বিশেষ সাক্ষাৎকার- নির্দলীয় ব্যক্তিকেই নির্বাচিত করে আনা সম্ভব by রফিক-উল হক
রফিক-উল হকের জন্ম কলকাতায়, ১৯৩৫ সালে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় পাস করার পর ১৯৫৫ সালে স্নাতক এবং ১৯৫৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৫৮ সালে এলএলবি পাস করার পর তিনি পাকিস্তানে চলে আসেন।
রফিক-উল হক ১৯৬৫ সালে ঢাকা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন এবং স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হিসেবে নিয়োজিত হন। আশির দশকে অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বও পালন করেন এই খ্যাতনামা আইনজীবী। সম্প্রতি বিবিসিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভায় বিএনপিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বিরোধী দল তাঁর এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয় এই যুক্তিতে যে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল ছাড়া কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রফিক-উল হকের এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময় বিরোধী দলকে অন্তর্ভুক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দল তা নাকচ করে দিয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ আছে কি?
রফিক-উল হক প্রধানমন্ত্রী তাঁর আগের অবস্থান থেকে অনেক সরে এসেছেন। তিনি তো অনেক ছাড় দিয়েছেন। বিএনপির উচিত এখন তার প্রতিদান দেওয়া। বিএনপি বলতে পারত, আপনারা যা বলছেন সেটা ঠিক আছে। আমাদের তো অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে বলেছেন, এখন বলুন সেই সরকারের প্রধান কে হবেন। সেই সরকারে আমার কজন প্রতিনিধি থাকবে। বিএনপির সরাসরি নাকচ করা সঠিক হয়নি।
প্রথম আলো সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
রফিক-উল হক নিশ্চয়ই তাদের সামনে দ্বার উন্মুক্ত।
প্রথম আলো সরকারের একটা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেওয়া উচিত নয় কি?
রফিক-উল হক বিবিসির সূত্র ধরে এখন বলা দরকার, সরকার আসলে কী বোঝাতে চেয়েছে। দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনার উচিত একটা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেওয়া। সরকার বলতে পারে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচজন করে এবং অন্য ছোট দল থেকে দুজন থাকবেন। অমুকে বা অমুকে সরকারপ্রধান থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগ বলবে শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন, বিএনপি বলবে আমরা সেটা মানব না। আওয়ামী লীগ তখন বলবে তাহলে রাষ্ট্রপতি বা স্পিকারকে দেওয়া যেতে পারে। ইত্যাদি ধরনের সংলাপ হতে পারে।
প্রথম আলো দেশভাগের আগে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করতে গিয়ে মন্ত্রণালয় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটিতে লিপ্ত হয়েছিল। মুসলিম লীগের নেতা লিয়াকত আলী খান অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি এককভাবে বাজেট ঘোষণা করতে গিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ বাধে। সুতরাং কোন দল কোন মন্ত্রণালয় পাবে, সেটা নিষ্পত্তি করা সহজ নয়।
রফিক-উল হক সেই ইতিহাস মনে রেখেই কোন দলের কাছে কোন মন্ত্রণালয় ন্যস্ত থাকবে, সেটা সরকারি দলকে বলতে হবে। স্বরাষ্ট্র, অর্থ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়—এই তিনটি হলেই তো নির্বাচন এদিক-সেদিক করা যায়।
প্রথম আলো জনপ্রশাসন, আগে যেটা সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ছিল। এখানে ডিসি, এসপিদের বদলির বিষয় আছে। এটি এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে।
রফিক-উল হক হ্যাঁ, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।
প্রথম আলো এরপর আছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রফিক-উল হক নির্বাচনী ইস্যুতে প্রতিরক্ষা বিভাগকে না টানাই ভালো। তারা দেশ রক্ষা করবে, দেশসেবা করবে। দেশ চালানোর দায়িত্ব রাজনীতিকদের হাতে থাকাই উচিত।
প্রথম আলো বাংলাদেশের সংবিধানে সব ক্ষমতা নির্দিষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। বেশি মন্ত্রিত্ব নিয়েও বিরোধী দল কী করে ভরসা পাবে?
