শুধু পরিকল্পনা নয় বাস্তবায়নই জরুরি by ড. এম আসাদুজ্জামান

বাজেটে অবশ্যই কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিতে হবে। অর্থাৎ কৃষির বহুমুখীকরণ; লাইভস্টক, ননলাইভস্টক- এ দুটির ওপরই জোর দিতে হবে। এ খাতে প্রণোদনার বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কর আরোপের বিষয়টি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ।


প্রণোদনার বিষয়গুলো নির্দিষ্ট বা সুস্পষ্ট করা প্রয়োজন এবং তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি মানুষ যেভাবে উপকৃত হয় তা লক্ষ করে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন। রপ্তানিমুখী শিল্প খাতের দিকে নজর দিতে হবে, যাতে এর উন্নতি দ্রুত ঘটানো যায়। পরিবেশ রক্ষার বিষয়টিও নজরে রাখতে হবে এবং সব ক্ষেত্রের জন্যই তা প্রযোজ্য। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে সরকারকে বিশেষ সহযোগিতা অর্থাৎ ঋণ ব্যবহার সহজীকরণের পথ প্রশস্ত করতে হবে এবং এ-সংক্রান্ত যন্ত্রপাতির ওপর আমদানি শুল্ক হ্রাস করাও প্রয়োজন। এ সবই হলো স্বল্পমেয়াদি পদক্ষেপ। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে আমাদের দৃষ্টান্ত উজ্জ্বল নয়। প্রেক্ষিত পরিকল্পনাকে সাজানোর জন্য বাজেটে কিভাবে কতটা নজর দেওয়া হচ্ছে বা হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়। আমার নিজের ধারণা, বাংলাদেশে শিল্পায়ন খুব বেশিদূর এগোনো সম্ভব হবে না। কারণ যেসব কাঁচামাল শিল্পের জন্য প্রয়োজন, তার বেশির ভাগেরই আমাদের ঘাটতি রয়েছে। এসব আমদানি করতে হয়। আমদানি করে শিল্পকে এগিয়ে নেওয়া কতটা সম্ভব, সে প্রশ্ন আছে। বাস্তবতা আমলে রেখে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাস্তবমুখী হওয়া খুবই দরকার। আমদানিনির্ভরতা থেকে নেট ভ্যালু খুব বেশি পাওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থায় সেবামূলক উৎপাদনে যদি প্রণোদনা দেওয়া হয় এবং সেটি যদি উন্মুক্ত করা হয় তাহলে লাভের অংশটা অনেক বেশি হবে। শোনা যাচ্ছে, প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি রেখে বাজেট প্রণীত হতে যাচ্ছে। এই টাকা পুরোটা খরচ করতে হলে তা ওঠাতে হবে। শুধু আকারে বড় না করে গুণগত মান পরিবর্তন করে প্রবৃদ্ধি সম্ভব। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চিত্র আশানুরূপ নয় এবং বারবারই তা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এবার তো সেটা আরো বড়। কেমন করে তা বাস্তবায়ন হবে? আমি মনে করি, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির দুটি ভাগ থাকা উচিত এবং বাজেটের মধ্যে মূলত ফান্ডেড অংশটুকু প্রতিফলিত হওয়া উচিত। আনফান্ডেড অংশটুকু হিসেবেই আসা উচিত নয়। এটি কেবল দিকনির্দেশনার জন্য রাখাই শ্রেয়। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অসফলদের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমি এও মনে করি, ছয় মাসের মধ্যে কেউ যদি তাঁর অর্পিত দায়িত্ব পালনে বিশেষভাবে অসফল হন, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে তাঁর দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে বিশেষভাবে ভাবতে হবে। পরিকল্পনা প্রণয়নই শেষ কথা নয়, এর বাস্তবায়নই জরুরি বিষয়। এই বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের দূরদর্শিতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

No comments

Powered by Blogger.