আল বিদা মাহে রমজান by অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক
আজ মাহে রমজানের ২৩তম দিবস। একে একে শেষ হতে চলেছে এবাদত বন্দেগি ও ধর্মীয় আবেগ সঞ্চারের শ্রেষ্ঠ মাসটি। এ মাস যেমন কৃচ্ছ্র সাধন ও ত্যাগতিতিক্ষা শিক্ষার মাস, তেমনি অনেক মুসলিম মনীষী রয়েছেন যাঁরা ইসলামের এ বিকাশের ক্ষেত্রে বিশাল ত্যাগতিতিক্ষা ও অবদান রেখে গেছেন।
এ মাহে রমজানে তাঁদের জীবনকথা সিয়াম সাধকদের মনে আবে হায়াৎ সঞ্চার করে। তেমনি এক দরদী মনীষী হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু। আজকের দিন ১২ আগস্ট (মতান্তর ২৩ আগস্ট) ৬৩৪ সালে ঠিক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স)-এর মতো ৬৩ বছর বয়সে উম্মতের সবচাইতে মর্যাদাপূর্ণ ব্যক্তিত্ব হযরত আবু বকর (রা) ওফাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। মহানবীর (স) সুখ-দুঃখের এ মহান সাথী সকল যুগের মুসলমানদের জন্য আদর্শ হয়ে রয়েছেন। আঃ-হযরত (স) স্বয়ং তার সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন : ‘বন্ধুত্ব ও অর্থ সাহায্যের দিক দিয়ে আমি আবু বকরের নিকট হতে সর্বাপেক্ষা অধিক ইহসান প্রাপ্ত হয়েছি।’-(বুখারী)।
এ মহান সাহাবীর তিরোধান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মাহমুদ আল আক্কাদ বলেন, ‘পৃথিবী হতে এমন একটি জীবনের অবসান হলো, যা শিষ্টাচার ও ভদ্রতার ইতিহাসে অতুলনীয় ছিল।’-(ইঃ বিশ্ব কোষ ২/১২৫)। আমাদের উচিত প্রিয় নবীর (স) এ প্রিয় সাহাবী সম্পর্কে সম্যক অবগত হয়ে আমাদের ইমান ও ইশ্ককে মজবুত করা, জ্ঞান ও উপলব্ধির ভা-ারকে সমৃদ্ধ করা। তাঁর পারিবারিক নাম আবদুল্লাহ, তবে আবু বকর উপনামেই তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। পিতা আবু কুহাফা ওসমান। পিতা/মাতা উভয়ে ছিলেন মহানবীর (স) সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত। আবু বকর (রা)কে ‘আতিক’ নামেও স্মরণ করা হতো। ‘আতিক’ অর্থ সৌন্দের্য্যরে অধিকারী, তিনি প্রথম জীবন হতেই রুচিশীল এবং সত্যনিষ্ঠ ছিলেন। এজন্য তাঁকে আতিক বলা হতো (আর ইসাবা)। স্বয়ং আঃ-হযরত (স) এ নামের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেনÑ ‘আবু বকর জাহান্নাম হতে চিরমুক্ত।’-(তিরমিজি ২/২১৪)। পরবর্তীতে মহানবী তাঁকে ‘সিদ্দিক’ উপাধি দান করেন। এর অর্থ সত্যবাদী এবং সত্যের স্বীকৃতিদানকারী।
সম্পর্কের দিক দিয়ে আবু বকর (রা) রাসুলুল্লাহ (স)-এর চাচাত ভাই। (ইঃ বিশ্বকোষ ২/১২১)। তিনি রাসুল (স)-এর আড়াই বছরের ছোট। জন্ম হিযরতের ৫০ বছর ৬ মাস পূর্বে। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আবু বকর প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। নবুয়াতপ্রাপ্তির পূর্বেই রাসুলের (স) সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। স্বভাবচরিত্রের সাদৃশ্যের ফলে তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (স) সকালে এবং বিকালে আবু বকরের গৃহে অবশ্যই গমন করতেন। ইসলাম গ্রহণকালীন সময়ে তিনি চল্লিশ হাজার দিরহাম পুঁজিসম্পন্ন একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি জাহেলি যুগেও মদ্যপান পরিহার করে চলতেন। ইসলাম গ্রহণের পর ধর্মের জন্য তিনি তার ধনসম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং জনবল সমস্তই উৎসর্গ করেন। তিনি কাফির শ্রেণীর হাতে বহুবার নির্যাতনেরও শিকার হন অন্যান্য মজলুম সাহাবার মতো।