স্পিকারের বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল: হাইকোর্ট
সংসদে স্পিকার আবদুল হামিদের দেওয়া বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, স্পিকার সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিয়েছেন। স্পিকার সংসদের দায়মুক্তির অপব্যবহার করেছেন।
স্পিকার সংসদে কার্যপ্রণালি বিধি এবং সংসদের রীতিনীতি অনুযায়ী, কোনো বিতর্ক ও আলোচনায় অংশ নিতে পারেন না।
তবে স্পিকার সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি ফিরিয়ে না দেওয়াসংক্রান্ত আদালত অবমাননার মামলা শুনানিকালে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের কাছে সড়ক ভবন হস্তান্তর করা নিয়ে গত ২৯ মে জাতীয় সংসদে একটি বিতর্ক হয়। প্রচারমাধ্যম থেকে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের জমি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিষয় উত্থাপিত হলে স্পিকার আবদুল হামিদ ২৯ মে সংসদে বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষের বিচার পেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে, আর নিজেদের বিষয় হলে বিচার বিভাগ ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন, এটি ভালো দেখায় না। আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হলে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে।’ রাজশাহী-৬ আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলমের এক অনির্ধারিত আলোচনার পর স্পিকার এ কথা বলেন। আদালত অবমাননার আবেদনটি গতকাল আদালতের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। শুনানিকালে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ-সংক্রান্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা এ নিয়ে শুনানি হয়।
শুরুতে আদালত বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা কোথায়? যোগাযোগসচিবসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা তখন কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ান। তাঁদের কৌঁসুলি আনিসুল হক বলেন, আদালতের সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী, সড়ক ভবনের ‘সি’ ব্লক পুরোপুরি এবং ‘এ’ ব্লকের দুটি কক্ষ খালি করে দেওয়া হয়েছে। জবাবে আদালত বলেন, কর্মকর্তারা যেহেতু আদালতের আদেশ পালন করেছেন, সেহেতু কাঠগড়া থেকে তাঁরা চলে যেতে পারেন।
সংসদের ওই দিনের কার্যক্রম নিয়ে কয়েকটি সংবাদপত্র তুলে ধরে রিট মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগকে সতর্ক করলেন স্পিকার। তিনি বলেন, সংসদের কার্যক্রম আদালত অবমাননার আওতায় আসবে না। এ দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে সংসদে বিচার বিভাগের সমালোচনা করা হয়েছে। একতরফা শুনানি করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেননি হাইকোর্ট। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন।
আদালত বলেন, এটা বিচার বিভাগের মর্যাদার প্রশ্ন। স্পিকার এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না, তা দেখতে হবে। তিনি একজন আইনজীবী।
একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, বার কাউন্সিলে তাঁর সদস্যপদ এখন স্থগিত আছে। মনজিল মোরসেদ বলেন, স্পিকার বলেছেন, হাইকোর্ট তড়িঘড়ি করে রায় দিয়েছেন। আদালত বলেন, ‘এ মামলায় রুল নিষ্পত্তিতে আমরা দেড় বছর সময় নিয়েছি। আমাদের বেঞ্চে অনেক রিট তিন মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে। মনে হয়, রিট সম্পর্কে স্পিকারের কোনো ধারণা নেই।’
এ সময় আদালত আইনজীবী ও সাংসদ নুরুল ইসলামকে বলেন, স্পিকার তো বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারতেন। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সে সময় আমি সংসদে ছিলাম। অনেক সময় পত্রিকায় বক্তব্য ঠিকভাবে আসে না।’ আদালত বলেন, সব পত্রিকায় বিষয়টি এসেছে। স্পিকার ওই প্রতিবেদনের কোনো প্রতিবাদ জানাননি।