রফিক-উল হক এ কথা ঠিক। সংবিধানে মন্ত্রীদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
প্রথম আলো এই অবস্থায় শেখ হাসিনা কি নির্বাচনের সময় অন্য কারও কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি হবেন? এমনকি তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত কারও কাছে হস্তান্তরে রাজি হবেন? ১৯৯৪-৯৫ সালে খালেদা জিয়াও ছাড়েননি।
রফিক-উল হক আওয়ামী লীগ যদি সত্যিই অন্তর্বর্তী সরকারে বিশ্বস্ত হয়, তাহলে তাকে বলতে হবে নির্বাচনকালে ৯০ দিনের জন্য মি. এক্সকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য থেকে কিংবা বাইরে থেকেও হতে পারেন।
প্রথম আলো কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রিত্ব দেওয়া যায় না।
রফিক-উল হক সংবিধান সংশোধন ছাড়াও নির্দলীয় ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী ইংল্যান্ডে গিয়ে ওই প্রস্তাব দিয়েছেন। ইংল্যান্ডকে বলা হয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। সেখানে স্পিকার নির্বাচনে একটি বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। সাধারণত স্পিকার সংসদের যে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেই আসনে সরকারি বা বিরোধী দল কেউ প্রার্থী দেয় না। ব্যালট পেপারে লেখা থাকে ‘স্পিকার সিকিং রি-ইলেকশন’ অর্থাৎ স্পিকার পুনরায় নির্বাচিত হতে চাইছেন। বাংলাদেশে সেভাবে সংসদের কোনো একটি আসন শূন্য করে সেখানে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নির্দলীয় ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আনা সম্ভব। তবে যিনি সত্যিকারের নিরপেক্ষ, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইবেন না। সবাই মিলে যদি কাউকে অনুরোধ করা হয়, তাহলে তিনি হয়তো রাজি হবেন। দলীয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না, ব্যক্তিগতভাবে কেউ দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন, সেটা ভিন্ন কথা। হাউস অব কমন্সের বর্তমান স্পিকার জন বার্কো ২০১০ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে ১০ জন প্রার্থী দাঁড়ালেও তাঁর জয়ী হতে সমস্যা হয়নি। কেননা, প্রধান তিনটি দলই তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল।
প্রথম আলো মতৈক্যের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়িয়ে গেলেও জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তো আমরা এখনো তাকিয়ে আছি।
রফিক-উল হক নিশ্চয়ই। গত বৃহস্পতিবার খবর নিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে লিখিত রায়টি জমা দিয়েছিলেন, সেটি তিনি ফেরত নিয়ে গেছেন।
প্রথম আলো বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এর আগে সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি তাঁর তরফের রায় চূড়ান্ত করে জমা দিয়ে দিয়েছেন। এমনকি সেই রায় প্রকাশ না হওয়ায় তিনি আক্ষেপও করেছিলেন।
রফিক-উল হক হ্যাঁ, সে কারণেই আমি খোঁজ নিয়েছিলাম এবং আমাকে বলা হয়েছে তিনি ফেরত নিয়ে আর পুনরায় জমা দেননি। এবার তিনি কোনো সংশোধন কিংবা পরিবর্তনের জন্য নিয়ে গেছেন কি না, তা আমি জানি না। তবে এই রায়ের জন্য আমাদের সবারই অপেক্ষা করা উচিত। পঞ্চদশ সংশোধনীটা তড়িঘড়ি করে পাস করানো উচিত হয়নি।
প্রথম আলো আমরা ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ থেকে একটা নির্দেশনা পেতে পারি?
রফিক-উল হক নিশ্চয়ই পারি। রায় দেখে দুই দলও হয়তো সংবিধানে সামান্য সংশোধনী এনে চলতি সংকট ঘোচানোর বিষয়ে একমত হতে পারে।
প্রথম আলো বিএনপি গোঁ ধরে আছে। তারা কোনো বিকল্প লিখিত প্রস্তাব দেবে না। অথচ বিলুপ্ত ত্রয়োদশ সংশোধনী ফিরিয়ে আনলেও সংকট মিটছে না। কারণ, বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তারা মানবে না। তাহলে?
