জার্মান গাড়ির বাজার রমরমা
ইউরোপের মন্দার মাঝেও দেখা যায় জার্মানির অর্থনীতি অনেক চাঙ্গা। এই দেশে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ব্যবসায় চলছে সমান তালে। জার্মানির গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর দিকে তাকালেই বোঝা যায় এখন জার্মানিতে গাড়ির ব্যবসা রমরমা।
গাড়িনির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই এখন দেশটির অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। সারাবিশ্বে আধিপত্য করে বেড়াচ্ছে জার্মান ব্র্যান্ড ভক্সওয়াগন ও পোর্শে। এই দুই ব্র্যান্ডের রমরমা অবস্থার মধ্যেও টিকে থাকার সংগ্রাম করছে এক সময়কার জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ওপেল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জেনারেল মোটর্সের (জিএম) অধীনস্থ জার্মান ব্র্যান্ড ওপেল লাভের মুখ দেখার চেষ্টায় কোন কমতি রাখছে না। এ লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদ নতুন বিপণন কৌশল, বড় আকারের বিনিয়োগ এবং প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোয় পরিবর্তন আনার বিষয়ে অনুমোদন দিয়েছে। এদিকে ব্যয় কমানোর জন্য জিএমের পক্ষ থেকে ওপেলের ওপর প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। গাড়িশিল্প বিশেষজ্ঞ স্তেফান ব্রাটজেলের ধারণা, ২০১৫ সালের আগে লাভের মুখ দেখবে না ওপেল। তার সঙ্গে সুর মেলালেন ডুইসবার্গ এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কার সেন্টার ফর অটোমোটিভ রিসার্চপ্রধান ফার্দিনান্দ দুদেনহোয়েফের। তার মতে, আগামী তিন বছর ইউরোপে চাহিদা পরিস্থিতি ওপেলের জন্য অনুকূল হবে না । তবে ওপেলের অবস্থা যাই হোক না কেন, বেশ ভাল অবস্থানে আছে দেশটির জনপ্রিয় ব্র্যান্ড ভক্সওয়াগন। কিছু দিনের মধ্যে ভক্সওয়াগনের সম্পূর্ণ অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা করবে পোর্শে। এর আগেও দ্রুতগামী গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে ভক্সওয়াগনের স্বত্ব ছিল। তবে তখন পোর্শে ও ভক্সওয়াগনের সম্পর্ক এত মধুর ছিল না। জানা গেছে, জিএমকে টপকে বিশ্বের এক নম্বর ব্র্যান্ড হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিলেন ফার্দিনান্দ পোর্শে স্বয়ং। তিনি ছিলেন ভক্সওয়াগনের সুপারভাইজরি বোর্ড চীফ। জার্মানির বিখ্যাত পোর্শে বংশের প্রধান এ ব্যক্তিকে জাদুকর বলা উচিত। তারই নকশা করা ভক্সওয়াগন বিটল আজ খোদ ভক্সওয়াগনের চেয়েও জনপ্রিয়। তার নাতি ফার্দিনান্দ আলেকজান্দার পোর্শে ছিলেন আরেক জাদুকর। তার নকশা করা ৯১১ গাড়িটি দিয়ে আজ পোর্শেকে বিশ্বের সবাই চেনে। পোর্শে ভক্সওয়াগনকে কব্জা করতে চাইলেও সে চেষ্টা সফল হয়নি। ২০০৯ সালে ভক্সওয়াগন পোর্শের ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ স্বত্ব কিনে নেয়। এরপর জটিল এ চুক্তি কর ও আইনবিষয়ক নানা ঝামেলার মুখে পড়ে। তবে চমক হিসেবে ভক্সওয়াগন পোর্শের সম্পূর্ণ দখল নেয়ার ঘোষণা দেয়। চুক্তি অনুযায়ী পোর্শেকে ভক্সওয়াগনের ৪৪৬ কোটি ইউরো দেয়ার কথা । প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মার্টিন উইন্টারকর্নের বক্তব্য অনুযায়ীÑএ চুক্তি ক্রেতা, কর্মী ও শেয়ারহোল্ডার সবাইকে উপকৃত করবে। তার ভাষায়, পোর্শে ভক্সওয়াগনের পতাকাতলে আসায় দুটি প্রতিষ্ঠান এবং জার্মানির জন্য ভাল হয়েছে। আর্থিক এবং কৌশলগত উভয় দিক থেকে দুই পক্ষ এখন শক্তিশালী। ভক্সওয়াগনের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে পোর্শে ছাড়াও সিট, স্কোডা, বেন্টলি, অডি, বুগাত্তি, ল্যামবোর্গহিনি, ডুকাতি, স্ক্যানিয়া এবং ম্যানের মতো হেভিওয়েটরাও পরিচিত। জার্মানির এই ব্রান্ডের গাড়িগুলো বিশ্বজুড়ে বাজার দখল করে নিচ্ছে। জার্মানির গাড়ির বাজারের রমরমা ব্যবসাই প্রমাণ করে দেয় যে,সমগ্র ইউরোপ যেখানে ঋণ সঙ্কট ও বেকারত্বের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সেখানে জার্মানির গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে চরম প্রতিযোগিতাও বিশ্বজুড়ে বাজার দখল জার্মানির অর্থনৈতিক শক্তিরই পরিচায়ক হিসেবেই আবির্ভূত হয়েছে।
তারিকুল ইসলাম চয়ন
তারিকুল ইসলাম চয়ন
No comments