সন্দ্বীপ, হাতিয়া রুটে ভোগান্তি by নিজাম সিদ্দিকী

ঈদের আর বেশি দিন বাকি নেই। অথচ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিওটিসি) এখানো সন্দ্বীপ-হাতিয়া রুটে একটি মাত্র জাহাজ দিয়েই যাত্রী পরিবহন করছে। এ রুটে চলাচলকারী চারটি অচল জাহাজের মধ্যে একটি মেরামতের অপেক্ষায় আছে।


সেটি চালু হলে কেবল দুটি জাহাজই হবে এই রুটের যাত্রীদের ভরসা। ফলে ঈদে বাড়ি যাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছে সন্দ্বীপ হাতিয়ার মানুষজন।
মেরামতের অপেক্ষায় থাকা জাহাজটি গত শনিবার পরীক্ষামূলকভাবে স্থানীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে চালু করা হয়েছে। কাল সোমবার সুইডেন থেকে মূল যন্ত্রাংশ আনার কথা রয়েছে। এই জাহাজে যন্ত্রাংশ সংযোজন করা হলে জাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে দুটিতে। কিন্তু এর পরও সংকট থেকেই যাবে। কারণ, দুটি জাহাজের যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা ৩০০ জন করে ৬০০ জন। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে এই রুটে প্রতিদিন এর প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী চলাচল করবে। জাহাজ-সংকট থাকায় এ বছরেও ঈদে সন্দ্বীপ-হাতিয়া রুটের যাত্রীদের জন্য কোনো স্পেশাল সার্ভিস চালু হচ্ছে না।
এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিওটিসির উপমহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল আলম আকন্দ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত দুটি জাহাজ দিয়ে সন্দ্বীপ-হাতিয়া রুটে যাত্রী পরিবহন করা হবে। এতে যাত্রীদের তেমন সমস্যা হবে না।’
বিআইডব্লিওটিসি সূত্রে জানা যায়, সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও বরিশাল নৌপথে চলাচলের জন্য চারটি জাহাজ রয়েছে। এগুলো হলো এমভি আলাউদ্দিন, এমভি বার আউলিয়া, এমভি আবদুল মতিন ও এমভি মনিরুল হক। এর মধ্যে এমভি আলাউদ্দিন নষ্ট হয় ২০০৯ সালে। এটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয়েছে নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ডে। এমভি বার আউলিয়া ২০১১ সালের ২২ জুন থেকে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে চট্টগ্রাম ডকইয়ার্ডে। সর্বশেষ এ বছরের ২২ জুলাই নষ্ট হয় এমভি মনিরুল হক। এটিই এখন মেরামতের অপেক্ষায় রয়েছে। বর্তমানে সচল রয়েছে কেবল এমভি আবদুল মতিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার এমভি মনিরুল হকের কিছু যন্ত্রাংশ সুইডেন থেকে পাঠানো হলেও মূল যন্ত্রপাতি এসে পৌঁছেনি। কাল সোমবার যন্ত্রপাতি এলে তা সংযোজন করা হবে। এতেও দিন দু-এক সময় গড়িয়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে গত শনিবার স্থানীয় কিছু যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়। এতে সফল হলে কাল থেকে জাহাজটি চলাচলের উপযোগী হবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিওটিসির এক কর্মকর্তা।
বর্তমানে সন্দ্বীপ-হাতিয়া রুটে শনি, সোম ও বুধবার সপ্তাহের এ তিন দিন জাহাজ চলাচল করছে। এমভি মতিন চালু হলে সপ্তাহে আরও দুই দিন (মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার) জাহাজ চলাচল করবে। পাশাপাশি উভয় দিক থেকে জাহাজ চলাচলের সুযোগ তৈরি হবে। এখন একটি জাহাজ সকাল নয়টায় চট্টগ্রামের সদরঘাট টার্মিনাল থেকে ছেড়ে যাওয়ার পর সন্দ্বীপ গিয়ে পৌঁছায় বেলা একটা-দেড়টা নাগাদ। সেখান থেকে হাতিয়া গিয়ে পৌঁছায় বিকেলে। পরদিন ওই জাহাজটিই আবার হাতিয়া-সন্দ্বীপ হয়ে চট্টগ্রাম ফিরে আসে।
সূত্র মতে, চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্ব্বীপ ও হাতিয়া রুটে প্রতিদিন চার-পাঁচ শ যাত্রী আসা-যাওয়া করে। ঈদের সময় এই সংখ্যা বেড়ে দেড়-দুই হাজারে গিয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু চার জাহাজের তিনটিই বিকল থাকায় এই রুটের যাত্রীরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। ঈদে নির্ঝঞ্জাটে বাড়ি ফেরা নিয়ে চিন্তিত তাঁরা।
গত বৃহস্পতিবার সদরঘাট টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ যাত্রীই হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ঈদে কোনো বিশেষ ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মোশাররফ হোসেন নামে এক যাত্রী বলেন, ‘গত বছরও আমরা একইরকম সমস্যায় পড়েছি। পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে বাড়ি যাওয়ার আশায় এখানে এলাম। এখন মনে হচ্ছে, এ অনিশ্চয়তার মধ্যে বাড়িতে না যাওয়াই ভালো হবে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিওটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সবগুলো জাহাজই যেখানে সচল নেই, সেখানে বিশেষ সার্ভিসের আশা করা যায় না। আমরা এখন নিয়মিত যাত্রী পরিবহন নিয়েই হিমশিম খাচ্ছি।’
উল্লেখ্য, গত বছর রমজানের ঈদে সন্দ্বীপ-হাতিয় রুটে চার জাহাজের মধ্যে কেবল এমভি মনিরুল হক যাত্রী পরিবহন করে। সেই জাহাজটিতেও তখন যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল।

No comments

Powered by Blogger.