প্রতিক্রিয়া-বিচারপ্রার্থীদের গ্রাম আদালত by মো. মাহবুব মোরশেদ
প্রথম আলোয় সম্প্রতি ড. তোফায়েল আহমেদের ‘গরিব মানুষের বিচার পাওয়ার উপায় কী?’ শিরোনামের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে। ওই লেখায় প্রধানত গ্রাম আদালতের বিচার কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। গ্রাম আদালত সম্পর্কে লেখাটিতে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে, তা দূর করার উদ্দেশ্যেই আজকের এই লেখা।
লেখক গ্রাম আদালতের বিরোধিতার সাতটি কারণ দেখিয়েছেন। তাঁর মতে, প্রথমত ‘সংবিধানের (২২) নির্দেশনা অনুসরণ করা হলে বিচার বিভাগের পৃথক্করণ নীতির আলোকে নির্বাহী বিভাগকে প্রত্যাহার করা হলে কতিপয় রাজনৈতিক ব্যক্তির অধীনে আদালত কার্যক্রম পরিচালনা বৈধ হতে পারে না।’ অথচ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে আছে, ‘রাষ্ট্রের নির্বাহী অঙ্গসমূহ হইতে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণ রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন।’ গ্রাম আদালত রাজনৈতিক ব্যক্তির অধীনে পরিচালিত হচ্ছে বলে ড. তোফায়েলের দাবি অসত্য। কারণ, স্থানীয় সরকারের এ ক্ষুদ্রতম প্রশাসনিক একাংশটি অরাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হয়।
আমরা বরং দেখি, মাসদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের পরও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ সংসদে পাস হয়েছে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দণ্ড আরোপ করছেন। যদি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সরাসরি নির্বাহী বিভাগের অধীনে কাজ করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত না হয়, তাহলে অরাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা গ্রাম আদালত পরিচালনা করলে কীভাবে তা ২২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে? গ্রাম আদালত কোনো দণ্ড আরোপ করতে পারে না এবং এখানে কোনো আইনজীবী মামলা পরিচালনা করতে পারেন না। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬-এর অধীন গঠিত গ্রাম আদালত যদিও একটি আইন দ্বারা গঠিত আদালত, তথাপি এটি মূলত একটি অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় বিচার পরিচালনা প্রতিষ্ঠান। এ আদালতে সাধারণত দেওয়ানি কার্যবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হয় না এবং সাক্ষ্য আইনও প্রযোজ্য হয় না। গ্রাম আদালতের বিচারকদের বিচার বিভাগীয় পদের অধিকারী বলেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী, তা বোধগম্য নয়।
লেখকের দ্বিতীয় কারণ: ‘এ আদালতের কারও বিচারকার্য পরিচালনার শিক্ষাগত পটভূমি, আইন বিষয়ে দক্ষতা, প্রয়োজনীয় আইনবিষয়ক প্রশিক্ষণ, এমনকি নিরপেক্ষতার কোনো শপথ নেই। তিনি আসলে স্থানীয় বিচার এবং আনুষ্ঠানিক বিচারের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। স্থানীয় বিচারব্যবস্থা পরিচালনার জন্য শপথ ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক নয়, পৃথিবীর সব দেশেই মূলত তা অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়ে থাকে।
গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬-এর মূলভাবও অনেকটা তাই। এ আদালতকে রায় লিখতে হয় না। সাক্ষীর বক্তব্যের সারাংশ লিখতে হয়, সাক্ষ্য আইনের অধীন জবানবন্দি ও জেরা হয় না। একটি নির্ধারিত ফরমে আদালতের সিদ্ধান্ত লিখতে হয় এবং প্রকাশ্য আদালতে তা ঘোষণা করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকেই এখন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য ন্যূনতম যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন, তা অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আছে বলে আমি মনে করি। নিরপেক্ষতার শপথের ব্যাপারটি একেবারেই অবান্তর। কারণ, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকই নিরপেক্ষতার শপথ নেন না।
