ', 'পাক সার জমিন সাদ বাদ'। তাঁর কিশোর সাহিত্য, অনুবাদ ও সমালোচনা গ্রন্থগুলো পাঠকের দৃষ্টি কাড়ে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, শিশু সাহিত্যের জন্য অগ্রণী পুরস্কার ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার লাভ করেন।
হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ নারী। বইটির জন্য তিনি প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েন। সরকার এটিকে নিষিদ্ধ করে। যদিও পরে আদালতের রায়ে তা অবমুক্ত হয়। ২০০৪ সালের বইমেলায় 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা ক্রুদ্ধ হয়। তাঁকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। কিন্তু তিনি এসবের কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। সন্ধ্যার পর বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন তিনি। তাঁর রক্তে পিচ্ছিল হয়ে ওঠে টিএসসি চত্বর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা দেশ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানো হয়। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলেও মৃত্যু তাঁর পিছু ছাড়েনি। হত্যাপ্রচেষ্টার ঘটনার কিছুদিন পর বৃত্তি নিয়ে জার্মানির মিউনিখে চলে যান। সেখানেই ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, প্রাবন্ধিক, রাজনীতিক, বিশ্লেষক ও কিশোর সাহিত্যিক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ চেয়েছিলেন কূপমণ্ডূকতা থেকে দেশকে মুক্তি দিতে, প্রথামুক্ত সমাজ গড়তে। আর এ কারণেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি।
আরাফাত শাহরিয়ার
১৯৭৫ সালে হুমায়ুন আজাদ বিয়ে করেন তাঁর সহপাঠী লতিফা কহিনূরকে। টেলিফোনে। এই বছরই বের হয় তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'অলৌকিক ইস্টিমার'। আজাদ-লতিফা দম্পতির দুই মেয়ে ও এক ছেলে। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলো হলো 'জ্বলো চিতাবাঘ', 'সব কিছু নষ্টদের অধিকারে যাবে', 'কাফনে মোড়া অশ্রুবিন্ধু'। উপন্যাস 'ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল', 'সব কিছু ভেঙ্গে পড়ে', 'মানুষ হিসাবে আমার অপরাধসমূহ', 'যাদুকরের মৃত্যু', 'রাজনীতিবিদগণ', 'পাক সার জমিন সাদ বাদ'। তাঁর কিশোর সাহিত্য, অনুবাদ ও সমালোচনা গ্রন্থগুলো পাঠকের দৃষ্টি কাড়ে। তিনি বাংলা একাডেমী সাহিত্য পুরস্কার, শিশু সাহিত্যের জন্য অগ্রণী পুরস্কার ও মার্কেন্টাইল ব্যাংক পুরস্কার লাভ করেন।
হুমায়ুন আজাদের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ নারী। বইটির জন্য তিনি প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধদের প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়েন। সরকার এটিকে নিষিদ্ধ করে। যদিও পরে আদালতের রায়ে তা অবমুক্ত হয়। ২০০৪ সালের বইমেলায় 'পাক সার জমিন সাদ বাদ' প্রকাশিত হলে মৌলবাদীরা ক্রুদ্ধ হয়। তাঁকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। কিন্তু তিনি এসবের কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করেননি। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০০৪। সন্ধ্যার পর বইমেলা থেকে বেরিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নিজের বাসায় যাওয়ার পথে ঘাতকদের আক্রমণের শিকার হন তিনি। তাঁর রক্তে পিচ্ছিল হয়ে ওঠে টিএসসি চত্বর। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিক্ষোভে ফেটে পড়ে সারা দেশ। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে বিদেশে পাঠানো হয়। সুস্থ হয়ে দেশে ফিরলেও মৃত্যু তাঁর পিছু ছাড়েনি। হত্যাপ্রচেষ্টার ঘটনার কিছুদিন পর বৃত্তি নিয়ে জার্মানির মিউনিখে চলে যান। সেখানেই ২০০৪ সালের ১২ আগস্ট আকস্মিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন হুমায়ুন আজাদ। কবি, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, ভাষাবিজ্ঞানী, প্রাবন্ধিক, রাজনীতিক, বিশ্লেষক ও কিশোর সাহিত্যিক অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ চেয়েছিলেন কূপমণ্ডূকতা থেকে দেশকে মুক্তি দিতে, প্রথামুক্ত সমাজ গড়তে। আর এ কারণেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন তিনি।
আরাফাত শাহরিয়ার
No comments