মৌসুমি ফল কীভাবে খাবেন by আখতারুন নাহার
বিভাগীয় প্রধান, পুষ্টি বিভাগ, বারডেম এখন ফলের মৌসুম। কারণ এ সময় একই সঙ্গে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু ইত্যাদি ফলে মানুষের প্রতিদিনের খাদ্যতালিকা দীর্ঘ হয়ে ওঠে। এই ফলগুলো যেমন রসালো, তেমনি পুষ্টিগুণে ভরপুর। এসব ফলে রয়েছে ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়ামসহ অন্যান্য খনিজ লবণ।
তা ছাড়া প্রতিটি ফলের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন পুষ্টিমূল্য।
আম: স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য এ মৌসুমে অন্য সব ফলের চেয়ে আম শীর্ষে অবস্থান করে। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবেই আম খাওয়া যায়। গ্যালিক এসিডের জন্য কাঁচা আম টক হয়। কাঁচা আম দিয়ে চাটনি, মোরব্বা, আচার, শরবত তৈরি করা হয়। আম সহজপাচ্য ফল। পাকা আম ক্যারোটিনসমৃদ্ধ ও স্বাদে মিষ্টি। ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য পাকা আম খুবই উপকারী।
কাঁঠাল: কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা দুভাবেই খাওয়া যায়। তবে কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় তরকারি হিসেবেই বেশি উপাদেয়। এতে থাকে প্রচুর শর্করা ও ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া কাঁঠালের বিচিও আমাদের খাবারের অন্তর্ভুক্ত। পাকা কাঁঠালে ক্যারোটিন রয়েছে প্রায় চার হাজার ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। কাঁঠাল শক্তিবর্ধক। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যশক্তি।
লিচু: ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ এই ফল খুবই অল্প সময় থাকে। এটি বেশ রসালো ও সুস্বাদু। লিচু তৃষ্ণা নিবারক। তা ছাড়া এই ফল দেহকে শীতল ও সতেজ রাখে।
জাম: কালো জামে লৌহের পরিমাণ বেশি বলে রক্তস্বল্পতায় বেশ উপকারী। পাকা জাম মিষ্টি ও মুখরোচক। কিছুটা কষভাব রয়েছে। জামের রসে পাকস্থলী ও যকৃৎ সুস্থ থাকে। আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাম ও এর বিচির ব্যবহার রয়েছে। তবে জামে খুব বেশি জৈব এসিড থাকার কারণে বেশি খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে।
তরমুজ: গ্রীষ্মকালে ক্রমাগত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তার অনেকখানি পূরণ করতে পারে তরমুজ। এর শরবত বেশ শীতল। এতে লৌহ ও ভিটামিনের পরিমাণ উচ্চমাত্রায় রয়েছে বলে রক্তস্বল্পতা ও রাতকানা রোগে ভালো ফল দেয়। টাইফয়েডের রোগীকে বারবার তরমুজের রস দিলে জ্বরের মাত্রা কমে আসে।
আনারস: টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য আনারস অনেকেরই প্রিয়। এর জুস আরও উপাদেয়। বাত ও জ্বরের কারণে শরীরে ব্যথা হলে আনারসের রস তা দূর করতে সাহায্য করে। এদিকে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতেও আনারসের জুড়ি নেই। আনারসে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রদাহবিরোধী পদার্থ।
তালের শাঁস: তাল পাকে ভাদ্র মাসে। তবে এই সময়ের ফলের মধ্যে কচি তাল বা তালের শাঁস বেশ জনপ্রিয়। এটি রসালো বলে দেহে শীতল আমেজ আনে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে।
জামরুল: হালকা সবুজ রঙের এ ফলটি নবাব ও জমিদারদের কাছে বেশ সমাদৃত ছিল। এর আকৃতি ও রং সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফলের চেয়ে স্বাদে কম হলেও এতে পানির পরিমাণ প্রচুর। ডায়াবেটিস থাকলে এই ফল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যায়।
সব ফলেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের নিষ্প্রভ ভাব কমাতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে আরও অনেক ফল পাওয়া যায়, যা পুষ্টিমানসমৃদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় যত দিন যাচ্ছে, ততই আমরা ফলের প্রকৃত স্বাদ ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পাকা ফলের সত্যিকারের স্বাদ কেমন, তা হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতেই পারবে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এসব ফল আমাদের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে কাঁচা ফল রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে পাকানোর একটা প্রতিযোগিতা চলছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ক্রমাগত এই বিষাক্ত ফল খাওয়ার কারণে কিডনি, লিভার ও ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমি, মাথাব্যথা ও ডায়রিয়া হতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্বাইড অথবা ইথোফেন—যে ধরনের রাসায়নিকই দেওয়া হোক না কেন, যদি একটু সচেতনভাবে ফল খাওয়া যায়, তবে কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। আম খাওয়ার আগে দুই ঘণ্টা অথবা তার চেয়ে কিছু বেশি সময় পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর উঠিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে কাটতে হবে। তবে আমের আঁটি না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া যেকোনো ফল বা সবজিতে রাসায়নিক দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে না খাওয়ার পরামর্শও বিশেষজ্ঞদের রয়েছে।
গ্রাম বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে—কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো। সুতরাং কাঁঠাল পাকানোর জন্য রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না। আধা পাকা কাঁঠাল ফিটকিরি অথবা মাঝামাঝি স্থানে একটি লম্বা কাঠি ঢুকিয়ে রাখলে দুই-এক দিনেই পেকে যায়। এতে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। যেমন, ধোঁয়ার সাহায্যে কলা পাকানো হয়। ব্যাপারটি সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন?
