একুশ শতক ॥ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অফিসে ভূত by মোস্তাফা জব্বার
প্রিয় মোস্তাফা জব্বার, আপনার পাসেপার্ট নাম্বার এএ৬৩৪২৯০০ ভ্রমণের জন্য আর ব্যবহৃত হতে পারবে না। অনুগ্রহ করে অতি দ্রুত নিকটবর্তী পাসপোর্ট অফিসে যোগাযোগ করুন।” এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) ঠিকানা থেকে ইংরেজীতে লেখা এমন একটি এসএমএস আমার মোবাইলে আসে। আপনি কি তেমন একটি এসএমএস পেয়েছেন?
যদি না পেয়ে থাকেন, তবে আপনি খুব ভাগ্যবান মানুষ। কিন্তু আমি ততটা ভাগ্যবান নই। ২ আগস্ট বেলা ১২টা ২৮ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে ইংরেজী ভাষায় লেখা এমন একটি এসএমএস আমার নিজের মোবাইল নাম্বারে আসে এবং তাতে আমাকে উপরের নির্দেশখানি দেয়া হয়। ভাবুন তো, ২ আগস্ট যদি আমার কোন দেশে ভ্রমণের কথা থেকে থাকত তবে আমার অবস্থা কি হতো? এই ম্যাসেজটি আমাকে বলে দিচ্ছে যে, আমি আসলে বিদেশের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছি। অর্থাৎ আমার পাসপোর্টটি বাতিল করা হয়েছে এবং সেজন্য বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমার বিদেশ যাবার অধিকার হরণ করা হয়েছে। অথচ আমি জানি না আমার অপরাধটি কি? আমি কোন দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করিনি। নিজে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছি, নিজে ফরম পূরণ করেছি, নিজের ছবি নিজেই গিয়ে তুলেছি। নিজের হাতে পাসপোর্ট ডেলিভারি নিয়েছি এবং সেই পাসপোর্টে বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণও করেছি। এতে আমি ডলার এনডোর্স করেছি। ভিসা নিয়েছিÑ সেই ভিসা ব্যবহার করেছি। পাসপোর্ট অফিসের কর্তাব্যক্তিরা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন এবং পাসপোর্ট পাবার সময় আমি দারুণ খুশি হয়েছিলাম এই অফিসটির সেবার মান দেখে। কিন্তু এসএমএসটি আমাকে প্রচ-ভাবে হতাশ করেছে।
বলা যেতে পারে কিছুটা অবাক হয়েছি আমি। অনেক দিন ধরেই আমরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর বিপুল প্রশংসা করে আসছি। তারা এই প্রকল্পের সকল অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে একটি অসম্ভব প্রকল্পকে সফল করেছে- এমনটাই আমরা বলে আসছি। এক সময় এই প্রকল্প নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কম লীলা খেলা করেননি। তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু যখনই এটি সেনাবাহিনীর হাতে যায় তখন থেকে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আমি নিজেও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট গ্রহণ করতে গিয়ে খুশি হয়েছি। পুরো প্রক্রিয়াটির ব্যবস্থাপনা চমৎকার মনে হয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ‘ডাল মে কুচ কালা হায়।’ আমরা বাইরে থেকে যা দেখি ভেতরে তেমনটা নয়। বিশেষ করে এমন একটি সংস্থার হাত থেকে লক্ষাধিক পাসপোর্ট বিনষ্ট হওয়ার ঘটনাটিকে আর যাই বলা হোক স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করা যায় না। এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না যে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রকল্পে এত ভয়ঙ্কর রকমের দায়িত্বহীনতার ঘটনা ঘটতে পারে। সম্প্রতি তেমন একটি খবরই প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলোতে। খবরটির অংশবিশেষ তুলে ধরছি।
“বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বাতিল করার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে দুই হাজার ২৮০টি এমআর বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো চুরি হয়েছে সন্দেহে এর একটি তালিকা অভিবাসন পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে। এর আগে নানা ধরনের ভুল হওয়া পাঁচ হাজার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। সর্বশেষ শুক্রবার ৯৪ হাজার পাসপোর্টের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ভুলের কারণে ছাপা হওয়ার পর এগুলো বাতিল করা হয়েছে। কেউ যাতে এসব পাসপোর্ট ঘষামাজা করে বিদেশ যেতে না পারে, সে কারণে এগুলো বাতিল করে তার তালিকা অভিবাসন পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন বন্দরে এসব তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হবে।
শুধু ভুলের কারণে এই বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট বাতিলের দায় কার জানতে চাইলে ‘ইন্ট্রোডিউসিং অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা ইন বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রেফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বেশিরভাগ মানুষ লেখাপড়া জানেন না। তাঁরা ফরম পূরণ করেন অন্যের মাধ্যমে। এসব পাসপোর্ট ছাপানোর পর দেখা যায় তাতে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ বা অন্য কিছু ভুল হয়ে গেছে। তখন বাধ্য হয়ে তার নামে নতুন করে পাসপোর্ট ইস্যু করতে হয়। ফলে প্রথম দফা পাসপোর্ট বাতিল করতে হচ্ছে। এভাবে ৯৪ হাজার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। পাসপোর্ট চুরির ব্যাপারে তিনি বলেন, অধিদফতর থেকে এমআরপি পাসপোর্টের ছাপানো কিছু বই চুরি হয়ে গেছে। সেই চুরি হওয়া বই নিয়ে পাসপোর্ট জাল করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা খুব বেশি নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অবশ্য জানায়, এমআরপি পাসপোর্টও এখন জাল হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশী প্রতিবেদন ছাড়াই অবৈধভাবে পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে- এমন অভিযোগও রয়েছে। তদন্ত ছাড়াই পাসপোর্ট পেয়েছেন কক্সবাজারে এমন একজন মিয়ানমারের নাগরিককে পুলিশ সম্প্রতি আটক করেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অধিদফতরের সংঘবদ্ধ একটি চক্র এমআরপির বই চুরি করে সেগুলো ব্যবহার করে জাল পাসপোর্ট তৈরি করছে। একাধিক সূত্রও বলেছে, বাতিল করা অনেক পাসপোর্টের বিপরীতে নতুন করে পাসপোর্ট দেয়া হলেও পুরনো পাসপোর্টগুলো ধ্বংস করা হয়নি। (দৈনিক প্রথম আলো ২২ জুলাই ১২) খবরটির সমাপ্তি ওখানেই হয়নি। ২৫ জুলাই দৈনিক ডেইলি স্টার খবর প্রকাশ করে যে চুরি হওয়া পাসপোর্টের সংখ্যা ২২৮০ নয় ৬ হাজার। পত্রিকাটির খবরে আরও বলা হয় যে এই চুরির সঙ্গে কারা জড়িত সেটি তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করছে।
খবরের সূত্র ধরে দুটি বড় প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।
ক) এমন একটি জায়গা থেকে প্রায় ৬ হাজার পাসপোর্ট চুরি হলো কেমন করে?
খ) ভুল প্রিন্ট হবার জন্য প্রথমে ৫ হাজার পাসপোর্ট বাতিল হলো। একই কারণে আরও ৯৪ হাজার পাসপোর্ট বাতিল হলো কেন?
