জালিয়াত চক্রের ৫০ নারীর খোঁজে গোয়েন্দারা by মাসুদুল আলম তুষার
ওরা জাল টাকার নারী কারবারি। ঈদ মার্কেটে মোটা অঙ্কের জাল নোট ছড়িয়ে দিতে বিশেষ সিন্ডিকেটের হয়ে কাজ করে। ব্যস্ত মার্কেটের ক্রেতা হিসেবে জাল টাকার বিনিময়ে কেনে দামি পণ্য। এরপর তা কমিশন ভিত্তিতে সিন্ডিকেটের অন্যদের কাছে বিক্রি করে বুঝে নেয় আসল টাকা। নারী ক্রেতা হিসেবে মার্কেটগুলোতে তারা সন্দেহের বাইরে থাকে।
আর ধরা পড়লেও মেলে বিশেষ সহানুভূতি। রাজধানীতে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়া জাল নোটের নেপথ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৫০ নারী কুশীলবের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। বর্তমানে তাদের বিস্তারিত পরিচয় ও অপরাধের আলামতের সন্ধান চলছে। ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে ধরা পড়া জাল টাকার কারবারিদের জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে গুরুত্বপূর্ণ নানা তথ্য। যেসব নারী সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে, তারাও বর্ণনা দিয়েছে বিশেষ এ সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়ার আদ্যোপান্ত।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রসহ সর্বত্র নারীরা কিছুটা সহনশীল আচরণ পেয়ে থাকে। আর জাল টাকার কারবারিরা এ সুযোগকে কাজে লাগাতে নারীদের ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা নারীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা এ চক্রে জড়িয়ে পড়েছে স্বামী অথবা প্রেমিকের মাধ্যমে। জাল টাকার কারবারিদের ব্যাপারে যেসব তথ্য মিলেছে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নারী সদস্যদের ব্যাপারে পাওয়া তথ্যও গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারী সদস্যদের দলে ভেড়ানো হয় জাল টাকা বিতরণ, বিপণন ও বহনকাজের জন্য। কারণ বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে মহিলারা সন্দেহের বাইরে থাকে। তারা সহজেই নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে পাঁচ-সাত লাখ টাকা বহন করতে পারে। অভিজাত বেশভূষায় ঢুকে পড়ে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে। ঈদ মার্কেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্রেতাই মহিলা। অনেক দোকানদার মহিলাদের দেওয়া টাকা জাল মনে করেন না। এতে সহজেই পার পেয়ে যায় তারা। ব্যস্ততা দেখিয়ে জাল টাকা গছিয়ে দিয়েই ভিড়ের মধ্যে মিশে যায় তারা। মূলত ক্রেতাবেশে পণ্য কিনেই তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে জাল টাকা। জাল টাকার কারিগরদের ব্যাপারে অনুসন্ধানকালে গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীতে সক্রিয় অর্ধশতাধিক নারী সদস্যের তথ্য পেয়েছে। তাদের মধ্যে শিরিন আক্তার ও শাহনাজ বেগম নামের দুজনকে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, এক লাখ নকল টাকা তারা কেনে আসল ১০ হাজার টাকায়। ওই টাকা নিয়ে তারা ব্যস্ত মার্কেট কিংবা শপিং মলে ঢুকে পড়ে। দরকষাকষি করে পছন্দের পণ্য কেনে। পরে দোকানিকে টাকা দিয়েই দ্রুত ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়।
জাল টাকার কারবারি শিরিন আক্তারের স্বামী বাবু শেখ গত বছর কোরবানির ঈদের আগে জাল টাকাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাদের বাসা যাত্রাবাড়ীতে। স্বামীর অবর্তমানে শিরিন এ বিশেষ কারবারের হাল ধরে। গত ৪ আগস্ট পুলিশের হাতে দুজনই ধরা পড়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে শিরিন স্বীকার করেছে, সে আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ৫০ লাখ জাল রুপিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল পাকিস্তানি নাগরিক শামীম নাজ। সেও জানিয়েছিল জাল মুদ্রার কারবারে বিত্তশালী বেশ কয়েকজন নারীর জড়িয়ে থাকার তথ্য।
