বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা এখন বাংলাদেশে বেশি- এ বছর বজ্রপাতের তীব্রতা বেশি থাকতে পারে by নিখিল মানখিন
বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বে বাংলাদেশেই বেশি। বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে প্রতিবছর গড়ে দেড় শ’ থেকে দু’শ‘ জনের মৃত্যু ঘটে বজ্রপাতে। বেসরকারী হিসাবে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে দাবি করেছে বিভিন্ন সূত্র। চলতি বছর মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে দেড় শ’ ছাড়িয়ে
গেছে। শুক্রবার রাতেও সুনামগঞ্জে মসজিদের ইমামসহ তেরোজনের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বাংলদেশে বজ্রপাত নিয়ে কোন গবেষণা ও তা থেকে মৃত্যুরোধের কার্যকর জাতীয় কোন কার্যক্রম নেই। সীমিত পরিসরে বজ্রপাত সম্পর্কিত পুস্তিকা ও লিফলেট প্রকাশ এবং সেমিনার আয়োজন করার মধ্য দিয়েই সরকারী দায়িত্ব পালন সীমাবদ্ধ রয়েছে।
এপ্রিল থেকেই বাংলাদেশে বজ্রপাত শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরে বজ্রপাতের তীব্রতা বেশি থাকতে পারে। গত এপ্রিল মাসেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকণ্ঠে। তারপরই বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। বাড়তে থাকে বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু চলতি বছর বজ্রপাতে ধ্বংসাত্মক মাত্রা, বিশেষ করে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক হারের অনেক বেশি। বজ্রপাতে গত কয়েক মাসে মানুষের মৃত্যু গত বছরের পরিসংখ্যানকেও পেছনে ফেলে দিচ্ছে। এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বায়ুম-লে অস্থিরতা সৃষ্টি। শীত মৌসুমে দেশে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি। শীত পরবর্তী সময়ে ছিল না স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক অবস্থা বায়ুম-লে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আর বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ঘূর্ণিঝড়ের মতোই ভয়ঙ্কর হতে পারে বজ্রপাত। একটি ঘূর্ণিঝড়ে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে, বজ্রপাতের কারণে তার চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটতে পারে। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে তা প্রমাণ করে। ঘূর্ণিঝড়ে একই সময়ে একই জায়গায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে। আর বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্ষতির শিকার হয়। তাই বজ্রপাতের ভয়াবহতা খুব বেশি মানুষের চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন কোন গবেষণা নেই। তবে ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় এ বিষয়টি নিয়ে বড় বড় গবেষণা চলছে। ২০০৮ সালে সুইডেনের উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত ২৯তম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন লাইটিং প্রটেকশন’ শীর্ষক সম্মেলনে তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলিন প্রাইস তাঁর ‘থান্ডারস্টর্ম, লাইটিং এ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বজ্রপাতের। বজ্রপাতে একদিকে যেমন বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বেড়েছে পরিবেশে বজ্রপাতের হার ও তীব্রতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বজ্রপাত। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাপ্তাহিক ও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে বজ্রঝড়।
বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার জানান, বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। মৌসুমী বায়ু প্রবেশের আগে বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। সাধারণত মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত চলে এ ঝড়। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বেশি বজ্রপাত ঘটে এবং মানুষ বেশি মারা যায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানে বলা হয়, গ্রীষ্মকালে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বাতাস গরম হয়ে ওপরে উঠতে থাকে। জলীয়বাষ্পও ওপরে ওঠে আর মেঘের ভেতর যত বেশি পরিমাণে জলীয়বাষ্প ঢুকবে তত বেশি উষ্ণ মেঘের সৃষ্টি হবে। এ সময় ‘আপ ড্রাফ’ এবং ‘ডাউন ড্রাফ’ বাতাসে চলতে থাকে। একে বলা হয় বজ্রমেঘ। মেঘের ওপরের অংশে পজিটিভ এবং নিচের ও মধ্য অংশে নেগেটিভ বিদ্যুত তৈরি হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘের ভেতরের বিদ্যুত আধারে দূরত্ব বেড়ে গেলে প্রকৃতির নিয়মে ভারসাম্য আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ থেকে বিদ্যুত আদান-প্রদান শুরু হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু হলে বজ্রের সৃষ্টি হয়। আর তখনই বজ্রপাত হতে থাকে। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ একত্রে হলে বিদ্যুত সঞ্চালনের কারণে বাতাসের তাপমাত্রা ২০ হাজার ডিগ্রী থেকে ৩০ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেঘের ভেতর থাকা নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের সম্প্রসারণ ঘটে। গ্যাসের কম্পনের কারণে মেঘের গর্জন সৃষ্টি হয়। বজ্র সৃষ্টি হয়ে তা পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল বলে জানান ড. সমন্দ্রে কর্মকার। বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাও খুবই কঠিন। তবে সতর্ক হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যেতে পারে বলে তিনি জানান। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে। গুড়ুগুড়ু মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। গাড়ির ভেতরও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খাম্বার পাশে দাঁড়ানো মোটেই নিরাপদ নয়। ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে তিনি জানান। পানির সংস্পর্শে মোটেই যাওয়া যাবে না। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে কালবৈশাখী দুপুরের পরে হয়ে থাকে। এরপর মে’র শেষ পর্যন্ত সকালেও হয়ে থাকে। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর আকাশে মেঘের গুড়ুগুড়ু গর্জন শুরু হলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে বিদ্যুত চমকালে বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা কম থাকে। আর বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে জানান ড. কর্মকার। তিনি আরও জানান, বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে। সোজাসুজি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। তিনি জানান, বজ্রপাতের সম্ভাবনা আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘নাউকাস্টনিং’ পদ্ধতিতে মিডিয়াতে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে। এতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখলে কখনও খোলা মাঠ, পাহাড়ের চূড়া, সমুদ্রসৈকতে অবস্থান করবেন না। গাছের নিচে, বিদ্যুতের খুঁটি বা তারের নিচে, পুরনো-জীর্ণ বাড়ির নিচে অবস্থান করবেন না। চলন্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে অবস্থান করুন। কোন কর্ডযুক্ত ফোন ব্যবহার করবেন না। মাটির সঙ্গে সংযুক্ত ধাতব পদার্থে হাত বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না। বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত পানির ফোয়ারায় গোসল করবেন না। মরা কিংবা পচন ধরা গাছ ও খুঁটি কেটে ফেলুন। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতের সব সুইচ বন্ধ রাখুন এবং দরজা-জানালা ভালমতো বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার।
এপ্রিল থেকেই বাংলাদেশে বজ্রপাত শুরু হয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি বছরে বজ্রপাতের তীব্রতা বেশি থাকতে পারে। গত এপ্রিল মাসেই এমন আশঙ্কা প্রকাশ করে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় দৈনিক জনকণ্ঠে। তারপরই বজ্রপাতে মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। বাড়তে থাকে বজ্রপাতে মৃত্যুর মিছিল, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত রয়েছে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবছর বজ্রপাতে অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু চলতি বছর বজ্রপাতে ধ্বংসাত্মক মাত্রা, বিশেষ করে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা স্বাভাবিক হারের অনেক বেশি। বজ্রপাতে গত কয়েক মাসে মানুষের মৃত্যু গত বছরের পরিসংখ্যানকেও পেছনে ফেলে দিচ্ছে। এর পেছনে নানা কারণ থাকতে পারে। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে বায়ুম-লে অস্থিরতা সৃষ্টি। শীত মৌসুমে দেশে প্রত্যাশিত বৃষ্টিপাত হয়নি। শীত পরবর্তী সময়ে ছিল না স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত। আবহাওয়ার এমন অস্বাভাবিক অবস্থা বায়ুম-লে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। আর বজ্রপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ঘূর্ণিঝড়ের মতোই ভয়ঙ্কর হতে পারে বজ্রপাত। একটি ঘূর্ণিঝড়ে যে সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটে, বজ্রপাতের কারণে তার চেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটতে পারে। গত ১০ বছরের পরিসংখ্যানে তা প্রমাণ করে। ঘূর্ণিঝড়ে একই সময়ে একই জায়গায় অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে। আর বজ্রপাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ক্ষতির শিকার হয়। তাই বজ্রপাতের ভয়াবহতা খুব বেশি মানুষের চোখে পড়ে না।