পাসপোর্ট সরকারের দ্বারা রাষ্ট্রপতির নামে দেশের নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ সহজ করার জন্য ইস্যু করা হয়। এটি কার্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর বহনকারী বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং এর ফলে একজনের ব্যক্তিগত কাজ রাষ্ট্রের দায় হিসেবে গণ্য হয়। আজকের দুনিয়াতে এ ধরনের দলিল চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন ইত্যাদি কাজে তো ব্যবহৃত হয়ই আমাদের জন্য বড় ভয় হলো জঙ্গীবাদের সহায়ক হিসেবে এই দলিলগুলো ব্যবহৃত হয় কিনা। এমআরপি প্রচলন হবার আগে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নানা অপরাধের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আমাদের দেশে পাসপোর্টের ছবি বদল করে যে কেউ বিদেশে যেত। গলাকাটা পাসপোর্ট একটি অতি সাধারণ বিষয় ছিল। জুতার ফিতার পিনের মতো বা সাধারণ গ্লুর মতো ছবি আটকানোকে মুহূর্তের মধ্যে বদলে ফেলা যেত। কার নামের পাসপোর্ট দিয়ে কে সফর করত তার কোন হিসাব নিকাশ ছিল না। চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল সেই সময়টা। এমনকি এটি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল যে, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ অর্থের বিনিময়ে গলাকাটা পাসপোর্টধারীদের বহিরাগমন সিল দিয়ে পার করে দিত। আমরা মনে করেছিলাম যে, এমআরপি চালু হলে এই আশঙ্কা থেকে আমরা বেঁচে যাব। কিন্তু চুরি হওয়া পাসপোর্ট এসব কাজে ব্যবহৃত হওয়া মোটেই কঠিন কাজ নয়। বাংলাদেশ আগত রোহিঙ্গারা আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, এমন লক্ষ লক্ষ নজির আছে। এখন আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাড়ি দেবে এতে সন্দেহ থাকার কোন কারণ নেই।
পাসপোর্ট এমন কোন দলিল নয় কাগজের স্তূপের মতো কোথাও রেখে দেয়া হলো এবং একজনের বদলে অন্য একজন হাতে করে সেটি নাড়াচড়া করল। পাসপোর্ট এমন একটি দলিল যার রাষ্ট্রীয় মূল্য আছে এবং ব্যাংকেও বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখার মতো গুরুত্ব দিয়ে এই দলিলটি রাখা হয়। কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির হাতে এর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে। স্ট্রং রুম জাতীয় কোন স্থানে সেটি রক্ষিত হয়। এর যথাযথ হিসাব থাকে এবং সময়ে সময়ে মজুদ পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা এমন দলিল চুরি হয় কেমন করে। যদি ২/৪টি দলিল এদিক সেদিক হতো তবে ধরে নিতাম এর পেছনে ছোটখাটো কোন কারণ আছে। কিন্তু ৬ হাজার পাসপোর্ট কেমন করে চুরি হয়। ট্রাক ছাড়া এত বিপুল পরিমাণ দলিল বহন করা সম্ভব নয়। পাসপোর্ট অফিস থেকে ট্রাকে করে কিভাবে এত বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট পাচার হলো? খুব সহজ ও স্বাভাবিক প্রশ্ন হচ্ছে এই নিরাপত্তা বিধানের গলদটা কোথায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই গলদ খুঁজে বের করার কোন প্রয়াসের কথা আমরা শুনিনি।
অন্যদিকে সেনাবাহিনী যার দায়িত্বে সেখানে কেমন করে ভুল করে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। কেউ ভুল করে ফরম পূরণ করলেই সে ফরম অনুসারে পাসপোর্ট ইস্যু হয় কেমন করে? ঘটনাটি এখানে থেমে থাকলেই একটু স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু মজার বিষয় হলো যে নতুন করে শুদ্ধ পাসপোর্ট ইস্যু করে ডেলিভারি দেবার সময় ভুলের পাসপোর্টটি ফেরতও নেয়া হয়নি। কি ধরনের দায়িত্বহীনতার মাঝে এই প্রকল্পটি চলে আসছে তার প্রমাণ এটি দিয়েই উপলব্ধি করা যায়।
আমি নিজে খুবই দুঃখিত হয়েছি। কারণ সেনাবাহিনীর ডিজিটাল কাজের প্রতি আমার একটি শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে। বিগত সরবকারের সময়ে তারা ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ এত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে যে সেটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের হাতেই পাসপোর্টের মতো একটি সেনসিটিভ বিষয় এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থায় কেমন করে পৌঁছাল?