লেখক বর্ণিত তৃতীয় কারণ: ‘এ আদালতের ওপর দেশের উচ্চতর কোনো আদালতের নজরদারি নেই।’ এটাও পুরোপুরি অসত্য। কারণ, গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল চলে। এমনকি রিভিশন দায়ের করা যায়। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনস্বার্থে এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে গ্রাম আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে যেকোনো ফৌজদারি আদালতে পাঠাতে পারেন। এভাবেই উচ্চতর আদালতের একটি বিচারিক নজরদারি গ্রাম আদালতের ওপর আছে। যদিও প্রশাসনিক নজরদারির দায়িত্বটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পালন করে থাকেন। তবে এ বিষয়টিও জেলা পর্যায়ের অধস্তন আদালতের দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো বিচারকের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে।
লেখক চতুর্থ কারণ হিসেবে বলেন, ‘প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এ আদালতের বিচারকদের রায় লেখার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ নেই।’ আগেই বলেছি, গ্রাম আদালত রায় নয়, সিদ্ধান্ত দেয়। অতএব রায়ে যেভাবে বাদী বিবাদীর মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, বিচার্য বিষয়/ইস্যু এবং আলোচনা ও সিদ্ধান্ত থাকে গ্রাম আদালতের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন নেই। পঞ্চম কারণ: ‘রায় কার্যকর করতে ইউপির প্রশাসনিক শক্তি-সামর্থ্য নেই।’ লেখক ভ্রান্ত, কারণ গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত পরিষদ কার্যকর করে না। ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের জন্য গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান তা ১৯১৩ সালের পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট অফিসারের কাছে প্রেরণ করেন। লেখক ষষ্ঠ কারণ দেখান এই বলে যে, ‘এ আদালতের সার্বিক অবস্থা নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের উপযোগী নয়।’ এটি কোনো যুক্তি নয়, ঢালাও মন্তব্য, যা ভিত্তিহীন এবং আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। গ্রাম আদালতের সার্বিক অবস্থা কীভাবে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের উপযোগী নয়, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
লেখক বর্ণিত সপ্তম কারণ: ইউনিয়ন পরিষদে যাঁরা নির্বাচন করেন, তাঁরা ‘বিচারক’ হওয়ার অঙ্গীকারে নির্বাচন করেন না। এটা ঠিক যে ২০০৯ সালের আইনে ইউনিয়ন পরিষদের ৩৯টি সুনির্দিষ্ট কার্যাবলির মধ্যে আদালতের বিষয়টি নেই। কিন্তু বিশেষ আইন করে তা অর্পণ করা হয়েছে। তাই জনাব তোফায়েলের এই কারণটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
কোনো একজন ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রাম আদালত আইনের অপপ্রয়োগ বা গ্রাম আদালত আইন সঠিকভাবে প্রয়োগে ব্যর্থতার জন্য বিদ্যমান গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে ঢালাওভাবে দায়ী করা সমীচীন নয়। গ্রাম আদালত উঠিয়ে দিয়ে এ ধরনের আদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না।
