সাক্ষাৎকার- আইন পেশা বেকার সমস্যা দূরীকরণের কোনো উপায় নয় by খন্দকার মাহবুব হোসেন
নবনির্বাচিত সহসভাপতি, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তানজিম আল ইসলাম
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের কথা শোনা যায়। স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কী পদক্ষেপ নেবেন?
আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নানা অনিয়মের কথা শোনা যায়। স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কী পদক্ষেপ নেবেন?
বার কাউন্সিল হচ্ছে আইনজীবীদের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান। আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকা দরকার। কোনো রকম দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি থাকা উচিত নয়। আমি সম্প্রতি দেশের জেলা বারগুলোয় গিয়েছি। সব বারেই আইনজীবী তালিকাভুক্তির বিষয়ে ক্ষোভ রয়েছে। অনেক অভিযোগ করেছেন বারের নেতারা। আগে অব্যবস্থাপনার কারণে এ রকম অনিয়ম হয়েছে। বিষয়টিকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে চেষ্টা করব যেন আইনজীবী তালিকাভুক্তির বিষয়ে স্বচ্ছতা থাকে।
কয়েক বছর ধরে আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা নিয়মমাফিক হচ্ছে না। পরীক্ষা এবং ফল প্রকাশ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেছে। পরীক্ষা নিয়ে নানা অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে। বছরে একবার করে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে আইনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভও কাজ করছে। বিষয়টিতে নজর দেবেন কি?
গত কয়েক বছরে সবকিছুতেই এলোমেলো হয়ে গেছে। বার কাউন্সিলের নেতারা হয়তো অন্যান্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টিতে তাঁরা গুরুত্ব দেননি। আমিও শুনেছি, পরীক্ষা নিয়ে এবং পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বিষয়ে গরমিল হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিয়মমাফিক নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বিষয়টি খুব দ্রুত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেব।
দেশের সব আদালতপাড়ায় টাউট-দালালদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এমনকি ভুয়া আইনজীবী সেজেও সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে জেলা বার সমিতিগুলোর ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। বার কাউন্সিলের ভূমিকা কি থাকবে?
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দেশের জেলা বারগুলোর দায়িত্বশীল আইনজীবীদের নিয়ে টাউট বা দালালদের উৎপাত বন্ধে পদক্ষেপ নেব। প্রতিটি জেলা বার সমিতি কমিটি গঠন করে থাকে। কমিটিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, এ বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। অনেক সময় আইনজীবী সনদ ছাড়াই কারও কোট-গাউন পরে মামলা পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে বার সমিতিগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। আইনজীবীর সহকারী বা মুহরিদের সনদও বার কাউন্সিল দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকব।
আইন পেশার মান উন্নয়নে বার কাউন্সিলের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত?
দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ওপর যে ডিগ্রি দিচ্ছে, তা সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল তদারক করবে। প্রয়োজনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারীদের স্বীকৃতি দেবে কি না, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের সব ক্ষেত্রেই প্রবেশের জন্য বয়সসীমা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যদি বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া যায় যে নির্দিষ্ট একটি বয়সের পর আর কেউ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না, তাহলে দক্ষ আইনজীবী তৈরি হবে। তরুণেরা উৎসাহিত হবে। মনে রাখতে হবে, আইন পেশা বেকার সমস্যা দূরীকরণের কোনো উপায় নয়। এটি একটি সেবামূলক মহান পেশা। এ পেশার মূল্যায়নও সেভাবে হওয়া উচিত। আরেকটি বিষয়, তরুণ আইনজীবীদের অনেক হতাশার কথা শোনা যায়। আইন পেশা হচ্ছে ধৈর্যের পেশা। এখানে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে সময় দিতে হবে; সিনিয়রের কাছ থেকে কাজ শেখার প্রবণতা থাকতে হবে। প্রথমেই আয়-রোজগারের দিকে প্রাধান্য দিলে হবে না। ধৈর্য ও সততা থাকলে আইন পেশায় সাফল্য আসতে বাধ্য। প্রসঙ্গত বলে রাখি, একজন আইনজীবী যখন পেশায় নিয়োজিত থাকেন, তখন মোটামুটি সচ্ছল থাকেন। কিন্তু কোনো কারণে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে তখন খুব মানবেতর জীবন-যাপন করেন। বর্তমানে যে তহবিল রয়েছে আইনজীবীদের, তা যথেষ্ট নয়। সরকারকে এ খাতে অনুদান দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সরকারকে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
বার কাউন্সিলের ট্রাইব্যুনালগুলো কতটা কার্যকর রয়েছে? একজন সাধারণ বিচারপ্রার্থী কী করে এখানে অভিযোগ জানাবে?
