বিএনপির বাজেট ভাবনা-লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে উচ্চতর মধ্যম আয়ের দেশ
২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চতর মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চায় বিএনপি। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ভাবনায় এ লক্ষ্যের কথা জানান দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কয়েক বছর ধরে সরকারের বাজেট ঘোষণার আগে নিজেদের বাজেট ভাবনা তুলে ধরছে বিএনপি।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে আগামী অর্থবছরের বাজেট ভাবনা প্রকাশ করেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চতর মধ্যম আয়ের দেশ করতে তিনি ১৬টি করণীয় নির্ধারণ করেছেন। এসব করণীয়র মধ্যে রয়েছে- অবকাঠামো সংকট দূর করা, নতুন পণ্য ও বাজার খুঁজে বের করা, এশিয়ার মধ্যে বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি শূন্যে নামিয়ে আনা, কৃষি খাতের পুনর্বিন্যাস ইত্যাদি।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সৃজনশীলতার কোনো ঘাটতি নেই। তাদের এই অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৃজনশীলতাকে সম্পদ ও সমৃদ্ধিতে রূপান্তর করে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন গতিশীল নেতৃত্ব।'
খালেদা জিয়া বলেন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও অকার্যকারিতার মূলে রয়েছে জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে কিছু দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বগুলো হলো- সরকারের আয়ের সঙ্গে ব্যয়, বাণিজ্যিক লেনদেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সম্প্রসারণশীল সরকারি ব্যয়নীতি, রাজস্ব আয়ের সঙ্গে ভর্তুকি ব্যয় প্রভৃতির ভারসাম্যহীনতা। এসব থেকে রক্ষা পেতে তিনি বেশ কিছু করণীয়র কথা বলেন। এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি ঋণের পরিমাণ হ্রাস করা, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ানো, টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা, জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, আমদানি নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং রপ্তানি সম্প্রসারণ করা, দুর্নীতি যথাসাধ্য কমিয়ে আনা, সব ক্ষেত্রে পেশাদারত্ব প্রতিষ্ঠা করা ও সুশাসন নিশ্চিত করা।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, বিগত বাজেটের আগে বিএনপি কিছু ভালো প্রকল্পের কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার সেগুলো গ্রহণ করেনি। বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে সতর্ক করলেও সরকার কান দেয়নি। তিনি মনে করেন, তাঁদের আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছে।
সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ভর্তুকি ব্যয় বাড়ার ফলে ২০১১-১২ অর্থবছরে অতিমাত্রায় সরকারি ব্যয় বেড়েছে। ভর্তুকির প্রাক্কলন ছিল ভয়ানক ত্রুটিপূর্ণ। প্রাক্কলনের চেয়ে ভর্তুকি অনেক বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান অর্থবছরে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বর্তমান অর্থবছরের বাজেট থেকে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে এবং অবশিষ্ট ১১ হাজার কোটি টাকা আসন্ন অর্থবছরের বাজেটের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
বাস্তবায়ন যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ জোগানে সক্ষমতার নিরিখে আসন্ন বাজেট অর্থহীন ও উচ্চাভিলাষী বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, আগামী অর্থ বছরের জন্য সরকার একটি বিশাল ঘাটতি বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। এ রকম বাজেট উপস্থাপিত হচ্ছে এমন একসময়ে যখন বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য প্রবাহ ক্ষীণ হয়ে আসছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোঠায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হবে বলে সংবাদপত্র সূত্রের কথা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বাজেটের আকার হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেট দলীয় বিবেচনায় ও নির্বাচনী স্বার্থে প্রণীত হচ্ছে বলে তিনি সন্দেহ ব্যক্ত করেন। এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই বলে মনে করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের মাত্রা অর্জনের জন্য পরবর্তী অর্থবছরে ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু মন্থর প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও উৎপাদনে স্থবিরতা এবং মূল্যস্ফীতির ফলে ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির প্রাক্কলন বাস্তবতা বিবর্জিত। খালেদা জিয়া আরো বলেন, সরকারের প্রতিহিংসামূলক নীতির কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বাড়বে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর। ফলে লক্ষ্য মতো রাজস্ব সংগ্রহ হয়তো সম্ভব হবে না।
বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ তোলেন। এর পাশাপাশি তিনি কমিশনার চৌধুরী আলম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিখোঁজ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, গুমের ঘটনায় দেশে ও বিদেশে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বিএনপি ও তাঁর জোটের ৩৩ নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকেও নজির বিহীন বলে উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটের কথা উল্লেখ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে 'অবর্ণনীয়' বলে উল্লেখ করেন। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে না পারার জন্য তিনি সরকারের দুর্নীতিকে দায়ী করেন। তিনি ক্ষমতায় এলে দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। নতুন ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কালো টাকা সাদা করে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন জোগান দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কি না- তিনি সে আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন। গত দুই বছর ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট ছিল উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, নতুন ব্যাংক এলে এটি আরো বাড়বে।
সাহারা গ্রুপের বিনিয়োগ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে ও বিনা প্রতিযোগিতায় কোন শর্তে প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত করা হলো তা অস্বচ্ছ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়কে আর্থিক সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, তিনি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন।
খালেদা জিয়া রাজধানীর সোনাগাঁও হোটেলে 'জাতীয় বাজেট ও আমাদের ভাবনা' শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিকেল ৪টার দিকে উপস্থিত হন। বক্তৃতা শুরু করেন সোয়া ৪টার দিকে। এ সময় মঞ্চে বসা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এম শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
দর্শক সারিতে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, এম মোর্শেদ খান, রিয়াজ রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর নাছির উদ্দিন আহমেদ, ড. এম ওসমান ফারুক, ফজলুর রহমান পটল, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, জাবির সাবেক ভিসি ড. মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাবির সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান, কাজী মুনির, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, কানাডা, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, ভ্যাটিক্যান সিটি, মালদ্বীপ, চীন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, 'আমরা বিশ্বাস করি, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে সৃজনশীলতার কোনো ঘাটতি নেই। তাদের এই অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৃজনশীলতাকে সম্পদ ও সমৃদ্ধিতে রূপান্তর করে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন গতিশীল নেতৃত্ব।'
খালেদা জিয়া বলেন, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা, অদক্ষতা ও অকার্যকারিতার মূলে রয়েছে জাতীয় অর্থনীতির সঙ্গে কিছু দ্বন্দ্ব। এ দ্বন্দ্বগুলো হলো- সরকারের আয়ের সঙ্গে ব্যয়, বাণিজ্যিক লেনদেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সম্প্রসারণশীল সরকারি ব্যয়নীতি, রাজস্ব আয়ের সঙ্গে ভর্তুকি ব্যয় প্রভৃতির ভারসাম্যহীনতা। এসব থেকে রক্ষা পেতে তিনি বেশ কিছু করণীয়র কথা বলেন। এগুলো হলো- মূল্যস্ফীতি হ্রাস এবং তা নিয়ন্ত্রণে রাখা, ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারি ঋণের পরিমাণ হ্রাস করা, বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বাড়ানো, টাকার মূল্যমান স্থিতিশীল রাখা, জনশক্তি রপ্তানি বাড়ানো, বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা, আমদানি নির্ভরশীলতা হ্রাস এবং রপ্তানি সম্প্রসারণ করা, দুর্নীতি যথাসাধ্য কমিয়ে আনা, সব ক্ষেত্রে পেশাদারত্ব প্রতিষ্ঠা করা ও সুশাসন নিশ্চিত করা।
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন, বিগত বাজেটের আগে বিএনপি কিছু ভালো প্রকল্পের কথা বলেছিল। কিন্তু সরকার সেগুলো গ্রহণ করেনি। বাজেট ব্যবস্থাপনা নিয়ে সতর্ক করলেও সরকার কান দেয়নি। তিনি মনে করেন, তাঁদের আশঙ্কা সত্যে পরিণত হয়েছে।
সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ভর্তুকি ব্যয় বাড়ার ফলে ২০১১-১২ অর্থবছরে অতিমাত্রায় সরকারি ব্যয় বেড়েছে। ভর্তুকির প্রাক্কলন ছিল ভয়ানক ত্রুটিপূর্ণ। প্রাক্কলনের চেয়ে ভর্তুকি অনেক বেশি হয়েছে। সব মিলিয়ে বর্তমান অর্থবছরে সরকারের ভর্তুকি ব্যয় দাঁড়াবে ৪০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে বর্তমান অর্থবছরের বাজেট থেকে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হবে এবং অবশিষ্ট ১১ হাজার কোটি টাকা আসন্ন অর্থবছরের বাজেটের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে।