আমাদের শঙ্কাটি হলো, প্রায় লক্ষাধিক পাসপোর্ট নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার ফলাফল খুবই খারাপ হতে পারে। এসব পাসপোর্ট বিশেষত ধর্মীয় জঙ্গীবাদের হাতে পড়তে পারে। একটি আণবিক বোমা হারিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে পড়লে যেমনটি শঙ্কা হয় এই পাসপোর্টগুলোও তেমনভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের হাতে চরমভাবে অপব্যবহৃত হয় কিনা তার ভয় আছে। ক’দিন আগে খবরে দেখলাম আমাদের দেশের কিছু খারাপ লোক এক শ’ টাকার নোট থেকে নোটের ছাপাটি মুছে ফেলে তাতে পাচ শ’ টাকার নোটের ছাপ ছেপে দেশময় ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই খারাপ লোকগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাসপোর্টের নাম বদল করতে পারে- প্রিন্ট করতে পারে এবং যে কারও হাতে সেটি তুলে দিতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে তদন্ত করে দেখা উচিত এমন ভয়ঙ্কর অবস্থাটির উদ্ভব হলো কেমন করে। আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই আশা করব যে, সরকার হেলাফেলাভাবে বিষয়টিকে দেখবে না। আমরা যারা বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাই তারা প্রায় সব সময়েই এই পাসপোর্ট জালিয়াতির বদৌলতে ঘটে যাওয়া হয়রানির শিকার হই। পাসপোর্ট ওলট-পালট করে দেখা বা নানা ধরনের পরীক্ষা করার পাশাপাশি ইমিগ্রেশনে আটকে রাখার বহু ঘটনা প্রতিদিন ঘটে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হবার পর সেসব হয়রানি আর হবে না সেই প্রত্যাশা আমাদের ছিল। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা নষ্ট হলো পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বহীনতায়। দেশের কোন বিদেশগামী মানুষের কাছে এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অফিসের এই ভূতকে এই মুহূর্তে তাড়ানোটা জাতিকে জালিয়াতির কলঙ্ক থেকে বাঁচাবে।
যে এসএমএসটি দিয়ে এই লেখার সূচনা করেছিলাম তাতে আবার ফিরে আসি। এসএমএসটি পাবার পর আমি আমার পাসপোর্টটা চেক করে দেখলাম। মজার বিষয় হলো এসএমএসের পাসপোর্ট নাম্বারটির সঙ্গে আমার পাসপোর্ট নাম্বারের কোন মিল নেই। আমার পাসপোর্ট নাম্বারটি হলো এএ৬৭৭৭১৪০ ইস্যু করার তারিখ ০২ মে ২০১১। পাসপোর্টটি ঢাকা থেকে ইস্যু করা হয়েছে। আরও মজার বিষয় হলো, এসএমএস পাবার পর আমি আমাদের আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে যখন তাদের বিষয়টি জানাতে একটি পত্র দিয়ে লোক পাঠালাম তখন মাননীয় উপ পরিচালক মহোদয় আমার চিঠি গ্রহণ না করে পত্রবাহককে তার অফিস ঘর থেকে বের করে দিলেন। আমি আদৌ জানি না, আমাদের পাসপোর্ট অফিসে কোন্ ভূত হাজির হয়েছে। এই ভূত কিভাবে তাড়ানো যাবে- আমি জানি না।
ঢাকা, ১০ আগস্ট ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net
বলা যেতে পারে কিছুটা অবাক হয়েছি আমি। অনেক দিন ধরেই আমরা মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সেনাবাহিনীর বিপুল প্রশংসা করে আসছি। তারা এই প্রকল্পের সকল অনিয়ম-দুর্নীতি দূর করে একটি অসম্ভব প্রকল্পকে সফল করেছে- এমনটাই আমরা বলে আসছি। এক সময় এই প্রকল্প নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর কম লীলা খেলা করেননি। তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু যখনই এটি সেনাবাহিনীর হাতে যায় তখন থেকে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। আমি নিজেও মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট গ্রহণ করতে গিয়ে খুশি হয়েছি। পুরো প্রক্রিয়াটির ব্যবস্থাপনা চমৎকার মনে হয়েছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে ‘ডাল মে কুচ কালা হায়।’ আমরা বাইরে থেকে যা দেখি ভেতরে তেমনটা নয়। বিশেষ করে এমন একটি সংস্থার হাত থেকে লক্ষাধিক পাসপোর্ট বিনষ্ট হওয়ার ঘটনাটিকে আর যাই বলা হোক স্বাভাবিক ঘটনা বলে মনে করা যায় না। এটি কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না যে, সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণাধীন একটি প্রকল্পে এত ভয়ঙ্কর রকমের দায়িত্বহীনতার ঘটনা ঘটতে পারে। সম্প্রতি তেমন একটি খবরই প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক প্রথম আলোতে। খবরটির অংশবিশেষ তুলে ধরছি।
“বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক আবদুল মাবুদ যন্ত্রে পাঠযোগ্য পাসপোর্ট বাতিল করার কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে দুই হাজার ২৮০টি এমআর বই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এগুলো চুরি হয়েছে সন্দেহে এর একটি তালিকা অভিবাসন পুলিশের হাতে দেয়া হয়েছে। এর আগে নানা ধরনের ভুল হওয়া পাঁচ হাজার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। সর্বশেষ শুক্রবার ৯৪ হাজার পাসপোর্টের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ভুলের কারণে ছাপা হওয়ার পর এগুলো বাতিল করা হয়েছে। কেউ যাতে এসব পাসপোর্ট ঘষামাজা করে বিদেশ যেতে না পারে, সে কারণে এগুলো বাতিল করে তার তালিকা অভিবাসন পুলিশের কাছে দেয়া হয়েছে। বিভিন্ন বন্দরে এসব তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হবে।
শুধু ভুলের কারণে এই বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট বাতিলের দায় কার জানতে চাইলে ‘ইন্ট্রোডিউসিং অব মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এ্যান্ড মেশিন রিডেবল ভিসা ইন বাংলাদেশ’-এর প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ রেফায়েত উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, বেশিরভাগ মানুষ লেখাপড়া জানেন না। তাঁরা ফরম পূরণ করেন অন্যের মাধ্যমে। এসব পাসপোর্ট ছাপানোর পর দেখা যায় তাতে ব্যক্তির নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ বা অন্য কিছু ভুল হয়ে গেছে। তখন বাধ্য হয়ে তার নামে নতুন করে পাসপোর্ট ইস্যু করতে হয়। ফলে প্রথম দফা পাসপোর্ট বাতিল করতে হচ্ছে। এভাবে ৯৪ হাজার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। পাসপোর্ট চুরির ব্যাপারে তিনি বলেন, অধিদফতর থেকে এমআরপি পাসপোর্টের ছাপানো কিছু বই চুরি হয়ে গেছে। সেই চুরি হওয়া বই নিয়ে পাসপোর্ট জাল করা হচ্ছে। তবে এ সংখ্যা খুব বেশি নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র অবশ্য জানায়, এমআরপি পাসপোর্টও এখন জাল হচ্ছে। পাশাপাশি পুলিশী প্রতিবেদন ছাড়াই অবৈধভাবে পাসপোর্ট অধিদফতর থেকে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়েছে- এমন অভিযোগও রয়েছে। তদন্ত ছাড়াই পাসপোর্ট পেয়েছেন কক্সবাজারে এমন একজন মিয়ানমারের নাগরিককে পুলিশ সম্প্রতি আটক করেছে। অভিযোগ রয়েছে, পাসপোর্ট অধিদফতরের সংঘবদ্ধ একটি চক্র এমআরপির বই চুরি করে সেগুলো ব্যবহার করে জাল পাসপোর্ট তৈরি করছে। একাধিক সূত্রও বলেছে, বাতিল করা অনেক পাসপোর্টের বিপরীতে নতুন করে পাসপোর্ট দেয়া হলেও পুরনো পাসপোর্টগুলো ধ্বংস করা হয়নি। (দৈনিক প্রথম আলো ২২ জুলাই ১২) খবরটির সমাপ্তি ওখানেই হয়নি। ২৫ জুলাই দৈনিক ডেইলি স্টার খবর প্রকাশ করে যে চুরি হওয়া পাসপোর্টের সংখ্যা ২২৮০ নয় ৬ হাজার। পত্রিকাটির খবরে আরও বলা হয় যে এই চুরির সঙ্গে কারা জড়িত সেটি তদন্ত কমিটি খুঁজে বের করছে।
খবরের সূত্র ধরে দুটি বড় প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।
ক) এমন একটি জায়গা থেকে প্রায় ৬ হাজার পাসপোর্ট চুরি হলো কেমন করে?
খ) ভুল প্রিন্ট হবার জন্য প্রথমে ৫ হাজার পাসপোর্ট বাতিল হলো। একই কারণে আরও ৯৪ হাজার পাসপোর্ট বাতিল হলো কেন?