আদালত বলেন, ‘আমি কি হনু রে’—এ ধরনের মন্তব্য কি স্পিকার করতে পারেন? এটা কি সংসদের ভাষা? উনি সংসদের পিতা। স্পিকার সংসদের দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে যা খুশি বলতে পারেন না। এ বেঞ্চ সম্পর্কে সংসদে আগেও অনেক বাজে কথা বলা হয়েছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় স্পিকার থামাননি।
শুনানির পর দেড়টার দিকে আদালত বিরতিতে যান। তিনটার দিকে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানে যেহেতু সংসদের কার্যক্রমকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাই পুরো বিষয়ে আদালত একটি পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন।
এ পর্যায়ে আদালত আবদুল মতিন খসরুর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনিও তো আইনমন্ত্রী ছিলেন। আপনি কি সুপ্রিম কোর্টকে পরিচালনা করতেন?’ জবাবে মতিন খসরু বলেন, ‘কখনো না। বিচার বিভাগ স্বাধীন।’
আদালত বলেন, স্পিকারের বক্তব্য শুধু অজ্ঞতাই নয়, অমার্জনীয়। জবাবে মতিন খসরু বলেন, এ বিষয়ে এখানে থেমে যাওয়াই মঙ্গলজনক। আদালত বলেন, ‘স্পিকারই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। উনি জনগণকে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।’
মতিন খসরু বলেন, ‘স্পিকার আবদুল হামিদ একজন আইনজীবী এবং অত্যন্ত জ্যেষ্ঠ সাংসদ।’ আদালত বলেন, ‘উনি তো বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। আইন অনুযায়ী, তিনি কোনো বিতর্কে অংশ নিতে পারেন না। আমরা তাঁর বক্তব্যে হতবাক হয়েছি।’
একপর্যায়ে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ। প্রত্যেক অংশকেই নিজ নিজ এখতিয়ারের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
শেষ পর্যায়ে শুনানিতে অংশ নিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আপনি (বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী) একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন।’
পরে আদালত আদেশ দেওয়া শুরু করেন। আদেশে বলা হয়, সংসদে আলোচনার বিষয়টি ২৯ মে প্রায় সব সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। একজন সাংসদ পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। স্পিকার রাষ্ট্রের ৩ নম্বর ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মর্যাদাশীল পদের অধিকারী। তিনি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। রুলস অব পার্লামেন্ট অনুযায়ী, কোনো ধরনের বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ স্পিকারের নেই। তিনি শুধু সংসদ পরিচালনা করবেন। সারা বিশ্বের আইনে এটা প্রতিষ্ঠিত যে বিচারাধীন বিষয়ে সংসদে কোনো আলোচনা হতে পারে না।
একপর্যায়ে আনিসুল হক দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, আপনার মনে অনেক কষ্ট। দয়া করে বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন।’
পরে আদেশে বলা হয়, ‘ওই দিন যা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশার। আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের মতো সুপ্রিম কোর্টও সাংবিধানিক অর্গান, সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীন। আমরা কোনো মন্ত্রীর দ্বারা পরিচালিত নই। আমরা কেবল আমাদের বিবেক এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধ। সরকারের কাছে বা কোনো মন্ত্রীর কাছে আমরা দায়বদ্ধ নই। আমরা আমাদের স্বার্থে কোনো আদেশ দিই না, আমরা যে আদেশ দিই, তা জনগণের স্বার্থে। সুপ্রিম কোর্টে স্থানের সংকুলান হওয়া জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজন। কারণ, স্থান সংকুলান না হলে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না, মামলার জটও শেষ হবে না।’ আদালত বলেন, ‘আমরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করব। সরকারের কার্যক্রম অচল হবে—এমন কিছু আমরা করব না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ সঠিকভাবে এগোবে বলে আমরা আশা করি। আমরা আশা করি, স্পিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রতি মর্যাদা দেখাবেন।’ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আদেশ দেওয়া শেষ করেন আদালত। পাশাপাশি ৯ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