-(বুখারী)। মক্কাবাসী কুফফারদের হাতে মজলুম মুসলমানগণ যখন ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তখন আঃ-হযরত তাদের হিযরত বা দেশত্যাগে অনুমতি দেন। এ সূত্র ধরে আবু বকর যখন দেশ ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করেন তখন প্রিয় নবী বলেনÑ তুমি আপাতত ধৈর্যধারণ কর, কেননা আশা করি আমিও হিসরতের অনুমতি লাভ করব।’ অতঃপর রাসুলে কারীম (স) হিযরতের আদেশ লাভকালে আবু বকরকে তাঁর সফরসঙ্গী মনোনীত করেন। পথিমধ্যে সাওর গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছিল। এটিই ছিল আবু বকরের সবচেয়ে গৌরবের দিন এবং তামাম উম্মতের জন্য নবী প্রেমের দৃষ্টান্ত অনুভবের বিরল মুহূর্ত। সেদিন সমস্ত কাফির এ দু’জনকে হত্যার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছিল। কিন্তু তাঁরা এক আল্লাহর ওপর ভরসা করে আশ্রয় নেন একটি গুহায়। পরিশ্রান্ত নবীজী কোন এক ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আবু বকরকে ঠেস দিয়ে। তখন এক বিষাক্ত সাপ দংশন করলেও তিনি মহানবীর ঘুম ভাঙ্গাননি। তাঁর কাছে বিষের যন্ত্রণা ও জীবন থেকে মহানবীর বিশ্রাম অগ্রাধিকার পেয়েছিল। আল্লাহতায়ালা এ গুহা জীবনকে কেন্দ্র করে আল কোরানে ‘দুই জনের মধ্যে দ্বিতীয়’ (৯:৪০) আখ্যায় হযরত আবু বকরের নাম অমর করে আত্মত্যাগী এই মহান ভক্তকে পুরস্কৃত করেন। উম্মতের মধ্যে আবু বকরের বিশেষত্ব আরও এই, তার কন্যা আয়িশা (রা) ছিলেন আল্লাহর রাসুলের পতœী। তিনি সকল যুদ্ধে মহানবীর (স) সঙ্গে ছিলেন এবং পাশেই অবস্থান করতেন। নাজুক এবং বিপজ্জনক মুহূর্তেও তিনি অটল থাকতেন, কোন অবস্থাতেই সাহস হারাতেন না। হযরতের (স) ওফাতের পর তিনি সর্বসম্মতিক্রমে খলিফাতুর রাসুল বা রাসুলের (স) খলিফা উপাধি ধারণ করেন এবং ২ বছর ৩ মাস ১১ দিন খিলাফত পরিচালনা করেন।
সিয়াম সাধনা ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মাঝে এ ধরনের চরিত্র ও নেতৃত্ব সৃষ্টি করুন।
এ মহান সাহাবীর তিরোধান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মাহমুদ আল আক্কাদ বলেন, ‘পৃথিবী হতে এমন একটি জীবনের অবসান হলো, যা শিষ্টাচার ও ভদ্রতার ইতিহাসে অতুলনীয় ছিল।’-(ইঃ বিশ্ব কোষ ২/১২৫)। আমাদের উচিত প্রিয় নবীর (স) এ প্রিয় সাহাবী সম্পর্কে সম্যক অবগত হয়ে আমাদের ইমান ও ইশ্ককে মজবুত করা, জ্ঞান ও উপলব্ধির ভা-ারকে সমৃদ্ধ করা। তাঁর পারিবারিক নাম আবদুল্লাহ, তবে আবু বকর উপনামেই তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন। পিতা আবু কুহাফা ওসমান। পিতা/মাতা উভয়ে ছিলেন মহানবীর (স) সাহাবীর অন্তর্ভুক্ত। আবু বকর (রা)কে ‘আতিক’ নামেও স্মরণ করা হতো। ‘আতিক’ অর্থ সৌন্দের্য্যরে অধিকারী, তিনি প্রথম জীবন হতেই রুচিশীল এবং সত্যনিষ্ঠ ছিলেন। এজন্য তাঁকে আতিক বলা হতো (আর ইসাবা)। স্বয়ং আঃ-হযরত (স) এ নামের ব্যাখ্যা সম্পর্কে বলেনÑ ‘আবু বকর জাহান্নাম হতে চিরমুক্ত।’-(তিরমিজি ২/২১৪)। পরবর্তীতে মহানবী তাঁকে ‘সিদ্দিক’ উপাধি দান করেন। এর অর্থ সত্যবাদী এবং সত্যের স্বীকৃতিদানকারী।