বাংলাদেশের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতগুলোর মতো গ্রাম আদালতের ঐতিহ্যও প্রায় শতবর্ষ-প্রাচীন। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন কোর্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে কিছুটা বর্ধিত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়েই প্রতিষ্ঠিত হয় সালিস আদালত। ১৯৭৬ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত হয় বর্ধিত আর্থিক ক্ষমতা দিয়ে গ্রাম আদালত, যা ২০০৬ সালের আইনে আরও বর্ধিত করা হয়। শতবর্ষ-প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানকে অহেতুক ‘সাংঘাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ’ না করে কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে ধরনের গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করাই বোধ হয় বাঞ্ছনীয়।
মো. মাহবুব মোরশেদ: সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ।
আমরা বরং দেখি, মাসদার হোসেন মামলায় আপিল বিভাগের রায়ের পরও মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ সংসদে পাস হয়েছে এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে দণ্ড আরোপ করছেন। যদি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সরাসরি নির্বাহী বিভাগের অধীনে কাজ করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলে সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘিত না হয়, তাহলে অরাজনৈতিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা গ্রাম আদালত পরিচালনা করলে কীভাবে তা ২২ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন হবে? গ্রাম আদালত কোনো দণ্ড আরোপ করতে পারে না এবং এখানে কোনো আইনজীবী মামলা পরিচালনা করতে পারেন না। গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬-এর অধীন গঠিত গ্রাম আদালত যদিও একটি আইন দ্বারা গঠিত আদালত, তথাপি এটি মূলত একটি অনানুষ্ঠানিক স্থানীয় বিচার পরিচালনা প্রতিষ্ঠান। এ আদালতে সাধারণত দেওয়ানি কার্যবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি প্রযোজ্য হয় না এবং সাক্ষ্য আইনও প্রযোজ্য হয় না। গ্রাম আদালতের বিচারকদের বিচার বিভাগীয় পদের অধিকারী বলেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাহলে কীভাবে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী, তা বোধগম্য নয়।
লেখকের দ্বিতীয় কারণ: ‘এ আদালতের কারও বিচারকার্য পরিচালনার শিক্ষাগত পটভূমি, আইন বিষয়ে দক্ষতা, প্রয়োজনীয় আইনবিষয়ক প্রশিক্ষণ, এমনকি নিরপেক্ষতার কোনো শপথ নেই। তিনি আসলে স্থানীয় বিচার এবং আনুষ্ঠানিক বিচারের মধ্যে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। স্থানীয় বিচারব্যবস্থা পরিচালনার জন্য শপথ ইত্যাদি প্রাসঙ্গিক নয়, পৃথিবীর সব দেশেই মূলত তা অনানুষ্ঠানিকভাবে হয়ে থাকে।
গ্রাম আদালত আইন, ২০০৬-এর মূলভাবও অনেকটা তাই। এ আদালতকে রায় লিখতে হয় না। সাক্ষীর বক্তব্যের সারাংশ লিখতে হয়, সাক্ষ্য আইনের অধীন জবানবন্দি ও জেরা হয় না। একটি নির্ধারিত ফরমে আদালতের সিদ্ধান্ত লিখতে হয় এবং প্রকাশ্য আদালতে তা ঘোষণা করতে হয়। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের বিশেষ করে ইউপি চেয়ারম্যানদের অনেকেই এখন স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। গ্রাম আদালত পরিচালনার জন্য ন্যূনতম যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন, তা অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের আছে বলে আমি মনে করি। নিরপেক্ষতার শপথের ব্যাপারটি একেবারেই অবান্তর। কারণ, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারকই নিরপেক্ষতার শপথ নেন না।
