পশ্চিমা বিশ্লেষকদের দাবি-ইরানের কূটনীতি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভাজন বাড়াবে

সিরিয়ার পক্ষে ইরানের কূটনীতির পরিণতি ভালো হবে না। এর মাধ্যমে দামেস্কপন্থীদের সঙ্গে বাকি বিশ্বের মধ্যে 'বিভাজন আরো প্রকট' হবে। পশ্চিমা বিশ্লেষকরা মনে করেন, দামেস্ককে বাঁচাতে ইরানের উদ্যোগ সিরিয়া পরিস্থিতিকে আরো সংকটময় করে তুলবে।


নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন বিশ্লেষক বলেন, 'সিরিয়া প্রশ্নে ইরানের সমান্তরাল কূটনৈতিক প্রচেষ্টার উদ্যোগ তাদের মতো দেশগুলোর সঙ্গে বাকি বিশ্বের বিভাজনকে আরো প্রকট করে তুলবে। রাশিয়া ও ইরানের মতো দেশগুলো চায়, প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের গদি অক্ষত থাকুক। কিন্তু আসাদ তাঁর নিজের জনগণের বিরুদ্ধে সহিংস আচরণ করছে। এটাকে অন্যরা খুব স্বাভাবিকভাবেই সমর্থন করে না।'
চলতি সপ্তাহে সিরিয়াসহ এ অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে দুজন প্রতিনিধি পাঠিয়েছে ইরান। তাঁদের একজন দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামিনির ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাঈদ জলিলি। তিনি দামেস্ককে আশ্বস্ত করেছেন, 'ইরানের প্রতিরক্ষা-অক্ষের জন্য সিরিয়া গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তাই সেটিকে কখনোই ভেঙে পড়তে দেবে না তেহরান।'
পশ্চিমা বিশ্লেষকদের মতে, এই 'অক্ষ' আসলে শিয়া মতাবলম্বী শাসকদের তেহরান থেকে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত এক বলয়। এর নেতৃত্বে রয়েছে ইরান, আসাদ সরকার ও লেবাননের হিজবুল্লাহ। ইসরায়েলবিরোধিতার ক্ষেত্রে এরা সবাই এক।
এর পাশাপাশি সিরিয়ার সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার তেহরানে সমমনা দেশগুলোকে নিয়ে সম্মেলন করেছে ইরান। সেখান থেকে সিরিয়ার উভয় পক্ষকে অস্ত্রবিরতির পাশাপাশি আসাদ সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানানো হয়েছে। রাশিয়া, চীন, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, কিউবা, ইরাক ও ভেনিজুয়েলাসহ ২৯ দেশের প্রতিনিধিরা ওই সম্মেলনে অংশ নেন।
এর বিপরীত চিত্র হলো, সিরিয়ার বিরোধীদের সঙ্গে আলোচনার জন্য গতকাল শনিবার ইস্তাম্বুল গেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন। সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে তুর্কি নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তিনি। এই বিপরীতমুখী তৎপরতার পাশাপাশি পরস্পরবিরোধী অভিযোগ তো আছেই।
ইরানের অভিযোগ, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের মিত্ররা সিরিয়ার বিদ্রোহীদের অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করছে। বিপরীতে ইরানের মতো দেশগুলো আসাদকে রক্ষায় নানা উদ্যোগ নিচ্ছে।
সিরিয়ার সংকট সমাধানের প্রশ্নে এই বিপরীত কূটনীতি সিরিয়ায় শান্তি স্থাপনের ব্যাপারটিকে খণ্ডিত ও কমজোরি করছে বলেই মনে করেন বিশ্লেষকরা।
ইরানে ভিসাবিহীন প্রবেশাধিকার স্থগিত : জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) শীর্ষ সম্মেলনকে সামনে রেখে তুরস্কসহ ৯টি দেশের নাগরিকদের ভিসাবিহীন প্রবেশের সুবিধা সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ইরান। আগামী ২৬ থেকে ৩১ আগস্ট তেহরানে ন্যাম সম্মেলন হবে। এ জন্য কমপক্ষে চলতি মাসের শেষ পর্যন্ত তিন সপ্তাহের জন্য ভিসাবিহীন প্রবেশ স্থগিতের কথা জানিয়েছে ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা মেহের।
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার ইরানি দূতাবাস এ খবর নিশ্চিত করেছে। ভিসাবিহীন প্রবেশাধিকার সুবিধা পাওয়া বাকি দেশগুলো হলো আজারবাইজান, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, জর্জিয়া, মালয়েশিয়া, নিকারাগুয়া, সিরিয়া ও ভেনিজুয়েলা। সূত্র : এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.