আটক শ্রমিকদের মুক্তিই শান্তি নিশ্চিত করতে পারে-হিউম্যান রাইটস ওয়াচের উদ্বেগ

তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন মজুরিকাঠামো নিয়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন আর নেই। সেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে এবং শ্রমিকেরাও কাজে ফিরে এসেছেন। এ খবর মালিক-শ্রমিকসহ এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার জন্য স্বস্তিদায়ক।


কিন্তু সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তোষের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি কয়েকজন শ্রমিকনেতার গ্রেপ্তারের ঘটনায় দেশি-বিদেশি অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নামের একটি সংস্থা শ্রমিক হয়রানি বন্ধের দাবি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখেছে। আমরা সব ধরনের সহিংসতার বিরোধী এবং যেকোনো বিরোধ শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের পক্ষপাতী। একই সঙ্গে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন, শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বা অস্থিরতা কেন ঘটে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মালিক-নির্ধারিত মজুরিও ঠিকমতো না পাওয়ায় শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।
এবারে তৈরি পোশাকশিল্পে শ্রমিক-অসন্তোষের পেছনেও ছিল মজুরি-বঞ্চনা। তাঁরা যে মজুরি পেয়ে আসছিলেন তাতে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। তাঁদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি দীর্ঘদিনের। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে শেষ পর্যন্ত যে মজুরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম হওয়া সত্ত্বেও শ্রমিকেরা নীতিগতভাবে মেনে নিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, চলতি মাস থেকে তা বাস্তবায়ন করার। অন্যদিকে মালিকপক্ষ প্রথমে নতুন মজুরিকাঠামো মানতেই চায়নি। পরে সরকারের চাপে মানলেও নভেম্বর থেকে বাস্তবায়ন করার ঘোষণা দেয় এবং এতে শ্রমিকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। যে কারণে কিছু কিছু কারখানায় সহিংস ঘটনা ঘটে। এর পেছনে ষড়যন্ত্র না খুঁজে সবার উচিত শিল্পে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানো।
শ্রমিকদের হয়রানি করলে বা কারাগারে আটক রাখলে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিদেশি কোনো সংস্থা দাবি করেছে বলেই নয়, তৈরি পোশাকশিল্পে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আটক সাধারণ শ্রমিক ও শ্রমিকনেতাদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া প্রয়োজন। আশা করি, এ ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে।

No comments

Powered by Blogger.