রফিক-উল হক এটা তারা মোটেই ঠিক করছে না। তবে দুই মেয়াদে সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের সুযোগ থাকলেও সেটা শর্তমুক্ত নয়। শর্তটি হলো, বিচারপতিদের টানা যাবে না। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় যেভাবেই দেওয়া হোক না কেন, এই অবস্থান সুপ্রিম কোর্ট আর বদলাতে পারবেন না।
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ প্রস্তাবের পর এখন যদি আমরা সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টিও দ্রুত পেয়ে যাই, তাহলে এই দুটি মিলিয়ে একটা সমাধানের সম্ভাবনা কি উজ্জ্বল হতে পারে?
রফিক-উল হক আমি তা-ই মনে করি। দেশের স্বার্থেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা উচিত। দেশের পরিস্থিতিকে আরও অবনতিশীল না করে দুই নেত্রীর উচিত মুখোমুখি বসে একটা সমাধান করে ফেলা। যদি তাঁরা না পারেন তাহলে কাউকে মধ্যস্থতার জন্য বলতে পারেন।
প্রথম আলো দুই দলে বিপরীত অবস্থানের কারণে স্যার নিনিয়ান ব্যর্থ হয়েছিলেন।
রফিক-উল হক আজ তো সেই একই অবস্থা। এখন আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দেবে আর বিএনপি তা নাকচ করবে।
প্রথম আলো দুই পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পার্থক্য লক্ষ করছেন কি?
রফিক-উল হক অনেক তফাত রয়েছে। এটা ঠিক, শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়া মানছেন না। বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা মানছেন না। সে কারণেই বলছিলাম, জাতীয় সংসদের কোনো আসন থেকে কাউকে পদত্যাগ করিয়ে সেই শূন্য পদে কাউকে নির্বাচিত করে আনা হোক। মি. এক্সকে কোনো একটা আসন থেকে নির্বাচিত করে তাঁকেই ছোট মন্ত্রিসভা গঠনের ভার দেওয়া যায়।
প্রথম আলো কিন্তু আমাদের বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে এ ধরনের প্রস্তাব কি গুরুত্ব পাবে?
রফিক-উল হক কেন নয়? এটা তো সংসদীয় রাজনীতির ঐতিহ্যগত রীতিনীতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়। আপনাকে ঘরের কাছের উদাহরণ দিই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং কখনোই লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হননি। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তর্কবিতর্ক করেছে। কিন্তু সত্য যে আমাদের সংসদীয় আসনের মতো লোকসভার কোনো আসনে তিনি কখনো জয়ী হননি। কিন্তু বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিতে দু-দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে তাঁর সমস্যা হয়নি। দক্ষিণ দিল্লির একটি আসন থেকে একবার তিনি লোকসভা নির্বাচনে লড়ে হেরেছিলেন। তিনি আজও কেবল রাজ্যসভার সদস্য।
প্রথম আলো আমাদের ’৭২-এর সংবিধানে কিন্তু ভারতের সংবিধানের মতোই মন্ত্রিসভায় যেকোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার বিধান ছিল। শুধু শর্ত ছিল পরের ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে সংসদের কোনো আসনে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সামরিক ফরমান দিয়ে এই প্রথা বিলোপ করা হলেও আওয়ামী লীগ কিন্তু তা আর ফিরিয়ে আনেনি।
রফিক-উল হক হ্যাঁ, আমাদের এই বিধান ছিল। ভারতে খুব নামকরা একজন ব্যক্তি ছিলেন কৃষ্ণ মেনন। নেহরুর আমলে তিনি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তিনিও মন্ত্রী হওয়ার সময় লোকসভার সদস্য ছিলেন না। সুতরাং নির্বাচিত-অনির্বাচিতের তফাতটা সেভাবে কিন্তু মৌলিক নয়। এমনকি ড. মনমোহন ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেও লোকসভার কোনো আসনে প্রার্থী হননি।
প্রথম আলো বিরোধী দল এর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছিল।
রফিক-উল হক এটা খুবই ভালো কথা। শীর্ষ পর্যায়ে না হোক, মধ্যম পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যেও এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। তাঁরা একটা প্রাথমিক পটভূমি সৃষ্টি করতে পারেন। উভয় পক্ষ সমঝোতার খসড়া চূড়ান্ত করতে পারে। পরে দুই নেত্রী স্বাক্ষর করবেন।
প্রথম আলো কিন্তু এটা তো রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়। কিন্তু সংলাপ করে সংকট সমাধানের ইতিহাস আমাদের নেই। সে কারণেই কারও একতরফা পদক্ষেপে কি সংকটের সুরাহা কাম্য নয়?