পাসপোর্ট সরকারের দ্বারা রাষ্ট্রপতির নামে দেশের নাগরিকদের বিদেশ ভ্রমণ সহজ করার জন্য ইস্যু করা হয়। এটি কার্যত বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর বহনকারী বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং এর ফলে একজনের ব্যক্তিগত কাজ রাষ্ট্রের দায় হিসেবে গণ্য হয়। আজকের দুনিয়াতে এ ধরনের দলিল চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, খুন ইত্যাদি কাজে তো ব্যবহৃত হয়ই আমাদের জন্য বড় ভয় হলো জঙ্গীবাদের সহায়ক হিসেবে এই দলিলগুলো ব্যবহৃত হয় কিনা। এমআরপি প্রচলন হবার আগে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নানা অপরাধের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। আমাদের দেশে পাসপোর্টের ছবি বদল করে যে কেউ বিদেশে যেত। গলাকাটা পাসপোর্ট একটি অতি সাধারণ বিষয় ছিল। জুতার ফিতার পিনের মতো বা সাধারণ গ্লুর মতো ছবি আটকানোকে মুহূর্তের মধ্যে বদলে ফেলা যেত। কার নামের পাসপোর্ট দিয়ে কে সফর করত তার কোন হিসাব নিকাশ ছিল না। চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল সেই সময়টা। এমনকি এটি খুব সাধারণ ঘটনা ছিল যে, বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ অর্থের বিনিময়ে গলাকাটা পাসপোর্টধারীদের বহিরাগমন সিল দিয়ে পার করে দিত। আমরা মনে করেছিলাম যে, এমআরপি চালু হলে এই আশঙ্কা থেকে আমরা বেঁচে যাব। কিন্তু চুরি হওয়া পাসপোর্ট এসব কাজে ব্যবহৃত হওয়া মোটেই কঠিন কাজ নয়। বাংলাদেশ আগত রোহিঙ্গারা আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশে পাড়ি দিয়েছে, এমন লক্ষ লক্ষ নজির আছে। এখন আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট ব্যবহার করে বিদেশে পাড়ি দেবে এতে সন্দেহ থাকার কোন কারণ নেই।
পাসপোর্ট এমন কোন দলিল নয় কাগজের স্তূপের মতো কোথাও রেখে দেয়া হলো এবং একজনের বদলে অন্য একজন হাতে করে সেটি নাড়াচড়া করল। পাসপোর্ট এমন একটি দলিল যার রাষ্ট্রীয় মূল্য আছে এবং ব্যাংকেও বৈদেশিক মুদ্রা জমা রাখার মতো গুরুত্ব দিয়ে এই দলিলটি রাখা হয়। কোন দায়িত্বশীল ব্যক্তির হাতে এর নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকে। স্ট্রং রুম জাতীয় কোন স্থানে সেটি রক্ষিত হয়। এর যথাযথ হিসাব থাকে এবং সময়ে সময়ে মজুদ পরীক্ষা করে দেখা হয়। সেনাবাহিনীর দায়িত্বে থাকা এমন দলিল চুরি হয় কেমন করে। যদি ২/৪টি দলিল এদিক সেদিক হতো তবে ধরে নিতাম এর পেছনে ছোটখাটো কোন কারণ আছে। কিন্তু ৬ হাজার পাসপোর্ট কেমন করে চুরি হয়। ট্রাক ছাড়া এত বিপুল পরিমাণ দলিল বহন করা সম্ভব নয়। পাসপোর্ট অফিস থেকে ট্রাকে করে কিভাবে এত বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট পাচার হলো? খুব সহজ ও স্বাভাবিক প্রশ্ন হচ্ছে এই নিরাপত্তা বিধানের গলদটা কোথায় রয়েছে। এখন পর্যন্ত এই গলদ খুঁজে বের করার কোন প্রয়াসের কথা আমরা শুনিনি।
অন্যদিকে সেনাবাহিনী যার দায়িত্বে সেখানে কেমন করে ভুল করে পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়। কেউ ভুল করে ফরম পূরণ করলেই সে ফরম অনুসারে পাসপোর্ট ইস্যু হয় কেমন করে? ঘটনাটি এখানে থেমে থাকলেই একটু স্বস্তি পাওয়া যেত। কিন্তু মজার বিষয় হলো যে নতুন করে শুদ্ধ পাসপোর্ট ইস্যু করে ডেলিভারি দেবার সময় ভুলের পাসপোর্টটি ফেরতও নেয়া হয়নি। কি ধরনের দায়িত্বহীনতার মাঝে এই প্রকল্পটি চলে আসছে তার প্রমাণ এটি দিয়েই উপলব্ধি করা যায়।
আমি নিজে খুবই দুঃখিত হয়েছি। কারণ সেনাবাহিনীর ডিজিটাল কাজের প্রতি আমার একটি শ্রদ্ধাবোধ কাজ করে। বিগত সরবকারের সময়ে তারা ছবিসহ ভোটার তালিকার কাজ এত সুন্দরভাবে সম্পন্ন করেছে যে সেটি একটি অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তাদের হাতেই পাসপোর্টের মতো একটি সেনসিটিভ বিষয় এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থায় কেমন করে পৌঁছাল?