বার কাউন্সিলে বর্তমানে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে কোনো ভুক্তভোগী দায়ী আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটি এসব অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে, ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারকাজ ধীরগতিতে চলছে। অনেক মামলার জট পড়ে আছে। বিচার যেন দ্রুতগতিতে হয়, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
কয়েক বছর ধরে আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষা নিয়মমাফিক হচ্ছে না। পরীক্ষা এবং ফল প্রকাশ নিয়ে দীর্ঘসূত্রতা দেখা গেছে। পরীক্ষা নিয়ে নানা অরাজকতা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগও রয়েছে। বছরে একবার করে পরীক্ষা নেওয়ার কারণে আইনের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভও কাজ করছে। বিষয়টিতে নজর দেবেন কি?
গত কয়েক বছরে সবকিছুতেই এলোমেলো হয়ে গেছে। বার কাউন্সিলের নেতারা হয়তো অন্যান্য কাজে ব্যস্ত ছিলেন। বিষয়টিতে তাঁরা গুরুত্ব দেননি। আমিও শুনেছি, পরীক্ষা নিয়ে এবং পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের বিষয়ে গরমিল হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিয়মমাফিক নির্দিষ্ট সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। বিষয়টি খুব দ্রুত সমাধানের জন্য পদক্ষেপ নেব।
দেশের সব আদালতপাড়ায় টাউট-দালালদের দৌরাত্ম্য দেখা যায়। এমনকি ভুয়া আইনজীবী সেজেও সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করার ঘটনা ঘটছে। এ বিষয়ে জেলা বার সমিতিগুলোর ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। বার কাউন্সিলের ভূমিকা কি থাকবে?
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে দেশের জেলা বারগুলোর দায়িত্বশীল আইনজীবীদের নিয়ে টাউট বা দালালদের উৎপাত বন্ধে পদক্ষেপ নেব। প্রতিটি জেলা বার সমিতি কমিটি গঠন করে থাকে। কমিটিগুলো ঠিকমতো কাজ করছে কি না, এ বিষয়ে তদারকির ব্যবস্থা করা হবে। অনেক সময় আইনজীবী সনদ ছাড়াই কারও কোট-গাউন পরে মামলা পরিচালনা করা হয়। এ বিষয়ে বার সমিতিগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। আইনজীবীর সহকারী বা মুহরিদের সনদও বার কাউন্সিল দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রেও সতর্ক থাকব।
আইন পেশার মান উন্নয়নে বার কাউন্সিলের কোনো ভূমিকা থাকা উচিত?
দেশের কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ওপর যে ডিগ্রি দিচ্ছে, তা সন্তোষজনক নয়। এ বিষয়ে বার কাউন্সিল তদারক করবে। প্রয়োজনে এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিধারীদের স্বীকৃতি দেবে কি না, এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের সব ক্ষেত্রেই প্রবেশের জন্য বয়সসীমা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যদি বয়সসীমা বেঁধে দেওয়া যায় যে নির্দিষ্ট একটি বয়সের পর আর কেউ আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারবে না, তাহলে দক্ষ আইনজীবী তৈরি হবে। তরুণেরা উৎসাহিত হবে। মনে রাখতে হবে, আইন পেশা বেকার সমস্যা দূরীকরণের কোনো উপায় নয়। এটি একটি সেবামূলক মহান পেশা। এ পেশার মূল্যায়নও সেভাবে হওয়া উচিত। আরেকটি বিষয়, তরুণ আইনজীবীদের অনেক হতাশার কথা শোনা যায়। আইন পেশা হচ্ছে ধৈর্যের পেশা। এখানে প্রতিষ্ঠা পেতে হলে সময় দিতে হবে; সিনিয়রের কাছ থেকে কাজ শেখার প্রবণতা থাকতে হবে। প্রথমেই আয়-রোজগারের দিকে প্রাধান্য দিলে হবে না। ধৈর্য ও সততা থাকলে আইন পেশায় সাফল্য আসতে বাধ্য। প্রসঙ্গত বলে রাখি, একজন আইনজীবী যখন পেশায় নিয়োজিত থাকেন, তখন মোটামুটি সচ্ছল থাকেন। কিন্তু কোনো কারণে কেউ অসুস্থ হয়ে গেলে বা কোনো দুর্ঘটনার শিকার হলে তখন খুব মানবেতর জীবন-যাপন করেন। বর্তমানে যে তহবিল রয়েছে আইনজীবীদের, তা যথেষ্ট নয়। সরকারকে এ খাতে অনুদান দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। সরকারকে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।
বার কাউন্সিলের ট্রাইব্যুনালগুলো কতটা কার্যকর রয়েছে? একজন সাধারণ বিচারপ্রার্থী কী করে এখানে অভিযোগ জানাবে?
বার কাউন্সিলে বর্তমানে পাঁচটি ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে কোনো ভুক্তভোগী দায়ী আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। এসব অভিযোগ যাচাই-বাছাই করার জন্য একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটি এসব অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে পাঠায়। বর্তমানে সমস্যা হচ্ছে, ট্রাইব্যুনালগুলোতে বিচারকাজ ধীরগতিতে চলছে। অনেক মামলার জট পড়ে আছে। বিচার যেন দ্রুতগতিতে হয়, সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
No comments