রফিক-উল হক না, একতরফা পদক্ষেপে সুরাহা হবে না। এবং সেটা হওয়াও উচিত নয়। কারণ, দুই তরফে না হলে তা টেকসই হবে না। আমি একভাবে পদক্ষেপ নিলাম, আপনি আরেকভাবে নিলেন, তা তো কেউ মানবে না। তবে এখন সরকারি দল আরেকটু বিস্তারিতভাবে তাদের প্রস্তাব দিতে পারে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া অন্তত তিনটি প্রশ্ন তুলতে পারেন। প্রস্তাবিত ছোট মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কতজন থাকবে, অন্য দলের কতজন থাকবে এবং সরকারপ্রধান কে হবেন। তবে আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, সংকট সমাধানের বিকল্প হচ্ছে একজন নির্দলীয় ব্যক্তিকে কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচিত করে আনা। তাহলে সংবিধান সংশোধনের কোনো দরকারই হবে না।
প্রথম আলো আপনি ইতিপূর্বে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কেন সফল হতে পারেননি? সেটা কি তাঁদের অনিচ্ছার কারণে?
রফিক-উল হক দুই নেত্রী আমার সঙ্গে আলোচনায় কমবেশি সম্মত ছিলেন। কিন্তু কোনো এক দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তির আপত্তি ছিল।
প্রথম আলো দুই দিক থেকেই, নাকি এক দিক থেকে?
রফিক-উল হক এক দিক থেকে।
প্রথম আলো সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেবেন?
রফিক-উল হক এসব বলে কী লাভ? বিতর্ক তুলে কী লাভ?
প্রথম আলো আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে। এই অবস্থায় দুই পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতার বিষয়ে নাগরিক সমাজের উদ্যোগ কি পুরোপুরি অসম্ভব? আপনি নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে কি তাগিদ অনুভব করেন?
রফিক-উল হক এ রকম উদ্যোগ হওয়া উচিত। আমার নিজেরও বয়স হয়ে গেছে। যথেষ্ট তাগিদ পাই না। তবে যদি দুই দল মনে করে আমি তাদের মধ্যে বসে কথাবার্তা বলি, তাহলে আমি রাজি আছি।
প্রথম আলো আপনি কতটা আশাবাদী যে এ রকমের একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবেন?
রফিক-উল হক হ্যাঁ। আমার নিজের সেই আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে পারব। কারণ, দুই দলই তো দেশে গণতন্ত্র চায়, দেশের ভালো চায়, কেউ তো দেশের খারাপ চায় না। কেউ তো বলে না যে দেশটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি বা আমার স্বামীর সম্পত্তি। দেশ সবার। সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণই দেশের মালিক।
প্রথম আলো আপনাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব দেওয়া হলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে?
রফিক-উল হক (হাসি) আরে ভাই, এই প্রস্তাব কেউ দেবে না। আমি তাতে রাজি থাকব কিন্তু এমন প্রস্তাব আসবে না। আমাকে বিব্রত করবেন না।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মিজানুর রহমান খান
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনের সময় বিরোধী দলকে অন্তর্ভুক্ত করে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন। কিন্তু বিরোধী দল তা নাকচ করে দিয়েছে। এ থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ আছে কি?
রফিক-উল হক প্রধানমন্ত্রী তাঁর আগের অবস্থান থেকে অনেক সরে এসেছেন। তিনি তো অনেক ছাড় দিয়েছেন। বিএনপির উচিত এখন তার প্রতিদান দেওয়া। বিএনপি বলতে পারত, আপনারা যা বলছেন সেটা ঠিক আছে। আমাদের তো অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দিতে বলেছেন, এখন বলুন সেই সরকারের প্রধান কে হবেন। সেই সরকারে আমার কজন প্রতিনিধি থাকবে। বিএনপির সরাসরি নাকচ করা সঠিক হয়নি।
প্রথম আলো সময় এখনো শেষ হয়ে যায়নি।
রফিক-উল হক নিশ্চয়ই তাদের সামনে দ্বার উন্মুক্ত।
প্রথম আলো সরকারের একটা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেওয়া উচিত নয় কি?