জাল টাকার কারবারে জড়িত আরেক নারী রোজিনার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। স্বামী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে ঢাকায় বসবাসকালে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ফারুক নামের এক যুবকের সঙ্গে। তার মাধ্যমেই জাল টাকার কারবারে নামে সে। মান্নান মারা গেছে। এখন দুই বছর বয়সী মেয়ে মিমকে কোলে নিয়ে সে জাল টাকাসহ ঘুরে বেড়ায় মার্কেটে মার্কেটে। জাল টাকার বিনিময়ে পণ্য কিনে তা কম দামে অন্যদের কাছে বিক্রি করে।
মিরপুরের শাহনাজের স্বামী রাজীব হোসেন। সে অজ্ঞান পার্টির সদস্য ছিল। একই সঙ্গে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অংশ নিত। ২০০৭ সালের ২ অক্টোবর পেট্রল পাম্পে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় রাজীব। তাকে মুক্ত করে আনতে শাহনাজ হাত মেলায় অপরাধী সিন্ডিকেটের সঙ্গে। জড়িয়ে পড়ে জাল টাকার ব্যবসায়ে। গত ৩১ মে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে শাহনাজ।
গত ২৬ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়া মরিয়ম বেগম ও তার স্বামী শহীদ পেশায় গার্মেন্টকর্মী। এ দম্পতি খুচরা বাজারের কাজও করত জাল টাকার বিনিময়ে। একপর্যায়ে ধরা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে তারা দ্রুত বাসা বদল করে ফের একই কাজ করত।
পুলিশের হাতে প্রায় এক কোটি টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার হওয়া সেলিমের স্ত্রী আফরোজা এ চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাকে ধরতে পুলিশ বেশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধরা পড়া রোজিনা, মর্জিনা ও শাহনাজ মূলত জাল টাকার পাইকারি বিক্রেতা। নানা কৌশলে অভাবী নারীদের তারা দলে ভেড়ায় এবং মোটা অঙ্কের লোভ দেখিয়ে জাল টাকার বিপণন ও বহনকাজে নিয়োগ দেয়। মরিয়ম খুচরা বিক্রেতা। দলনেত্রী শিরিনের কাছ থেকে নকল টাকা কিনে মার্কেট ও ফুটপাতে ঘুরে বেড়ায় সে। কমিশনের ভিত্তিতে সুযোগ বুঝে ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার নোট বাজারে চালিয়ে দেয়। রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে জাল টাকার এ রকম ২৫টি চক্র। প্রতিটি চক্রে ন্যূনতম চারজন করে নারী সদস্য রয়েছে। রোজিনা, মর্জিনা, শাহনাজ, মরিয়ম, শিরিন, নাজসহ কয়েকজনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। আরো প্রায় ৫০ জন নারীর বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মশিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রসহ সর্বত্র নারীরা কিছুটা সহনশীল আচরণ পেয়ে থাকে। আর জাল টাকার কারবারিরা এ সুযোগকে কাজে লাগাতে নারীদের ব্যবহার করছে। ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা নারীরা জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, তারা এ চক্রে জড়িয়ে পড়েছে স্বামী অথবা প্রেমিকের মাধ্যমে। জাল টাকার কারবারিদের ব্যাপারে যেসব তথ্য মিলেছে, তা পর্যালোচনা করা হচ্ছে। নারী সদস্যদের ব্যাপারে পাওয়া তথ্যও গুরুত্ব দিয়ে যাচাই করা হচ্ছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নারী সদস্যদের দলে ভেড়ানো হয় জাল টাকা বিতরণ, বিপণন ও বহনকাজের জন্য। কারণ বেশির ভাগ পরিস্থিতিতে মহিলারা সন্দেহের বাইরে থাকে। তারা সহজেই নিজের ভ্যানিটি ব্যাগে পাঁচ-সাত লাখ টাকা বহন করতে পারে। অভিজাত বেশভূষায় ঢুকে পড়ে বিভিন্ন মার্কেট ও শপিং মলে। ঈদ মার্কেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্রেতাই মহিলা। অনেক দোকানদার মহিলাদের দেওয়া টাকা জাল মনে করেন না। এতে সহজেই পার পেয়ে যায় তারা। ব্যস্ততা দেখিয়ে জাল টাকা গছিয়ে