সম্পর্কের দিক দিয়ে আবু বকর (রা) রাসুলুল্লাহ (স)-এর চাচাত ভাই। (ইঃ বিশ্বকোষ ২/১২১)। তিনি রাসুল (স)-এর আড়াই বছরের ছোট। জন্ম হিযরতের ৫০ বছর ৬ মাস পূর্বে। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে আবু বকর প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী। নবুয়াতপ্রাপ্তির পূর্বেই রাসুলের (স) সাথে তাঁর সুসম্পর্ক ছিল। স্বভাবচরিত্রের সাদৃশ্যের ফলে তাঁদের পারস্পরিক সম্পর্ক এত গভীর ছিল যে, হযরত মুহাম্মদ (স) সকালে এবং বিকালে আবু বকরের গৃহে অবশ্যই গমন করতেন। ইসলাম গ্রহণকালীন সময়ে তিনি চল্লিশ হাজার দিরহাম পুঁজিসম্পন্ন একজন ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি জাহেলি যুগেও মদ্যপান পরিহার করে চলতেন। ইসলাম গ্রহণের পর ধর্মের জন্য তিনি তার ধনসম্পদ, প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং জনবল সমস্তই উৎসর্গ করেন। তিনি কাফির শ্রেণীর হাতে বহুবার নির্যাতনেরও শিকার হন অন্যান্য মজলুম সাহাবার মতো।-(বুখারী)। মক্কাবাসী কুফফারদের হাতে মজলুম মুসলমানগণ যখন ব্যাপকভাবে নির্যাতিত হচ্ছে তখন আঃ-হযরত তাদের হিযরত বা দেশত্যাগে অনুমতি দেন। এ সূত্র ধরে আবু বকর যখন দেশ ত্যাগের অনুমতি প্রার্থনা করেন তখন প্রিয় নবী বলেনÑ তুমি আপাতত ধৈর্যধারণ কর, কেননা আশা করি আমিও হিসরতের অনুমতি লাভ করব।’ অতঃপর রাসুলে কারীম (স) হিযরতের আদেশ লাভকালে আবু বকরকে তাঁর সফরসঙ্গী মনোনীত করেন। পথিমধ্যে সাওর গুহায় আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়েছিল। এটিই ছিল আবু বকরের সবচেয়ে গৌরবের দিন এবং তামাম উম্মতের জন্য নবী প্রেমের দৃষ্টান্ত অনুভবের বিরল মুহূর্ত। সেদিন সমস্ত কাফির এ দু’জনকে হত্যার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজে ফিরছিল। কিন্তু তাঁরা এক আল্লাহর ওপর ভরসা করে আশ্রয় নেন একটি গুহায়। পরিশ্রান্ত নবীজী কোন এক ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন আবু বকরকে ঠেস দিয়ে। তখন এক বিষাক্ত সাপ দংশন করলেও তিনি মহানবীর ঘুম ভাঙ্গাননি। তাঁর কাছে বিষের যন্ত্রণা ও জীবন থেকে মহানবীর বিশ্রাম অগ্রাধিকার পেয়েছিল। আল্লাহতায়ালা এ গুহা জীবনকে কেন্দ্র করে আল কোরানে ‘দুই জনের মধ্যে দ্বিতীয়’ (৯:৪০) আখ্যায় হযরত আবু বকরের নাম অমর করে আত্মত্যাগী এই মহান ভক্তকে পুরস্কৃত করেন। উম্মতের মধ্যে আবু বকরের বিশেষত্ব আরও এই, তার কন্যা আয়িশা (রা) ছিলেন আল্লাহর রাসুলের পতœী। তিনি সকল যুদ্ধে মহানবীর (স) সঙ্গে ছিলেন এবং পাশেই অবস্থান করতেন। নাজুক এবং বিপজ্জনক মুহূর্তেও তিনি অটল থাকতেন, কোন অবস্থাতেই সাহস হারাতেন না। হযরতের (স) ওফাতের পর তিনি সর্বসম্মতিক্রমে খলিফাতুর রাসুল বা রাসুলের (স) খলিফা উপাধি ধারণ করেন এবং ২ বছর ৩ মাস ১১ দিন খিলাফত পরিচালনা করেন।
সিয়াম সাধনা ও ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুসরণের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের মাঝে এ ধরনের চরিত্র ও নেতৃত্ব সৃষ্টি করুন।
No comments