রফিক-উল হক বিবিসির সূত্র ধরে এখন বলা দরকার, সরকার আসলে কী বোঝাতে চেয়েছে। দেশের স্বার্থে শেখ হাসিনার উচিত একটা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দেওয়া। সরকার বলতে পারে, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ থেকে পাঁচজন করে এবং অন্য ছোট দল থেকে দুজন থাকবেন। অমুকে বা অমুকে সরকারপ্রধান থাকতে পারেন। আওয়ামী লীগ বলবে শেখ হাসিনাই সরকারপ্রধান থাকবেন, বিএনপি বলবে আমরা সেটা মানব না। আওয়ামী লীগ তখন বলবে তাহলে রাষ্ট্রপতি বা স্পিকারকে দেওয়া যেতে পারে। ইত্যাদি ধরনের সংলাপ হতে পারে।
প্রথম আলো দেশভাগের আগে কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করতে গিয়ে মন্ত্রণালয় নিয়ে ঝগড়াঝাঁটিতে লিপ্ত হয়েছিল। মুসলিম লীগের নেতা লিয়াকত আলী খান অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। তিনি এককভাবে বাজেট ঘোষণা করতে গিয়ে কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ বাধে। সুতরাং কোন দল কোন মন্ত্রণালয় পাবে, সেটা নিষ্পত্তি করা সহজ নয়।
রফিক-উল হক সেই ইতিহাস মনে রেখেই কোন দলের কাছে কোন মন্ত্রণালয় ন্যস্ত থাকবে, সেটা সরকারি দলকে বলতে হবে। স্বরাষ্ট্র, অর্থ ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়—এই তিনটি হলেই তো নির্বাচন এদিক-সেদিক করা যায়।
প্রথম আলো জনপ্রশাসন, আগে যেটা সংস্থাপন মন্ত্রণালয় ছিল। এখানে ডিসি, এসপিদের বদলির বিষয় আছে। এটি এখন প্রধানমন্ত্রীর হাতে আছে।
রফিক-উল হক হ্যাঁ, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়।
প্রথম আলো এরপর আছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
রফিক-উল হক নির্বাচনী ইস্যুতে প্রতিরক্ষা বিভাগকে না টানাই ভালো। তারা দেশ রক্ষা করবে, দেশসেবা করবে। দেশ চালানোর দায়িত্ব রাজনীতিকদের হাতে থাকাই উচিত।
প্রথম আলো বাংলাদেশের সংবিধানে সব ক্ষমতা নির্দিষ্টভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। বেশি মন্ত্রিত্ব নিয়েও বিরোধী দল কী করে ভরসা পাবে?
রফিক-উল হক এ কথা ঠিক। সংবিধানে মন্ত্রীদের নির্বাহী ক্ষমতা দেওয়া হয়নি।
প্রথম আলো এই অবস্থায় শেখ হাসিনা কি নির্বাচনের সময় অন্য কারও কাছে প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়তে রাজি হবেন? এমনকি তাঁর সবচেয়ে বিশ্বস্ত কারও কাছে হস্তান্তরে রাজি হবেন? ১৯৯৪-৯৫ সালে খালেদা জিয়াও ছাড়েননি।
রফিক-উল হক আওয়ামী লীগ যদি সত্যিই অন্তর্বর্তী সরকারে বিশ্বস্ত হয়, তাহলে তাকে বলতে হবে নির্বাচনকালে ৯০ দিনের জন্য মি. এক্সকে প্রধানমন্ত্রী করা হবে। তিনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্য থেকে কিংবা বাইরে থেকেও হতে পারেন।
প্রথম আলো কিন্তু সংবিধান অনুযায়ী কোনো অনির্বাচিত ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রিত্ব দেওয়া যায় না।