দিয়েই ভিড়ের মধ্যে মিশে যায় তারা। মূলত ক্রেতাবেশে পণ্য কিনেই তারা ছড়িয়ে দিচ্ছে জাল টাকা। জাল টাকার কারিগরদের ব্যাপারে অনুসন্ধানকালে গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীতে সক্রিয় অর্ধশতাধিক নারী সদস্যের তথ্য পেয়েছে। তাদের মধ্যে শিরিন আক্তার ও শাহনাজ বেগম নামের দুজনকে গ্রেপ্তারের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, এক লাখ নকল টাকা তারা কেনে আসল ১০ হাজার টাকায়। ওই টাকা নিয়ে তারা ব্যস্ত মার্কেট কিংবা শপিং মলে ঢুকে পড়ে। দরকষাকষি করে পছন্দের পণ্য কেনে। পরে দোকানিকে টাকা দিয়েই দ্রুত ভিড়ের মধ্যে হারিয়ে যায়।
জাল টাকার কারবারি শিরিন আক্তারের স্বামী বাবু শেখ গত বছর কোরবানির ঈদের আগে জাল টাকাসহ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়। তাদের বাসা যাত্রাবাড়ীতে। স্বামীর অবর্তমানে শিরিন এ বিশেষ কারবারের হাল ধরে। গত ৪ আগস্ট পুলিশের হাতে দুজনই ধরা পড়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদে শিরিন স্বীকার করেছে, সে আগেও একবার গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের এ পেশায় জড়িয়ে পড়ে। গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ৫০ লাখ জাল রুপিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল পাকিস্তানি নাগরিক শামীম নাজ। সেও জানিয়েছিল জাল মুদ্রার কারবারে বিত্তশালী বেশ কয়েকজন নারীর জড়িয়ে থাকার তথ্য।
জাল টাকার কারবারে জড়িত আরেক নারী রোজিনার গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। স্বামী আব্দুল মান্নানের সঙ্গে ঢাকায় বসবাসকালে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে ফারুক নামের এক যুবকের সঙ্গে। তার মাধ্যমেই জাল টাকার কারবারে নামে সে। মান্নান মারা গেছে। এখন দুই বছর বয়সী মেয়ে মিমকে কোলে নিয়ে সে জাল টাকাসহ ঘুরে বেড়ায় মার্কেটে মার্কেটে। জাল টাকার বিনিময়ে পণ্য কিনে তা কম দামে অন্যদের কাছে বিক্রি করে।
মিরপুরের শাহনাজের স্বামী রাজীব হোসেন। সে অজ্ঞান পার্টির সদস্য ছিল। একই সঙ্গে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ে অংশ নিত। ২০০৭ সালের ২ অক্টোবর পেট্রল পাম্পে ডাকাতি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয় রাজীব। তাকে মুক্ত করে আনতে শাহনাজ হাত মেলায় অপরাধী সিন্ডিকেটের সঙ্গে। জড়িয়ে পড়ে জাল টাকার ব্যবসায়ে। গত ৩১ মে পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে শাহনাজ।
গত ২৬ জুলাই গ্রেপ্তার হওয়া মরিয়ম বেগম ও তার স্বামী শহীদ পেশায় গার্মেন্টকর্মী। এ দম্পতি খুচরা বাজারের কাজও করত জাল টাকার বিনিময়ে। একপর্যায়ে ধরা পড়ার আশঙ্কা তৈরি হলে তারা দ্রুত বাসা বদল করে ফের একই কাজ করত।
পুলিশের হাতে প্রায় এক কোটি টাকার জাল নোটসহ গ্রেপ্তার হওয়া সেলিমের স্ত্রী আফরোজা এ চক্রের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। তাকে ধরতে পুলিশ বেশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ধরা পড়া রোজিনা, মর্জিনা ও শাহনাজ মূলত জাল টাকার পাইকারি বিক্রেতা। নানা কৌশলে অভাবী নারীদের তারা দলে ভেড়ায় এবং মোটা অঙ্কের লোভ দেখিয়ে জাল টাকার বিপণন ও বহনকাজে নিয়োগ দেয়। মরিয়ম খুচরা বিক্রেতা। দলনেত্রী শিরিনের কাছ থেকে নকল টাকা কিনে মার্কেট ও ফুটপাতে ঘুরে বেড়ায় সে। কমিশনের ভিত্তিতে সুযোগ বুঝে ৫০০ কিংবা ১০০০ টাকার নোট বাজারে চালিয়ে দেয়। রাজধানীতে সক্রিয় রয়েছে জাল টাকার এ রকম ২৫টি চক্র। প্রতিটি চক্রে ন্যূনতম চারজন করে নারী সদস্য রয়েছে। রোজিনা, মর্জিনা, শাহনাজ, মরিয়ম, শিরিন, নাজসহ কয়েকজনের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। আরো প্রায় ৫০ জন নারীর বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
No comments