লেখক বর্ণিত তৃতীয় কারণ: ‘এ আদালতের ওপর দেশের উচ্চতর কোনো আদালতের নজরদারি নেই।’ এটাও পুরোপুরি অসত্য। কারণ, গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সহকারী জজ আদালতে এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আপিল চলে। এমনকি রিভিশন দায়ের করা যায়। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনস্বার্থে এবং ন্যায়বিচারের স্বার্থে গ্রাম আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে যেকোনো ফৌজদারি আদালতে পাঠাতে পারেন। এভাবেই উচ্চতর আদালতের একটি বিচারিক নজরদারি গ্রাম আদালতের ওপর আছে। যদিও প্রশাসনিক নজরদারির দায়িত্বটি সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পালন করে থাকেন। তবে এ বিষয়টিও জেলা পর্যায়ের অধস্তন আদালতের দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো বিচারকের ওপর ন্যস্ত করা যেতে পারে।
লেখক চতুর্থ কারণ হিসেবে বলেন, ‘প্রায় ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে এ আদালতের বিচারকদের রায় লেখার প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ নেই।’ আগেই বলেছি, গ্রাম আদালত রায় নয়, সিদ্ধান্ত দেয়। অতএব রায়ে যেভাবে বাদী বিবাদীর মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ, বিচার্য বিষয়/ইস্যু এবং আলোচনা ও সিদ্ধান্ত থাকে গ্রাম আদালতের ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন নেই। পঞ্চম কারণ: ‘রায় কার্যকর করতে ইউপির প্রশাসনিক শক্তি-সামর্থ্য নেই।’ লেখক ভ্রান্ত, কারণ গ্রাম আদালতের সিদ্ধান্ত পরিষদ কার্যকর করে না। ক্ষতিপূরণের টাকা আদায়ের জন্য গ্রাম আদালতের চেয়ারম্যান তা ১৯১৩ সালের পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সার্টিফিকেট অফিসারের কাছে প্রেরণ করেন। লেখক ষষ্ঠ কারণ দেখান এই বলে যে, ‘এ আদালতের সার্বিক অবস্থা নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের উপযোগী নয়।’ এটি কোনো যুক্তি নয়, ঢালাও মন্তব্য, যা ভিত্তিহীন এবং আইনের দৃষ্টিতে অগ্রহণযোগ্য। গ্রাম আদালতের সার্বিক অবস্থা কীভাবে নিরপেক্ষতা ও ন্যায়বিচারের উপযোগী নয়, তা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।
লেখক বর্ণিত সপ্তম কারণ: ইউনিয়ন পরিষদে যাঁরা নির্বাচন করেন, তাঁরা ‘বিচারক’ হওয়ার অঙ্গীকারে নির্বাচন করেন না। এটা ঠিক যে ২০০৯ সালের আইনে ইউনিয়ন পরিষদের ৩৯টি সুনির্দিষ্ট কার্যাবলির মধ্যে আদালতের বিষয়টি নেই। কিন্তু বিশেষ আইন করে তা অর্পণ করা হয়েছে। তাই জনাব তোফায়েলের এই কারণটিও গ্রহণযোগ্য নয়।
কোনো একজন ইউপি চেয়ারম্যানের গ্রাম আদালত আইনের অপপ্রয়োগ বা গ্রাম আদালত আইন সঠিকভাবে প্রয়োগে ব্যর্থতার জন্য বিদ্যমান গ্রাম আদালত ব্যবস্থাকে ঢালাওভাবে দায়ী করা সমীচীন নয়। গ্রাম আদালত উঠিয়ে দিয়ে এ ধরনের আদালত প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামাঞ্চলের গরিব মানুষের ন্যায়বিচার লাভের অধিকার নিশ্চিত করা যাবে না।
বাংলাদেশের দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতগুলোর মতো গ্রাম আদালতের ঐতিহ্যও প্রায় শতবর্ষ-প্রাচীন। এর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়েছে ১৯১৯ সালে ইউনিয়ন কোর্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। ১৯৬১ সালে কিছুটা বর্ধিত বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়েই প্রতিষ্ঠিত হয় সালিস আদালত। ১৯৭৬ সালে ইউনিয়ন পর্যায়ে গঠিত হয় বর্ধিত আর্থিক ক্ষমতা দিয়ে গ্রাম আদালত, যা ২০০৬ সালের আইনে আরও বর্ধিত করা হয়। শতবর্ষ-প্রাচীন এ প্রতিষ্ঠানকে অহেতুক ‘সাংঘাতিকভাবে প্রশ্নবিদ্ধ’ না করে কীভাবে কার্যকর করা যায়, সে ধরনের গঠনমূলক চিন্তাভাবনা করাই বোধ হয় বাঞ্ছনীয়।
মো. মাহবুব মোরশেদ: সাবেক অতিরিক্ত জেলা জজ।
No comments