রফিক-উল হক সংবিধান সংশোধন ছাড়াও নির্দলীয় ব্যক্তিকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধানমন্ত্রী করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী ইংল্যান্ডে গিয়ে ওই প্রস্তাব দিয়েছেন। ইংল্যান্ডকে বলা হয় গণতন্ত্রের সূতিকাগার। সেখানে স্পিকার নির্বাচনে একটি বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়। সাধারণত স্পিকার সংসদের যে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, সেই আসনে সরকারি বা বিরোধী দল কেউ প্রার্থী দেয় না। ব্যালট পেপারে লেখা থাকে ‘স্পিকার সিকিং রি-ইলেকশন’ অর্থাৎ স্পিকার পুনরায় নির্বাচিত হতে চাইছেন। বাংলাদেশে সেভাবে সংসদের কোনো একটি আসন শূন্য করে সেখানে উপনির্বাচনের মাধ্যমে নির্দলীয় ব্যক্তিকে নির্বাচিত করে আনা সম্ভব। তবে যিনি সত্যিকারের নিরপেক্ষ, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাইবেন না। সবাই মিলে যদি কাউকে অনুরোধ করা হয়, তাহলে তিনি হয়তো রাজি হবেন। দলীয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না, ব্যক্তিগতভাবে কেউ দাঁড়িয়ে পড়তে পারেন, সেটা ভিন্ন কথা। হাউস অব কমন্সের বর্তমান স্পিকার জন বার্কো ২০১০ সালে পুনর্নির্বাচিত হন। তাঁর বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে ১০ জন প্রার্থী দাঁড়ালেও তাঁর জয়ী হতে সমস্যা হয়নি। কেননা, প্রধান তিনটি দলই তাঁকে সমর্থন দিয়েছিল।
প্রথম আলো মতৈক্যের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কেউ দাঁড়িয়ে গেলেও জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করবে না। তবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের দিকে তো আমরা এখনো তাকিয়ে আছি।
রফিক-উল হক নিশ্চয়ই। গত বৃহস্পতিবার খবর নিয়েছিলাম। আমাকে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক যে লিখিত রায়টি জমা দিয়েছিলেন, সেটি তিনি ফেরত নিয়ে গেছেন।
প্রথম আলো বিদায়ী প্রধান বিচারপতি এর আগে সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি তাঁর তরফের রায় চূড়ান্ত করে জমা দিয়ে দিয়েছেন। এমনকি সেই রায় প্রকাশ না হওয়ায় তিনি আক্ষেপও করেছিলেন।
রফিক-উল হক হ্যাঁ, সে কারণেই আমি খোঁজ নিয়েছিলাম এবং আমাকে বলা হয়েছে তিনি ফেরত নিয়ে আর পুনরায় জমা দেননি। এবার তিনি কোনো সংশোধন কিংবা পরিবর্তনের জন্য নিয়ে গেছেন কি না, তা আমি জানি না। তবে এই রায়ের জন্য আমাদের সবারই অপেক্ষা করা উচিত। পঞ্চদশ সংশোধনীটা তড়িঘড়ি করে পাস করানো উচিত হয়নি।
প্রথম আলো আমরা ওই রায়ের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ থেকে একটা নির্দেশনা পেতে পারি?
রফিক-উল হক নিশ্চয়ই পারি। রায় দেখে দুই দলও হয়তো সংবিধানে সামান্য সংশোধনী এনে চলতি সংকট ঘোচানোর বিষয়ে একমত হতে পারে।
প্রথম আলো বিএনপি গোঁ ধরে আছে। তারা কোনো বিকল্প লিখিত প্রস্তাব দেবে না। অথচ বিলুপ্ত ত্রয়োদশ সংশোধনী ফিরিয়ে আনলেও সংকট মিটছে না। কারণ, বিদায়ী প্রধান বিচারপতিকে তারা মানবে না। তাহলে?
রফিক-উল হক এটা তারা মোটেই ঠিক করছে না। তবে দুই মেয়াদে সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠানের সুযোগ থাকলেও সেটা শর্তমুক্ত নয়। শর্তটি হলো, বিচারপতিদের টানা যাবে না। এখন পূর্ণাঙ্গ রায় যেভাবেই দেওয়া হোক না কেন, এই অবস্থান সুপ্রিম কোর্ট আর বদলাতে পারবেন না।
প্রথম আলো প্রধানমন্ত্রীর সর্বশেষ প্রস্তাবের পর এখন যদি আমরা সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়টিও দ্রুত পেয়ে যাই, তাহলে এই দুটি মিলিয়ে একটা সমাধানের সম্ভাবনা কি উজ্জ্বল হতে পারে?