তবে স্পিকার সুপ্রিম কোর্টের মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন আদালত। সুপ্রিম কোর্টের সম্পত্তি ফিরিয়ে না দেওয়াসংক্রান্ত আদালত অবমাননার মামলা শুনানিকালে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব কথা বলেন।
সুপ্রিম কোর্টের কাছে সড়ক ভবন হস্তান্তর করা নিয়ে গত ২৯ মে জাতীয় সংসদে একটি বিতর্ক হয়। প্রচারমাধ্যম থেকে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্টের জমি নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগকে দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের বিষয় উত্থাপিত হলে স্পিকার আবদুল হামিদ ২৯ মে সংসদে বলেছিলেন, ‘দেশের মানুষের বিচার পেতে বছরের পর বছর লেগে যাবে, আর নিজেদের বিষয় হলে বিচার বিভাগ ঝটপট সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবেন, এটি ভালো দেখায় না। আদালতের রায়ে ক্ষুব্ধ হলে জনগণ বিচার বিভাগের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে।’ রাজশাহী-৬ আসনের সাংসদ শাহরিয়ার আলমের এক অনির্ধারিত আলোচনার পর স্পিকার এ কথা বলেন। আদালত অবমাননার আবেদনটি গতকাল আদালতের কার্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত ছিল। শুনানিকালে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ-সংক্রান্ত সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। প্রায় আড়াই ঘণ্টা এ নিয়ে শুনানি হয়।
শুরুতে আদালত বলেন, যাঁদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ রয়েছে, তাঁরা কোথায়? যোগাযোগসচিবসহ সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা তখন কাঠগড়ায় এসে দাঁড়ান। তাঁদের কৌঁসুলি আনিসুল হক বলেন, আদালতের সর্বশেষ আদেশ অনুযায়ী, সড়ক ভবনের ‘সি’ ব্লক পুরোপুরি এবং ‘এ’ ব্লকের দুটি কক্ষ খালি করে দেওয়া হয়েছে। জবাবে আদালত বলেন, কর্মকর্তারা যেহেতু আদালতের আদেশ পালন করেছেন, সেহেতু কাঠগড়া থেকে তাঁরা চলে যেতে পারেন।
সংসদের ওই দিনের কার্যক্রম নিয়ে কয়েকটি সংবাদপত্র তুলে ধরে রিট মামলার আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগকে সতর্ক করলেন স্পিকার। তিনি বলেন, সংসদের কার্যক্রম আদালত অবমাননার আওতায় আসবে না। এ দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে সংসদে বিচার বিভাগের সমালোচনা করা হয়েছে। একতরফা শুনানি করে মামলাটি নিষ্পত্তি করেননি হাইকোর্ট। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আইনজীবীরা শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তাঁরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের রায় বহাল রেখেছেন।
আদালত বলেন, এটা বিচার বিভাগের মর্যাদার প্রশ্ন। স্পিকার এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না, তা দেখতে হবে। তিনি একজন আইনজীবী।
একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আলতাফ হোসেন বলেন, বার কাউন্সিলে তাঁর সদস্যপদ এখন স্থগিত আছে। মনজিল মোরসেদ বলেন, স্পিকার বলেছেন, হাইকোর্ট তড়িঘড়ি করে রায় দিয়েছেন। আদালত বলেন, ‘এ মামলায় রুল নিষ্পত্তিতে আমরা দেড় বছর সময় নিয়েছি। আমাদের বেঞ্চে অনেক রিট তিন মাসে নিষ্পত্তি হয়েছে। মনে হয়, রিট সম্পর্কে স্পিকারের কোনো ধারণা নেই।’
এ সময় আদালত আইনজীবী ও সাংসদ নুরুল ইসলামকে বলেন, স্পিকার তো বিষয়টি আপনাদের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারতেন। নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সে সময় আমি সংসদে ছিলাম। অনেক সময় পত্রিকায় বক্তব্য ঠিকভাবে আসে না।’ আদালত বলেন, সব পত্রিকায় বিষয়টি এসেছে। স্পিকার ওই প্রতিবেদনের কোনো প্রতিবাদ জানাননি।
আদালত বলেন, ‘আমি কি হনু রে’—এ ধরনের মন্তব্য কি স্পিকার করতে পারেন? এটা কি সংসদের ভাষা? উনি সংসদের পিতা। স্পিকার সংসদের দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে যা খুশি বলতে পারেন না। এ বেঞ্চ সম্পর্কে সংসদে আগেও অনেক বাজে কথা বলা হয়েছে। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় স্পিকার থামাননি।