লিচুর রং কাঁচা অবস্থায় সবুজ। পাকার পর হয় ইটালাল। এখন গাছে স্প্রে করার ফলে সব লিচু একেবারে পরিষ্কার ঝকঝকে গাঢ় ম্যাজেন্টা রং ধারণ করে, যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। চকচক করলেই যে সোনা হয় না, এসব লিচু দেখলে সে কথা মনে পড়ে যায়। কারণ, লিচুর প্রকৃত রং এটি নয়। এ ধরনের লিচু না কেনাই ভালো। আনারস, তরমুজও বিষের ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, জাম, জামরুল, সফেদা, তালের শাঁস, ডেউয়া, অরবরই ইত্যাদি অনেকটা নিরাপদ। যেসব ফলে মুনাফা বেশি, সেসব ফলেই রাসায়নিক বেশি। দেখা যাচ্ছে কাঁচা আম, কাঁচা কাঁঠাল এবং শক্ত খোসার ফল—যেমন বেল খাওয়াই উত্তম।
সবশেষে বলতে চাই, রাসায়নিকযুক্ত ফল খাওয়া আর ধীরগতিতে বিষ (স্লো পয়জন) খাওয়া একই কথা। সুতরাং নিরাপদ ফলই সবার কাম্য।
আম: স্বাদ ও ঘ্রাণের জন্য এ মৌসুমে অন্য সব ফলের চেয়ে আম শীর্ষে অবস্থান করে। কাঁচা ও পাকা উভয়ভাবেই আম খাওয়া যায়। গ্যালিক এসিডের জন্য কাঁচা আম টক হয়। কাঁচা আম দিয়ে চাটনি, মোরব্বা, আচার, শরবত তৈরি করা হয়। আম সহজপাচ্য ফল। পাকা আম ক্যারোটিনসমৃদ্ধ ও স্বাদে মিষ্টি। ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্যের জন্য পাকা আম খুবই উপকারী।
কাঁঠাল: কাঁঠাল কাঁচা ও পাকা দুভাবেই খাওয়া যায়। তবে কাঁচা কাঁঠাল বা এঁচোড় তরকারি হিসেবেই বেশি উপাদেয়। এতে থাকে প্রচুর শর্করা ও ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া কাঁঠালের বিচিও আমাদের খাবারের অন্তর্ভুক্ত। পাকা কাঁঠালে ক্যারোটিন রয়েছে প্রায় চার হাজার ৭০০ মাইক্রোগ্রাম। কাঁঠাল শক্তিবর্ধক। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর খাদ্যশক্তি।
লিচু: ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ এই ফল খুবই অল্প সময় থাকে। এটি বেশ রসালো ও সুস্বাদু। লিচু তৃষ্ণা নিবারক। তা ছাড়া এই ফল দেহকে শীতল ও সতেজ রাখে।
জাম: কালো জামে লৌহের পরিমাণ বেশি বলে রক্তস্বল্পতায় বেশ উপকারী। পাকা জাম মিষ্টি ও মুখরোচক। কিছুটা কষভাব রয়েছে। জামের রসে পাকস্থলী ও যকৃৎ সুস্থ থাকে। আয়ুর্বেদীয় শাস্ত্রে ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাম ও এর বিচির ব্যবহার রয়েছে। তবে জামে খুব বেশি জৈব এসিড থাকার কারণে বেশি খেলে পেটে গ্যাস হতে পারে।
তরমুজ: গ্রীষ্মকালে ক্রমাগত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় তার অনেকখানি পূরণ করতে পারে তরমুজ। এর শরবত বেশ শীতল। এতে লৌহ ও ভিটামিনের পরিমাণ উচ্চমাত্রায় রয়েছে বলে রক্তস্বল্পতা ও রাতকানা রোগে ভালো ফল দেয়। টাইফয়েডের রোগীকে বারবার তরমুজের রস দিলে জ্বরের মাত্রা কমে আসে।
আনারস: টক-মিষ্টি স্বাদের জন্য আনারস অনেকেরই প্রিয়। এর জুস আরও উপাদেয়। বাত ও জ্বরের কারণে শরীরে ব্যথা হলে আনারসের রস তা দূর করতে সাহায্য করে। এদিকে রক্তে ইউরিক এসিডের মাত্রা কমাতেও আনারসের জুড়ি নেই। আনারসে রয়েছে অ্যান্টিবায়োটিক ও প্রদাহবিরোধী পদার্থ।
তালের শাঁস: তাল পাকে ভাদ্র মাসে। তবে এই সময়ের ফলের মধ্যে কচি তাল বা তালের শাঁস বেশ জনপ্রিয়। এটি রসালো বলে দেহে শীতল আমেজ আনে। অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি এতে প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে।