রফিক-উল হক আমি তা-ই মনে করি। দেশের স্বার্থেই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা উচিত। দেশের পরিস্থিতিকে আরও অবনতিশীল না করে দুই নেত্রীর উচিত মুখোমুখি বসে একটা সমাধান করে ফেলা। যদি তাঁরা না পারেন তাহলে কাউকে মধ্যস্থতার জন্য বলতে পারেন।
প্রথম আলো দুই দলে বিপরীত অবস্থানের কারণে স্যার নিনিয়ান ব্যর্থ হয়েছিলেন।
রফিক-উল হক আজ তো সেই একই অবস্থা। এখন আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দেবে আর বিএনপি তা নাকচ করবে।
প্রথম আলো দুই পরিস্থিতির মধ্যে কোনো পার্থক্য লক্ষ করছেন কি?
রফিক-উল হক অনেক তফাত রয়েছে। এটা ঠিক, শেখ হাসিনাকে খালেদা জিয়া মানছেন না। বেগম খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনা মানছেন না। সে কারণেই বলছিলাম, জাতীয় সংসদের কোনো আসন থেকে কাউকে পদত্যাগ করিয়ে সেই শূন্য পদে কাউকে নির্বাচিত করে আনা হোক। মি. এক্সকে কোনো একটা আসন থেকে নির্বাচিত করে তাঁকেই ছোট মন্ত্রিসভা গঠনের ভার দেওয়া যায়।
প্রথম আলো কিন্তু আমাদের বৈরী রাজনৈতিক পরিবেশে এ ধরনের প্রস্তাব কি গুরুত্ব পাবে?
রফিক-উল হক কেন নয়? এটা তো সংসদীয় রাজনীতির ঐতিহ্যগত রীতিনীতির সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ নয়। আপনাকে ঘরের কাছের উদাহরণ দিই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং কখনোই লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হননি। এ নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তর্কবিতর্ক করেছে। কিন্তু সত্য যে আমাদের সংসদীয় আসনের মতো লোকসভার কোনো আসনে তিনি কখনো জয়ী হননি। কিন্তু বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশটিতে দু-দুবার প্রধানমন্ত্রী হতে তাঁর সমস্যা হয়নি। দক্ষিণ দিল্লির একটি আসন থেকে একবার তিনি লোকসভা নির্বাচনে লড়ে হেরেছিলেন। তিনি আজও কেবল রাজ্যসভার সদস্য।
প্রথম আলো আমাদের ’৭২-এর সংবিধানে কিন্তু ভারতের সংবিধানের মতোই মন্ত্রিসভায় যেকোনো অনির্বাচিত ব্যক্তির মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার বিধান ছিল। শুধু শর্ত ছিল পরের ছয় মাসের মধ্যে তাঁকে সংসদের কোনো আসনে নির্বাচিত হয়ে আসতে হবে। সামরিক ফরমান দিয়ে এই প্রথা বিলোপ করা হলেও আওয়ামী লীগ কিন্তু তা আর ফিরিয়ে আনেনি।
রফিক-উল হক হ্যাঁ, আমাদের এই বিধান ছিল। ভারতে খুব নামকরা একজন ব্যক্তি ছিলেন কৃষ্ণ মেনন। নেহরুর আমলে তিনি ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তিনিও মন্ত্রী হওয়ার সময় লোকসভার সদস্য ছিলেন না। সুতরাং নির্বাচিত-অনির্বাচিতের তফাতটা সেভাবে কিন্তু মৌলিক নয়। এমনকি ড. মনমোহন ২০০৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকেও লোকসভার কোনো আসনে প্রার্থী হননি।
প্রথম আলো বিরোধী দল এর আগে অনানুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করার ইঙ্গিত দিয়েছিল।
রফিক-উল হক এটা খুবই ভালো কথা। শীর্ষ পর্যায়ে না হোক, মধ্যম পর্যায়ে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যেও এটা নিয়ে আলোচনা শুরু হতে পারে। তাঁরা একটা প্রাথমিক পটভূমি সৃষ্টি করতে পারেন। উভয় পক্ষ সমঝোতার খসড়া চূড়ান্ত করতে পারে। পরে দুই নেত্রী স্বাক্ষর করবেন।
প্রথম আলো কিন্তু এটা তো রাজনৈতিক সদিচ্ছার বিষয়। কিন্তু সংলাপ করে সংকট সমাধানের ইতিহাস আমাদের নেই। সে কারণেই কারও একতরফা পদক্ষেপে কি সংকটের সুরাহা কাম্য নয়?