আমাদের শঙ্কাটি হলো, প্রায় লক্ষাধিক পাসপোর্ট নিয়ে যে সঙ্কট তৈরি হয়েছে তার ফলাফল খুবই খারাপ হতে পারে। এসব পাসপোর্ট বিশেষত ধর্মীয় জঙ্গীবাদের হাতে পড়তে পারে। একটি আণবিক বোমা হারিয়ে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে পড়লে যেমনটি শঙ্কা হয় এই পাসপোর্টগুলোও তেমনভাবে সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের হাতে চরমভাবে অপব্যবহৃত হয় কিনা তার ভয় আছে। ক’দিন আগে খবরে দেখলাম আমাদের দেশের কিছু খারাপ লোক এক শ’ টাকার নোট থেকে নোটের ছাপাটি মুছে ফেলে তাতে পাচ শ’ টাকার নোটের ছাপ ছেপে দেশময় ছড়িয়ে দিচ্ছে। সেই খারাপ লোকগুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে পাসপোর্টের নাম বদল করতে পারে- প্রিন্ট করতে পারে এবং যে কারও হাতে সেটি তুলে দিতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য অত্যন্ত জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। একই সঙ্গে তদন্ত করে দেখা উচিত এমন ভয়ঙ্কর অবস্থাটির উদ্ভব হলো কেমন করে। আমরা খুব স্বাভাবিকভাবেই আশা করব যে, সরকার হেলাফেলাভাবে বিষয়টিকে দেখবে না। আমরা যারা বাংলাদেশের সবুজ পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশ যাই তারা প্রায় সব সময়েই এই পাসপোর্ট জালিয়াতির বদৌলতে ঘটে যাওয়া হয়রানির শিকার হই। পাসপোর্ট ওলট-পালট করে দেখা বা নানা ধরনের পরীক্ষা করার পাশাপাশি ইমিগ্রেশনে আটকে রাখার বহু ঘটনা প্রতিদিন ঘটে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট হবার পর সেসব হয়রানি আর হবে না সেই প্রত্যাশা আমাদের ছিল। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা নষ্ট হলো পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বহীনতায়। দেশের কোন বিদেশগামী মানুষের কাছে এটি কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট অফিসের এই ভূতকে এই মুহূর্তে তাড়ানোটা জাতিকে জালিয়াতির কলঙ্ক থেকে বাঁচাবে।
যে এসএমএসটি দিয়ে এই লেখার সূচনা করেছিলাম তাতে আবার ফিরে আসি। এসএমএসটি পাবার পর আমি আমার পাসপোর্টটা চেক করে দেখলাম। মজার বিষয় হলো এসএমএসের পাসপোর্ট নাম্বারটির সঙ্গে আমার পাসপোর্ট নাম্বারের কোন মিল নেই। আমার পাসপোর্ট নাম্বারটি হলো এএ৬৭৭৭১৪০ ইস্যু করার তারিখ ০২ মে ২০১১। পাসপোর্টটি ঢাকা থেকে ইস্যু করা হয়েছে। আরও মজার বিষয় হলো, এসএমএস পাবার পর আমি আমাদের আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করে যখন তাদের বিষয়টি জানাতে একটি পত্র দিয়ে লোক পাঠালাম তখন মাননীয় উপ পরিচালক মহোদয় আমার চিঠি গ্রহণ না করে পত্রবাহককে তার অফিস ঘর থেকে বের করে দিলেন। আমি আদৌ জানি না, আমাদের পাসপোর্ট অফিসে কোন্ ভূত হাজির হয়েছে। এই ভূত কিভাবে তাড়ানো যাবে- আমি জানি না।
ঢাকা, ১০ আগস্ট ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান- সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net
No comments