জামরুল: হালকা সবুজ রঙের এ ফলটি নবাব ও জমিদারদের কাছে বেশ সমাদৃত ছিল। এর আকৃতি ও রং সবাইকে মুগ্ধ করে। অন্যান্য ফলের চেয়ে স্বাদে কম হলেও এতে পানির পরিমাণ প্রচুর। ডায়াবেটিস থাকলে এই ফল প্রচুর পরিমাণে খাওয়া যায়।
সব ফলেই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা ত্বকের নিষ্প্রভ ভাব কমাতে সাহায্য করে। আমাদের দেশে আরও অনেক ফল পাওয়া যায়, যা পুষ্টিমানসমৃদ্ধ। কিন্তু দুঃখের বিষয় যত দিন যাচ্ছে, ততই আমরা ফলের প্রকৃত স্বাদ ও পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। পাকা ফলের সত্যিকারের স্বাদ কেমন, তা হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জানতেই পারবে না। কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে এসব ফল আমাদের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে অভিশাপ। স্বাভাবিক নিয়মের বাইরে কাঁচা ফল রাসায়নিক দ্রব্যের মাধ্যমে পাকানোর একটা প্রতিযোগিতা চলছে, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। ক্রমাগত এই বিষাক্ত ফল খাওয়ার কারণে কিডনি, লিভার ও ত্বকের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বমি, মাথাব্যথা ও ডায়রিয়া হতে দেখা যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্বাইড অথবা ইথোফেন—যে ধরনের রাসায়নিকই দেওয়া হোক না কেন, যদি একটু সচেতনভাবে ফল খাওয়া যায়, তবে কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা সম্ভব। আম খাওয়ার আগে দুই ঘণ্টা অথবা তার চেয়ে কিছু বেশি সময় পানিতে ডুবিয়ে রাখতে হবে। এরপর উঠিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে কাটতে হবে। তবে আমের আঁটি না খাওয়াই ভালো। এ ছাড়া যেকোনো ফল বা সবজিতে রাসায়নিক দেওয়ার পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে না খাওয়ার পরামর্শও বিশেষজ্ঞদের রয়েছে।
গ্রাম বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে—কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো। সুতরাং কাঁঠাল পাকানোর জন্য রাসায়নিকের প্রয়োজন হয় না। আধা পাকা কাঁঠাল ফিটকিরি অথবা মাঝামাঝি স্থানে একটি লম্বা কাঠি ঢুকিয়ে রাখলে দুই-এক দিনেই পেকে যায়। এতে কোনো স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই। যেমন, ধোঁয়ার সাহায্যে কলা পাকানো হয়। ব্যাপারটি সংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখবেন?
লিচুর রং কাঁচা অবস্থায় সবুজ। পাকার পর হয় ইটালাল। এখন গাছে স্প্রে করার ফলে সব লিচু একেবারে পরিষ্কার ঝকঝকে গাঢ় ম্যাজেন্টা রং ধারণ করে, যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। চকচক করলেই যে সোনা হয় না, এসব লিচু দেখলে সে কথা মনে পড়ে যায়। কারণ, লিচুর প্রকৃত রং এটি নয়। এ ধরনের লিচু না কেনাই ভালো। আনারস, তরমুজও বিষের ছোবল থেকে রেহাই পাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, জাম, জামরুল, সফেদা, তালের শাঁস, ডেউয়া, অরবরই ইত্যাদি অনেকটা নিরাপদ। যেসব ফলে মুনাফা বেশি, সেসব ফলেই রাসায়নিক বেশি। দেখা যাচ্ছে কাঁচা আম, কাঁচা কাঁঠাল এবং শক্ত খোসার ফল—যেমন বেল খাওয়াই উত্তম।
সবশেষে বলতে চাই, রাসায়নিকযুক্ত ফল খাওয়া আর ধীরগতিতে বিষ (স্লো পয়জন) খাওয়া একই কথা। সুতরাং নিরাপদ ফলই সবার কাম্য।
No comments