রফিক-উল হক না, একতরফা পদক্ষেপে সুরাহা হবে না। এবং সেটা হওয়াও উচিত নয়। কারণ, দুই তরফে না হলে তা টেকসই হবে না। আমি একভাবে পদক্ষেপ নিলাম, আপনি আরেকভাবে নিলেন, তা তো কেউ মানবে না। তবে এখন সরকারি দল আরেকটু বিস্তারিতভাবে তাদের প্রস্তাব দিতে পারে। অন্যদিকে খালেদা জিয়া অন্তত তিনটি প্রশ্ন তুলতে পারেন। প্রস্তাবিত ছোট মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কতজন থাকবে, অন্য দলের কতজন থাকবে এবং সরকারপ্রধান কে হবেন। তবে আমি আবারও জোর দিয়ে বলতে চাই, সংকট সমাধানের বিকল্প হচ্ছে একজন নির্দলীয় ব্যক্তিকে কোনো একটি আসন থেকে নির্বাচিত করে আনা। তাহলে সংবিধান সংশোধনের কোনো দরকারই হবে না।
প্রথম আলো আপনি ইতিপূর্বে দুই নেত্রীর মধ্যে সংলাপের বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কেন সফল হতে পারেননি? সেটা কি তাঁদের অনিচ্ছার কারণে?
রফিক-উল হক দুই নেত্রী আমার সঙ্গে আলোচনায় কমবেশি সম্মত ছিলেন। কিন্তু কোনো এক দলের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তির আপত্তি ছিল।
প্রথম আলো দুই দিক থেকেই, নাকি এক দিক থেকে?
রফিক-উল হক এক দিক থেকে।
প্রথম আলো সে বিষয়ে ইঙ্গিত দেবেন?
রফিক-উল হক এসব বলে কী লাভ? বিতর্ক তুলে কী লাভ?
প্রথম আলো আজ পরিস্থিতি বদলে গেছে। এই অবস্থায় দুই পক্ষের মধ্যে একটা সমঝোতার বিষয়ে নাগরিক সমাজের উদ্যোগ কি পুরোপুরি অসম্ভব? আপনি নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগী হতে কি তাগিদ অনুভব করেন?
রফিক-উল হক এ রকম উদ্যোগ হওয়া উচিত। আমার নিজেরও বয়স হয়ে গেছে। যথেষ্ট তাগিদ পাই না। তবে যদি দুই দল মনে করে আমি তাদের মধ্যে বসে কথাবার্তা বলি, তাহলে আমি রাজি আছি।
প্রথম আলো আপনি কতটা আশাবাদী যে এ রকমের একটা সমাধানে পৌঁছাতে পারবেন?
রফিক-উল হক হ্যাঁ। আমার নিজের সেই আত্মবিশ্বাস রয়েছে। আমি নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি, একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে পৌঁছাতে পারব। কারণ, দুই দলই তো দেশে গণতন্ত্র চায়, দেশের ভালো চায়, কেউ তো দেশের খারাপ চায় না। কেউ তো বলে না যে দেশটা আমার পৈতৃক সম্পত্তি বা আমার স্বামীর সম্পত্তি। দেশ সবার। সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, জনগণই দেশের মালিক।
প্রথম আলো আপনাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে প্রস্তাব দেওয়া হলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হবে?
রফিক-উল হক (হাসি) আরে ভাই, এই প্রস্তাব কেউ দেবে না। আমি তাতে রাজি থাকব কিন্তু এমন প্রস্তাব আসবে না। আমাকে বিব্রত করবেন না।
No comments