শুনানির পর দেড়টার দিকে আদালত বিরতিতে যান। তিনটার দিকে এ মামলার কার্যক্রম শুরু হয়। মনজিল মোরসেদ বলেন, সংবিধানে যেহেতু সংসদের কার্যক্রমকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, তাই পুরো বিষয়ে আদালত একটি পর্যবেক্ষণ দিতে পারেন।
এ পর্যায়ে আদালত আবদুল মতিন খসরুর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনিও তো আইনমন্ত্রী ছিলেন। আপনি কি সুপ্রিম কোর্টকে পরিচালনা করতেন?’ জবাবে মতিন খসরু বলেন, ‘কখনো না। বিচার বিভাগ স্বাধীন।’
আদালত বলেন, স্পিকারের বক্তব্য শুধু অজ্ঞতাই নয়, অমার্জনীয়। জবাবে মতিন খসরু বলেন, এ বিষয়ে এখানে থেমে যাওয়াই মঙ্গলজনক। আদালত বলেন, ‘স্পিকারই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছেন। উনি জনগণকে সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে উসকে দিচ্ছেন। এটা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল।’
মতিন খসরু বলেন, ‘স্পিকার আবদুল হামিদ একজন আইনজীবী এবং অত্যন্ত জ্যেষ্ঠ সাংসদ।’ আদালত বলেন, ‘উনি তো বিতর্কে অংশ নিয়েছেন। আইন অনুযায়ী, তিনি কোনো বিতর্কে অংশ নিতে পারেন না। আমরা তাঁর বক্তব্যে হতবাক হয়েছি।’
একপর্যায়ে শুনানিতে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। তিনি বলেন, রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ। প্রত্যেক অংশকেই নিজ নিজ এখতিয়ারের মধ্যে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হয়।
শেষ পর্যায়ে শুনানিতে অংশ নিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘আপনি (বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী) একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে আপনার প্রতি আমার অনুরোধ, রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন।’
পরে আদালত আদেশ দেওয়া শুরু করেন। আদেশে বলা হয়, সংসদে আলোচনার বিষয়টি ২৯ মে প্রায় সব সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। একজন সাংসদ পয়েন্ট অব অর্ডারে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটা খুব দুঃখজনক। স্পিকার রাষ্ট্রের ৩ নম্বর ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের মর্যাদাশীল পদের অধিকারী। তিনি আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। রুলস অব পার্লামেন্ট অনুযায়ী, কোনো ধরনের বিতর্কে অংশ নেওয়ার সুযোগ স্পিকারের নেই। তিনি শুধু সংসদ পরিচালনা করবেন। সারা বিশ্বের আইনে এটা প্রতিষ্ঠিত যে বিচারাধীন বিষয়ে সংসদে কোনো আলোচনা হতে পারে না।
একপর্যায়ে আনিসুল হক দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, আপনার মনে অনেক কষ্ট। দয়া করে বিষয়টি এখানেই শেষ করে দিন।’
পরে আদেশে বলা হয়, ‘ওই দিন যা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশার। আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের মতো সুপ্রিম কোর্টও সাংবিধানিক অর্গান, সুপ্রিম কোর্ট স্বাধীন। আমরা কোনো মন্ত্রীর দ্বারা পরিচালিত নই। আমরা কেবল আমাদের বিবেক এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধ। সরকারের কাছে বা কোনো মন্ত্রীর কাছে আমরা দায়বদ্ধ নই। আমরা আমাদের স্বার্থে কোনো আদেশ দিই না, আমরা যে আদেশ দিই, তা জনগণের স্বার্থে। সুপ্রিম কোর্টে স্থানের সংকুলান হওয়া জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজন। কারণ, স্থান সংকুলান না হলে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না, মামলার জটও শেষ হবে না।’ আদালত বলেন, ‘আমরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করব। সরকারের কার্যক্রম অচল হবে—এমন কিছু আমরা করব না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ সঠিকভাবে এগোবে বলে আমরা আশা করি। আমরা আশা করি, স্পিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রতি মর্যাদা দেখাবেন।’ বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আদেশ দেওয়া শেষ করেন আদালত। পাশাপাশি ৯ জুলাই পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
No comments