বাংলাদেশে বজ্রপাতের ওপর তেমন কোন গবেষণা নেই। তবে ইউরোপ, জাপান ও আমেরিকায় এ বিষয়টি নিয়ে বড় বড় গবেষণা চলছে। ২০০৮ সালে সুইডেনের উপাসনালয়ে অনুষ্ঠিত ২৯তম ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন লাইটিং প্রটেকশন’ শীর্ষক সম্মেলনে তেলআবিব বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক কলিন প্রাইস তাঁর ‘থান্ডারস্টর্ম, লাইটিং এ্যান্ড ক্লাইমেট চেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন। সেই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বায়ুদূষণ তথা পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বজ্রপাতের। বজ্রপাতে একদিকে যেমন বায়ুদূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি বেড়েছে পরিবেশে বজ্রপাতের হার ও তীব্রতা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, আবহাওয়া সম্পর্কিত দ্বিতীয় বৃহত্তম ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে বজ্রপাত। জনসংখ্যার ঘনত্ব বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। আবহাওয়া অধিদফতরের সাপ্তাহিক ও দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাস তালিকায় নতুন যুক্ত হয়েছে বজ্রঝড়।
বিশিষ্ট আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার জানান, বজ্রপাতের হাত থেকে বাঁচতে সচেতনতার বিকল্প নেই। মৌসুমী বায়ু প্রবেশের আগে বাংলাদেশে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। সাধারণত মার্চ থেকে শুরু করে মে পর্যন্ত চলে এ ঝড়। কালবৈশাখী ঝড়ের সময় বেশি বজ্রপাত ঘটে এবং মানুষ বেশি মারা যায়। আবহাওয়া বিজ্ঞানে বলা হয়, গ্রীষ্মকালে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বাতাস গরম হয়ে ওপরে উঠতে থাকে। জলীয়বাষ্পও ওপরে ওঠে আর মেঘের ভেতর যত বেশি পরিমাণে জলীয়বাষ্প ঢুকবে তত বেশি উষ্ণ মেঘের সৃষ্টি হবে। এ সময় ‘আপ ড্রাফ’ এবং ‘ডাউন ড্রাফ’ বাতাসে চলতে থাকে। একে বলা হয় বজ্রমেঘ। মেঘের ওপরের অংশে পজিটিভ এবং নিচের ও মধ্য অংশে নেগেটিভ বিদ্যুত তৈরি হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘের ভেতরের বিদ্যুত আধারে দূরত্ব বেড়ে গেলে প্রকৃতির নিয়মে ভারসাম্য আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ থেকে বিদ্যুত আদান-প্রদান শুরু হয়। পজিটিভ ও নেগেটিভ বিদ্যুত সঞ্চালন শুরু হলে বজ্রের সৃষ্টি হয়। আর তখনই বজ্রপাত হতে থাকে। পজিটিভ ও নেগেটিভ মেঘ একত্রে হলে বিদ্যুত সঞ্চালনের কারণে বাতাসের তাপমাত্রা ২০ হাজার ডিগ্রী থেকে ৩০ হাজার ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়ে থাকে। মেঘের ভেতর থাকা নাইট্রোজেন ও অক্সিজেন গ্যাসের সম্প্রসারণ ঘটে। গ্যাসের কম্পনের কারণে মেঘের গর্জন সৃষ্টি হয়। বজ্র সৃষ্টি হয়ে তা পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়ার প্রক্রিয়াটিও বেশ জটিল বলে জানান ড. সমন্দ্রে কর্মকার। বজ্রপাতে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচাও খুবই কঠিন। তবে সতর্ক হলে মৃত্যুর সংখ্যা কমানো যেতে পারে বলে তিনি জানান। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশে প্রবেশের আগ মুহূর্তে ঘন কালো মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে। গুড়ুগুড়ু মেঘের ডাক শুনলেই নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় বেশি নিরাপদ। গাড়ির ভেতরও আশ্রয় নেয়া যেতে পারে। গাছের নিচে, টেলিফোনের খুঁটির পাশে বা বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের খাম্বার পাশে দাঁড়ানো মোটেই নিরাপদ নয়। ফাঁকা মাঠের মধ্যে অবস্থান সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বলে তিনি জানান। পানির সংস্পর্শে মোটেই যাওয়া যাবে না। মার্চ থেকে এপ্রিল মাসে কালবৈশাখী দুপুরের পরে হয়ে থাকে। এরপর মে’র শেষ পর্যন্ত সকালেও হয়ে থাকে। পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম, উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর আকাশে মেঘের গুড়ুগুড়ু গর্জন শুরু হলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। পূর্ব, উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব আকাশে বিদ্যুত চমকালে বজ্রপাতে মৃত্যুর আশঙ্কা কম থাকে। আর বৃষ্টি ও মেঘের গর্জন না থামা পর্যন্ত নিরাপদে থাকা বাঞ্ছনীয় বলে জানান ড. কর্মকার। তিনি আরও জানান, বজ্রপাতের আওয়াজ শোনার আগেই তা মাটি স্পর্শ করে। সোজাসুজি মানুষের গায়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত। বজ্রপাতে আহত ব্যক্তিকে স্পর্শ করাও বিপজ্জনক। শুকনো কাঠ দিয়ে ধাক্কা দিতে হবে। তিনি জানান, বজ্রপাতের সম্ভাবনা আবহাওয়া বিভাগের রাডারে ধরা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘নাউকাস্টনিং’ পদ্ধতিতে মিডিয়াতে প্রচার করতে হবে, যাতে মানুষ নিরাপদ স্থানে যেতে পারে। এতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুহার কমানো সম্ভব। ঝড়ের পূর্বাভাস দেখলে কখনও খোলা মাঠ, পাহাড়ের চূড়া, সমুদ্রসৈকতে অবস্থান করবেন না। গাছের নিচে, বিদ্যুতের খুঁটি বা তারের নিচে, পুরনো-জীর্ণ বাড়ির নিচে অবস্থান করবেন না। চলন্ত অবস্থায় রাস্তার পাশে গাড়ি থামিয়ে গাড়িতে অবস্থান করুন। কোন কর্ডযুক্ত ফোন ব্যবহার করবেন না। মাটির সঙ্গে সংযুক্ত ধাতব পদার্থে হাত বা হেলান দিয়ে দাঁড়াবেন না। বৈদ্যুতিক সংযোগযুক্ত পানির ফোয়ারায় গোসল করবেন না। মরা কিংবা পচন ধরা গাছ ও খুঁটি কেটে ফেলুন। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলে বিদ্যুতের সব সুইচ বন্ধ রাখুন এবং দরজা-জানালা ভালমতো বন্ধ রাখার পরামর্শ দেন আবহাওয়াবিদ ড. সমরেন্দ্র কর্মকার।
No comments