এরপর কি লোকটি ?

বয়সে তিনি মাইকেল ফেলপস চেয়ে বছর খানেকের বড়। কিন্তু সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ানের খাতায় নাম লিখিয়ে ফেলপস যেখানে ‘লন্ডন মিশন’ শেষ করে বিদায়ের ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে রায়ান লোকটির দৃষ্টি চার বছর পরের ২০১৬ অলিম্পিকে! রিও ডি জেনিরোর সাঁতারপুলেও তুলতে চান ঝড়।


কারণটাও পরিষ্কার। ক্যারিয়ারের সেরা সাফল্যের দেখা লোকটি পেলেন ২৮ বছর বয়সে। লন্ডনে পাঁচ-পাঁচটি পদক গলায় ঝুলিয়ে ফেল্পেসর ছায়া থেকে বেরোলেন এবারই। এই খ্যাতিকে অনুপ্রেরণার উৎস বানিয়ে জ্বলে উঠতে চান ২০১৬ অলিম্পিকে। কিন্তু চার বছর পর লোকটির বয়স হবে ৩২। তবে মনে রাখতে হবে, সাঁতারে লোকটি নামের ফুলটি কলি থেকে প্রস্ফুটিতও হয়েছে একটু দেরিতেই।
ফেলপস যেখানে ১৫ বছর বয়সেই জায়গা করে নেন ২০০০ সিডনি অলিম্পিকের যুক্তরাষ্ট্র দলে, সেখানে লোকিটর আন্তর্জাতিক সাঁতারে অভিষেক ২০০৪ সালে। বয়স তত দিনে কুড়ির কোটা ছুঁয়ে ফেলেছে। কুড়ি পেরিয়ে দলে ঢুকেও সর্বদাই থাকতে হয়েছে বন্ধু ফেল্পেসর আড়ালে। এথেন্সে নিজের প্রথম অলিম্পিকে জেতেন একটি সোনা, একটি রুপা। কিন্তু ফেল্পেসর ছয় সোনা, দুই ব্রোঞ্জের পাশে তা ছিল বড় বেশি মলিন। ২০০৮ বেইজিংয়েও একই অবস্থা। ফেল্পেসর আট সোনার অবিস্মরণীয় কীর্তির পাশে কে-ই বা দুই সোনা, দুই ব্রোঞ্জজয়ী সাঁতারুকে নিয়ে মাতামাতি করে! মাতামাতি না হোক, তবে নিজের প্রতিভার প্রমাণ ঠিকই দিয়ে আসছিলেন লোকিট।
এবার তো হয়ে গেলেন সাঁতারের অন্যতম বড় তারকাই। অবশ্য এবারও তাঁকে চার সোনা, দুই রুপা জেতা ফেল্পেসর পেছনেই থাকতে হয়েছে। তবে দুই সোনা, দুই রুপা, এক ব্রোঞ্জ—এক আসরে পাঁচটি পদকজয়ীকে সাধারণের কাতারে রাখার উপায় নেই। নিজেকে মেলে ধরতে পারা লোকিটও বুঝতে পেরেছেন, সাঁতারকে দেওয়ার এখনো বাকি আছে তাঁর।
তা ছাড়া যে তারকার মর্যাদাটা লন্ডন অলিম্পিক দিয়ে গেল তাঁকে, সাঁতার ছেড়ে তা ম্লান করে তোলারও কোনো মানে হয় না। তারকার অন্য জগৎটিও যে দেখতে শুরু করেছেন তিনি। পণ্যদূত করতে বড় বড় কোম্পানি পিছু নিয়েছে তাঁর। গত সপ্তাহেই প্রক্টর অ্যান্ড গ্যাম্বলের সাজানো মঞ্চে দেখা গেছে তাঁকে। দেখা গেছে জিলেটের নতুন বিজ্ঞাপনে শ্যুটিং করতে। বহুজাতিক এই দুটি কোম্পানি ছাড়াও আরও কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ লোকিট, যার মধ্যে আছে স্পিডো, রালফ লরেন, নিসান ও এটিঅ্যান্ডটি।
বছর খানেক আগেও যারা তাঁকে নিয়ে ভাবেনি, তাদের মুখেও এখন লোকিট-স্তুতি। টিভি চ্যানেল ও পত্রপত্রিকার সঙ্গে কথা বলতে হচ্ছে নিয়মিতই। ডাক আসছে বিভিন্ন ‘রিয়েলিটি শো’তে। ড্যান্সিং উইথ দ্য স্টারস—শোতেও অংশ নেওয়ার ইচ্ছা আছে তাঁর।
নাচের সঙ্গী হিসেবে চাইবেন কাকে? প্রশ্নটার উত্তর একটু রহস্য রেখেই দিলেন রায়ান লোকিট। জানালেন, সঙ্গী হিসেবে যে কেউই ভালো হবেন, কারণ ‘ সব মহিলা ড্যান্সারই সুন্দরী!’ নাচের সঙ্গী হিসেবে হয়তো সুনির্দিষ্ট কোনো পছন্দ নেই লোকিটর, একজন সুন্দরী মেয়ে হলেই চলে। কিন্তু প্রসঙ্গ যদি হয় প্রতিদ্বন্দ্বিতার, তবে লোকিটর পছন্দ আছে। তিনি মাইকেল ফেল্প্স। যিনি লন্ডনে অলিম্পিক পদকের সংখ্যাটাকে ২২-এ উন্নীত করেছেন। লোকিট আশাও করেন, তাঁর অনুশীলন বন্ধু, সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ফেল্প্স একদিন ঠিকই পেশাদার সাঁতারপুলে ফিরে আসবেন। লোকিটর ভাষায়, ‘ওর সিদ্ধান্তটা যৌক্তিক বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে। ওর একটা বিরতি প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। তবে আমি মোটেও অবাক হব না, যদি কিছুদিন পর ও ফিরে আসে।’ কিন্তু যদি না ফেরে? ‘যদি ও তা-ই করে, তাহলে আমি ওকে মিস করব। বড় প্রতিযোগিতায় ওকে না দেখাটা হবে নতুন এক অভিজ্ঞতা। তা ছাড়া আমি সেরাদের সঙ্গেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পছন্দ করি’—বলেছেন সব মিলিয়ে ১১টি অলিম্পিক পদক জেতা সাঁতারু।
তবে ফেল্প্স ফিরুন না ফিরুন, সাঁতার নিয়ে ভাবার সময় এটা নয়। সময় এখন পূর্ণ বিশ্রামের, শরীর ও মন দুটোর জন্যই। সময় এখন উপভোগের। পরিপূর্ণ তারকা হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর যা এখন চুটিয়ে উপভোগ করছেন লোকিট।
বিদেশি পত্রিকা অবলম্বনে
খলিলুর রহমান

No comments

Powered by Blogger.