বাস্তবায়ন যোগ্যতা এবং প্রয়োজনীয় অর্থ জোগানে সক্ষমতার নিরিখে আসন্ন বাজেট অর্থহীন ও উচ্চাভিলাষী বলে উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, আগামী অর্থ বছরের জন্য সরকার একটি বিশাল ঘাটতি বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছে। এ রকম বাজেট উপস্থাপিত হচ্ছে এমন একসময়ে যখন বৈদেশিক ঋণ ও সাহায্য প্রবাহ ক্ষীণ হয়ে আসছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ প্রায় শূন্যের কোঠায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি ধরা হবে বলে সংবাদপত্র সূত্রের কথা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, বাজেটের আকার হবে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেট দলীয় বিবেচনায় ও নির্বাচনী স্বার্থে প্রণীত হচ্ছে বলে তিনি সন্দেহ ব্যক্ত করেন। এক লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবতার সঙ্গে মিল নেই বলে মনে করেন তিনি। খালেদা জিয়া বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের মাত্রা অর্জনের জন্য পরবর্তী অর্থবছরে ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করতে হবে। কিন্তু মন্থর প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ও উৎপাদনে স্থবিরতা এবং মূল্যস্ফীতির ফলে ২৫ শতাংশ রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির প্রাক্কলন বাস্তবতা বিবর্জিত। খালেদা জিয়া আরো বলেন, সরকারের প্রতিহিংসামূলক নীতির কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা আরো বাড়বে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর। ফলে লক্ষ্য মতো রাজস্ব সংগ্রহ হয়তো সম্ভব হবে না।
বক্তব্যের শুরুতেই খালেদা জিয়া নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর প্রসঙ্গ তোলেন। এর পাশাপাশি তিনি কমিশনার চৌধুরী আলম, শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম নিখোঁজ হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, গুমের ঘটনায় দেশে ও বিদেশে প্রচণ্ড উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বিএনপি ও তাঁর জোটের ৩৩ নেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনাকেও নজির বিহীন বলে উল্লেখ করেন।
খালেদা জিয়া পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকটের কথা উল্লেখ করে দেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে 'অবর্ণনীয়' বলে উল্লেখ করেন। পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করতে না পারার জন্য তিনি সরকারের দুর্নীতিকে দায়ী করেন। তিনি ক্ষমতায় এলে দুটি পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। নতুন ব্যাংক স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। কালো টাকা সাদা করে ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন জোগান দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কি না- তিনি সে আশঙ্কাও ব্যক্ত করেন। গত দুই বছর ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট ছিল উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, নতুন ব্যাংক এলে এটি আরো বাড়বে।
সাহারা গ্রুপের বিনিয়োগ সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেন, একটি বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে বিনা টেন্ডারে ও বিনা প্রতিযোগিতায় কোন শর্তে প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত করা হলো তা অস্বচ্ছ। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের আবাসন খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বার্থ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর এক আত্মীয়কে আর্থিক সুযোগ পাইয়ে দেওয়ার জন্য এ চুক্তি করা হয়েছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন। খালেদা জিয়া গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সরিয়ে দেওয়ার সমালোচনা করে বলেন, তিনি ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে যথাযথ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করবেন।
খালেদা জিয়া রাজধানীর সোনাগাঁও হোটেলে 'জাতীয় বাজেট ও আমাদের ভাবনা' শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের মঞ্চে বিকেল ৪টার দিকে উপস্থিত হন। বক্তৃতা শুরু করেন সোয়া ৪টার দিকে। এ সময় মঞ্চে বসা ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আর এ গনি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, এম শামসুল ইসলাম, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, তরিকুল ইসলাম, এম কে আনোয়ার, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া।
দর্শক সারিতে ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিজেপি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, খেলাফত মজলিস আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোট মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী, আবদুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবিহ উদ্দিন আহমেদ, এম মোর্শেদ খান, রিয়াজ রহমান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, মীর নাছির উদ্দিন আহমেদ, ড. এম ওসমান ফারুক, ফজলুর রহমান পটল, অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আবদুল আউয়াল মিন্টু, অধ্যাপক মাজেদুল ইসলাম, বিরোধী দলের চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম প্রমুখ। আরো উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, জাবির সাবেক ভিসি ড. মুস্তাহিদুর রহমান, ঢাবির সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, ড. মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক শফিক রেহমান, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুর রহমান, কাজী মুনির, বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্দিকুর রহমান প্রমুখ।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জাপান, কানাডা, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, ভ্যাটিক্যান সিটি, মালদ্বীপ, চীন, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্কসহ বেশ কয়েকটি দেশের রাষ্ট্রদূত, শীর্ষ স্থানীয় অনেক ব্যবসায়ী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
No comments